শঙ্করের সেবা-শুশ্রূষার গুণে ডিয়েগো আলভারেজ সে যাত্রা সেরে উঠল এবং দিন পনেরো শঙ্কর তাকে নিজের কাছেই রাখলে। কিন্তু চিরকাল যে পথে পথে বেড়িয়ে এসেছে, ঘরে তার মন বসে না। একদিন সে যাবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। শঙ্কর নিজের কর্তব্য ঠিক করে ফেলেছিল। বললে— চল, তোমার অসুখের সময় যেসব কথা বলেছিলে, মনে আছে? সেই হলদে হীরের…
চাঁদের পাহাড়
০১. চাঁদের পাহাড় – প্রথম পরিচ্ছেদ
শঙ্কর একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে। এইবার সে সবে এফ.এ. পাশ দিয়ে গ্রামে বসেছে। কাজের মধ্যে সকালে বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা দেওয়া, দুপুরে আহারান্তে লম্বা ঘুম, বিকেলে পালঘাটের বাঁওড়ে মাছ ধরতে যাওয়া। সারা বৈশাখ এইভাবে কাটবার পরে একদিন তার মা ডেকে বললেন— শোন একটা কথা বলি শঙ্কর। তোর বাবার শরীর ভালো নয়। এ অবস্থায় আর তোর…
০২. চাঁদের পাহাড় – দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
চার মাস পরের ঘটনা। মার্চ মাসের শেষ। মোম্বাসা থেকে রেলপথ গিয়েছে কিসুমু-ভিক্টোরিয়া নায়ানজা হ্রদের ধারে— তারই একটা শাখা লাইন তখন তৈরি হচ্ছিল। জায়গাটা মোম্বাসা থেকে সাড়ে তিনশো মাইল পশ্চিমে। ইউগাণ্ডা রেলওয়ের নুডসবার্গ স্টেশন থেকে বাহাত্তর মাইল দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে। এখানে শঙ্কর কনস্ট্রাকশন ক্যাম্পের কেরানি ও সরকারি স্টোরকিপার হয়ে এসেছে। থাকে ছোট একটা তাঁবুতে। তার আশেপাশে অনেক…
০৩. চাঁদের পাহাড় – তৃতীয় পরিচ্ছেদ
নতুন পদ পেয়ে উৎফুল্ল মনে শঙ্কর যখন স্টেশনটাতে এসে নামল, তখন বেলা তিনটে হবে। স্টেশনঘরটা খুব ছোট। মাটির প্ল্যাটফর্ম, প্ল্যাটফর্ম আর স্টেশনঘরের আশপাশ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। স্টেশনঘরের পিছনে তার থাকবার কোয়ার্টার। পায়রার খোপের মতো ছোট। যে ট্রেনখানা তাকে বহন করে এনেছিল, সেখানা কিসুমুর দিকে চলে গেল। শঙ্কর যেন অকুল সমুদ্রে পড়ল। এত নির্জন স্থান…
০৪. চাঁদের পাহাড় – চতুর্থ পরিচ্ছেদ
স্টেশনে বড়ই জলের কষ্ট। ট্রেন থেকে যা জল দেয়, তাতে রান্না-খাওয়া কোনোরকমে চলে— স্নান আর হয় না। এখানকার কুয়োর জলও শুকিয়ে গিয়েছে। একদিন সে শুনলে স্টেশন থেকে মাইল তিনেক দূরে একটা জলাশয় আছে, সেখানে ভালো জল পাওয়া যায়, মাছও আছে। স্নান ও মাছ ধরবার আকর্ষণে একদিন সে সকালের ট্রেন রওনা করে দিয়ে সেখানে মাছ ধরতে…
০৬. চাঁদের পাহাড় – ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
দিন পনেরো পরে শঙ্কর ও আলভারেজ উজিজি বন্দর থেকে স্টীমারে টাঙ্গানিয়াকা হ্রদে ভাসল। হ্রদ পার হয়ে আলবার্টভিল বলে একটা ছোট শহরে কিছু আবশ্যকীয় জিনিস কিনে নিল। এই শহর থেকে কাবালো পর্যন্ত বেলজিয়ান গভর্ণমেন্টের রেলপথ আছে। সেখান থেকে কঙ্গো নদীতে স্টীমারে চড়ে তিনদিনের পথ সানকিনি যেতে হবে, সানকিনিতে নেমে কঙ্গো নদীর পথ ছেড়ে, দক্ষিণ মুখে অজ্ঞাত…
০৭. চাঁদের পাহাড় – সপ্তম পরিচ্ছেদ
তারপর দিন দুই কেটে গেল। ওরা ক্রমশঃ গভীর থেকে গভীরতর জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করল। পথ কোথাও সমতল নয়, কেবল চড়াই আর উতরাই, মাঝে মাঝে কর্কশ ও দীর্ঘ টুসক ঘাসের বন, জল প্রায় দুষ্প্রাপ্য, ঝরনা এক-আধটা যদিও বা দেখা যায়, আলভারেজ তাদের জল ছুঁতেও দেয় না। দিব্যি স্ফটিকের মতো নির্মল জল পড়ছে ঝরনা বেয়ে, সুশীতল ও…
০৮. চাঁদের পাহাড় – অষ্টম পরিচ্ছেদ
মাঝ-রাত্রে শঙ্করের ঘুম ভেঙে গেল। কি একটা শব্দ হচ্ছে ঘন বনের মধ্যে, কি একটা কান্ড কোথায় ঘটছে বনে। আলভারেজও বিছানায় উঠে বসেছে। দু’জনেই কান-খাড়া করে শুনলে— বড় অদ্ভুত ব্যাপার! কি হচ্ছে বাইরে? শঙ্কর তাড়াতাড়ি টর্চ জ্বেলে বাইরে আসছিল, আলভারেজ বারণ করলে। বললে— এসব অজানা জঙ্গলে রাত্রিবেলা ওরকম তাড়াতাড়ি তাঁবুর বাইরে যেও না। তোমাকে অনেকবার সতর্ক…
০৯. চাঁদের পাহাড় – নবম পরিচ্ছেদ
আগ্নেয় পর্বতের অত কাছে বাস করা আলভারেজ উচিত বিবেচনা করলে না। ওলডোনিও লেঙ্গাই পাহাড়ের ধূমায়িত শিখরদেশের সান্নিধ্য পরিত্যাগ করে, তারা আরও পশ্চিম ঘেঁষে চলতে লাগল। সেদিকের গহন অরণ্যে আগুনের আঁচটিও লাগেনি, বর্ষার জলে সে অরণ্য আরও নিবিড় হয়ে উঠেছে, ছোট ছোট গাছপালা ও লতাঝোপের সমাবেশে। ছোট বড় কত ঝরনাধারা ও পার্বত্য নদী বয়ে চলেছে— তাদের…
১০. চাঁদের পাহাড় – দশম পরিচ্ছেদ
সে দিন সে রাত্রিও কেটে গেল। শঙ্কর এখন দুঃসাহসে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যদি তাকে প্রাণ নিয়ে এ ভীষণ অরণ্য থেকে উদ্ধার পেতে হয়, তবে তাকে ভয় পেলে চলবে না। দু’দিন সে কোথাও না গিয়ে, তাঁবুতে বসে মন স্থির করে ভাববার চেষ্টা করলে, সে এখন কী করবে। হঠাৎ তার মনে হল আলভারেজের সেই কথাটা— সলস্বেরি… এখান…