বাগ্মী হিশেবে পৃথিবী-জোড়া নাম হয়েছিলো শেরিডানের। আঠারো শতকের গোড়ার দিকে যে-বাড়িতে তার জীবনান্ত ঘটেছিলো, আঠারো শতকের শেষের দিকে সেই বাড়িতেই থাকতেন রিফর্ম ক্লাবের সভ্য ফিলিয়াস ফগ। কিন্তু পরিহাস এটাই যে শেরিডান কথা বলতে যত ভালোবাসাতেন ফিলিয়াস ফগ কিন্তু ঠিক ততটাই ভালোবাসতেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে–পারতপক্ষে কোনো কথা না-বলতে পারলেই বুঝি তিনি সবচেয়ে খুশি থাকতেন।…
এরাউণ্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ
০২. মিস্টার ফিক্স, ডিটেকটিভ
ফগ জানতেন তার এই বাজি নিয়ে বিলেতে রীতিমত একটা হৈ-চৈ পড়ে যাবে। হলোও তাই। এই অদ্ভুত বাজির কথা যখন খবরের কাগজে বেরুলো, তখন সারা ইংল্যাণ্ড আর আয়ারল্যাণ্ডে একটা তুমুল শোরগোল পড়ে গেলো। যে শুনলো, সেই নানান রকম যুক্তি-তর্ক দিয়ে এই দুঃসাহসিক পর্যটনের পরিণাম আলোচনা করতে লাগলো। কেউকেউ বললে, ফগ নিশ্চয়ই সফল হবেন। কিন্তু বেশির ভাগ…
০৩. মিস্টার ফিক্সের অনুসন্ধান
একটু পরেই জেটিতে ফিক্সের সঙ্গে পাসপার্তুর দেখা হয়ে গেলো। ফিক্স শুধোলেন : কী-হে? তোমাদের পাসপোর্টে ঠিকঠাক স্বাক্ষর করা হয়েছে তো? আরে! আপনি যে! ধন্যবাদ! হ্যাঁ, সবই ঠিক হয়েছে। বম্বাই চলেছে বুঝি? হ্যাঁ। এত তাড়াতাড়ি আমরা চলেছি যে এখনও আমার কাছে সবই স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। এইটে তো সুয়েজ, কেমন না? হ্যাঁ, সুয়েজ। তাহলে আমরা মিশরে,…
০৪. ঘূর্ণিপাকে
যেদিন পৌঁছুবার কথা, তার দু-দিন আগেই মংগোলিয়া বম্বাইয়ের জাহাজ-ঘাটায় এসে ভিড়লো। সন্ধে আটটার সময় কলকাতার ট্রেন ছাড়বে। ফগ হুইস্ট খেলা শেষ করে তীরে নামলেন। পাসপার্তুকে কতগুলো দরকারি জিনিশপত্র কিনতে দিয়ে সময়মতো রেলস্টেশনে হাজির হতে বললেন, তারপর সোজা গেলেন কন্সাল আপিশে। বম্বাইয়ের দ্রষ্টব্য স্থানগুলোর প্রতি ফগের কিছুমাত্র আকর্ষণ ছিলো না। তাই কন্সাল আপিশ থেকে বেরিয়ে সোজা…
০৫. দুঃসাহসের ডাকে
ব্যাপারটি যেমন গুরুতর, তেমনি দুঃসাহসিক। অসম্ভব বললেও চলে। অগ্রপশ্চাৎ নাভেবে দুঃসাহসের ডাকে এভাবে সাড়া না-দিলেই ভালো করতেন ফগ। এ-কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে কে জানে বিপক্ষের হাতে তাকে মরতে হবে কি-না! অন্তত চিরকালের জন্যে বন্দী হবেন কি না, তা-ই বা কে জানে? তাহলেই তো সব খতম হয়ে গেলো। যেজন্যে এত পরিশ্রম করে তিনি এতদূর এসেছেন, তা ব্যর্থ…
০৬. বিপদ যখন ঘনিয়ে আসে অতর্কিতে
