সকালে জেলিফিশ জাহাজে কি ঘটেছে সেটা পেদরো জুরিতার অনুসরণকারীদের জানার কোন উপায় নেই।
আগের দিন পুরোটা সময় খালাসীদের মাঝে অস্ফুট কথোপকথন হয়েছে। সকালে তারা সিদ্ধান্ত নিল প্রথম সুযোগেই ক্যাপ্টেনকে খুন করে ফেলবে। একই সঙ্গে জাহাজ আর উভচর মানবের দখল নেবে ওরা।
ভোর। জাহাজের ডেকে এসে দাঁড়াল পেদরো জুরিতা। বাতাসের গতি কমে গেছে, ফলে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে জাহাজ। সাগরের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পেদরোর চোখ। দূরবীন চোখে ডুবন্ত একটা জাহাজের রেডিয়ো মাস্তুল দেখছে সে। একটু পরই দেখতে পেল সাগরে ভাসছে একটা লাইফবেল্ট। নৌকো নামিয়ে লাইফবেল্টটা তুলে আনার আদেশ দিল পেদরো।
বেল্টের গায়ে মাফালতু জাহাজের নাম লেখা আছে। অবাক হলো পেরো। মনে মনে বলল, মাফালডু জাহাজ ডুবে গেছে?
যাত্রী এবং ডাকবাহী এই বিরাট আমেরিকান, জাহাজটার নাম পেদরোর অজানা নয়। এই জাহাজে অনেক সম্পদ থাকবে। সেগুলোকে উদ্ধারের জন্যে ইকথিয়ান্ডারকে কাজে লাগানো গেলে দারুণ হয়। কিন্তু সাগরের কত গভীরে ডুবেছে মাফালডু? ইকথিয়ান্ডারের কোমরের শেকল ওই পর্যন্ত খাবে? বোধহয় যাবে না। শেকল ছাড়া ইকথিয়ান্ডারকে সাগরে নামানোর ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। ইকথিয়ান্ডার আর না-ও ফিরতে পারে।
খুব মাথা খাটাচ্ছে পেদরো। একদিকে সম্পদ আহরণের লোভ, অন্যদিকে ইকথিয়ান্ডারকে হারানোর ভয়। প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে পেদরোর হৃদয়।
ডুবে যাওয়া জাহাজের মাস্তুলের কাছে চলে এসেছে জৈলিফিশ জাহাজ। ডেকের ওপর রেলিঙের ধারে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে এসে খালাসীরা। একজন খালাসী বলে বসল, আমি আগে মাফালতু জাহাজে কাজ করেছি। বড় জাহাজ। সাগরের বুকে আস্ত একটা শহর বললে মিথ্যে বলা হবে না। মাফালডুতে চড়তে পারত কেবল আমেরিকার সেরা বড়লোকরা।
ভাবছে পেদরো জুরিতা। ভ্রূ কুঞ্চিত। ডোবার আগে জাহাজটা সম্ভবত রেডিয়োতে সাহায্য চাওয়ার সুযোগ পায়নি। তা নাহলে এতক্ষণে আশেপাশের বন্দর থেকে একাধিক জাহাজ চলে আসত ওটার যাত্রীদের উদ্ধার করতে। সাগরে গিজগিজ করত ধনরত্ন আহরণে মত্ত অসংখ্য মানুষ। কিন্তু এখানে কেউ নেই। এত বড় একটা দুর্ঘটনার কথা কেউ জানে না ওরা ছাড়া। এমন সুযোগ বারবার আসে না। দেরি করা ঠিক হবে না। প্রয়োজনে শেকল ছাড়াই ইকথিয়ান্ডারকে নামাতে হবে সাগরে। কিন্তু ইকথিয়ান্ডারকে যদি হারাতে হয়? আচ্ছা এক কাজ করলেই তো হয়, মুক্তোর স্তূপটা ওর জামিন হিসেবে দখলে রাখল…
দাম কত হবে মুক্তোগুলোর? দামি মুক্তো তো? ইকথিয়াল্ডার মুক্তোর গুণাগুণ কি বোঝে! বাড়িয়ে বলেছে নিশ্চই?
