হতদরিদ্র মুক্তো-ডুবুরি কিনো। বেচারা পয়সার অভাবে একমাত্র সন্তানের সুচিকিৎসা করাতে পারছে না। এমনি যখন অবস্থা, হঠাৎ করেই অপূর্ব সুন্দর এক মূল্যবান মুক্তো পেয়ে গেল ও, সাগরে ডুব দিয়ে। মুক্তো পেয়ে নানান রকমের রঙীন স্বপ্নে ছেয়ে গেল ওর অন্তর। ও ভাবছে, আর সবাইও বুঝি ওর মতই আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু আসলেই কি তাই? সমাজে সব মানুষই কি…
দ্য পার্ল
০২. ডাক্তার আসবে না
ডাক্তার আসবে না, দরজায় দাঁড়ানো প্রতিবেশীরা বলল। না, হুয়ানাকে বলল কিনে। ডাক্তার আমাদের এখানে আসবে না। হুয়ানা কিনোর দিকে চাইল। ওর চোখজোড়া শীতল, নিস্পৃহ। কয়েটিটো হুয়ানার প্রথম সন্তান। তার সাত রাজার ধন মানিক। তাহলে আমরাই যাব, বলল সে। শালের এক প্রান্ত দিয়ে মাথা ঢাকল হুয়ানা। শালের অন্য কিনারা রাখল বাচ্চাটার চোখের ওপর। দোরগোড়ায় সমবেত মানুষগুলো…
০৫. কিনো দরজায় দাঁড়িয়ে
কিনো দরজায় দাঁড়িয়ে, লক্ষ্য করল দুজন লোক এদিকেই আসছে। একজনের হাতে একটা টর্চ, মাটি আর লোকটির দুপাআলোকিত ওটার আলোয়। কিনোর কাঠের বেড়ার ফাঁক গলে ঢুকে দরজার কাছে চলে এল ওরা। কিনো এবার দেখতে পেল দুজনের একজন হচ্ছে সেই ডাক্তার আর অপরজন তার ভৃত্য। তুমি সকালে যখন গেছিলে আমি তখন বাসায় ছিলাম না, ফ্যাকাসে হেসে বলল…
০৩. মুক্তো-ডুবুরিদের কাঠের বাসাগুলো
মুক্তো-ডুবুরিদের কাঠের বাসাগুলো সাগরতীরের কাছে, শহরের ডান প্রান্তে। বাড়িগুলোর সামনে ক্যানু রয়েছে। কিনো হুয়ানাকে নিয়ে শ্লথ পায়ে নিজেদের ক্যানুর কাছে এল। যাবতীয় সম্পত্তির মধ্যে ক্যানুটাই কিনোর সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ। ক্যানুটা বহু পুরানো। কিনোর বাপ-দাদার ছিল ওটা। উত্তরাধিকার সূত্রে এখন জিনিসটা কিনোর। যার ক্যানু আছে তার না খেয়ে মরার ভয় নেই। প্রতি বছর ক্যানুটায় প্রলেপ মাখায়…
০৪. বাতাসের গতিতে চাউর হয়ে যায় খবর
বাতাসের গতিতে চাউর হয়ে যায় খবর। কিনো, হুয়ানা আর অন্যান্য ডুবুরিরা কিনোর খুদে কাঠের বাসাটায় এল, ততক্ষণে রাষ্ট্র হয়ে গেছে কিনো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মুক্তোটা খুঁজে পেয়েছে। বাচ্চারা বলতে পারার আগেই তাদের মায়েরা খবর জেনে বসে আছে। কাঠের বাড়িগুলোতে তো বটেই বড়লোকদের পাথরের বাড়িতেও ছড়িয়ে গেছে সংবাদটা। পাদ্রীর কানে কথাটা যেতেই, গির্জার মেরামতির চিস্তা ঘাই…
০৬. ভোরে কিনো মুক্তো বেচতে যাবে
সবাই জানে, ভোরে কিনো মুক্তো বেচতে যাবে। গোটা শহরে উত্তেজনা। গির্জার ভিখিরি থেকে শুরু করে মুক্তো ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত সবাই উত্তেজিত। মুক্তো ব্যবসায়ীরা যার যার অফিসে একাকী বসে রয়েছে, তারা প্রত্যেকে ছোট ছোট মুক্তো নাড়াচাড়া করছে আর কিনোর কথা ভাবছে। কেউ মুক্তো বিক্রি করতে চাইলে, উত্তেজনা মাত্রা ছাড়ায় ব্যবসায়ীদের। খুশির সীমা থাকে না তার, সবচাইতে কমে…
০৭. সাঁঝ ঘনালে
সাঁঝ ঘনালে, পড়শীরা তাদের ঘরে, সেদিনের ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে বসল। ওরা কেউ আগে কোনদিন এত সুন্দর মুক্তো চোখে দেখেনি। তাদের সবার ধারণা, কিনোর মুক্তোটা যেমন শোভাময় তেমনি দামী। কিন্তু ক্রেতারা একমত হয়নি ওদের সাথে। এবং তারা মুক্তোর দর-দাম ওদের চাইতে ভাল বোঝে। ওরা মুক্তার ব্যাপারে কেউ কারও সাথে কথা বলেনি, বলাবলি করে প্রতিবেশীরা। সবাই…
০৮. আঁধারে চোখ মেলে চাইল কিনো
আঁধারে চোখ মেলে চাইল কিনো। কাছেই কিসের যেন নড়াচড়া টের পেল, কিন্তু স্থির রইল ও, একচুল নড়ল না। আঁধার ভেদ করে দেখার চেষ্টা করছে। ছোট্ট বাসাটার খুদে গর্তগুলো দিয়ে চুইয়ে ঢুকেছে চাঁদের আলো। চাঁদের বিভায়, হুয়ানা আলগোছে উঠে পড়ছে মাদুর ছেড়ে লক্ষ্য করল কিনো। চুলোর উদ্দেশে ওকে যেতে দেখল সে। হুয়ানা পাথরটা সরাতে মৃদু একটু…
০৯. হুয়ান টমাসের বাসাটা
হুয়ান টমাসের বাসাটা প্রায় অবিকল কিনোরটার মতনই। এ পাড়ার বেশিরভাগ বাসাই দেখতে একরকমের। প্রতিটা বাসাতেই ফুটি ফাটা ভরা কিনো আর হুয়ানা দেয়ালের ফুটো দিয়ে আগুনের শিখা দেখতে পাচ্ছে। দাউ দাউ আগুনে ওই যে ধসে পড়ল ওদের বাড়িটার ছাদ। এবার বন্ধু-বান্ধবদের চেঁচামেচিতে আর হুয়ান টমাসের স্ত্রী, অ্যাপোলোনিয়ার আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠল বাতাস। অ্যাপোলোনিয়ার কান্নার কারণ তাদের…
১০. গরমের জ্বালায় অতিষ্ঠ কিনো আর হুয়ানা
গরমের জ্বালায় অতিষ্ঠ কিনো আর হুয়ানা ঝোপের ছায়ায় আশ্রয় নিল। খুদে পাখির তুড়ুক তুড়ুক চলেফিরে বেড়াচ্ছে আশপাশে। হ্যাট দিয়ে চোখ ঢাকল কিনো, মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে মুখ ঢেকে নিল কম্বলে। তারপর দিল ঘুম। কিন্তু হুয়ানার চোখে ঘুম নেই। মুখ ব্যথা করছে এখনও ওর, কিনোর বেমক্কা চড় খেয়ে। হুয়ানার কাটা চিবুকের চারপাশে ভনভন করছে ইয়া…