জিমের কথা শুনে ভয়ে হাত-পা পেটের ভেতর ঢুকে যাবার দশা হল। ডাকাত দলের সাথে এই ভাঙা স্টিমারে আটকা পড়লে আর রক্ষে নেই। যে করেই হোক নৌকোটা পেতেই হবে, মনে মনে বললাম। দুরু দুরু বুকে স্টারবোর্ড সাইডের দিকে এগিয়ে গেলাম আমরা। নাহ! নৌকোর চিহ্নমাত্র নেই কোথাও। ভয়ে আর এগুতে চাইল না জিম। অনেক বলে-কয়ে ওকে রাজি করালাম। ইতিমধ্যে পানির নিচে জাহাজের অনেকটা তলিয়ে গেছে। স্কাইলাইটের খড়খড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে স্টার্নের দিকে রওনা দিলাম আমরা। হলঘরের দরজার কাছাকাছি এসে সত্যি সত্যি দেখা পেলাম নৌকোটার। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। নৌকোয় উঠব, এমন সময়ে দরজা খুলে প্রায় আমার নাকের ডগায় ডাকাতদের একজন উঁকি দিল। ধড়াস করে উঠল আমার বুক, মনে হল এই বুঝি ধরা পড়লাম।
কিন্তু না, পরক্ষণে ঝট করে মাথা ভেতরে টেনে নিল লোকটা। বিল, লণ্ঠনটা আড়াল কর! বলল সে। তারপর মালবোঝাই একটা বস্তা নিয়ে এসে নৌকোয় চাপল। লোকটা প্যাকার্ড। ওর পেছন পেছন বিলও এসে নৌকোয় উঠল।
সব ঠিক? তাহলে এবার রওনা দেই, বলল প্যাকার্ড।
এদিকে আমার হাত ধরে এসেছে, খড়খড়ি ধরে ঝুলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ বিল বলল, থাম। ওর পকেট দেখেছ?
না। তুমি?
না। ওর সব টাকা পকেটে আছে।
তাহলে আবার চল। নগদ টাকা রেখে খালি মালপত্র নেয়ার কোন মানে হয় না।
নৌকো থেকে উঠে আবার জাহাজের ভেতর ঢুকে গেল ওরা। আমিও আর দেরি না করে নৌকোর ওপর লাফিয়ে পড়লাম, জিমও এসে পড়ল ঝটপট। চট করে ছুরি দিয়ে বাঁধন কেটে দিলাম আমি। আবার ভেসে চললাম আমরা।
নিঃশব্দে বসে আছি। তরতর করে স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে নৌকো। চারদিকে সব নিঝুম-নিস্তব্ধ। কয়েক সেকেন্ডের ভেতর ভাঙা স্টিমার থেকে প্রায় একশো গজ দূরে চলে এলাম আমরা। দেখতে দেখতে অন্ধকার যেন শুষে নিল জাহাজটাকে।
একটু বাদেই শুরু হল ঝড়, সেই সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। নদীতীরে কোন আলোর লেশমাত্র নেই। শো শো করে স্রোতের টানে ভেসে চললাম আমরা। অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি থামল, তবে মেঘ কাটল না। হঠাৎ বিজলিচমকের আলোয় দেখলাম সামনেই কালো মত কী একটা যেন ভাসছে। কাছে গিয়ে দেখলাম সেটা আমাদের ভেলা।
আর তিন রাত চললেই কায়রোতে পৌঁছুব আমরা, জিমকে বললাম। কায়রো শহরের কাছে ওহাইয়ো নদী মিসিসিপির সাথে মিশেছে। আগেই ঠিক করেছিলাম সেখানে গিয়ে ভেলাটা বেচে দেব আমরা। তারপর স্টিমার ধরে ওহাইয়ো হয়ে যে-সব রাজ্যে নিগ্রোদের স্বাধীনতা আছে, সেগুলোর কোন একটায় চলে যাব। তখন আমাদের আর কোন বিপদ থাকবে না।