পঁচিশে অক্টোবর ভোরবেলা ফিলিয়াস ফগ কলকাতা পৌঁছুলেন। বেলা একটার সময় হংকং-এর জাহাজ ছাড়বে, সুতরাং তখনও ঘণ্টা-কয়েক সময় হাতে ছিলো। ডায়রি খুলে ফগ দেখলেন ছাব্বিশে অক্টোবর তার কলকাতা পৌঁছুবার কথা। আজ তেইশ দিন হলো তিনি লণ্ডন ছেড়েছেন। জাহাজ তাড়াতাড়ি আসায় হাতে যে-দু-দিন সময় প্রায় ফাউ পাওয়া গিয়েছিলো, আউদাকে উদ্ধার করতে গিয়েই তা কেটে গেছে। সময়ের হিশেব…
০৭. ডিটেকটিভ ফিক্সের তৎপরতা
এর পরও জাহাজে পাসপার্তুর সঙ্গে ফিক্সের অনেকবার দেখা হয়েছিলো। কিন্তু তার রকম-শকম দেখে ফিক্স আর তার কাছ থেকে কোনো খবর বার করবার কোনো চেষ্টাই করেননি। কিন্তু তবুও ব্যাপারটা আর সোজাভাবে নিতে পারলো না পাসপার্তু। সে ভাবতে লাগলো : আমরাও যেখানে যাই, ফিক্সকেও সেখানে দেখা যায়! ব্যাপারটা বড্ড ঘোরালো ঠেকছে তো! নিশ্চয়ই ও-ব্যাটা একটা স্পাই। ফগ…
০৮. ইচ্ছে থাকলে উপায়ও থাকে
এদিকে চখানায় যখন ফিলিয়াস ফগের ভবিষ্যৎ ও আশা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিলো, তখন তিনি নিশ্চিন্ত মনে আউদাকে নিয়ে হংকঙের সাহেব-পাড়ায় বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। তার অনুরোধে আউদা ইওরোপে যেতে রাজি হয়ে পড়ায় এতদূর পথ পাড়ি দেয়ার জন্যে কতগুলো জিনিশ কেনাকাটা করা দরকার হয়ে পড়েছিলো। ফগের মতো কোনো ইংরেজ হয়তো একটা ব্যাগ সঙ্গে নিয়েই সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াতে…
১২. ভাগ্য যখন বিরূপ
আমেরিকার ডাক কুইন্স-টাউনে নামতো। একটি দ্রুতগামী ট্রেনে সেই ডাক পাঠানো হতো ডাবলিনে। ডাবলিনে ডাক নেবার জন্যে লিভারপুলগামী স্টীমার প্রস্তুতই থাকতো। ফগ হিশেব করে দেখলেন, সেই পথে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের বারো ঘণ্টা আগেই লিভারপুল পৌঁছুনো যাবে—আর অনায়াসেই আটটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে পৌঁছুনো যাবে লণ্ডন। রাত একটার সময় আঁরিয়েতা কুইন্সটাউনে নোঙর করলো। তিলমাত্র দেরি নাকরে ফগ ট্রেনে উঠলেন,…
১৩. আউদার কথা
লণ্ডনে পৌঁছেই ফিলিয়াস ফগ সোজা বাড়ি চলে এলেন, ক্লাবে আর গেলেন না। এমনিতর সর্ব-বাজি-ধরা এক ভ্রমণে অপরের দোষে শেষমুহূর্তে হেরে-যাওয়া যে কী মর্মান্তিক তা অন্যে বুঝতে পারবে না। কিন্তু মিস্টার ফগ তখনও অবিচলিত। তার যথাসর্বস্ব তখন বারিং-এর গদিতে ছিলো—সে-টাকা এখন রিফর্ম ক্লাবের সভ্যদের। খরচপত্র বাদে তার হাতে যা-কিছু সামান্য টাকাকড়ি ছিলো, তা নিয়েই কোনোরকমে এবার…