দুরকম ভাবনার টানাপোড়েনে অস্থির লাগছে পেদরো জুরিতার। বুঝতে দেরি হয়নি, মাফালডুর সোনাদানা আর ইকথিয়ান্ডারের মুক্তোর স্তুপ, দুটোই দখল করতে পারলে সবচেয়ে ভাল হয়। মুক্তোগুলো যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। ইকথিয়াজার ছাড়া আর কেউ জানে না ওগুলোর অবস্থান। কিন্তু মাফালডু ডোবার খবর একটু দেরিতে হলেও জেনে যাবে সবাই। তখন আর একা সব ভোগ করার উপায় থাকবে না। আগে দরকার মাফালডু খালি করা।
সেখানেই সেই মাস্তুলের পাশেই জেলিফিশকে দাঁড় করাতে বলে কেবিনে ফিরে এলো পেদরো। একটা চিঠি লিখল। চিঠিটা পকেটে পুরে চলে এলো ইকথিয়ান্ডারের কাছে। কাগজটা পকেট থেকে বের করে ইকথিয়ান্ডারের হাতে দিতে দিতে বলল, তুমি তো পড়তে পারো, তাই না? এই চিঠিটা গুট্টিয়ারা দিয়েছে তোমাকে।
কাগজে চোখ বোলাল ইকথিয়ান্ডার।
চিঠিতে লেখা আছে:
ইকথিয়ান্ডার,
আমার একটা অনুরোধ রাখবে? আমাদের জাহাজের কাছে আরেকটা জাহাজ আছে, ডুবে গেছে। সেটা থেকে দামি যা কিছু আছে সেসব উদ্ধার করে তুমি আমাকে এনে দাও? আশা করি আমার এই অনুরোধ তুমি রাখবে। ক্যাপ্টেন পেদারো জুরিতা তোমাকে শেকল ছাড়াই সাগরে নামিয়ে দেবে। আমার কসম, ফিরে আসবে তুমি। আশা করি, আমার জন্যে এটুকু অন্তত করবে। আমি চেষ্টা করছি, শীঘ্রি তুমি ছাড়া পেয়ে যাবে।
-গুট্টিয়ারা।
চিঠিটা পেদরো সামনে ধরল ইকথিয়ান্ডার, জিজ্ঞেস করল, গুট্টিয়ারা নিজে কেন এলো না?
ও অসুস্থ বোধ করছে, বলল পেদরো। তুমি কাজ সেরে ফিরে এসো, তখন ওর সঙ্গে দেখা হবে।
ইকথিয়ান্ডারের সন্দেহ দূর হয়নি। জিজ্ঞেস করল আবার, গুট্টিয়ারার এত ধনসম্পত্তির দরকার হয়ে পড়ল কেন হঠাৎ?
জবাব তৈরি, কাজেই অপ্রস্তুত না হয়ে আসল পেরো। তুমি যদি সাধারণ মানুষ হতে তাহলে এপ্রশ্ন করতে পারতে না। কোন্ মেয়ে না ভাল ভাল পোশাক আর গহনা পরতে চায়, বলো? সেসবের জন্যেই তো প্রয়োজন প্রচুর টাকা। ঐ ডুবে যাওয়া জাহাজে অনেক টাকা আছে। ওগুলোর এখন কোন মালিক নেই। গুট্টিয়ারারও টাকা দরকার। সত্যি যদি তুমি গুট্টিয়ারাকে ভালবেসে থাকো তাহলে কেন ওই পড়ে থাকা সম্পদ গুট্টিয়ারার জন্যে নিয়ে আসবে না? ঐ জাহাজের ডাক বিভাগের ঘরে ঢুকলে দেখবে অনেক টাকা, সোনার মোহর, গহনা ইত্যাদি পাবে। তাছাড়া যাত্রীদের গায়ে থাকবে।
রেগে গিয়ে ইকথিয়ান্ডার বলল, সোনাদানার জন্যে আমি কি মড়া ঘাটব? এটা নিশ্চয়ই গুট্টিয়ারা বলে দেয়নি? ও এমন লোভী মেয়ে নয় যে একাজ করতে বলবে আমাকে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে এখন, মনে হচ্ছে…
বিরক্তি বোধ করছে পেদরো। কিন্তু তা প্রকাশ করার কোন উপায় নেই। ইকথিয়ান্ডারের মন থেকে সন্দেহ দূর করতে না পারলে কোন কাজেই এগোনো যাবে না। জোর করে মুখে হাসি টেনে আনল পেদরো। ঠোঁট প্রসারিত করে বলল, নাহ্, তোমাকে ঠকাতে পারব না দেখছি। ঠিক আছে, যাও, সত্যি কথাই বলছি শোনো। মাফালতু জাহাজের সোনাদানা আমি নিজের জন্যে পেতে চাই। এর সঙ্গে গুট্টিয়ারার কোন সম্পর্ক নেই। ও না, আমি বড়লোক হতে চাই।
সেটা আমি আগেই বুঝেছি।