দ্বিতীয় রাতে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে গেল চারদিক। এ অবস্থায় পথ চলা ঠিক হবে না। তাই ভেলাটা তীরে বাধার জন্যে দড়িহাতে ডিঙিতে চড়লাম আমি। বৈঠা মেরে পাড়ে পৌঁছে দেখলাম, সবই ছোট ছোট চারাগাছ, ভেলা বাঁধবার মত কোন বড় গাছ নেই। প্রচণ্ড স্রোত বইছে নদীতে। কোনমতে একটা গাছের সাথে পেঁচিয়ে রশিটা বাঁধলাম। কিন্তু একটা হ্যাচকা টানে সেটাকে জড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলে ছুটে চলল ভেলা। ঘন কুয়াশার ফলে সামনের কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ভয় পেয়ে গেলাম আমি, নড়াচড়া পর্যন্ত করতে ভুলে গেলাম। ঘোর কাটতে লক্ষ্য করলাম ভেলাটা দেখা যাচ্ছে না। তাড়াতাড়ি ডিঙিতে উঠে বৈঠা ধরলাম। কিন্তু ডিঙি একচুলও এগোল না। তাড়াহুঁড়ো করতে গিয়ে পাড়ে বাঁধা দড়ি খুলতে ভুলে গিয়েছিলাম। চটু করে উঠে দড়ি খোলার চেষ্টা করলাম। তীব্র উত্তেজনায় শরীর তখন কাঁপছে, ফলে খুলতে বেশকিছুটা সময় লাগল।
অবশেষে ডিঙি নিয়ে বাঁক ঘুরে যতটা সম্ভব দ্রুত এগিয়ে চললাম ভেলার সন্ধানে। আমার চারপাশে সাদা ঘন কুয়াশার চাদর। কোন দিকে যাচ্ছি কিছুই ঠাহর করতে পারছি না। বুঝলাম বৈঠা বাওয়া বৃথা, এই অবস্থায় স্রোতের টানে ভেসে চলা ছাড়া উপায় নেই। মুখের কাছে দুহাত তুলে হপ হপ শব্দ করলাম। উত্তর শোনার আশায় কান পেতে রইলাম। দূর থেকে ছোট্ট একটা হুঁপ শব্দ ভেসে এল। ক্ষীণ আশা জাগল আমার মনে। শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে চললাম কুটিল কুয়াশা চিরে। হঠাৎ বুঝতে পারলাম শব্দটা যেদিক থেকে আসছে, সেদিকে না গিয়ে ডানদিকে সরে যাচ্ছি আমি। পরমুহূর্তে দেখলাম এবার শব্দটার বাঁ-দিকে যাচ্ছি। দিশাহারা অবস্থা হল আমার, খালি একবার এদিক একবার ওদিক ঘুরছি। হঠাৎ খাড়া পাড়ের সাথে পুঁতো খেল ডিঙিটা। আঁধারে বিশাল গাছগুলোকে ভূতের মত দেখাচ্ছে। স্রোতের টান আমাকে ঠেলে বয়ে নিয়ে গেল।
কয়েক সেকেন্ডের ভেতর আবার সবকিছু নীরব-নিথর হয়ে গেল। কেবল আমার হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক ছাড়া কোন শব্দ কানে আসছে না। মনে হল মিনিটে একশ বার লাফাচ্ছে ওটা। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এল আমার।
