টমকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি, এত সব ঝামেলা সে কেন করতে গেল।
নদীর মোহনা পর্যন্ত গিয়েই জিমকে ওর মুক্তি পাওয়ার কথা জানাতাম, টম বলল। তারপর শান-শওকতের সাথে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতাম ওকে। ব্যান্ড বাজাতাম, মিছিল করতাম। তখন ও রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যেত। আর সেই সঙ্গে আমরাও।
আমরা সময় নষ্ট না করে জিমের শেকল খুলে দিলাম। বাসার সবাই যখন জানল, টমকে বাঁচানোর জন্যে জান-প্রাণ দিয়ে খেটেছে ও, সকলেই ওকে মাথায় তুলে নাচল। আটক থাকার সময় ভাল ব্যবহারের জন্যে টম ওকে চল্লিশটা ডলার দিল।
টাকা পেয়ে খুশিতে ফেটে পড়ল জিম, মারা যায় আরকি! কেমন, হাক, বলল সে, বলেছিলাম না আমার বুকে লোম আছে। এর অর্থ অনেক টাকা হবে আমার। কেমন হল তো। হুঁ-হুঁ, বাবা! চিহ্ন-টিহ্ন মান একটু।
এরপর টম আর আমি নতুন অভিযানের প্ল্যান আঁটতে বসলাম।
চল, কেটে পড়ি এখান থেকে, আমাকে বলল ও। হপ্তা দুয়েকের জন্যে রেড ইন্ডিয়ানদের দেশ থেকে বেরিয়ে আসি গিয়ে।
যেতে পারলে ভালো হত, আমি বললাম, কিন্তু ফুটো পয়সাও নেই হাতে। বাড়িতেও পাব বলে মনে হয় না, কারণ বাবা হয়ত অ্যাদ্দিনে ফুকে দিয়েছে সব।
না, দেয়নি, বলল টম। সবই আছে—ছহাজার ডলার আর তার সুদ। ওই ঘটনার পর তোমার বাবা আর ফেরেননি। অন্তত আমি আসার আগে তো নয়ই।
তিনি আর কোন দিনই ফিরবেন না, হাক, ভরাট অথচ দরদী গলায় বলল জিম।
কেন?
নদীতে ভেসে আসা সেই কুঁড়েটার কথা তোমার মনে আছে, হাক? একটা লোক মরে পড়ে ছিল সেখানে, লোকটার মুখ দেখতে তোমায় মানা করেছিলাম আমি, মনে আছে? সেই লোক ছিল তোমার বাবা।
টম এখন বেশ ভালো হয়ে গেছে। তবে আগের মতই রাজ্যের যত উদ্ভট খেয়াল কিলবিল করে তার মাথায়। সেগুলো কাজে লাগানোর জন্যে সুযোগের অপেক্ষায় আছে ও। যাক, আমার কথাও ফুরিয়ে এসেছে, লেখার মত বিশেষ আর কিছুই নেই। লেখা জিনিসটা এত কষ্টের, আগে জানলে কখনই এ-কাজে হাত দিতাম না। তাই, এখানেই শেষ করছি। তবে তার আগে একটা কথা বলে নিই, আবার এখান থেকে পালাব আমি। স্যালিখালা আমাকে পুষ্যি নিয়েছে, উদ্দেশ্য আমাকে ভদ্দরলোক বানাবে। এ আমার একেবারে সহ্যের বাইরে। আগেও এমন কাণ্ড ঘটেছে। সুতরাং ও-পথে আর নয়!
***