দুর্ভাগা লোকটির অতর্কিত সর্পাঘাত মৃত্যু আমাদের উপর একটা গভীর ছাপ ফেলে গেলো। একে তো এ-রকম মৃত্যু মাত্রেই ভয়ংকর, তার উপর একদিক থেকে সে কিনা মরলো সার এডওয়ার্ডকে বাঁচাতে গিয়ে। সেই কালান্তক বিষে ততক্ষণে ভারতীয়টির দেহ নীল ও শক্ত হয়ে গিয়েছিলো। অন্যরা তাড়াতাড়ি একটা কবর খুঁড়ে সেখানেই তাকে সমাহিত করলে, যাতে তার মরদেহটা অন্তত বন্য জন্তুদের…
টাইগার্স এন্ড ট্রেইটর, ষ্টীম হাউজ
২.০৩ তরাইয়ের রানী
পর-পর কয়েকদিন ধরে এমন একটানা বৃষ্টি পড়লো যে শেষটায় আমাদের বিরক্তি বোধ হতে লাগলো। আকাশে সূর্যের দেখা নেই; ছাইরঙা ভারি নিচু মেঘ ঝুলে আছে। সারাদিন, মাঝে-মাঝে বাজ পড়ছে, অনবরত বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে–হুডের শিকারে যাবার পরিকল্পনাটা ভেস্তে গেলো বলে তার সে কী বিষম রাগ! শেষটায় জুন মাসের শেষদিনে আকাশ একটু পরিষ্কার হবার লক্ষণ দেখালো। হুড, ফক্স, গৌমি…
২.০৪ মাতিয়াস ফান খোইতের বিদায়
সার এডওয়ার্ডের অপ্রত্যাশিত প্রস্থান আমাদের সবিশেষ ভাবিয়ে তুললো। এখানে আসার পর থেকেই লক্ষ করছিলুম, তিনি কেমন যেন গম্ভীর হয়ে আছেন। যখনই পাহাড়িরা আমাদের শিবিরে আসতো, তখনই তিনি তাদের নানারকম প্রশ্ন করতেন, খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে জিগেস করে নানাসাহেবের হদিশ জানবার চেষ্টা করতেন। স্পষ্ট বোঝা যেতো, অতীতের ঘটনা তিনি মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে পারেননি। কিন্তু এখন, এ-রকম অবস্থায়,…
২.০৫ বেতোয়ার পথে
১৮ই সেপ্টেম্বর বেহেমথ ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে, তা বোঝাতে গেলে একটা ছোট্ট হিশেব দাখিল করা যেতে পারে। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৮১২ মাইল হিমালয়ের শিবির থেকে দূরত্ব ২৩৬ মাইল বম্বাই থেকে ব্যবধান ১০০০ মাইল কত-কত মাইল ভ্রমণ করেছি, সেই হিশেব করলে অবশ্য আমাদের ভারতদর্শনের অর্ধেকও এখনও হয়নি, কিন্তু হিমালয়ের গায়ে যে-সাত হপ্তা কাটিয়ে এসেছি, সে-কথা মনে…
২.০৬ হুড বনাম ব্যাঙ্কস
২৯শে সেপ্টেম্বর বেহেমথ আস্তে-আস্তে বিন্ধ্যপর্বতের উত্তরের ঢাল বেয়ে উঠতে শুরু করলে। শ্রীগড়ের গিরিসংকটে যাবার এটাই রাস্তা। এ-পর্যন্ত আমাদের রাস্তায় কোনো অসুবিধেই হয়নি। পেরিয়ে এসেছি ত্রিবেণী ও যমুনা, গোয়ালিয়র ও ঝান্সি, বেতোয়া—অর্থাৎ এটোয়া থেকে ৬২ মাইল দূরে চলে এসেছি আমরা। গোয়ালিয়র ও ঝান্সি পেরুবার সময় আমরা সাবধান ছিলুম। কিছুতেই শহরের মধ্যে ঢুকিনি। কারণ এখানেই নানাসাহেবের বান্ধবী…