হাল ছেড়ে দিলাম। ব্যাপার আসলে কী, বুঝলাম। যেটাকে বাঁক মনে করেছিলাম, সেটা আসলে দ্বীপ। জিম ওই দ্বীপেরই অপরদিকে আছে। অনুমান করলাম দ্বীপটা পাঁচছয় মাইল লম্বা এবং আধ মাইল চওড়া হবে। এই গোলকধাঁধার ভেতর ছোটাছুটির ফলে ইতিমধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। শুয়ে পড়লাম ডিঙির মধ্যে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ঘুম এসে গেল। যখন জাগলাম, আকাশে জ্বলজ্বল করছে অসংখ্য তারা। মেঘ পুরোপুরি কেটে গিয়েছে। একটা বাঁকের মুখে ভাসছে ডিঙিটা। প্রথমটায় বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি। ভাবলাম, স্বপ্ন দেখছি বুঝি। তারপর যখন সবকিছু মনে করার চেষ্টা করলাম, মনে হল এরই মধ্যে এক হপ্তা কেটে গিয়েছে।
নদীটা এখানে বেশ চওড়া। দুপাশে লম্বা, ঘন গাছের সারি। তারার আলোয় নিরেট দেয়ালের মত দেখাচ্ছে। কিছু দূর যেতেই ভেলাটা চোখে পড়ল। জিম দুহাটুর ভেতর মাথা গুজে ঘুমুচ্ছে। একটা দাঁড় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ডালপালার আবর্জনায় ভরে আছে ভেলাটা। দেখেই বোঝা যায়, বেশ বড়রকমের ঝড় বয়ে গেছে ওটার ওপর দিয়ে।
আমি চট করে এগিয়ে গিয়ে জিমের পাশে শুয়ে পড়লাম। আমাকে জাগাওনি কেন জিম? ওকে ঠেলা মেরে জিজ্ঞেস করলাম।
ধড়মড় করে উঠে বসল জিম। চমকে উঠল আমাকে দেখে, যেন ভূত দেখছে। অতিকষ্টে বোঝালাম ওকে, আমি মরিনি। সব শুনে আশ্বস্ত হল ও। আমি বেঁচে আছি। দেখে ঈশ্বরের কাছে শুকরিয়া আদায় করল।
তারপর আরও দুচারটে কথা বলে আবার শুয়ে পড়লাম আমরা। দিনভর ঘুমিয়ে ফের রাতে রওনা দিলাম। ভাসতে ভাসতে একটা বড় বাঁকের কাছে গিয়ে হাজির হলাম। নদী এখানটায় চওড়া। দুতীরে স্তূপীকৃত কাঠ দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে আছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুমট গরম।
কায়রোতে পৌঁছুলেও আমরা তা আদৌ টের পাব কি-না, তা নিয়ে আলোচনা চলল আমাদের ভেতর। বোধহয় পাব না, বললাম আমি। সেখানে নাকি মোটে দশ-বার ঘরের বাস। তারা বাতি না জ্বালালে বুঝব কী করে যে একটা শহর পার হয়ে যাচ্ছি আমরা?
যেখানে দেখবে দুটো বড় নদী এসে মিশেছে, সেটাই কায়রো, বলল জিম। কিন্তু জিমের কথায় মোটেও আশ্বস্ত হতে পারলাম না আমি। কেন-যেন মনে হতে লাগল, একটা দ্বীপের চারপাশ ঘুরে বারবার সেই একই নদীতে পড়ছি আমরা। কথাটা জিমকে জানাতেই ভড়কে গেল ও। জিজ্ঞেস করল, তাহলে উপায়?
এক কাজ করা যায়, বললাম, বাতি দেখামাত্র ডিঙি নিয়ে সেখানে যাব আমি। তাদের বলব, পেছনে একটা মহাজনি নৌকোয় আমার বাবা আসছেন। তিনি নতুন ব্যবসায়ী। এখান থেকে কায়রো কত দূর তা-ই জানতে চান।
প্রস্তাবটা জিমের মনে ধরল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলাম আমরা, যদি কোথাও কোন আলোর রেখা চোখে পড়ে। অপেক্ষার কাল যেন আর ফুরোতে চায় না। এক সময় আমাদের দুচোখের পাতা ভারি হয়ে এল। কোথাও ক্ষীণ আলোর রেখা চোখে পড়লেই জিম চেঁচিয়ে উঠছে: ওই যে কায়রো!