তাহলে তো কথা হয়েই গেল। তোমার সঙ্গে বোঝাঁপড়া করতে আর কোন অসুবিধে থাকল না। ইকথিয়ান্ডার, মাফালডু জাহাজের সমস্ত সোনা চাই আমি। সমস্ত সোনার দাম যদি তোমার সেই মুক্তোর স্তূপের সমান হয় তাহলে সোনা এনে দেয়ার পরপরই তোমাকে ছেড়ে দেব আমি। সমস্যা এখন বিশ্বাসের, বুঝেছ? আমরা দুজন দুজনকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার তো ভয় হচ্ছে টিয়ারার ক্ষতি হবে জেনেও তুমি পালাতে পারো। সেকারণেই ভাবছি তোমাকে শেকল ছাড়া কিভাবে সাগরে নামাব।
গম্ভীর হয়ে গেল ইকথিয়ান্ডারের চেহারা। বলল শান্ত স্বারে, কাউকে কোন কথা দিলে আমি তা রাখি। আগেই বলেছি আমি পালাব না।
সত্যি বলো কিনা সেটা পরীক্ষার সুযোগ আমার এখনও হয়নি। আমি জানি, আমাকে তোমার পছন্দ নয়। সেকারণেই তুমি যদি কথা
রাখো তাহলে আমি বিস্মিত হবো না। কিন্তু গুট্টিয়ারাকে তো তুমি ভালবাসো। ওর অনুরোধ তুমি ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না। সেকারণেই ওর সঙ্গে কথা বলেছি। ও চায় তোমাকে আমি মুক্ত করে দিই। চিঠি ও দিয়েছেও সেকারণেই। ও চাইছে তুমি যাতে সহজেই মুক্তি পাও!
এবার পেনরোর কথাগুলো অনেক বিশ্বাস্য মনে হলো ইকথিয়ান্ডারের। বুঝতে পারল না যে সামান্য কৌশল করেছে পেদরো। মুক্তি সে দেবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে সোনার দাম হতে হবে মুক্তোর স্তূপের চেয়ে বেশি। দাম নির্ধারণ করতে হলে মুক্তোর স্তূপটা চোখে দেখতে হবে তাকে। ইকথিয়ান্ডার মুক্তো নিয়ে হাজির হলে মুক্তোর ও হাতে এসে যাবে পেরোর। তারপর ইকথিয়ান্ডারকে মুক্তি দিতে হবে এমন কোন কথা নেই।
পেরোর কৌশল ইকথিয়ান্ডার বুঝতে পারল না। ওর মনে হলো পেদরো খোলা মনে সব জানিয়েছে তাকে। আর সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না যে গুট্টিয়ারা চিঠি দিয়েছে। পেদরোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল ও।
বিরাট একটা স্বস্তির শ্বাস গোপন করল পেদরো জুরিতা। এখন তারও বিশ্বাস এসে গেছে, ইকথিয়ান্ডার তার কথা রাখবে। মুখে বলল, তাহলে চলো, দেরি না করে কাজ শুরু করে দেয়া যাক।
জাহাজ থেকে সাগরে নামল ইকথিয়ান্ডার। খালাসীরা খেয়াল করল, ইকথিয়ান্ডারের কোমরে কোন শেকল নেই। বুঝতে তাদের দেরি হলো না, মাফালডু জাহাজের সোনা উদ্ধার করতে চলেছে উভচর মানব।
উত্তেজিত হয়ে উঠল খালাসীরাচে সব কি একাই মেরে দেবে ক্যাপ্টেন পেদরো জুরিতা? না, তা স্থতে পারে না। ঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে তাকে রুখে দিতে হবে যে করে হোক। একটু পরই খালাসীদের দলপতির নির্দেশে পেদরোর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সবাই।
ডুবে যাওয়া জাহাজের ডেক থেকে একটা সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের একটা চওড়া করিডরে। করিডরে ঘুটঘুটে আঁধার। চোখ সইয়ে নিতে ইকথিয়ান্ডার খেয়াল করল, দুপাশের খোলা দরজাগুলো দিয়ে আলোর হালকা আভা আসছে। একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ইকথিয়ান্ডার, দেখল পৌঁছে গেছে ও একটা সুসজ্জিত হল ঘরে। প্রকাণ্ড বড় হল ঘর। চেয়ার-টেবিল-সোফার কোন অভাব নেই। একসঙ্গে দুতিনশো লোক এখানে আপ্যায়িত হতে পারবে। হল ঘরের জানালাগুলো দিয়ে সূর্যের মৃদু আলো এসে পড়েছে মেঝেয়। ছাদ থেকে ঝুলছে অত্যন্ত দামি ঝাড়বাতি। ওটার ওপর সাঁতরে এসে বসল ইকথিয়ান্ডার, চারপাশে ভাল করে নজর বোলাল।–করুণ একটা দৃশ্য। যেকারও বুকে কাপ ধরিয়ে দেবে। চেয়ার টেবিল-সোফা, ভাসছে সব ছাদের কাছে, মুদু ঢেউয়ের দোলায় দুলছে ওগুলো। ঘরের এক কোণে পড়ে আছে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো। মেঝেতে দামি কার্পেট বিছানো। দেয়ালে মেহগনি কাঠের প্যানেলিং। দেয়াল ঘেঁষে সারি সারি পাম গাছ। সবুজ পাতা দুলছে। তরতাজা লাগছে গাছগুলোকে দেখতে। আর কদিন পরই লোনা পানিতে মরে যাবে।
