গল্পটি বলছে কিশোর জিম। ওদের সরাইখানা অ্যাডমিরাল বেনবোয় এসে উঠল বেয়াড়া, কর্কশ স্বভাবের এক নাবিক। কাদের ভয়ে যেন আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে লোকটা সারাক্ষণ। জিমকে বলল, এক-পা খোঁড়া কোন নাবিক দেখলে যেন চট করে খবর দেয় তাকে। কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হল না। বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে পারল না বেচারা, ঠিকই খুঁজে বের করল ওকে দুর্ধর্ষ একদল…
ট্রেজার আইল্যান্ড
০২. ব্লাক ডগ
শীত এসে গেল। দ্রুত বাড়ছে ঠান্ডা। প্রচন্ড তুষারপাত তো আছেই, সেই সঙ্গে প্রবল ঝড়। ক্রমেই খারাপের দিকে চলেছে বাবার অবস্থা। বোঝা যাচ্ছে, এই শীত কাটিয়ে উঠতে পারবে না। বাবা শয্যাশায়ী, ফলে, সরাইয়ের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়েছে আমার আর মার ওপর। ব্যস্ততার মাঝে অবাঞ্ছিত অতিথিটির দিকে বিশেষ নজর দিতে পারছি। জানুয়ারি মাসের একদিন। ভোর হয়েছে। ভয়ঙ্কর…
০৩. কালো মার্কা
বারোটা নাগাদ শরবত আর ওষুধ নিয়ে গেলাম নাবিকের ঘরে। তেমনি পড়ে আছে নাবিক। বিছানার সঙ্গে মিশে আছে একেবারে। সাংঘাতিক দুর্বল। কিন্তু চেহারায় পরিষ্কার উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম। বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। চোখ মেলল নাবিক। ক্লান্ত মৃদুকণ্ঠে বলল, তুমি ছাড়া এখানকার সবাই অমানুষ, জিম। তাই তোমার সঙ্গে সব সময় ভাল ব্যবহার করি। অসহায় মানুষের একটা অনুরোধ রাখবে?…
০৪. জাহাজী-সিন্দুক
অন্ধের নিয়ে আসা কাগজের টুকরোটা পড়ল মা। আমি আগেই পড়ে ফেলেছি। শঙ্কিত হয়ে পড়ল মা। সাংঘাতিক বিপদ ঘনিয়ে আসছে, মায়ের মত আমিও বুঝতে পারছি। ক্যাপ্টেন নিজেই আমাকে বলেছে, তার কিছু জমানো টাকা আছে। থাকলে ওগুলো আছে ওই সিন্দুকেই। এটা নিশ্চয় অনুমান করে ফেলেছে দস্যুরা। সুতরাং ওরা আসবে। ব্লাক ডগ আর অন্ধ দস্যুর মত লোকেরা খামোকা…
০৫. অন্ধের পরিণতি
লোকগুলোকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। মাকে নিয়ে নেমে ব্রিজের তলায় বসিয়ে রেখে এসেছি। কৌতূহল দমন করতে না পেরে ঝোপঝাড়ের আড়ালে আড়ালে চলে এসেছি সরাইয়ের কাছে। গা-ঢাকা দিয়ে বসেছি একটা ঝোপের ভেতরে। মুখটা বের করে রেখেছি শুধু। সরাইয়ের দরজাটা দেখা যাচ্ছে। রাস্তাটাও দেখতে পাচ্ছি। সাত আটজন লোক দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে সরাইয়ের দিকে। একটা লোককে দুদিক থেকে ধরে…
০৬. মানচিত্র
বাড়িতে পাওয়া গেল না ডাক্তার লিভসীকে। চাকরাণী জানাল, বিকেলে বেরিয়ে গেছেন ডাক্তার। হল-এ গেছেন। রাতের খাওয়াটা জমিদার বন্ধু ট্রেলনীর ওখানেই সারবেন। সেখানেই যাব, বললেন ডানস। রাস্তা বেশি না। চাঁদের আলোয় পথ দেখে এগিয়ে চলেছি আমরা। পথের দুপাশে সারি সারি গাছ, পাতা ঝরে গেছে। চাঁদের আলোয় অদ্ভুত দেখাচ্ছে নিষ্প্রাণ গাছগুলোকে। সবকিছুতেই যেন জলদস্যুর ছোঁয়া লেগে আছে।…
০৭. ব্রিস্টলে
দশদিনে জাহাজ-নাবিক জোগাড় করতে পারলেন না জমিদার ট্রেলনী, তারচেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে গেল। ১৭…সালের ১ মার্চ, ব্রিস্টলের ওল্ড অ্যাংকর সরাইখানা থেকে ডাক্তার লিভসীর কাছে একটা চিঠি লিখলেন ট্রেলনী। চিঠিটা হলঃ প্রিয় লিভসী, জাহাজ কেনা হয়েছে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কেনা হয়ে গেছে। চমৎকার স্কুনার। সহজেই চালানো যায়। পরিবহণ ক্ষমতা দুশো টন। নাম, হিসপানিওলা। জাহাজটা জোগাড় করে…
০৮. স্পাই গ্লাস
পরদিন সকালে নাস্তার পর পাই গ্লাস সরাইয়ে যেতে বললেন আমাকে ট্রেলনী। জন সিলভারকে দেবার জন্যে একটা চিঠি দিলেন আমার হাতে। সরাইয়ের ঠিকানাটা বুঝিয়ে বললেনঃ ডকের ধার ধরে যেতে যেতে সাগরের পাড়েই একটা ছোট্ট বাড়ি, দেয়ালে মস্ত দূরবীনের ছবি আঁকা, ওটাই স্পাই গ্লাস সরাইখানা। বেরিয়ে পড়লাম। উত্তেজনা আর আনন্দে মশগুল। আরও জাহাজ, আরও নাবিক, নতুন জায়গা…
০৯. বারুদ-বন্দুক
জাহাজে উঠতেই এগিয়ে এসে আমাদের সালাম জানাল মেট অ্যারো। চামড়ার রঙ তামাটে, চোখ ট্যারা, কানে ইয়ারিং। কোন এক সময় নৌবাহিনীতে ছিল হয়ত। ট্রেলনীর সঙ্গে তার সদ্ভাব, সহজেই বোঝা যায়। অ্যারোর সঙ্গে কথা বলছেন ট্রেলনী, এই সময় কয়েকজন নাবিকের পেছনে ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন হিসপানিওলার ক্যাপ্টেন। রুক্ষ কিন্তু ধারাল চেহারা। সারাক্ষণই যেন রেগে আছেন। ভদ্রতার ধারকাছ…
১০. সমুদ্র যাত্রা
কর্মব্যস্ততার মাঝে কাটল সারাটা রাত। এক রাতে এর অর্ধেক কাজও কখনও করিনি অ্যাডমিরাল বেনুবোয়। নতুন সংসার গোছানোর মতই ক্যাপ্টেনের আদেশে হিসপানিওলার মালপত্র গোছগাছ করতে হল আমাদের। এর ওপর অতিথিদের অভ্যর্থনা আর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা যেন গোদের ওপর বিষফোড়ার মত অবস্থা করে ছাড়ল। অতিথিরা সবাই ব্রিস্টলের লোক। মি. ব্ল্যান্ডলি আর স্কয়ার ট্রেলনীর নতুন বন্ধু বান্ধব বিদায় জানাতে…