২.০৭ এক বনাম একশো
সার এডওয়ার্ড আদৌ ভুল বলেননি। প্রায় পঞ্চাশ-ষাটটি হাতি এখন আমাদের পিছনপিছন ধাবমান। দল বেঁধে এগুচ্ছে তারা একযোগে, ইতিমধ্যেই স্টীম হাউসের এত কাছে এসে পড়েছে–বেহেমথের সঙ্গে তাদের দূরত্ব মাত্র দশগজ হবে এখন-যে তাদের খুব ভালো করে লক্ষ করা যাচ্ছিলো। হুড, আমি বললুম, একবার তাকিয়ে দ্যাখো কতগুলো হাতি! এখনও কি তুমি বলতে চাও যে বিপদের কোনো সম্ভাবনা…
২.০১ মাতিয়াস ফান খোইত
শার্দুল ও শয়তান আবার মঁসিয় মোক্লের-এর বিবরণী থেকে আমাদের শিবির বসানো হয়েছে ধবলগিরির তলদেশে, সমুদ্রতল থেকে প্রায় সাত হাজার ফুট উঁচুতে, কলকাতা থেকে একহাজার মাইল দূরে। আমাদের ভ্রমণের প্রথম পর্যায় এখানে এসেই শেষ হয়েছে; কয়েক সপ্তাহ বিশ্রাম গ্রহণ করে অতঃপর আমরা যাবো দক্ষিণাপথে-কর্নেল মানরো পুনরায় অক্লান্ত সন্ধানে বেরুবেন তার চিরশত্রু নানাসাহেবের। জানি না কোনোদিন এঁরা…
২.০৮ লেক পুটুরিয়া
বেহেমথ যখন লেক-পুটুরিয়ার মাঝখানে ভাসছে, তখন এক-এক করে আমরা খতিয়ে দেখছি ক্ষতির পরিমাণ। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছিলো মঁসিয় পারাজারের জন্যে; রান্নাঘরটা হারিয়ে বেচারি ভারি মনমরা হয়ে গেছে। এদিকে আমাদেরও এতক্ষণে ক্ষুধার উদ্রেক হচ্ছে, সকালবেলায় সেই কখন তাড়াহুড়ো করে ছোটোহাজরি সেরেছিলুম—তারপরে মার-কিছু খাওয়া হয়নি। এখন যতক্ষণ-না জব্বলপুর পৌঁছুনো যাচ্ছে, খাওয়া-দাওয়ার কোনো উপায় নেই। ওদিকে বেহেমথের জ্বালানিও শেষ…
২.০৯ মুখোমুখি
বন্দীকে নিয়ে চলেছে কালোগনি। সদলবলে। এতকাল সে তাকে নিজের জীবন পদেপদে বিপন্ন করেও বাঁচিয়েছে নানা বিপদ থেকে, সাপ-বাঘ-হাতির পাল সব-কিছুর হাত থেকে নিজের জীবন বারেবারে বিপন্ন করে কর্নেল মানরোকে সে বাঁচিয়েছিলো কেবল এই মুহূর্তটির জন্যেই; নানাসাহেবের পরম শত্রুকে বন্দী করে নিয়ে গিয়ে প্রভুর কাছে তুলে-দেয়া—এতদিন এই ছিলো তার ধ্যান, জ্ঞান আর স্বপ্ন। সেইজন্যেই তরাইয়ের সেই…
২.১০ কামানের মুখে
স্তব্ধ কালো রাত; আর তারই মধ্যে সেই ভীষণ কামানটা একটা প্রকাণ্ড কালো দৈত্যের মতো মানরোর দিকে যেন তর্জনী নির্দেশ করে রয়েছে। মানরো পড়ে আছেন কামানের নলটার ঠিক সামনে, আষ্টেপৃষ্ঠে দড়ি দিয়ে বাঁধা। কাছেই একটি ভারতীয় দাঁড়িয়ে আছে। বন্দুক হাতে পাহারায়। কেবল মাঝে-মাঝে রাতের স্তব্ধতাকে আরো-প্রকট করে কেল্লার ভিতর থেকে তুমুল হৈ-হল্লার আওয়াজ আসছে-বোধহয় মানরোকে হাতে…