আমার জন্ম হয় এক শুক্রবার রাত বারোটায়। ঘড়ির ঢং ঢং আর আমার প্রথম কান্নার আওয়াজ মিলে যায় একসাথে। এর আগে, সেদিন বিকেলে এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে। ভীত মনে বিষণ্ণ মুখে আমার মা বসেছিলেন আগুনের পাশে। তিনি দেখলেন যে এক অপরিচিত মহিলা এগিয়ে আসছেন আমাদের বাগানের পথে। দরজার বেল না বাজিয়ে মহিলাটি জানালা দিয়ে তাকালেন ভেতরে।…
ডেভিড কপারফিল্ড
০২. পরিবর্তন এল আমার জীবনে
আমার বয়স তখন আট বছর। এক রাতে পেগোটি আর আমি বসে ছিলাম। আগুনের পাশে। আর কেউ ছিল না বসার ঘরে। আমি ওকে কুমিরের গল্প পড়ে শোনাচ্ছিলাম। পড়াটা বোধহয় খুব ভাল হচ্ছিল না। কারণ, পড়া শেষ হতে দেখা গেল, পেয়গাটির ধারণা হয়েছে যে ক্রকডাইল (ওর ভাষায় ক্রর্কিনডিল) এক রকমের সজি। পড়া চলল আরও কিছুক্ষণ। তারপর মা…
০৩. সালেম হাউসের দিনগুলো
একমাস পড়লাম মি. মেল-এর কাছে। ভালই চলছিল পড়াশোনা। হঠাৎ একদিন তলব করলেন হেডমাস্টার মি. ক্রীক্ল। মি. ক্রী্ক্ল-এর মুখটা দেখতে ভয়ঙ্কর। চোখদুটো ছোট, কুতকুঁতে। নাকও ছোট। বিশাল চিবুক। মাথায় মস্ত টাক। এটাই তাহলে সেই তরুণ ভদ্রলোকটি-যাকে শেখাতে হবে বাধ্যতা কাকে বলে। যার দাঁত ফাইল দিয়ে ঘসে ছোট করে দিতে হবে, যাতে সে না কামড়ায়। ওর সৎ…
০৪. মা আমার মারা গেলেন
গাড়ি চালক মি. বার্কিস কোচ স্টেশনে আমাকে সম্ভাষণ জানালেন এমনভাবে, যেন আমাদের শেষ দেখার পরে পাঁচ মিনিটও যায়নি। পেগোটির কথা জিজ্ঞেস করলেন তিনি। বললাম, তার বার্কিস ইচ্ছুক বার্তাটি আমি পাঠিয়েছি। বাগানের গেট-এ তিনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। প্রতি পদক্ষেপে ভয় হতে লাগল জানালায় চোখ পাকিয়ে দাঁড়ানো মি. ও মিস মার্ডস্টোনকে দেখব বলে। কিন্তু খুবই খুশি…
০৫. জীবনের পথে একা
মার্ডস্টোন অ্যাণ্ড গ্রিনবির মালগুদামটি নদীর কিনারে। একটা সরু গলির একেবারে শেষ প্রান্তে। গুদামের পরেই গলিটা খাড়া নিচে নেমে শেষ হয়েছে। নদী পর্যন্ত গিয়ে। গুদামঘরটা জরাজীর্ণ। ইঁদুরে ভরা। শত বছরের ময়লা আর আবর্জনায় ভরা। প্রথম দিন সকালে কয়েকটি ছেলের সঙ্গে দেখা হলো। ওদের সাথে কাজ করতে হবে আমাকে। আমরা মদের বোতল ধােয়ামোছা করলাম। ভাঙাগুলোকে বাতিল করলাম।…
০৬. নতুন জীবন
মিস বেটসি অপেক্ষা করলেন কয়েক সপ্তাহ আমার শরীর-মন সবই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্যে। তারপর এক সন্ধ্যায় মি. ডিকের সাথে পাশা খেলতে খেলতে আমার দিকে ফিরে বললেন, ট্রট, তোমার শিক্ষার কথা ভুললে আমাদের চলবে না। তুমি ক্যান্টারবেরিতে যাবে? স্কুলে পড়তে? আমার খুবই ইচ্ছে যাওয়ার। জায়গাটা এখান থেকে বেশ কাছেই, জবাব দিলাম। পরদিন সকালে ঘোড়ার গাড়িতে…
০৭. পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে
শৈশব থেকে আমি যাত্রা করলাম যৌবনের পথে। মন আমার আনন্দে ভরপুর। আমার বয়স এখন সতেরো। আমি স্কুলের হেড-বয়। উক্টর স্ট্রং আমাকে প্রতিশ্রুতিবান তরুণ পণ্ডিত বলে উল্লেখ করেন। অ্যাগনেস উইকফিল্ডও এখন আর ছোট্ট মেয়েটি নয়! সে এখন আমার পরামর্শদাতা ও বন্ধু। স্কুলের কথা, আমার স্বপ্নের কথা, কি কি আমার ভাল লাগে, কার কার সাথে আমার লড়াই…
০৮. একটা পেশা বেছে নিলাম
পরদিন আমি আর স্টিয়ারফোর্থ বিদায় নিলাম ইয়ারমাউথ থেকে। পেগোটি ও তাদের পরিবার, সাগরের অনেক মাঝি মাল্লা-যারা বন্ধু হয়ে গিয়েছিল স্টিয়ারফোর্থের—সবাই মিলে বিদায় জানাল আমাদেরকে। কিছুক্ষণ কোন আলাপ হলো না স্টিয়ারফোর্থ আর আমার মধ্যে। তারপর স্টিয়ারফোর্থ বলল, বেড়ানো-টেড়ানো তো হলো, কি করবে ভেবেছ কিছু? তেমন করে কিছু ভাবিনি। তবে মনে করেছিলাম প্রক্টর (ব্যবসার নায়েব) বা এজেন্ট…
০৯. এক বিরাট ক্ষতি
সন্ধ্যায় পৌঁছলাম ইয়ারমাউথে পেগোটির বাড়িতে। দরজায় মৃদু টোকা দিতেই খুলে দিলেন মি. পেগোটি। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন রান্নাঘরে। সেখানে আগুনের পাশে বসে আছে এমিলি। বিষণ্ণ, চুপচাপ। হ্যাম দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে। ওর কাঁধে হাত রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু ও যেন পছন্দ করছে না কাধে হাত দেয়া। হ্যাম আমাকে বলল যে সপ্তা দুয়েকের মধ্যে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা…
১০. ফতুর হয়ে গেলাম
মি. স্পেনলো ডোরার জন্মদিন উপলক্ষে এক পিকনিকে দাওয়াত করলেন আমাকে। আমি ফুল নিয়ে গেলাম ভোরার জন্য। ফুলগুলো ও সারাক্ষণ নিজের কাছে রাখল। ওর ছোট্ট কুকুর জিকে দিয়ে শোঁকাতে চেষ্টা করল। কিন্তু কুকুরটি গোঁ গোঁ করে শুকতে অনিচ্ছা জানাল। ডোরার সঙ্গ আনন্দে ভরিয়ে দিল আমার মন। চারদিন পরে ডোরা আর আমি এনগেজড হলাম। তবে কথাটা আমরা…