আসলে ওগুলো জোনাকির ঝাঁক। বেশ বুঝতে পারছি, মুক্তির এত কাছাকাছি এসে জিমের আর সবুর সইছে না, ছাড়া পাবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে মন।
ক্রমশ প্রলাপ বকতে শুরু করল ও। বলল, স্বাধীন এলাকায় গিয়ে টাকা সঞ্চয় করবে। যখন প্রচুর টাকা জমবে, মিস ওয়াটসনের বাসার কাছেই যে-খামারবাড়িতে ওর বউ কাজ করে, সেখানে গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনবে টাকা দিয়ে। তারপর দুজনের রোজগার জমিয়ে ওদের দুই সন্তানকে মুক্ত করবে। আর ওদের মনিব যদি ওদের বেচতে না চায়, তবে যারা দাসপ্রথার বিরোধীতাদের কাউকে দিয়ে বাচ্চা দুটোকে চুরি করাবে।
জিমের কথা শুনে ঠাণ্ডায় প্রায় জমে গেলাম আমি। ওর পালানোর প্রচেষ্টায় সাহায্য করছি বলে বিবেকের দংশনে ক্ষতবিক্ষত হতে লাগলাম। ঠিক করলাম, ধরিয়ে দেব ওকে। এই নতুন সিদ্ধান্ত নেবার সাথে সাথে যেন একটা পাষাণভার আমার বুকের ওপর থেকে নেমে গেল। তীর দেখার আশায় উদগ্রীব দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। আপন মনে একটা গানের কলি ভাঁজতে লাগলাম।
আর কোন ভয় নেই। আমরা বেঁচে গেছি, আচমকা তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল জিম।
চমকে উঠলাম আমি। দূরে কয়েকটা টিমটিমে বাতি চোখে পড়ল। যাই, আমি গিয়ে দেখে আসি আগে, বললাম।
খুশি মনে ডিঙি সাজিয়ে দিল জিম। আমাকে বসতে দেয়ার জন্য ওর পুরোন কোটটা আসনের মত করে বিছিয়ে দিল। তারপর হাতে বৈঠা ধরিয়ে দিয়ে বলল: শিগগিরই খুশিতে চিৎকার করে আমি বলব, কেবল হাকের জন্যেই এটা সম্ভব হল। এখন আমি স্বাধীন। জিম তোমাকে কখনও ভুলবে না, হাক। তুমি আমার একমাত্র বন্ধু।
ওর কথায় কেমন যেন মিইয়ে গেলাম আমি। তীরে যাবার সব উৎসাহ যেন হারিয়ে গেল। ধীর গতিতে রওনা হলাম। গজ পঞ্চাশেক যাবার পর আবার চেঁচিয়ে উঠল জিম, ওই যে হাক যাচ্ছে। সত্যবাদী হাক। জীবনে এই প্রথম একজন শ্বেতাঙ্গ দেখলাম যে জিমের কাছে তার কথা রাখছে।
বড় অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু মনকে বোঝালাম আমার কর্তব্য আমাকে করতেই হবে। ধরিয়ে দিতে হবে জিমকে। কিছুদূর যেতেই একটা নৌকো এগিয়ে এল। বন্দুকহাতে দুজন লোক বসে। ওদের দেখে ডিঙি থামালাম আমি। ওরাও থামল।
ওই ভেলাটা কি তোমার? ওদের একজন জানতে চাইল।
হ্যাঁ, স্যার। কেউ আছে এতে?
আছে, স্যার।
দেখ, আজ রাতে পাঁচ জন নিগ্রো ভেগেছে। ওই যে দূরে যে-বাঁকটা দেখছ, ওখান থেকেই পালিয়েছে ওরা। তা তোমার লোকটা সাদা না কালো?
