ঢাকায় থাকি

বিশ্ব সাহিত্য

  • হোম
  • ঢাকা বৃত্তান্ত
  • বিক্রয়
  • অভিজ্ঞতা
  • সেবা
  • টু-লেট
  • রিভিউ
  • ফার্স্টসেল
  • স্টকস্টাডি
  • বইমেলা
  • বিশ্ব সাহিত্য
  • আড্ডা
  • জবস
  • সাইট ব্যবহারবিধি
Menu
ঢাকায় থাকি
  • হোম
  • ঢাকা বৃত্তান্ত
  • বিক্রয়
  • অভিজ্ঞতা
  • সেবা
  • টু-লেট
  • রিভিউ
  • ফার্স্টসেল
  • স্টকস্টাডি
  • বইমেলা
  • বিশ্ব সাহিত্য
  • আড্ডা
  • জবস
  • সাইট ব্যবহারবিধি
ঢাকায় থাকি

গাঢ় অন্ধকার নেমে এসেছে চারদিকে

একটা পানির গাড়ি চালিয়ে জেলখানার ফটক দিয়ে ভেতরের চত্বরে এসে দাঁড়াল অলসেন।

গাঢ় অন্ধকার নেমে এসেছে চারদিকে।

প্রহরারত পুলিশ হাঁক দিল, কে যায়?

শেখানো কথাটা যন্ত্রের মতই আবৃত্তি করে গেল অলসেন, সাগর-দানোর জন্যে পানি নিয়ে যাচ্ছি।

জেলের কর্মচারীরা সবাই জানে, এখানে আছে এক অসাধারণ বন্দি যাকে রাখা হয়েছে একটা চৌবাচ্চার মধ্যে। সেই বন্দি আবার সমুদ্রের পানি ছাড়া থাকতে পারে না। তাই পিপে ভর্তি করে সমুদ্রের পানি নিয়ে আসা হয় তার জন্যে।

গার্ড বলল, যাও! কোণের সামনের রান্নাঘরটা ঘুরেই পাবে তার সেল!

আলসেন গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাল জেলখানার মূল বাড়ির কাছে। জেলারের নির্দেশ সেরকমই। সব ব্যবস্থাই করে রেখেছেন জেলার সাহেব।

দরজায় যে সব প্রহরীরা ডিউটি করে তাদের তিনি নানা অছিলায় সরিয়ে দিয়েছেন। এবার দরজায় এসে দাঁড়ালেন জেলার সাহেব। তাঁর সঙ্গে এসে দাঁড়াল ইকথিয়ান্ডার।

নিচু স্বরে জেলার সাহেব বললেন, চট করে গাড়ির ভেতরের ওই পিপটার মধ্যে ঢুকে পড়ো, ইকথিয়ান্ডার।

দ্বিরুক্তি না করে ইকথিয়ান্ডার ঢুকে পড়ল সেই পিপের মধ্যে। আর সঙ্গে সঙ্গে জেলার সাহেব আদেশ দিলেন, চালাও।

ঘোড়ার পিঠে লাগামের ঝাঁকুনি দিল অলসেন। জেলখানার চত্বর ছেড়ে গাড়িটা বেরিয়ে এল ফটক পার হয়ে। তারপর আভেনিদা-দ্য অ্যালভেয়ার রাস্তাটা ধরে ধীরে ধীরে তার গাড়ি এগিয়ে চলল রিতেরা রেল স্টেশন আর ম্যাল রেল স্টেশন পার হয়ে খেয়াল করলে যে কেউ দেখতে পেত অন্ধকারের মধ্যে এক নারী-মুর্তি নিঃশব্দে অনুসরণ করে চলেছে অলসেনের পানির গাড়িকে।

বুয়েন্স আয়ার্স শহরের সীমানা পার হয়ে চলল অলসেনের গাড়ি। রাত গভীর হয়ে উঠছে। রাস্তা নির্জন। পথটা এঁকেবেঁকে গেছে সাগরতীর পর্যন্ত। গাড়ি চলেছে সেই পথ ধরে; আর সেই নারী-মূর্তিও চলেছে গাড়ি অনুসরণ করে। অল্প দূরে এবার শোনা গেল সগর্জনে তীরে এসে আছড়াচ্ছে সাগরের ঢেউ।

