আঠারোশো বাষট্টি সালের জানুয়ারি মাসে রয়্যল জিয়োগ্রাফিক্যাল সোসাইটির সংসদভবনে একটা মস্ত সভার আয়োজন হয়েছিলো। প্রথম থেকেই শ্রোতারা অত্যন্ত কৌতূহলী ও উৎসুক হয়ে ছিলো, সভাপতির উদ্দীপ্ত বক্তৃতা শুনতে-শুনতে তারা ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে উঠলো। হাততালির প্রবল আওয়াজ আর প্রশংসার একটানা গুঞ্জনে সভাঘর অল্পক্ষণের মধ্যেই মুখরিত হয়ে গেলো। বক্তৃতা শেষ করে বসবার আগে সভাপতি বললেন, ভৌগোলিক অভিযানে ইংরেজরাই…
ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন
০২. ডক্টর ফার্গুসনের একমাত্র বন্ধু
ডক্টর ফার্গুসনের একমাত্র বন্ধু যিনি ছিলেন, তিনি ডিক কেনেডি। ধ্যান-ধারণা, প্রবণতা ও স্বভাব দু-জনের একেবারে অন্যরকম, কোনো দিকেই প্রায় মেলে না; কিন্তু তবু তাঁদের ভিতর প্রীতির কোনো অভাব ছিলো না। কতগুলো দিকে আবার দুজনের খুব খাপ খেতো : ডিক কেনেডি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সরলচিত্ত, কোনো ঘোরপ্যাঁচ জটিলতা নেই, একবার যা করবেন বলে ধরেন কখনও তা…
০৩. জো – ফার্গুসনের চিরসাথী ও বিশ্বস্ত অনুচর
জো—সে হলো ফার্গুসনের চিরসাথী ও বিশ্বস্ত অনুচর! যারাই জোকে জানে, তারাই একবাক্যে সমস্বরে এ-কথা বলে যে, তার মতো ভৃত্য আর হয় না। অনেকদিন থেকেই সে ফার্গুসনের সঙ্গে আছে, আর সে-যে কেবল অদ্ভুত বিশ্বাসী, তা-ই নয়, তার মতো প্রভুভক্তও অতি বিরল। ফার্গুসনকে সে দেবতার চেয়েও বেশি ভালোবাসে। ফার্গুসনের চালচলন, কথাবার্তা–সব তার কাছে মহৎ বলে প্রতিভাত হয়।…
০৪. রেজোলিউট বেশ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছিলো
রেজোলিউট বেশ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছিলো, তবু পথও তো অনেক লম্বা, কাজেই দিনের পর দিন ফার্গুসন তাঁর সহযাত্রীদের কৌতূহল নিবারণের জন্যে বেলুনের সম্বন্ধে নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে বক্তৃতা দিয়ে চললেন। একদিন তিনি সকলকে তার যাত্রার মূল উদ্দেশ্য ভালো করে বুঝিয়ে বললেন : একদিন এই রহস্যময় মহাদেশ আদি পৃথিবীকে উপহার দিয়েছিলো লোভনীয় এক সভ্যতার গৌরব। প্রাচীন মিশর—ছেলেবেলা থেকে…
০৫. আবহাওয়া পরিষ্কার, বাতাস অনুকুল, সমুদ্রও শান্ত
বেশ দ্রুত গতিতেই অগ্রসর হচ্ছিলো রেজোলিউট। আবহাওয়া পরিষ্কার, বাতাস অনুকুল, সমুদ্রও শান্ত। উত্তমাশা অন্তরীপ পেরিয়ে মোজাম্বিক উপসাগর নির্বিঘ্নে অতিক্রম করে অবশেষে পনোররাই এপ্রিল জাহাজ এসে পৌঁছুলো জানজিবার বন্দরে। জানজিবারের ইংরেজ রাজদূত রেজোলিউটেরই প্রতীক্ষ্ণ করছিলেন, নোঙর ফেলতেই তিনি সদলবলে জাহাজে এসে উঠলেন। অত্যন্ত উৎসাহ দেখালেন তিনি। ফার্গুসনের পরিকল্পনায়, সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন। জাহাজ থেকে জেটি পর্যন্ত…
