সকালে নাস্তার আগে আরেক দফা শহরে গেল সাইলাসখালু কিন্তু এবারেও খালি হাতে ফিরতে হল তাকে। খালা-খালু দুজনাই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
এমন সময় খালুর একটা কথা মনে পড়ল। স্যালি, কাল পোস্ট অফিসের ওরা একটি চিঠি দিয়েছিল, এটা তোমাকে দিয়েছি।
না।
যাই, নিয়ে আসি গিয়ে।
চিঠিটা স্যালিখালার হাতে দিল সাইলাসখালু। খাম খুলতে যাবে খালা হঠাৎ তার চোখ পড়ল দরজার ওপর। চেঁচিয়ে উঠল খালা। কয়েক জন লোক সিড কে বয়ে আনছে খাটিয়ায় করে। ওদের পেছনেই ডাক্তার, জিম, এবং আরও অনেকে।
চিঠি ফেলে রেখে সিডের কাছে ছুটে গেল খালা। হায়! হায়! মরে গেছে ও। কেঁদে ফেলল খালা। ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকাল টম, বিড়বিড় করে বলল কিছু।
বেঁচে আছে! ও ঈশ্বর! ধন্যবাদ! ঝরঝর করে খালার গাল বেয়ে জল নামল, এবার খুশিতে। এটা কর, ওটা কর, বলে বাড়ি মাথায় করে তুলল। টমের বিছানা ঠিক করতে ছুটে বাসার ভেতর ঢুকে গেল খালা, পেছন পেছন খালুও গেল।
আমি ওখানেই রয়ে গেলাম, জিমের কপালে কী আছে জানতে হবে। সবাই গাল দিচ্ছে ওকে, কিন্তু জিম নিশ্চুপ। মুখে রা নেই। আমাকে চেনে এমন কিছুই প্রকাশ পেল না তার ভাবভঙ্গিতে। ওকে নিয়ে আবার কুঁড়ে ঘরে আটকে রাখল ওরা।
বুড়ো ডাক্তার কুঁড়ে পর্যন্ত গেল। ওকে মেরো না, লোকগুলোকে বলল সে। ও লোক খারাপ না। ইচ্ছে করলেই পালাতে পারত। কিন্তু উল্টো আমাকে সাহায্য করেছে। ওর সাহায্য না পেলে এই ছেলেটাকে বাঁচানো কঠিন হত। জীবনে এত ভাল নার্স আমি দেখিনি। সত্যি, ওর জুড়ি মেলা ভার।
জিম সম্পর্কে ডাক্তারের কথা শুনে খুশি হলাম আমি। সবাই একবাক্যে স্বীকার করল, জিমের একটা পুরস্কার পাওয়া উচিত।
পরদির সকালে আমাকে জানাল ওরা, সিড এখন ভালর দিকে, সারা রাত জেগে ওর শুশ্রষা করেছে স্যালিখালা। ক্লান্ত দেহে খালা এখন একটু বিশ্রাম নিতে গেছে। চোরের মত সিডের ঘরে ঢুকলাম আমি। শান্তিতে ঘুমুচ্ছে ও। বিছানার পাশে বসে অপেক্ষায় রইলাম কখন ও উঠবে, আর কখন দুজনে শলা করে একটা গল্প ফাদব। গল্পটা আবার এমন হতে হবে যেটা শুনে বিশাস করে লোকে। স্যালিখালী ফিরে এল। ওখানেই বসে রইলাম আমরা। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি সিডের দিকে। কিছুক্ষণ পর নড়েচড় উঠল ও। চোখ মেলল।
হ্যালো! আমাকে বলল টম। আমি এখন কোথায়? কী হয়েছিল? ভেলা কই?
আছে।
জিম?
ভাল।
ভাল হলেই ভাল। স্যালিখালাকে বলেছ সব? আমি মুখ খোলার আগেই খালা জিজ্ঞেস করল, কী বলবে, সিড?
