দক্ষিণ গোলার্ধ আর উত্তর গোলার্ধ যেমন বিপরীত দিকে, তেমনি আবহাওয়াগত দিক থেকেও সম্পূর্ণ উল্টো। জানুয়ারি মাসে উত্তর গোলার্ধে যখন বরফের মতো ঠাণ্ডা, দক্ষিণ গোলার্ধ তখন রীতিমতো উত্তপ্ত, ভ্যাপসা গরম। সেসময়ে অতলান্ত সাগরও থাকে উত্তাল। এক কথায় বলতে গেলে দক্ষিণ গোলার্ধ তখন পৃথিবীর বুকে নরক ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের কাহিনীর পটভূমিও অতলান্ত সাগরের তীরে দক্ষিণ…
দি অ্যামফিবিয়ান ম্যান
মাত্র সকাল, অথচ গরম
মাত্র সকাল, অথচ গরম কড়াইয়ের মতো তাপ ঢালছে সূর্যটা। মাথার ওপর নীল আকাশ। একচিলতে মেঘ নেই আজ। বাতাস থমকে গেছে। সাগর শান্ত। বুয়েন্স আয়ার্স শহরের বিশ কিলোমিটার দক্ষিণে এসে হাজির হলো জেলিফিশ জাহাজ। সামনে সাগরের বুকে মাথা তুলে এবড়োখেবড়ো দাঁত দেখিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করছে দুসারি পাহাড়শ্রেণী। পাহাড় দুটোর মাঝে সরু একটা খাঁড়ি। বালথাযারের কথা…
মাথা আমার খারাপ হয়ে যায়নি
মাথা আমার খারাপ হয়ে যায়নি তো! কেবিনে ফিরে নিজেকে প্রশ্ন করল পেদরো জুরিতা। সাগর-দানো বলছে নির্ভুল স্প্যানিশ! স্বপ্ন দেখছি না তো! এক সঙ্গে সবার মাথা খারাপ হয় কি করে? তাহলে অবিশ্বাস্যকেই বিশ্বাস করতে হবে? তাহলে ওটা সাগর-দানো? মাথা ঠাণ্ডা করতে এরইমধ্যে দুমগ পানি মাথায় ঢেলেছে পেদরো জুরিতা। এবার সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। প্রাণপণে ভেবে…
হতাশ না হয়ে বিশদ একটা পরিকল্পনা
হতাশ না হয়ে বিশদ একটা পরিকল্পনা করে কাজে নামল পেদরো জুরিতা। অর্থ খরচ করল হু-হু করে। খাঁড়িতে জায়গায় জায়গায় জাল পাতা হলো। ফাঁদও বাদ গেল না। চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। কি কাজ হচ্ছে না। কোথায় যেন চলে গেছে সাগর-দানো। জালে শুধু মাছ ধরা পড়ছে। শঙ্খের আওয়াজও নেই আর। তবে সাগর-দানোর পোষা ডলফিনটাকে প্রতিদিন দেখা যায়।…
দুপাশে ভুট্টা আর গমের খেত
দুপাশে ভুট্টা আর গমের খেত, মাঝখানে ধুলোময় রাস্তা। রোদ অগ্রাহ্য করে সেপথে হেঁটে চলেছে এক বৃদ্ধ রেড ইন্ডিয়ান। ক্ষীণকায় মানুষ সে, পরনে জীর্ণ মলিন পোশাক। দুহাতে আলতো করে ধরে রেখেছে বছর চার-পাঁচেকের বাচ্চাটাকে। রোদ যাতে না লাগে সেজন্যে ওর মুখ ঢেকে রেখেছে পুরোনো একটা কম্বল দিয়ে। বাচ্চার দুচোখ আধবোজা। দেখে মনে হয় অসুস্থ। গলার এক…
ডাক্তার সালভাদর
কদিন পরই কথামতো ডাক্তার সালভাদরের কাছে ফিরে এলো বৃদ্ধ ক্রিস্টো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে পরখ করে দেখলেন ডাক্তার, তারপর বললেন, ঠিক আছে, ক্রিস্টো, তোমাকে আমি কাজে নিচ্ছি। তোমার খাবার-দাবার সব এখানেই হবে। মাইনেও ভাল পাবে। সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানাল ক্রিস্টো। আমার তো বেতনের দরকার নেই, ডাক্তার সাহেব, আমি শুধু আপনার সেবা করতে চাই। এভাবেই আমার মৃত্যুর…
উদ্ভট বাগান আর বিদঘুটে পরিবেশ
এই উদ্ভট বাগান আর বিদঘুটে পরিবেশে শেষ পর্যন্ত নিজেকে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হলো না ক্রিস্টোর। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধে বোধ করলেও শিগগিরই কাটিয়ে উঠল তা। বাগানের জম্ভ-জানোয়ার, পাখি আর সরীসৃপ যা আছে সবই আসলে পোষ মানা। কয়েকটা জানোয়ারের সঙ্গে তো রীতিমতো খাতির হয়ে গেল ক্রিস্টোর। কুগারের মতো দেখতে যে কুকুরগুলো ক্রিস্টোর আত্মার পানি শুকিয়ে দিয়েছিল…
পুরু গোঁফে তা দিতে দিতে
পুরু গোঁফে তা দিতে দিতে অস্থির পায়ে পায়চারি করছে ক্যাপ্টেন পেদরো জুরিতা। তার পরনে এখন শহুরে পোশাক। মাথায় পানামা হ্যাট। তার সামনেই দাঁড়িয়ে বালথাযার। বুয়েন্স আয়ার্স শহরের প্রান্তে যেখানে কৃষিজমি শুরু হয়েছে সেখান থেকেই পম্পাস প্রেয়ারির শুরু। শুধু ঘাস আর ঘাসজমি। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পেদরো বলে উঠল, সে যদি আজকেও না আসে…
ক্রিস্টোর মনে আশা জেগেছিল
ক্রিস্টোর মনে আশা জেগেছিল, সে যা করেছে তাতে করে ওকে একেবারে বুকে টেনে নেবেন ডাক্তার সালভাদর বলবেন তাঁর সমস্ত রহস্য। হয়তো এটাও বলতে পারেন যে এসো, ক্রিস্টো, তোমাকে আমার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কারটা দেখাই। আমার সাগর-দানো দেখে তাজ্জব হয়ে যাবে। কিন্তু ক্রিস্টোর আশা পূরণ হলো না। বিপদ থেকে উদ্ধার করার কারণে ক্রিস্টোকে চাহিদার বেশি পুরস্কার দিলেন তিনি।…
রাত প্রায় শেষ
রাত প্রায় শেষ। একটু পরই ভোর হবে। গ্রীষ্মের ভেজা বাতাসে ম্যাগনোলিয়া, টিউবরোজ আর মিনোনেট ফুলের সুবাস। হাওয়া নেই আজকে, কাজেই গাছের একটা পাতাও নড়ছে না। চারদিক নিস্তব্ধ। বাগানের বালির পথ ধরে হাঁটছে ইকথিয়ান্ডার। ওর কোমরের বেল্ট থেকে ঝুলছে ছোরা। এক হাতে চশমা আরেক হাতে ব্যাঙের পায়ের মতো গ্লাভূস। ইকথিয়ান্ডারের পায়ের তলায় পিষে ভেঙে যাচ্ছে বালিতে…