ম্যান্টলপিসের কোণ থেকে বোতলটা নামিয়ে আনল শার্লক হোমস, সুদৃশ্য মরক্কো কেস থেকে বার করল ইঞ্জেকশন দেওয়ার হাইপোডারমিক সিরিঞ্জ! দীর্ঘ, সাদা, কম্পিত আঙুল দিয়ে সরু উঁচটা ঠিক করে লাগিয়ে গুটিয়ে নিল শার্টের বাঁ-হাতা। চিন্তামগ্ন চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল শিরা-বার-করা বাহুর ওপর অসংখ্য ফুটো ফুটো দাগের দিকে–সবই উঁচ ফোঁটানোর দাগ চামড়ার চেহারা পর্যন্ত পালটে গিয়েছে। শেষকালে ফের…
দ্য সাইন অফ ফোর
০২. কেস বৃত্তান্ত
দৃঢ় পদক্ষেপে ঘরে ঢুকলেন মিস মর্সটান। বাহ্যিক হাবভাব বেশ সংযত দেখলাম। মেয়েটি স্বর্ণকেশী ক্ষুদ্রকায়। সাজসজ্জায় পারিপাট্য আছে। দু-হাত দস্তানায় ঢাকা। পরিচ্ছদ রুচিসুন্দর, প্রশংসার যোগ্য, মহার্ঘ নয়–সাদাসিদে। যা দেখে মনে হয়, হাতে ঢালাও টাকা তেমন নেই। চোখ জুড়োনো ধূসরাভ হলদেটে পোশাকে কাটছাঁটের চালিয়াতি একদম নেই। মাথায় ওই রঙেরই টুপি, একপাশে শুধু একটা সাদা পালকের ইশারা। মুখ…
০৩. সমাধানের সন্ধানে
হোমস ফিরল সাড়ে পাঁচটায়। মেজাজ খুব শরিফ, উৎসাহ উদ্দীপনায় ঝকমক করছে চোখ-মুখ। এই হল শার্লক হোেমস। কখনো বিষাদের মেঘে অন্ধকার, কখনো উত্তেজনার প্রসাদে ঝলমলে। এ-কেসে খুব একটা রহস্য নেই, কাপে আমি চা ঢেলে দিতে কাপটা তুলে নিয়ে বললে ও : এখন শুধু একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। সে কী! রহস্য সমাধান করে ফেললে! অতখানি বলাটা…
০৪. টেকো লোকটির কাহিনি
ভারতীয় ভৃতের পেছন পেছন ঢুকলাম একটা টানা লম্বা গলিপথে। আলো খুব কম। অত্যন্ত নোংরা। আসবাবপত্রও যাচ্ছেতাই। ডান দিকের একটা দরজা ঠেলে খুলে দিতেই এক ঝলক হলদে আলো আছড়ে পড়ল আমাদের ওপর। আলোক বন্যার মাঝে দাঁড়িয়ে ছোটোখাটো চেহারা এক পুরুষ। মাথাটি অত্যন্ত উঁচু। কিনারা ঘিরে গুচ্ছ গুচ্ছ লালচে চুল। শীর্ষদেশ কেশহীন চকচকে। ঝাউগাছের মাথা ছাড়িয়ে যেন…
০৫. পণ্ডিচেরি লজের বিয়োগান্তক কাহিনি
নৈশ অ্যাডভেঞ্চারে শেষ পর্বে পৌঁছোলাম রাত এগারোটা নাগাদ। বিরাট শহরের সাৎসেঁতে কুয়াশা ফেলে এসেছি পেছনে, আকাশ এখানে পরিষ্কার, রাত্রি অতি মনোহর। উষ্ণ পশ্চিমে হাওয়ার টানে ভারী মেঘগুলো মন্থর গতিতে ভেসে যাচ্ছে আকাশপথে, মাঝে মাঝে ফাঁকের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আধখানা বাঁকা চাদ। কিছুদূর পর্যন্ত সেই আলোয় স্পষ্ট দেখা গেলেও গাড়ির ভেতরে একটা সাইড-লণ্ঠন বের করে…