গাছগুলোর কাছে চলে এলো ইকথিয়ান্ডার। ওর মনে হলো কে যেন ওকে নকল করছে! কাছে চলে আসছে আরও! খেয়াল করতেই নিজের ভুল বুঝতে পারল ও। ওর সামনে দেয়াল জুড়ে আছে একটা মস্ত আয়না। সেটাতে নিজেরই প্রতিচ্ছবি দেখেছে জাহাজে ও ছাড়া জীবিত কোন মানুষ থাকার উপায় নেই।
আরও কয়েকটা কেবিনে ঢ়ুঁ দিল ইকথিয়ান্ডার। আমেরিকার সম্পদ-সমৃদ্ধির স্পষ্ট চিহ্ন বিলাসিতা থেকেখুঝে নেয়া যায়। মেঝেয় দ্যমি মদের বোতল পড়ে আছে। ফররুপোর ডিশ, ছুরি-কাটা আরও অসংখ্য দামি জিনিসের ছড়াছড়ি। আশ্চর্য! কোন মৃতদেহ এখনও দেখনি ও।
তৃতীয় ডেকে উঠে এলো ও। এবার চোখে পড়ল মর্মান্তিক দৃশ্যটা। একটা মৃতদেহ ফুলে উঠে ছাদের কাছে ভাসছে। এ দুর্ভাগাদের একজন। সময় মতো আর মানুষদের সঙ্গে লাইফ বোটে চড়তে পারেনি।
ঘুরতে ঘুরতে নিচের তলায় চলে এলো ইকথিয়ান্ডার। এখানে গরীব যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা। গা গুলিয়ে উঠল এখানে এসে ইকথিয়ান্ডারের ও নিষ্ঠুর বীভৎস দৃশ্য!
নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু, কেউ এখান থেকে বেরোতে পারেনি। লাইফবোটে জায়গা হতো না, কাজেই বের হতে দেয়া হয়নি বোধহয়। ইউরোপিয়ান, চীনা, নিগ্রো, রেড ইন্ডিয়ান-হরেক জাতির মৃতদেহ ভাসছে ছাদের কাছে। বুঝতে পারল ইকথিয়ান্ডার, খালাসীরা আগে বড়লোকদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। তারপর নিজেদের বাঁচিয়েছে। গরীবদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের ভাগ্যের ওপর। কয়েকটা কেবিনের দরজা মৃতদেহের চাপে এমন শক্ত ভাবে আটকেছে যে ওগুলোয় ইকথিয়ান্ডার ঢুকতেই পারল না। আতঙ্কের চরমে পৌঁছানো মানুষগুলো শেষ মুহূর্তে দরজার কাছে ভিড় করেছিল বের হবার জন্যে। নিজেদের চাপেই নিজেরা আটকে গেছে দরজার কাছে, বেরোতে পারেনি।
আবার করিডরে ফিরে এলো ইকথিয়ান্ডার। করিডরেও কয়েকটা লাশ ভাসতে দেখল। বীভৎস দৃশ্য। ফুলে পচে যাওয়া লাশ মৃদু ঢেউয়ে আস্তে আস্তে দোল খাচ্ছে। গা গুলিয়ে উঠল ইকথিয়ান্ডারের। মনে হলো জানে বাঁচতে হলে দ্রুত এই ভয়ানক কুরবস্থান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে ওকে।
নিজেকেই প্রশ্ন করল ইকথিয়ান্ডার, গুট্টিয়ারা কি জানত কোথায় আমাকে পাঠাচ্ছে ও? মড়া ঘেঁটে অর্থ বিত্ত সংগ্রহের মতো একটা কাজ গুট্টিয়ারা কিছুতেই ভাবতেও পারবে না। পেদরো জুরিতার লোভ আর গুট্টিয়ারার সরলতা আজ এখানে উপস্থিত করেছে ওকে।
ঠিক করল, গুট্টিয়ারা সত্যি এই জাহাজ থেকে কিছু চায় কিনা সেটা জানতে হবে। পেদরো জুরিতা গুট্টিয়ারার মুখ দিয়ে পারলে বলাক, তাহলে এখানে ফিরবে সে, নইলে নয়। জাহাজ থেকে বেরিয়ে এলো ইকথিয়ান্ডার, জেলিফিশ জাহাজে এসে উঠল।
ক্যাপ্টেন পেদরো! গুট্টিয়ারা!