চট করে উত্তর জোগাল না আমার মুখে। একবার মনে হল, দিই বলে জিমের কথা। পরক্ষণে দুর্বলতা অনুভব করলাম ওর জন্যে। একটু ইতস্তত করে বললাম, সাদা।
আমরা দেখব।
আমিও চাই আপনারা দেখুন, বললাম। ওই ভেলায় আমার বাবা রয়েছেন। হয়ত দয়া করে ভেলাটাকে টেনে পাড়ে আনতে সাহায্য করবেন আপনারা। বাবার ভীষণ অসুখ। মা আর মেরি অ্যানেরও সেই অবস্থা।
ঠিক আছে, খোকা। চল।
বাবা আপনাদের মেহেরবানিতে খুশি হবে, খানিকটা যাবার পর বললাম আমি। কেউ রাজি হচ্ছে না ভেলাটা পাড়ে নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে।
কেন, তোমার বাবার কী অসুখ? সন্দিগ্ধ গলায় প্রশ্ন করল একজন।
বাবার…মানে…তেমন কিছু হয়নি। ওরা দাড় টানা বন্ধ করল। ভেলার প্রায় কাছে চলে এসেছি আমরা।
মিথ্যে কথা! খেকিয়ে উঠল একজন। সত্যি করে বল, খোকা, কী হয়েছে তোমার বাবার।
বলব, স্যার। কসম বলছি। দয়া করে চলে যাবেন না আপনারা। ভেলার কাছে না এলেও চলবে, আপনারা নাহয় দূর থেকেই গুণ টানবেন।
জন, নৌকো ঘোরাও! চেঁচিয়ে উঠল একজন। খোকা, তুমি দূরে থাক। তোমার বাবার বসন্ত হয়েছে। খুব ছোয়াচে। তুমি রোগ ছড়াতে চাও নাকি?
দেখুন, স্যার, গলা করুণ করে বললাম, এর আগে প্রত্যেককে বলেছি আমি। কিন্তু তারা শোনামাত্র চলে গেছে।
বেচারা! শোন, কী করতে হবে তোমাকে বলছি আমি। এখান থেকে কুড়ি মাইল ভাটিতে নদীর বাঁ-ধারে একটা শহর পড়বে। সেখানে গিয়ে সাহায্য চাইবে। বলবে, তোমার আত্মীয়রা সর্দি-জ্বরে ভুগছে। খবরদার, আর যেন বোকামি কোরো না। মনে হচ্ছে, তোমার বাবা গরিব। এই বিশ ডলারের একটা গিনি এই কাঠের টুকরোর ওপর রাখলাম। এটা যখন ভেসে তোমার কাছে যাবে, তুলে নিয়ো।
দাঁড়াও, পার্কার, বলল জন। এই নাও, আমিও কুড়ি ডলার দিলাম। এবার তাহলে আসি, খোকা। মিস্টার পার্কার যা বললেন সেভাবে চললে, আর কোন অসুবিধে হবে না তোমার।
আর শোন, খোকা, বলল পার্কার, কোন নিগ্রোকে পালিয়ে যেতে দেখলে ধরিয়ে দিয়ো। এতে করে কিছু রোজগারও হবে তোমার।
নিশ্চয়ই, স্যার, বললাম আমি।
লোক দুটো চলে যাবার পর ভেলায় ফিরে এলাম। জিমকে ধরিয়ে দিইনি বলে আবার বিবেকের শাসানি শুরু হল। কিন্তু সেই সঙ্গে এ-ও বুঝতে পারলাম ওকে ধরিয়ে দিলে আমি অনুশোচনায় ভুগব। কারণ জিমকে ভালবাসি আমি। আর তাছাড়া ঠিক কাজটা করে লাভ-ই বা কী? তাই শেষমেষ ঠিক করলাম এ নিয়ে আর মাথা ঘামাব না। ছইয়ের ভেতর গিয়ে দেখলাম জিম নেই। হকচকিয়ে গেলাম আমি। জিম! ডাকলাম ওকে।
এই যে, হাক, আমি এখানে। হালের নিচে কেবল নাক ভাসিয়ে ও ঘাপটি মেরে ছিল। ওই দুজন লোক চলে গেছে শুনে ভেলায় উঠে এল। সত্যি, হাক, তোমার জবাব নেই। কেমন সুন্দর বোকা বানালে ওদের, বলল জিম। আজ আমার জীবন বাঁচিয়েছ তুমি। তোমার কথা এই বুড়ো জিম কোনদিন ভুলতে পারবে না।