০৬. হাতেনাতে দেখাল শার্লক হোমস
দু-হাত ঘষে শার্লক হোমস বললে, হাতে আধঘণ্টা সময় পাওয়া গেছে ওয়াটসন। সদ্ব্যবহার করা যাক! কেসটা আমি মেরে এনেছি। তবে আত্মবিশ্বাস জিনিসটা বেশি থাকা ভালো নয়ভুল হতে পারে। ওপর-ওপর জলের মতো সোজা কেস মনে হলেও কে জানে তলায় দারুণ ঘোর প্যাঁচ আছে কিনা। জলের মতো সোজা বলছ। আমি তো হতভম্ব। সোজাই তো৷ এমনভাবে বলল হোমস যেন…
০৭. পিপে উপাখ্যান
সঙ্গে একটা ছ্যাকড়াগাড়ি এনেছিল পুলিশ। সেই গাড়িতে মিস মসঁঠানকে বাড়ি নিয়ে গেলাম। মেয়েরা একদিক দিয়ে সত্যিই দেবী। নিজের চাইতে দুর্বল মেয়ের সামনে ভেঙে তো পড়েই না, উলটে প্রবোধ দিয়ে যায়। ভয়াতুরা হাউসকিপারের সামনে শান্ত সমুজ্জ্বল মুখে সব ঝক্কিই সয়ে গেছে মিস মর্সটান–প্রশান্ত আচরণ দেখে বোঝাই যায়নি ভেতরে তার কী চলছে, গাড়িতে উঠে কিন্তু ভেঙে পড়লেন।…
০৮. বেকার-স্ট্রিটের ছন্নছাড়া বাহিনী
বললাম, এবার কী করবে বল? টোবি আর অভ্রান্ত বলা যায় না–সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ও যা পেয়েছে, সেই অনুযায়ীই কাজ দেখিয়েছে, পিপের ওপর থেকে টোবিকে নামিয়ে কাঠের গোলার বাইরে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বললে হোমস। সারাদিনে লন্ডন শহরে কত ক্রিয়োসসটের গাড়ি চলে তা যদি ভাবো তো বুঝবে বেচারার গন্ধ গুলিয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। এখানেও গন্ধ…
০৯. শৃঙ্খলে যেখানে ফাঁক রয়েছে
অনেক বেলায় ঘুম ভাঙল আমার। শরীর ঝরঝরে। ঘুমানোর সময়ে শার্লক হোমসকে যেভাবে বসে থাকতে দেখেছিলাম, এখনও বসে রয়েছে সেইভাবে। কেবল বেহালা পাশে রেখে চোখ। ড়ুবিয়ে রয়েছে একটা বইতে। আমার নড়াচড়ার শব্দে মুখ তুলে চাইতেই দেখলাম, দুশ্চিন্তার কালো হয়ে উঠেছে মুখখানা। বলল, খুব ঘুমিয়েছ। এত কথা বললাম, তবুও ঘুম ভাঙেনি। কিছুই শুনিনি। নতুন খবর পেয়েছ তাহলে?…
১০. দ্বীপবাসীর শেষদিন
বেশ ফুর্তির মধ্যে শেষ হল খাওয়াদাওয়া। ইচ্ছে করলে অনর্গল কথা বলতে পারে হোমস। সেদিন দেখলাম ওর সেই ইচ্ছেই রয়েছে। মনে হল একটা স্নায়বিক উল্লাসের মধ্যে রয়েছে বন্ধুবর। এ-রকম উল্লসিতভাবে কখনো ওকে দেখেনি। যেন ঝলমল করছে, চলনে বলনে ঝিকিমিকি দ্যুতি ঠিকরোচ্ছে। নানা বিষয়ে পরের পর কথা বলে চলল একাই। রকমারি বিষয়। কিন্তু প্রতিটিতে যেন বিশেষভাবে কৃতবিদ্য।…