জো বেশ জমকালো ভঙ্গিতে বসে ছিলো বেলুনের তলায়।কি ওপরে চুল্লির আগুন তাতিয়ে গনগনে করবার ব্যবস্থা করেছেন, আর ফার্গুসন গেছেন ডাইনি-পুরুতের সঙ্গে সুলতানের কাছে। কাজেই বাজারে যত লোক ছিলো, তারা জো-কে চাঁদের অন্যতম পুত্র ভেবে গদগদভাবে নানা ভঙ্গিতে তার চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করছিলো। কতগুলি মেয়ে-পুরুষ অদ্ভুত এক আচাভুয়ো বাজনার সঙ্গে তালে-তালে পা ফেলে বিচিত্র ভঙ্গিতে নাচ দেখাচ্ছিলো…
ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন
১২. আকাশ একেবারে পরিষ্কার
পরদিন সকালে কিন্তু আকাশ একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেলো। শান্ত শাদা মেঘের গা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে রোদ, চারদিক আলোয় ভরা, সুন্দর মন্দ-মধুর হাওয়া দিচ্ছে। আবার চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠলো নিচের পৃথিবী। হাওয়া অনুকুল, উত্তর-পূর্ব দিকে ভেসে চললো ভিক্টরিয়া। ফার্গুসন হিশেব করে দেখলেন যে বিষুবরেখা থেকে তারা এখন প্রায় পৌনে দুশো মাইল দূর দিয়ে চলেছেন। পাহাড়ি…
১৩. দূরে মিলিয়ে গেলো নীলনদ
আস্তে-আস্তে দূরে মিলিয়ে গেলো নীলনদ আর তার আশপাশের অঞ্চল। তারপরে হাওয়া এলো প্রবল, আর কালো রাত চোখের সামনে সব ঢেকে দিলে। মস্ত একটা গাছের উপর নোঙর করা হলো বেলুন। যথারীতি ন-টা থেকে বারোটা পর্যন্ত পাহারা দিলেন ফার্গুসন, নির্দিষ্ট সময়ে কেনেডিকে ঘুম থেকে তুলে সাবধান করে দিলেন, খুব হুঁশিয়ার থেকো কিন্তু। কেন বলোতো! সন্দেহের কিছু কারণ…
১৪. কেবল মরা ধূলোর মরুভূমি
যেদিকে তাকানো যায়, কেবল মরা ধূলোর মরুভূমি। হলুদ, তপ্ত ধু-ধু বালি ছড়িয়ে আছে দিগন্তের শেষ পর্যন্ত—জলহীন, জনহীন, প্রাণহীন : যে-কালো শ্যমলতা তাঁরা ছাড়িয়ে এলেন, তার সঙ্গে এর কোনোই মিল নেই-কিছুতেই ভাবা যায় না, সবুজের ঐ উদ্দাম বন্যার পর এই রুক্ষ লাল দিগন্তজোড়া পিপাসা থাকে কী করে। ভয়ানক এক দুশ্চিন্তা আঁকড়ে ধরেছে ফার্গুসনকে। বেলুনে যে জল…
১৬. জো কোনো কথা বলেনি
জো কোনো কথা বলেনি। প্রবল হাতে সে ভীষণ আঁকুনি দিলে কেনেডিকে। এক হাতে বন্দুকের ট্রিগার চেপে অন্য হাতে জো-কে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেন কেনেডি। আর এই প্রচণ্ড টানা-হেঁচড়ার মধ্যে গুলিটা সশব্দে শূন্যের দিকে বেরিয়ে গেলো। শুন্যে মরুভূমির বুকে কোনো প্রতিধ্বনি না-তুলেই বাজ ফাটার আওয়াজ করে শব্দটা মুহূর্তে মিলিয়ে গেলো, কিন্তু সেই আওয়াজেই ফার্গুসনের সংবিৎ ফিরে…
১৭. রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর
রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর তিনজনে গাছতলায় শুয়ে ঘুম দিলেন। তার আগে অবশ্য ভালো করে চারদিক দেখে নেয়া হলো ধারে-কাছে অন্য-কোনো জীবজন্তু আছে কি না। যখন আর-কোনো জন্তু-জানোয়ার দেখা গেলো না, তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সবাই ভীষণ অবসাদের পর গভীর সুপ্তির হাতে নিজেদের সমর্পণ করে দিলেন। ঘুম খুব ভালো হয়েছিলো, কেননা সকালে বেশ ঝরঝরে লাগলো শরীর, বেশ…
১৮. হয়তো বেঁচে আছে জো
হয়তো বেঁচে আছে জো। কেননা তার মতো চটপটে, চতুর আর পাকা সাঁতারু নিশ্চয়ই ঐ হ্রদে ড়ুবে মরবে না। খানিকক্ষণ আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছুলেন দু-জনে। অন্তত এইভাবেই নিজেদের আশ্বাস দিতে চাচ্ছিলেন তারা। মুখে কিন্তু এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুলে কী হবে, মোটেই কোনোরকম ভরসা ছিলো না কারু। বাঁচলে তারা সুখী হন, এইজন্যেই এটা তারা মনে-মনে ভেবে নিলেন।…
১৫. যখন বেলুনকে আকাশে তোলা হলো
পরের দিন—সে-দিন শনিবার—যখন বেলুনকে আকাশে তোলা হলো তখন আর মাত্র দু-ঘণ্টা চলাবার মতো শক্তি আছে ভিক্টরিয়ার। এর ভেতরে যদি কোনো জলাশয় নাপাওয়া যায়, তাহলে মরুভূমির মরা ধূলোয় মরে পড়ে থাকা ছাড়া আর-কোনো উপায় নেই। তার সর্বগ্রাসী রিক্ততা নিয়ে পড়ে আছে হলুদ মরুভূমি, এমনকী একটু হাওয়াও সে রাখেনি অভিযাত্রীদের ভরসা দেবার জন্যে। রোদ এত প্রখর যে,…
১৯. দুরবিনের ফুটোয় চোখ রেখে
দুরবিনের ফুটোয় চোখ রেখে হঠাৎ একসময়ে কেনেডি চেঁচিয়ে উঠলেন, আরে! ঐযে, দূরে, কতগুলো ঘোড়সোয়ার ছুটে চলেছে বলে মনে হচ্ছে! অবশ্য ভীষণ ধূলো উড়ছে, তাই ভালো করে সঠিক কিছুই বুঝতে পারছি না। ফার্গুসন সেদিকে দুরবিন ঘুরিয়ে নিলেন : ঘোড়সোয়ার বলেই তো মনে হচ্ছে। তবে অনেক দূরে রয়েছে বলে ঠিকঠাক চেনা যাচ্ছে না, কেবল কালো কতগুলো চলন্ত…
২০. সমুদ্রতীরে পৌঁছুতে আর কতদিন
সমুদ্রতীরে পৌঁছুতে আর কতদিন লাগবে আমাদের? কোন্ সমুদ্রতীরে? এখন অবশ্য কিছুই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এটুকু বলতে পারি যে টিমটু এখনও প্রায় চারশো মাইল পশ্চিমে। হাওয়া অনুকূলে ছিলো, আর তার গতিও ছিলো প্রবল; তার ফলে রাতের প্রথম ভাগের মধ্যেই পশ্চিম দিকে আরো দুশো মাইল এগিয়ে গেলো ভিক্টরিয়া। পালা মেঘের ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্না এসে পড়েছে রুপোলি;…