চারদিকে একবার চেয়ে দেখল অলসেন! সৈকত জনশূন্য। কিন্তু হঠাৎ একটা মোটরের হেডলাইটের তীব্র আলো ঝলসে উঠল অন্ধকারের মধ্যে। ঘোড়ার লাগাম টেনে গাড়ি দাড় করিয়ে একটু অপেক্ষা করল অলসেন। তারপর মোটরগাড়িটা পাশ কাটিয়ে চলে যাবার পর পিছনের সেই নারী-মূর্তির উদ্দেশে একবার ইঙ্গিত করল।

অলসেন যাকে ইঙ্গিত করল, সে আর কেউ নয়, সে গুট্টিয়ারা। ইঙ্গিত অনুযায়ী একটা পাথরের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল গুট্টি। অলসেন আর একবার চারদিকে ভাল করে দেখে নিয়ে পিপের গায়ে টোকা মেরে বলল, বেরিয়ে এসো, ইকথিয়ান্ডার, আমরা পৌঁছে গেছি।

পিপের ভিতর থেকে মাথা তুলল ইকথিয়ান্ডার। চারপাশে একবার চেয়ে দেখল, তারপর লাফ দিয়ে নামল মাটিতে।

বিশালদেহী অলসেনের দিকে হাত বাড়িয়ে, করমর্দন করে সে বলল, ধন্যবাদ অলসেন। আজ বিদায়ের দিনে আমি বুঝে গেলাম যে এই মাটির পৃথিবীতে তুমি ছিলে আমার সত্যিকার এক বন্ধু। বিদায়!

কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছে ইকথিয়ান্ডারের। ঘন ঘন হাঁফাচ্ছে ও। আবার তার সেই শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেছে।

তার হাতে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে অলসেন বলল, ধন্যবাদের কিছু নেই, ভাই! তোমার জীবন নিরাপদ হোক, এই আমার কাম্য। মানুষের কাছ থেকে তুমি দূরে দূরেই থাকবে। মানুষ বড় লোভী জীব। সুযোগ পেলেই আবার তারা তোমাকে ধরবে। খুব সাবধানে থেকো। বিদায়।

বেশ শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে গেছে ইকথিয়ান্ডারের। কোনো রকমে সে বলল, হ্যাঁ, আমি চলে যাব অনেক দূরে, নির্জন এক প্রবাল দ্বীপে, যেখানে কোন জাহাজই যায় না। ধন্যবাদ, অলসেন। গুট্টিয়ারার কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না ও! দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিঃশব্দে।

হাত মেলানো হয়েছে আগেই। এবার সে ছুটে গেল সাগরের দিকে। একটা বিশাল ঢেউ মাথা তুলে দাঁড়াল ইকথিয়ান্ডারের সামনে। ঢেউয়ের মাথায় ফসফরাসের সাদা ফেনার মুকুট। এবার সেটা প্রচণ্ড গর্জনে আছাড় খেয়ে পড়বে তীরভূমিতে। অভ্যাস মত সেটা ভেঙে পড়ার আগেই লাফ দেবে ইকথিয়ান্ডার। কিন্তু পিছিয়ে এল সে। পিছন দিকে মুখ ফিরিয়ে চিৎকার করে কি যেন বলল।

ঢেউয়ের গর্জনের মধ্যেও অলসেন শুনতে পেল ইকথিয়ান্ডার বলছে, অলসেন! অলসেন! যদি কখনও গুট্টিয়ারার সঙ্গে দেখা হয় তাহলে তাকে আমার অভিনন্দন জানিয়ো। ওকে বোলো যে ওর কথা আমি চিরকাল মনে রাখব।

আর একটা বিশাল ঢেউ আবার সেইরকম ফেনার জটা মাথায় নিয়ে উঠে এল ইকথিয়ান্ডারের সামনে। বেদনার্ত, স্বরে সে একবার বলে উঠল, বিদায়, গুট্টিয়ারা! তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সাগরের বুকে পাথরের আড়াল থেকে মৃদু স্বরে গুট্টিয়ারা বলে উঠল, বিদায়, ইকথিয়ান্ডার!

