ডক্টর আর জনসন ভালুকটার মাংস কেটে টুকরো টুকরো করে নিলেন। প্রায় দেড়শো পাউন্ড ওজন ভালুকটির। ডক্টর কিছুটা আশস্ত হলেন, যাক অন্তত বেশ কিছুদিন খাবারের চিন্তা করতে হবে না। একগাদা মাংসের টুকরো নিয়ে ওরা ফিরে এল ইগলুতে।
এতদিন অনাহারে থাকার পর একসঙ্গে এত মাংস দেখতে পেয়ে সবাই কাঁচা মাংসের ওপরই ঝাপিয়ে পড়ে আর কি! কিন্তু ডক্টর সবাইকে বাধা দিলেন। বললেন, কাঁচা মাংস খেলে যে-কোন রোগে পেয়ে বসতে পারে। সুতরাং মাংস না পুড়িয়ে খাওয়া চলবে না।
এদিকে এক অঘটন ঘটে গেছে। সকাল থেকে সবাই ভালুক শিকারে এত ব্যস্ত ছিল যে স্টোভের আগুন কখন নিভে গেছে তা কেউই লক্ষ্য করেনি। এখন আগুন জ্বালাতে না পারলে মাংস পোড়ানো হবে কি করে? এ ব্যাপারে জনসন নিজেকে সবচেয়ে বেশি দোষী ভাবতে লাগল। কেননা একে তো তার লক্ষ্য রাখার কথা ছিল স্টোভের আগুন যেন না নেভে। উপরন্তু চকমকি পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাবার জন্যে একটা ইস্পাতের টুকরো ছিল জনসনের পকেটে। সেটাও সে খুইয়ে বসেছে। চারদিকে তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পাওয়া গেল না ইস্পাতের টুকরোটা।
ভীষণ বিপদে পড়ে গেছে অভিযাত্রীরা। আগুনের প্রয়োজন শুধু মাংস সেঁকার জন্যে নয়। এখন দিনের বেলা, সূর্যের তাপ আছে। কিন্তু রাতে আগুন না জ্বাললে শীতে জমে সবাইকে মরতে হবে। ক্যাপ্টেন দুঃখ করে বললেন, আমাদের কপালই খারাপ। সঙ্গে টেলিস্কোপ, ক্যামেরা বা লেন্স জাতীয় কোন কিছু নেই। থাকলে লেন্স দিয়ে সূর্যের আলো থেকে আগুন ধরানো যেত।
ডক্টরও হতাশ সুরে সায় দিলেন ক্যাপ্টেনের কথায়! কিন্তু কি যেন ভাবছেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ডক্টর বলে উঠলেন, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলেছে। লেন্স আমি নিজেই বানাব।
ডক্টরের কথা শুনে অন্যেরা তাঁকে ঘিরে ধরল নতুন প্ল্যান শুনবার জন্যে। কোথাও ভাঙা একটা কাচের টুকরো পর্যন্ত নেই। ডক্টর লেন্স বানাবেন কি দিয়ে?
বরফ কেটে। ডক্টর এবার বলতে লাগলেন তার প্ল্যান। রোদকে একটা বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করার জন্যে লেন্স হলে সবচেয়ে ভাল হয়। তবে সূক্ষ্ম কৃস্টাল দিয়েও কাজ চলে। মিষ্টি পানির বরফের টুকরো দিয়ে আমি লেন্স বানিয়ে নেব। নোনা পানির বরফ দিয়ে হবে না, কেননা নুনের জন্যে সেটা অস্বচ্ছ হয়।
অল্প কিছুক্ষণ খুঁজেই মিষ্টি পানির বরফের একটা টিলা বের করে ফেলল জনসন। ডক্টর প্রয়োজনমত একটা টুকরো কেটে নিলেন। চেঁচে ঘষে অল্প সময়ের মধ্যেই একটা সূক্ষ্ম কৃস্টাল বানিয়ে ফেললেন ডক্টর। তারপর কয়েকটা কাঠের টুকরো একসঙ্গে জড়ো করে তার উপর হাতে বানানো লেন্সটি ধরলেন তিনি। সূর্যকিরণ এক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হতেই দপ করে কাঠে আগুন ধরে গেল। অভিযাত্রীরা ডক্টরকে অভিন্দন জানালেন, থ্রী চিয়ার্স ফর ডক্টর ক্লবোনি, হিপ হিপ হুররে! হিপ হিপ হুররে!