লিভারপুল। ৫ এপ্রিল। ১৮৬০ সাল। লিভারপুল হেরাল্ডের ছোট্ট এক খবর সবার মনোযোগ কেড়ে নিল। পরদিন অর্থাৎ ৬ এপ্রিল ফরওয়ার্ড জাহাজ নিউ প্রিন্স ডক থেকে অজ্ঞাত যাত্রায় নোঙর তুলছে। প্রতিদিন এমন কত জাহাজ আসে যায় কে তার খোঁজ রাখে? যে যার কাজে ব্যস্ত। কোন জাহাজ ছাড়ল আর কোন জাহাজ বন্দরে ঢুকল তা নিয়ে কেউ তেমন মাথা…
দি ভয়েজেস এন্ড এডভেঞ্চার অফ ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস
০২. সমুদ্রে যাত্রার সব আয়োজনই প্রায় শেষ
সমুদ্রে যাত্রার সব আয়োজনই প্রায় শেষ। ৬ এপ্রিল রওনা হবার দিন ঠিক করা হয়েছে। কারা যাচ্ছে তার একটা লিস্ট তৈরি করেছে শ্যানডন। অদৃশ্য ক্যাপ্টেন সহ মোট আঠারো জনের নাম রয়েছে লিস্টে। তারা: কে. জেড-ক্যাপ্টেন, রিচার্ড শ্যানডন-ফার্স্ট মেট, জেমস ওয়াল-সেকেন্ড মেট, ডক্টর ক্লবোনি-ডাক্তার, জনসন-ডেক নাবিকদের অফিসার, সিম্পসন-হার্পনার, বেল-ছুতোর, ব্ৰানটন-চীফ এঞ্জিনিয়ার, প্লোভার-সেকেন্ড এঞ্জিনীয়ার, স্ট্রং-বাবুর্চি, ফোকার-বরফ সর্দার, ওয়ালটন-কামার,…
০৩. জাহাজ সমুদ্রে ভাসতেই সবকিছু স্বাভাবিক
জাহাজ সমুদ্রে ভাসতেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এল। নাবিকদের উত্তেজনা, ভয়, ভীতি সব উবে গিয়ে সমুদ্র যাত্রার আনন্দ ফুটে উঠল সবার চোখে-মুখে। সমুদ্র। যাত্রার মজাই এটা। যাত্রার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যত ভীতি আর উত্তেজনা। যাত্রা শুরু হলেই সব ঠিক। সবাইকে তখন ভ্রমণের নেশায় পেয়ে বসে। পাল তুলে তরতরিয়ে ছুটে চলেছে জাহাজ। ইতিমধ্যেই পার হয়ে গেছে রেশ…
০৪. নানান ঝড় ঝাপটার মধ্যে দিয়ে
নানান ঝড় ঝাপটার মধ্যে দিয়ে মেরুবৃত্ত পার হবার পর একটা বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল শ্যানডন এবং জাহাজের অন্য সবার জন্যে। ৩০ এপ্রিল ভোরে শ্যানডন তার ঘরে ঢুকেই অবাক হয়ে গেল। টেবিলের ওপর একটা চিঠি! তার নামেই লেখা। বিস্ময়ের ঘোরে শ্যানডন, অনেকক্ষণ বোকার মত দাঁড়িয়ে থেকে ডক্টর, জেমস, ওয়াল ও জনসনকে ডেকে আনল। খাম ছিড়ে চিঠিটা…
০৫. ডক্টর ক্লবোনি অনিশ্চিত অবস্থায়
ডক্টর ক্লবোনি অনিশ্চিত অবস্থায় বসে থাকবার লোক নন। তিনি গ্যারী আর শ্যানডনকে নিয়ে আবার নেমে পড়লেন বরফের ওপর। এগোবার রাস্তা খুঁজে বার করতেই হবে। ডক্টররা নেমে যেতেই নাবিকেরা এক কান্ড করে বসল। ওদের বদ্ধ ধারণা সব। বিপদের মূলই হচ্ছে কুকুরটা। ওকে মারলে বা ফেলে দিলেই ওদের সব বিপদ কেটে যাবে। শ্যানডনও আর একরোখামি না করে…
০৬. ক্যাপ্টেনকে তার কেবিন থেকে বেরুতে দেখে