০৬. নীল আকাশে তুলোর পাঁজার মতো শাদা মেঘ
নীল আকাশে কেবল তুলোর পাঁজার মতো শাদা মেঘ, তাদের গা থেকে রোদ আর আলো যেন চুঁইয়ে পড়ছে। সূর্য পূর্বদিকে অনেকখানি উঠে এসেছে, আর অনুকূল হাওয়ার গায়ে লেগে আছে তারই উষ্ণ স্পর্শ। ভিক্টরিয়া এক দমকে শূন্যে প্রায় দেড় হাজার ফিট উঠে এসে নিমেষের মধ্যে তাদের চোখের সামনে ভীষণ-সুন্দর আফ্রিকাকে উন্মোচিত করে দিয়েছিলো। প্রথমে কথা বলে উঠেছিলো…
০৭. রাত কেটে গেলো নিরাপদেই
রাত কেটে গেলো নিরাপদেই, কিন্তু পরদিন—সেদিন শনিবার—কেনেডি উঠলেন বিষম জ্বর নিয়ে। প্রথমটায় ফাণ্ডসন ভেবেছিলেন, বুঝি-বা উষ্ণ জঙ্গলের জ্বর আক্রমণ করেছে তাকে, কিন্তু একটু পরেই যখন বুঝতে পারলেন যে জ্বর ততটা গুরুতর নয়, তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। ওষুধের ব্যবস্থা করে কেনেডিকে যখন চাঙা করে তোলা হলো, তখন কিন্তু অস্বস্তি এলো নতুন দিক দিয়ে। সূর্য ওঠবার খানিকক্ষণ…
০৮. প্রবল এক বাতাসের বেগ
প্রবল এক বাতাসের বেগে উত্তর-পূর্ব কোণের এক পাথুরে প্রদেশের উপর দিয়ে যখন ভিক্টরিয়া পরদিন সকালে উড়ে চলছিলো, তখন ফার্গুসনের ঘুম ভাঙলো। রাতে যখন তার ঘুম আসে তখন বেলুন যাচ্ছিলো এক বনের ওপর দিয়ে। তারপর ঘুমের ভিতর কখন যে এই নতুন এলাকার ওপর বেলুন চলে এসেছে, তা আর তিনি টের পাননি। চারদিকেই উঁচু-নিচু লাল পাথরের বন্ধুর…
০৯. ডাইনি-পুরতরা
ডাইনি-পুরতরাই সম্ভবত আদি পৃথিবীর পরম্পরাগত জীবন্ত নিদর্শন। সারা গায়ে জন্তুজানোয়ার, ফুল, লতাপাতা, গাছপালার উল্কি আঁকা, গলায় শাঁখের মালা, মাথায় পশুললামের টুপি, কানে মস্ত হাড়ের মাকড়ি—এই হলো ডাইনি-পুরুতের চেহারা। প্রত্যেকটা দলের মধ্যে এদের ক্ষমতাই সবচেয়ে বেশি। রাজারা পর্যন্ত এদের ভয় পায়, এদের হুকুম নিঃশব্দে তামিল করে। পুরুতদের নামকরণের রীতিটা বড়ো অদ্ভুত : বেশির ভাগেরই নাম কোনো-না-কোনো…
১০. ডিকের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন ফার্গুসন
ডিকের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন ফার্গুসন। শোনো কেনেডি, চুল্লিটার তাপ বড়িয়ে রেখে যে-কোনো সময় উড়ে যাবার জন্যে তৈরি হয়ে থেকো-নোঙরটা অবশ্য খুব আঁটো করে জড়ানো আছে, তবু চটপট উড়ে যেতে কোনো অসুবিধে হবে না। জো নিচে মাটিতে বেলুনের তলায় বসে অপেক্ষা করবে। কেবল আমি একাই যাবো সুলতানের কাছে। আমি যাবো আপনার সঙ্গে, জো বিনীত অথচ দৃঢ়…