আপরোর ইন ইণ্ডিয়া কানপুরের দানব জানা গিয়াছে যে সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা নবাব ধুন্ধুপ বর্তমানে বম্বাই রাজ্যের কোনো স্থানে লুক্কায়িত রহিয়াছেন। যে বা যাহারা তাঁহাকে জীবিত বা মৃত ধরিয়া দিতে পারিবে, তাহাকে বা তাহাদের দুই হাজার মোহর পুরস্কার দেওয়া হইবে… ১৮৬৭ সালের মার্চ মাসের ছয় তারিখে ঔরঙ্গাবাদের বাসিন্দারা এই বিজ্ঞপ্তিটি পড়লে। গোদাবরী নদীর তীরে…
দ্যা দিমন অব কানপুর
১.০৩ ইলোরার গুহায় আঁধারে
শুধু সত্যি নয়, তার চেয়েও বেশি। মরাঠা রাজকুমার ধুন্ধুপন্থ—পেশোয়া বাজি রাওএর সেই দুর্দান্ত দত্তকপুত্র, যিনি হয়তো সিপাহী অভ্যুত্থানের একমাত্র জীবিত নেতাকিনা শেষ পর্যন্ত নেপালের দুর্গম অঞ্চল ত্যাগ করে পরম দুঃসাহসে ও স্পর্ধায় আবার ভারতে প্রবেশ করেছেন! শুধু দুঃসাহস নয়, ঔদ্ধত্য। বিপদের সঙ্গে তার বন্ধুতা–সে কি আজকের? তীক্ষ্ণতম গোয়েন্দাটির চোখে অনায়াসে তিনি ধুলো দিতে পারেন, তোয়াক্কা…
১.০৪ লৌহদানব বেহেমথ
পাঁচই মে সকালবেলায় কলকাতা থেকে চন্দননগর যাবার রাস্তায় হঠাৎ এক দৃশ্য দেখে সব লোকে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলো। সকালবেলায় ভারতের রাজধানীর রাস্তায় অদ্ভুত একটি শকট বেরুলো, যা দেখে চারপাশে কৌতূহলী ও বিস্মিত জনতার ভিড় জমে গিয়েছিলো। কারণ ওই শকটটি টেনে আনছিলো এক অতিকায় হাতি; অতিটি উচ্চতায় কুড়ি ফুট আর লম্বায় তিরিশ : তার চালচলনের মধ্যে…
১.০৫ ফল্গুনদীর তীর্থযাত্রী
এখন যাকে বিহার বলে, আগে তার নাম ছিলো মগধ। বৌদ্ধ ধর্মের উজ্জ্বল দিনে মগধ ছিলো দিব্যভূমি, এখনও বহু মঠ আর বিহার তার সাক্ষী। তারা বানিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিহার; দেশবিদেশ থেকে সবাই পড়তে আসতো; জাতপাতের ভেদ ছিলো না। কিন্তু কয়েকশো বছর ধরে বৌদ্ধ শ্ৰমণদের জায়গা নিয়েছে ব্রাহ্মণ পুরোহিতগণ; তারা বানিয়েছে টোল, চতুম্পাঠী, সেখানে সবাই নয়—অধ্যয়নের অধিকার শুধু…
১.০৬ বারাণসীতে কয়েক ঘন্টা
এখন কেবল খোলা বড়ো রাস্তা পড়ে আছে আমাদের চলন্ত বাড়ির সামনে; সাসারাম হয়ে গঙ্গার ডান তীর ধরে একেবারে বারাণসী পর্যন্ত নিয়ে যাবে আমাদের এই রাস্তা। রোটাসের কাছে পেরিয়ে এলুম শোন নদী—আরা আর দিনাজপুরের কাছে এসে সব শাখা নিয়ে যে গঙ্গায় এসে মিশেছে। গাজিপুরের গোলাপবন, মুঘলসরাইয়ের রেলপথ, পঁয়ত্রিশ মাইল দূরের গোমতীর অধিত্যকার জৌনপুর—সব পেরিয়ে এলো বেহেমথ।…
১.০২ কর্নেল মানরো