কিন্তু সাগরের প্রবল গর্জনে ওর কথা কেউই বোধহয় শুনতে পেল না? হু-হু করে কোথা থেকে ছুটে এলো ঝড়ো বাতাস। নিজের পায়ের জোরে যেন আর দাঁড়াতে পারছে না গুট্টিয়ারা। এতটুকু বেসামাল হলেই তাকে মাটিতে ফেলে দেবে এই পাগলা হাওয়া। কোনো রকমে টলতে টলতে পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে অলসেনের হাত ধরল গুট্টিয়ারা।

কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ করে সালভাদর ফিরে এসেছেন তাঁর বাড়িতে। নিজের গবেষণাতেই মনোনিবেশ করেছেন তিনি। শোনা যায়, কোন এক দূর দেশে যাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছেন।

ক্রিস্টোর সংবাদ সেই একই রকম। সালভাদরের কাছেই সে এখনও চাকরি করছে। যেভাবেই হোক, তার কেন যেন মনে হয়েছে যে মানুষ হিসেবে সালভাদর পৃথিবীর আর সব মানুষের চেয়ে অনেক উঁচুতে। সুতরাং কোনভাবেই তাকে ত্যাগ করে চলে যাওয়া যায় না।

ক্যাপ্টেন পেদরো একটা নতুন জাহাজ কিনেছে। সে এখন মুক্তো খুঁজে বেড়াচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে। সারা আমেরিকার মধ্যে সেরা ধনী হওয়ার স্বপ্ন তার সফল হয়নি। কিন্তু সেজন্যে ভাগ্যের বিরুদ্ধে তার কোন নালিশ নেই। সেটা স্পষ্টই বোঝা যায় তার পাকানো গোঁফের উদ্ধত ভঙ্গি দেখে। এখনও সেই বেপরোয়াভাবেই সে ঘোরে, আর ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

পেদরোর সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদের পর গুট্টিয়ারা বিয়ে করেছে অলসেনকে। তারা বাস করছে এখন নিউ ইয়র্ক শহরে।

লা-প্লাটা উপসাগরে এখন আর সাগর-দানোর কথা কেউ বলে না। শুধু মাঝে মাঝে গুমোট রাতের স্তব্ধতার মাঝে যখনই কোন দুর্বোধ্য শব্দ শুনতে পাওয়া যায়, বয়স্ক লোকেরা তখন তরুণদের বলেই যে, শোনো। ওই ভাবেই শাঁখ বাজাত সেই দানো।

ইকথিয়ান্ডারকে শুধু ভুলতে পারেনি বুয়েন্স আয়ার্সের একটি মাত্র লোক। শহরের সবাই তাকে চেনে। সে হলো আধোন্মাদ বালথাযার। তাকে দেখতে পেলেই আঙুল দেখিয়ে লোকে বলে, ওই যে যাচ্ছে সাগর-দানোর বাবা!

এসব মন্তব্য গায়ে মাখে না বালথাযার। তার যত আক্রোশ স্প্যানিয়ার্ডদের ওপর। স্প্যানিয়ার্ড দেখলেই তাদের অভিশাপ দেয় সে, মাটিতে থুথু ছিটায়। তবে তার পাগলামি কারও ক্ষতি করে না বলে পুলিশও তাকে কিছু বলে না।

শুধু মাঝে মাঝে সাগরে যখন ঝড় ওঠে তখন যেন উদ্ভ্রান্ত হয়ে ওঠে সে। ছুটে চলে যায় সাগর তীরে। উত্তাল ও বিপজ্জনক ঢেউকে গ্রাহ্য না করেই উঠে দাঁড়ায় একটা পিচ্ছিল পাথরের ওপর। ঝড় শান্ত না হওয়া পর্যন্ত দিল্লাত কেবল ডেকে চলে, ইকথিয়ান্ডার। ইকথিয়ান্ডার!

কিন্তু সাগর তার রহস্য বালথাযারের কাছে উন্মোচন করে না, কোন মানুষের কাছেই করে না।

Recent Posts

  • গাঢ় অন্ধকার নেমে এসেছে চারদিকে
  • কাজ থেকে ফিরে
  • মামলা হওয়ায়
  • বুয়েন্স আয়ার্সের পাবলিক প্রসিকিউটর
  • ডাক্তার সালভাদরের সঙ্গে

Categories

©2025 ঢাকায় থাকি | Powered by WordPress & Superb Themes