দুঃসাহসী টম সয়্যার বইটা পড়া না থাকলে আমার ব্যাপারে কিছুই জান না তোমরা। অবশ্য তাতে ক্ষতি নেই কোন, কারণ এখন আমার অভিযানের সব কথাই বলতে যাচ্ছি আমি। স্টম সয়্যার বইখানার লেখক মিস্টার মার্ক টোয়েন। কিছু কিছু ব্যাপার একটুআধটু বাড়িয়ে বলার চেষ্টা থাকলেও, মূলত সত্যি কথাই বলেছেন তিনি ওই বইতে। বাড়িয়ে বলাটা এমন কিছু দোষের না।…
দি অ্যাডভেঞ্চারস অভ হাকলবেরি ফিন
০২. গাছ-গাছালির ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা
গাছ-গাছালির ভেতর দিয়ে একটা রাস্তা চলে গিয়েছে বাগানের শেষ মাথায়, তারপর বেড়া। বেড়ার ওপারে পাহাড়, জঙ্গল। ওই রাস্তা ধরে পা টিপে টিপে এগোতে লাগলাম আমরা। উবু হয়ে আছি, যেন মাথা ঠুকে না যায় গাছের ডালে। রান্নাঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় আচমকা একটা গাছের শেকড়ে বেধে হোঁচট খেলাম আমি। পড়ে যাবার শব্দ হল। টম আর আমি…
০৩. প্রায় মাসখানেক ডাকাত-ডাকাত খেললাম
প্রায় মাসখানেক ডাকাত-ডাকাত খেললাম আমরা। তারপর ইস্তফা। আমরা কারও ওপর রাহাজানি করিনি, খুনও করিনি কাউকে। কেবল ভান করেছি সেরকম। জঙ্গল থেকে হুঁট করে বেরিয়ে এসে রাখাল বা মেয়েদের ওপর, যারা বাজারে সবজি বিক্রি করে, হামলা করতাম। তবে ক্ষতি করিনি কখনও। টম শুয়োরগুলোকে বলত সোনা, সবজি আর অন্য আনাজপাতিকে অলঙ্কার। কিন্তু এতে মন ভরছিল না আমাদের।…
০৪. পরদিন বেহেড মাতাল অবস্থায়
পরদিন বেহেড মাতাল অবস্থায় জাজ থ্যাচারের কাছে গেল বাবা। টাকা দাবি করল, চোখ রাঙাল। কিন্তু চিড়ে ভিজল না, টাকা দিলেন না জাজ। তখন আদালতে যাবার হুমকি দিল বাবা; বলল, আইনের সাহায্যে জোর করে আদায় করবে টাকা। আমার ব্যাপারে আদালতের শরণ নিলেন জাজ থ্যাচার আর ওই বিধবা, তাদের কাউকে যেন আমার অভিভাবক নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু…
০৫. পিটপিট করে তাকালাম
অ্যাই, হাক! ওঠ, হতচ্ছাড়া! পিটপিট করে তাকালাম; চারপাশে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম, আমি কোথায়। রোদে স্নান করছে ঘর; অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি, মরার মত। বাবা আমার উপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে, চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। কিছুটা অসুস্থ দেখাচ্ছে। বন্দুক দিয়ে কী করছিলি? জিজ্ঞেস করল। কাল রাতের কথা, অনুমান করলাম, মনে নেই তার। বললাম, রাতে কেউ ঢোকার চেষ্টা করেছিল। তাই খাপ…
০৬. যখন ঘুম ভাঙল বেলা চড়ে গেছে
যখন ঘুম ভাঙল বেলা চড়ে গেছে। সূর্যের অবস্থান থেকে মনে হল আটটার বেশি হবে। ছায়ায় ঘাসের ওপর শুয়ে নানান চিন্তা এল মাথায়। বিশ্রামের পর বেশ হালকা আর ঝরঝরে লাগছে। চারদিকে বড় বড় গাছ, পাতার ফাঁক দিয়ে স্নান সূর্যের আলো এসে পড়েছে খানিকটা। মাটিতে ডালপালার ছায়াগুলো নড়ছে বাতাসে। ছোট্ট একটা ডালে বসে আছে একজোড়া কাঠবেড়াল। বেশ…
০৭. নাস্তার পর কুড়িয়ে আনা মালপত্র ঘঁটতে বসলাম
নাস্তার পর কুড়িয়ে আনা মালপত্র ঘঁটতে বসলাম আমরা। যেসব কাপড় চোপড় এনেছিলাম সেগুলো দেখলাম নেড়েচেড়ে। পুরোন একটা কম্বল দিয়ে তৈরি ওভারকোটটার লাইনিংয়ের ভেতর পেলাম আটটা ডলার। জিম বলল ওর ধারণা, যে-লোকগুলো ওই কাঠের বাড়িটায় ছিল, তারা কোথাও থেকে চুরি করেছে কোটটা। কারণ, তারা ওই টাকার খবর জানলে রেখে যেত না। আমার ধারণা ওই লোকগুলোই ওই…
০৮. রাত প্রায় একটার দিকে দ্বীপের শেষ প্রান্তে
রাত প্রায় একটার দিকে দ্বীপের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলাম। মন্থর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ভেলা। যদি কোন নৌকো আমাদের খোঁজে এসে পড়ে, ডিঙি নিয়ে ইলিনয়ের দিকে পাড়ি জমাব আমরা। কপাল ভালই বলতে হবে, কোন নৌকো এল না। পুব-আকাশে ভোরের আলো ফোটামাত্রই একটা বাঁকের মাথায় বাধলাম ভেলাটা। কটনউড ঝোপ থেকে ডালপালা কেটে এনে এমনভাবে ঢেকে দিলাম যে…
০৯. জিমের কথা শুনে ভয়ে হাত-পা পেটের ভেতর
জিমের কথা শুনে ভয়ে হাত-পা পেটের ভেতর ঢুকে যাবার দশা হল। ডাকাত দলের সাথে এই ভাঙা স্টিমারে আটকা পড়লে আর রক্ষে নেই। যে করেই হোক নৌকোটা পেতেই হবে, মনে মনে বললাম। দুরু দুরু বুকে স্টারবোর্ড সাইডের দিকে এগিয়ে গেলাম আমরা। নাহ! নৌকোর চিহ্নমাত্র নেই কোথাও। ভয়ে আর এগুতে চাইল না জিম। অনেক বলে-কয়ে ওকে রাজি…
১০. ওই লোক দুজনকে কীভাবে বোকা বানালাম
ওই লোক দুজনকে কীভাবে বোকা বানালাম তা নিয়ে অনেক হাসাহাসি করলাম আমরা। ওরা কুড়ি ডলারের যে-দুটো গিনি দিয়ে গেছে, তা নিয়েও আলাপ করলাম। স্টিমারের টিকিট কাটার পরও বেশকিছু পয়সা আমাদের হাতে থাকবে, জিম বলল। ওই টাকা দিয়ে যেখানে নিগ্রোদের স্বাধীনতা আছে, স্বচ্ছন্দে সেখানে যেতে পারব আমরা। ভোর হতেই নদীর পাড়ে একটা ঝোপের ভেতর ভেলাটাকে লুকিয়ে…