টোয়েণ্টি থাউজ্যাণ্ড লিগ্‌স আণ্ডার দি সী

তিমিজিল, না ড়ুবোপাহাড়? ১৮৬৬ সালে হঠাৎ য়ুরোপ আর আমেরিকার নাবিকদের মধ্যে হুলুস্থুল বেঁধে গেলো। অদ্ভুত সব ব্যাপার ঘটছে সমুদ্রে-রহস্যময় ও বিপজ্জনক; প্রায়ই নাকি মস্ত কী-একটা জন্তু দেখা যাচ্ছে জলের মধ্যে। লম্বা ছুচোলো ঝকমকে একটা বিকট ব্যাপার কেবল যে আকারেই তিমিমাছের চেয়ে ঢের বড়ো তা-ই নয়, গতিবেগেও তিমির চেয়ে অনেক ক্ষিপ্র। অতিকায় কোনো সিন্ধুদানব, বিজ্ঞান যার…

আমি, পিয়ের আরেনা আমার নাম পিয়ের আরোনা। পারী মিউজিয়ামের প্রাকৃতিক ইতিহাসের অধ্যাপক আমি। সেই সূত্রেই আমাকে কিছুকাল আগে নেব্রাস্কা যেতে হয়েছিলো অতীব দুষ্প্রাপ্য কিছু উদ্ভিদ প্রাণীসংগ্রহের অভিযানে। ফ্রাসে ফেরার পথে নিউইয়র্কে এসে আমি যখন সংগৃহীত জিনিশগুলির একটা তালিকা তৈরি করছি, তখনই এই অতিকায় সিন্ধুদানবের জনরব বিস্ফোরণের মতে ফেটে পড়লো। সত্যি এটা কোনো সামুদ্রিক প্রাণী কিনা…

ওই যে, ওখানে কোনসাইল-এর যে দু-হাজার ডলার পুরস্কারের প্রতি কোনো লোভ ছিলো না, তা নয়। কিন্তু আমার বেলায় ব্যাপারটা ছিলো সম্পূর্ণ অন্য রকম। পুরস্কারের তোয়াক্কা রাখি না আমি। কিন্তু তবু কিসের টানে আমিও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেকের উপর দাঁড়িয়ে থাকতুম। আমি নিজের চোখে এই সিন্ধুদানবকে দেখতে চাই। জানতে চাই সে আসলে কোনো অতিকায় নারহোয়াল বা…

অতল জলের আহ্বান নেডের চীৎকার শুনে জাহাজের সব লোক তার দিকে ছুটে গেলো। এবার কিন্তু সিন্ধুদানব আর কারো অগোচর রইলো না। দেখতে পেলুম জাহাজ থেকে বেশ খানিকটা দূরে সমুদ্রের জল আলো হয়ে উঠেছে; জলের উপর ভেসে উঠেছে সেই রহস্যময় দানবটির প্রকাণ্ড পিঠ, আর তার গা থেকেই এই উজ্জ্বল চোখ-ধাঁধানো আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। কিন্তু তখন আর…

কোথাকার জংলি, এরা? অন্ধকারের মধ্যেই পায়ের তলায় একটা লোহার সিঁড়ি অনুভব করতে পারলুম। তারপরেই টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লুম ঘুটঘুটি অন্ধকার একটি ঘরে; শব্দ শুনে বোঝা গেলো মুহূর্তে পিছনের দরজা ঘটাং করে বন্ধ হয়ে গেলো। বেশিক্ষণ কিন্তু অন্ধকারে থাকতে হলো না। খানিক পরে মাথার উপর একটি ফানুশের লণ্ঠনে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে উঠলো, তারপর…

নটিলাস-এর কাপ্তেন নেমো কতক্ষণ যে ঘুমিয়েছিলুম আন্দাজ নেই। ঘুম ভাঙার পর দেখলুম নেড আর কোনসাইল তখন ঘুমে অচেতন। ঘরের ভিতরটা কেমন যেন গুমোট-মততা, নিশো নিতে কষ্ট হয়। কেমন করে যে এর। ঘরের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে তা-ই ভাবছি, এমন সময় হঠাৎ এক ঝলক টাটকা সমুদ্রের হাওয়ায় মুহূর্তে ঘরের দমবন্ধকরা ভাবটা কেটে গেলো। শুয়ে-ওয়ে কত অদ্ভুত…

রাজা ও সন্ন্যাসী কাপ্তেন নেমে আমাকে কী দেখিয়েছিলেন নটিলাস-এ? সব-কিছু। হয় এই ছোট্ট উত্তরটিতে পাঠকদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে, আর নয়তো এ-তথ্যটা মনে রাখতে হবে যে পাতার পর পাতা জুড়ে লিখলেও এই বিচিত্র ড়ুবোজাহাজটির ভিতরকার স্বয়ম্পূর্ণ পৃথিবীর বর্ণনা কিছুতেই সম্পূর্ণ হবে না। দেখেছিলুম মন্ত গ্রন্থাগার-সব ভাষার সব রুচির বই সাজানো আছে থরেথরে, তবে সংখ্যায় বিজ্ঞানের বই-ই…

অতল জলের পথিক এবার, প্রফেসর, ক্যাপ্টেন নেমো বললেন, আমাদের সমুদ্র যাত্রা শুরু হবে; আবার একবার আস্ত পৃথিবী ঘুরে আসবে নটিলাস সমুদ্রের তলা দিয়ে। আমাকে গিয়ে যাত্রার ব্যবস্থা করতে হয়। এখন আমরা পারীর মধ্যরেখার ৩৭°১৫’ পশ্চিম দ্রাঘিমা আর ৩০° অক্ষরেখায় আছি। এখান থেকেই আজ নভেম্বরের আট তারিখে দ্বিপ্রহরে আমাদের সমুদ্রতল অভিযান শুরু হবে। আসলে আমরা এখন…

সিন্ধুতলের মৃগয়া পর-পর সাতদিন ক্যাপ্টেন নেমোর কোনো পাত্তাই পাওয়া গেলো না। একবারও তার সঙ্গে দেখা হলো না আমাদের, কোনো কথা হলো না; একা-একা ঘুরে বেড়ালুম তাঁর গ্রন্থাগারে ও সংগ্রহশালায়; আর নটিলাস ছুটে চললো সেই সিন্ধুতলের চঞ্চল স্রোতের মধ্য দিয়ে তার নির্দিষ্ট পথ ধরে। ক্যাপ্টেন নেমোর কোনো দেখা না-পেয়ে নেড আর কোনসাইল বেশ বিচলিত হয়ে পড়লো।…

সিন্ধুয়োল পরের দিন সকালে জেগে উঠতেই দেখি শরীরটা বেশ হালকা আর ঝরঝরে লাগছে। প্ল্যাটফর্মের উপরে গিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলুম। স্বচ্ছ সুন্দর আবহাওয়া, দিগন্তে কোনো জাহাজের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ফেনিল নীল জলের উপর সূর্যের আলো পড়ে ঝিকিয়ে উঠছে। শান্ত সমুদ্রের মধ্যে কোন অনন্ত ছন্দে ঢেউ উঠছে আর পড়ছে, খানিকক্ষণ পরেই যে-ছন্দ রক্তের মধ্যে নেশা ধরিয়ে…