ক্যাপ্টেনকে তার কেবিন থেকে বেরুতে দেখেই স্যার বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল শ্যানডন। পর মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে অবাক কণ্ঠে বলল, গ্যারী! তুমি…! সবাই দেখল লম্বা জুলপি দিয়ে এতদিন ঢাকা ছিল ওর মুখ। আজ জুলপি কেটে ফেলায় তার মুখে গাম্ভীর্যময় একটা ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেছে। দেখলে মনে হয় যেন গ্যারীর জন্মই হয়েছে শুধু হুকুম দেবার জন্যে। হতভম্ব নাবিকেরা…
০৭. ফরওয়ার্ডের ক্যাপ্টেনকে পেয়ে সবারই খুশি
ফরওয়ার্ডের ক্যাপ্টেনকে পেয়ে সবারই খুশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি যে ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস হবেন তা কেউ চায়নি বা ভাবতেও পারেনি। তাই তার নাটকীয় আবির্ভাবে নাবিকেরা কেউই খুব একটা খুশি হয়েছে বলে মনে হল না। সবাই তার একরোখা স্বভাবের কথা জানে। আর এটাও জানে যে, তার কথামত না চললে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। পরদিনই ডক্টর, শ্যানডন ও জনসনকে…
০৮. জাহাজ যতই এগিয়ে চলছে
জাহাজ যতই এগিয়ে চলছে নাবিকেরাও ততই নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। মেলভিল উপসাগরে জাহাজ পৌঁছার পর সবাই দেখল ওখানকার নীল জল। মাঝে মাঝে সবুজ দেখাচ্ছে। ডক্টর জানালেন নীল জলে কীটাণু অথবা জেলীফিশ থাকে না বলেই এমন হয়। হানার সিম্পসনও সমুদ্র সম্পর্কে বেশ জ্ঞান রাখে। সে বলল, সমুদ্রে যে তেলতেলে জিনিস ভেসে বেড়াচ্ছে তার মানে হল…
০৯. জাহাজের পরিস্থিতি থমথমে
জাহাজের পরিস্থিতি থমথমে। পেনের সঙ্গে ক্যাপ্টেনের ব্যবহারে সবাই গুম হয়ে আছে। এমনি অসন্তোষের মাঝেই বীচার পয়েন্টে জাহাজ পৌঁছল। কিন্তু হায়! কোথায় সেই বরফহীন সমুদ্র? হ্যাটেরাস অবস্থাটা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে মাস্তুলের মাথায় উঠলেন। যদি কোনদিকে দেখা যায় সেই আকাক্ষিত সমুদ্র! কিন্তু সবই দূরাশা! চোখে-মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে নেমে এলেন ক্যাপ্টেন। দিনদিন শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। একদিন…
১০. প্রতিদিন শীতের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে
প্রতিদিন শীতের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। ঘরে চব্বিশ ঘণ্টাই আগুন জ্বলে। আগুনের আঁচ একটু কমে এলেই মেঝে, বল্টু, পেরেক সবকিছুতেই বরফ জমা শুরু হয়ে যায়। এমন কি নিঃশ্বাসও জমে যায়। সবাই তাই সারাক্ষণ আগুনের আশেপাশেই থাকে। কিন্তু ক্যাপ্টেনের হুকুম, কেউ যেন অলসভাবে বসে না থাকে। প্রতিদিনই সবাইকে কিছুটা সময় ডেকে পায়চারি করে, দৌড়াদৌড়ি করে শরীর গরম…