পেগোটির ইয়ারমাউথে ফিরে যাবার সময় হলো। এমিলির খোঁজে চলে যাবার পর থেকে ভাইয়ের কোন খবর সে পায়নি। এখন বাড়ি যেতে চায় হ্যামের। দেখাশোনার জন্য। কোচে ওঠার আগে সে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করল যে আমার যদি কখনও টাকার দরকার হয় আমি যেন তার কাছে যাই। বললাম, যাব। তাকে বিদায় দিয়ে গেলাম ভোরাদের বাড়িতে। ওকে জিজ্ঞেস…
ডেভিড কপারফিল্ড
১২. মি. পেগোটির খবর
ড, স্ট্রং-এর বাড়িতে কাজ শেষে এক তুষার-ঝরা রাতে ঘরে ফিরছিলাম পায়ে হেঁটে। তুষারে ঢাকা পড়েছে রাস্তা। গাড়ির চাকা আর লোকের চলার শব্দ শোনা যাচ্ছে কম। পথ সংক্ষেপ করার জন্য সেন্ট মার্টিন লেন দিয়ে চলেছি। গলির মোড়ে একটি মেয়ের মুখ দেখলাম। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেল। কিন্তু মুখটা আমি চিনতে পারলাম। ওটা মার্থা, মার্থা…
১৩. উরিয়া হীপের শয়তানী
অ্যাগনেস আর মি. উইকফিল্ড কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন ড. স্ট্রিংএর বাড়িতে। স্বাভাবিকভাবে হীপও এসেছে সঙ্গে। এক রাতে আমি আমার কাজকর্ম শেষ করছি, এমন সময় ডক্টর স্ট্রং-এর স্টাডিতে আলো জ্বলতে দেখলাম। আমি ওখানে গেলাম তাকে শুভরাত্রি বলতে এবং অত রাত জেগে আমাকে ছাড়া অভিধানের কাজ নিয়ে খাটাখাটি করায় একটু বকুনি দিতে। দেখলাম ওখানে উরিয়া হীপ আছে…
১৪. আমার বাচ্চা-বৌ
সপ্তা, মাস, বছর গড়িয়ে গেল। আইনগতভাবে আমি সাবালক হলাম, অর্থাৎ আমার একুশ বছর পূর্ণ হলো। আমার আর ভোরার বিয়ে হয়ে গেল। ঘর-সংসার সম্পর্কে একজোড়া পাখির বাচ্চাও বোধহয় আমাদের দুজনের চাইতে কম জানে না। একজন পরিচারিকা রেখেছিলাম। কিন্তু তাকে সামলাতে গিয়ে আমরা হিমশিম খেলাম। ডিনার দিতে তার দেরি হয়ে যায়, কিংবা দেয়ই না। মাংস থেকে যায়…
১৫. ধন্যবাদ, মি. ডিক
ডক্টর স্ট্রং-এর কাজ ছেড়ে দিয়েছি অনেক দিন হলো। কিন্তু কাছাকাছি থাকি বলে প্রায়ই দেখা হয় তার সঙ্গে। উরিয়া হীপের নির্মম কথাগুলো তার হৃদয়ে আসন গেড়ে বসেছে এবং তাঁকে পীড়া দিচ্ছে অবিরাম। ক্রমেই তিনি মনমরা ও নীরব হয়ে যাচ্ছেন। এক রাতে মি, ডিক এসে আমাকে বললেন, ট্রটউড, আমার সঙ্গে একটু কথা বলার সময় হবে তোমার? নিশ্চয়ই,…
১৬. দুই রহস্যের জালে
একদিন সন্ধ্যায় বেড়িয়ে ঘরে ফিরছিলাম মিসেস স্টিয়ারফোর্থের বাড়ির সামনে দিয়ে আসার সময় একজন চাকরানী ছুটে এসে আমাকে ডাকল। বলল, মিসেস স্টিয়ারফোর্থ এখন লণ্ডনের ওই বাড়িতে আছেন। তিনি আমাকে ডাকছেন। গেলাম। এমিলিকে পাওয়া গেছে? জিজ্ঞেস করলেন তিনি ক্রুদ্ধভাবে। না, বললাম আশ্চর্য হয়ে ও কি জেমস-এর সঙ্গে নেই? ক্রূর হাসি হেসে তিনি বললেন, আমার ছেলের কাছ থেকে…
১৭. মি. পেগোটির স্বপ্ন সফল হলো
মি. পেগোটি আর আমি যেদিন মার্থাকে পেয়েছিলাম নদীতীরে তার পরে অনেক মাস চলে গেছে। এমিলিকে জীবিত অবস্থায় খুঁজে পাবার আশা আমি এক রকম ছেড়েই দিতে যাচ্ছি। কিন্তু মি. পেগোটির আশা ও ধৈর্য অটল রয়ে গেল। একদিন সন্ধ্যায় বাগানে হাঁটছি—এমন সময় মার্থা এসে হাজির হলো গেটের সামনে। আমার সঙ্গে আসতে পারেন? বলল সে ফিসফিসিয়ে। মি. পেগোটির…
১৮. উরিয়া হীপের পতন
আমি ফিরে এলাম ইয়ারমাউথ থেকে। ক্যান্টারবেরিতে মি, মিকবারের সঙ্গে রহস্যজনক সাক্ষাৎকারের সময় হল। তাঁর আমন্ত্রণে আমরা চারজন—আমি, দাদী বেটসি, মি. ডিক আর ট্র্যাডলস। পৈৗছলাম হোটেলে। সঙ্গে সঙ্গে মি. মিকবার এসে হাজির হলেন আমাদের সামনে। আমরা এখন ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাত কিংবা অন্য যে-কোন কিছুর জন্য প্রস্তুত, বললেন দাদী মি. মিকবারকে। মি. মিকবার বললেন, আপনারা শীঘ্রি একটা বিস্ফোরণ…
১৯. মৃত্যু আর নীরবতা
বহুদিন ধরে অসুস্থ ডোরা। আমার বাচ্চা-বৌ যে এত সহসা ছেড়ে যাবে আমাকে তা কি আমি জানতাম? ডাক্তাররা বলেছিলেন আমাকে, কিন্তু বিশ্বাস করতে পারিনি। এক রাতে ও আমাকে বলল যে এটাই হয়তো ভাল। আমি ছিলাম ছোট্ট বাচ্চা। বয়সের দিক থেকে নয়, মনের দিক থেকে। অভিজ্ঞতার দিক থেকে। বৌ। হবার যোগ্যতা আমার ছিল না। কিসে তোমার আনন্দ,…
২০. অ্যাগনেসের কাছে প্রত্যাবর্তন
পেগোটি আর আমি বন্ধুদেরকে বিদায় দিতে গেলাম। মি. পেগোটি মার্থাকেও অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাচ্ছেন দেখে দারুণ খুশি হলাম আমি। দুই দুটি মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানালাম না ওদেরকে। কারণ ওদের বিদায়ের আনন্দকে আমরা মাটি করে দিতে চাইনি। কয়েক দিন পরে আমিও ইংল্যাণ্ডের বাইরে চলে গেলাম। তিন বছর ধরে ঘুরে বেড়ালাম দেশে দেশে। আর লিখলাম। গল্পগুলো প্রকাশের ব্যবস্থা…