কেন, টম আর আমি কিভাবে জিমকে মুক্ত করেছি তা-ই! সবকিছু আমায় খুলে বল, সিড? আমি বাধা দেয়ার আগেই গরগর করে খালাকে সব বলে দিল টম।
স্তম্ভিত হয়ে ওর কথা শুনল খালা। তারপর ঢোক গিলে বলল, বাপের জন্মেও এমন শুনিনি আমি। পাজি, নচ্ছার, তোরাই তাহলে সব নষ্টের গোড়া। চাবকে তোদের পিঠের ছাল তুলে ফেলব। খবরদার, ভুলেও যেন আর জিমের কাছে না দেখি তোদের। দেখলে…
আমার দিকে ঘুরল টম। ও পালাতে পারেনি? জিজ্ঞেস করল।
না, পারেনি, বলল স্যালি খালা।
মুহূর্তে বিছানায় উঠে বসল টম। চোখজোড়া জবা ফুলের মত লাল হয়ে গেছে। নাকের পাটা দুটো মাছের ফুলকোর মত খুলছে-বন্ধ হচ্ছে। ছেড়ে দাও ওকে! এখুনি! এই মুহূর্তে! ক্ষিপ্ত সুরে বলল টম। ওকে আটকে রাখার অধিকার কারো নেই।
শান্ত হ, বাবা, শান্ত হ, টমকে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করল স্যালিখালা।
কিন্তু কোন কথাই কানে তুলল না টম। শোন, স্যালিখালা, বলল ও, জিমকে আমি ছেলেবেলা থেকে চিনি। এই যে টম রয়েছে এখানে, এ-ও চেনে। বুড়ি মিস ওয়াটসন দুমাস আগে মারা গেছে। মরার আগে ওকে মুক্তি দিয়ে গেছে।
যে-লোক আগেই মুক্তি পেয়েছে তাকে আবার ছাড়াতে গিয়েছিলি কোন দুঃখে?
সে তুমি বুঝবে না, খালা। আমি মজা করতে… আচমকা টমের গলায় মাছের কাটা ফুটল যেন, পরক্ষণেই চেঁচিয়ে উঠল, আই বাপ! পলিখালা!
সত্যি-ই, চৌকাঠের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পলিখালা। মুখে স্বর্গীয় হাসি তৃপ্তির ছাপ। তাকে জীবনে আর না দেখলেই ভাল হত, ভাবলাম মনে মনে।
স্যালিখালা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল বোনকে। টানতে টানতে নিয়ে এল খাটের কাছে। আবহাওয়া গরম হতে যাচ্ছে, আন্দাজ করলাম আমি। খাটের তলাটাই সবচেয়ে নিরাপদ ঠেকল আমার কাছে। সুট করে ঢুকে পড়লাম সেখানে। একটু মাথা বের করে দেখলাম, চশমার ফাক দিয়ে টমের দিকে তাকিয়ে আছে, পলিখালা।
হ্যাঁ, আমি, বলল খালা। আমার দিকে তুই তাকাস না, টম।
পলি, আঁতকে উঠল স্যালিখালা, কি বলছ আলতাবল। ও তো সিড। আর এই হচ্ছে টম…আরে টম আবার কই গেল। এইত একটু আগেও এখানে ছিল।
ওর নাম হাকফিন, স্যালি। অ্যাই, হাকফিন, খাটের নিচ থেকে বেরো। সব কথা শোনা চাই আমার।
আমাদের কথা শুনে স্যালিখালা হকচকিয়ে গেল। সাইলাস খালুর অবশ্যি ভাবান্তর হল না কোন। চুপ করে রইল সে। পলিখালা টমকে সমর্থন করল। বলল, হ্যাঁ, মিস ওয়াটসন মরার আগে মুক্তি দিয়ে গেছে জিমকে। এখানে তার আসার পেছনে কারণও ব্যাখ্যা করল খালা।
যখন দেখলাম স্যালি লিখেছে টম আর সিড নিরাপদে পৌঁছেছে। তখনই খটকা লাগল আমার। কারণ সিড বাসাতেই ছিল আমার সাথে। ব্যাপার কী জানার জন্যে তোর কাছে আমি দুটো চিঠি লিখেছি, স্যালি। কিন্তু কোন জবাব দিসনি তুই।
কই, কোন চিঠি পাইনি আমি।
টমের দিকে ঘুরল পলিখালা। বলল, টম, চিঠিগুলো দে।
কোন চিঠি?
সে তুই ভালই জানিস, কোন চিঠির কথা বলছি আমি।
আমার বাক্সে আছে। পড়িনি।
চাবুক পেটা করা উচিত তোকে। দাঁড়া, ভাল হয়ে নে আগে, তারপর দেখাচ্ছি মজা। স্যালি, আমার শেষ চিঠিটা পেয়েছিস? আমার আসার কথা ছিল এতে।
হ্যাঁ, পেয়েছি, বলল স্যালি খালা। কাল এসেছে। তবে এখনও পড়ার সুযোগ হয়নি।