ওর ডাকের জবাব দিল না কেউ। ঢেউয়ের দোলায় নিঃশব্দে দুলছে জাহাজটা, পরিত্যক্ত।
গেল কোথায় সবাই! অবাক লাগছে ইকথিয়ান্ডারের। নতুন কোন কৌশল করল নাকি পেদরো জুরিতা? আবার ডাকল ও, গুট্টিয়ারা!
উপকূলের কাছ থেকে এবার জবাব পেল ও। পেদোর ক্ষীণ কণ্ঠ শুনতে পেল। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বলছে: আমরা এখানে!
চারদিকে তাকাল ইকথিয়ান্ডার। নড়াচড়া দেখে একটা ঝোপের ওপর দৃষ্টি স্থির হলো ওর। খুব সাবধানে ঝোপের পেছন থেকে মুখ বের করল ক্যাপ্টেন পেদরো জুরিতা, চেঁচাচ্ছে, গুঠিয়ার অসুস্থ। শিগগির এখানে এসো, ইকথিয়ান্ডার!
সাগরে ঝাঁপ দিয়ে দ্রুত সাঁতার শুরু করল ইকথিয়ান্ডার! ভীনে উঠে ঝোপের কাছে প্রায় চলে এসেছে এমন সময় গুট্টিয়ারার অস্ফুট কণ্ঠ শুনতে পেল, ওকে সাবধান করছে, পালাও, ইকথিয়ান্ডার, ক্যাপ্টেনের কথা বিশ্বাস কোরো না।
ঘুরে দাঁড়িয়েই দৌড় দিল ইকথিয়ার, আবার ঝাঁপিয়ে পড়ল সাগরে, চট করে ডুবে গেল। সময় মতোই তাকে সাবধান করেছে গুট্টিয়ারা। গুট্টিয়ারা চায় ও যাতে শয়তান ক্যাপ্টেনের হাতে ধরা না পড়ে।
ডুব সাঁতার দিয়ে অনেক দূরে সরে এলো ইকর্থিয়ান্ডার। ঢেউয়ের ওপরে মাথা তুলে তীরের দিকে চাইল, দেখল তীরের কাছে সাদা কি যেন একটা ভাসছে। যতদূর সম্ভব একটা রুমাল। বিদায় জানিয়েছে গুট্টিয়ারা। আর কখনও কি দেখা হবে ওর ইকথিয়ান্ডারের সঙ্গে? গুট্টিয়ারা ওর ভালবাসার প্রতিদান দিয়ে বিদায় নিল।
কিন্তু আমি কি দিতে পারলাম ওকে? নিজেকে প্রশ্ন করল ইকথিয়ান্ডার। নাহ, কিছুই ও দিতে পারেনি গুট্টিয়ারাকে। একটা সময় ছিল যখন সবই ও দিতে পারত গুট্টিয়ারাকে। কিন্তু সেই সুযোগ ও হারিয়েছে। আজ গুট্টিয়ারার কাছে নিজের ভালবাসা প্রমাণ করার আর কোন উপায় নেই।
গভীর পানিতে নেমে এলো ইকথিয়ান্ডার। কেমন একটা অভিমানে বুকটার ভেতর কষ্ট হচ্ছে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, মানুষের কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখবে সে এখন থেকে।