আমি, মোক্লের, ভারতে পৌঁছেছিলুম ১৮৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। গ্রেট ইণ্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ের ট্রেনে করে বম্বাই থেকে এলাহাবাদ হয়ে কলকাতা পৌঁছেছিলুম মার্চ মাসে। আমার মূল উদ্দেশ্য ছিলো : ভারত-দর্শন। বিশেষ করে গঙ্গার উপকূল ধরে উত্তরাপথের সেই প্রাচীন নগরগুলো পরিদর্শন করার ইচ্ছে ছিলো খুব : প্রাচীন স্থাপত্য ও ভাস্কর্যের নিদর্শন সম্বন্ধে যাতে একটা পূর্ণ ধারণা করে নিতে…
১.০৭ এলাহাবাদ
বারাণসী থেকে এলাহাবাদের দূরত্ব বড়জোর আশি মাইল। চব্বিশে সকালেই আমরা এলাহাবাদের উদ্দেশে রওনা হয়ে পড়লুম, ঘণ্টায় তিন-চার মাইল মাত্র বেগে, অর্থাৎ বেহেমথ যথার্থই গজেন্দ্রগমনে চলছিলো তখন। আসলে কলকাতায় আমাদের দিন যেমন কাটতো, এই চলন্ত বাড়িতেও তেমনিই কাটছে : ছোটোহাজরি, মধ্যাহ্নভোজ, দিবাতন্দ্রা, সান্ধ্যভোজ—সবই একইভাবে হচ্ছিলো নিত্য, কেবল দিগন্ত বদলে যাচ্ছিলো। তার মধ্যে; দৈনন্দিন কাজ ছিলো রোজই…
১.০৮ কানপুর পেরিয়ে
একদা অযযাধ্যা ছিলো ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রদেশগুলির অন্যতম; এখন তার গুরুত্ব কিঞ্চিৎ কমেছে বটে, কিন্তু সমৃদ্ধি রয়েছে আগের মতোই। জেনারেল উট্রামের চক্রান্তের ফলে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ শেষ পর্যন্ত যখন ১৮৫৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ঈস্ট ইণ্ডিয়া কম্পানির আনুগত্য স্বীকার করে নিলেন, তখন থেকেই বিক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছিলো। তাই কয়েকমাস পরেই লক্ষ্ণৌ আর কানপুর প্রচণ্ডভাবে ফেটে পড়েছিলো।…
১.০৯ অগ্নিকুণ্ডলী
হিন্দুস্থানও ব্রাজিলের মতো এই গর্ব করতে পারে যে তারও ঝড়, বৃষ্টি, কালো মেঘের কোনো তুলনাই হয় না। অন্তত রাগি, বদরাগি একটি ঝড় যে আশু আসন্ন, সে-বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ ছিলো না। তাপমান যন্ত্রও তা-ই বললে। হঠাৎ অন্তত দুইঞ্চি নেমে গিয়েছে পারদের স্তম্ভ। হুডদের জন্যে ভারি দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমার, মানরো বললেন, ঝড় আসছে, রাত্রিও আসন্ন, অন্ধকারও…
১.১০ ক্যাপ্টেন হুডের পরাক্রম
সেদিন সারাদিন আমরা গত রাতের ধকল কাটিয়ে ওঠবার জন্যে বিশ্রাম নিলুম এখানে, রাতটাও তাই। এই দুর্যোগ, বিপৎপাত আর অবসাদের পর বিশ্রাম আমাদের পক্ষে নিতান্তই জরুরি হয়ে পড়েছিলো। অযোধ্যা রাজ্যের সীমানা ছাড়িয়ে এসেছি অবশেষে; এখন আমরা যাবো উর্বর ও শ্যামল রোহিলখণ্ডের মধ্য দিয়ে। দিল্লি পুনরুদ্ধারের পর এইখানে সিপাহী বিদ্রোহের শেষ আগুন জ্বলে উঠেছিলো-পরে সার কলিন ক্যামবেল…