মবি ডিক : হারমান মেলভিল অনুবাদ/রূপান্তর : খসরু চৌধুরী তিমি শিকারে যাবে বলে ন্যানটাকেট বন্দরে এল ইসমাইল, পরিচয় হল বর্বর, নরখাদক কুইকেগের সাথে। জাহাজে নাম লেখালো ওরা, একদিন রওনা হয়ে গেল সাগরে। তখন কি ওরা জানত, সাধারণ তিমি নয়, পেকোডের ক্যাপ্টেন শিকার করতে চান মবি ডিক নামের ভয়ঙ্কর এক সাদা তিমি? আসুন, পাঠক, আমরাও রহস্যময়…
মবি ডিক
০১১-২০. ঘুম সহজে আসতে চাইল না
১১. ঘুম সহজে আসতে চাইল না। মাঝরাতে উঠে হামাগুড়ি দেয়ার ভঙ্গীতে কিছুক্ষণ থাকার পর বসলাম আমরা। চোখ খুলব কি খুলব না করতে করতে খুলেই ফেললাম শেষ পর্যন্ত। ঘরের ভেতরে গাঢ় অন্ধকার, জানালার বাইরে ঝাপসা আলোর ক্ষীণ আভাস। জেগে যখন আছিই আলো জ্বালতে আপত্তি ছিল না আমার। কিন্তু তার আগে প্রায় একই সঙ্গে ধূমপানের ইচ্ছে জাগল…
০২১-৩০. আমরা যখন জেটিতে পৌঁছুলাম
২১. আমরা যখন জেটিতে পৌঁছুলাম, তখন প্রায় ছটা বাজে। কুয়াশাচ্ছন্ন ঊষা ধূসর চাদর বিছিয়ে রেখেছে চারপাশে। ওই দেখো, কয়েকজন নাবিক দৌড়াচ্ছে, বললাম আমি কুইকেগকে, জাহাজ মনে হয় সূর্য উঠলেই ছাড়বে। চলো, চলো! থামো! একটা স্বর ভেসে এল পেছন থেকে, আমাদের দুজনের কাঁধে হাত রেখে অদ্ভুত চোখে চেয়ে রয়েছে এলিজা। জাহাজে উঠতে যাচ্ছ? হাত সরাও, বললাম…
০৩১-৪০. এখন দুপুর
৩১. এখন দুপুর। স্টুয়ার্ড মাথা বের করে জানাল, ডিনার রেডি। বসে বসে অক্ষাংশের চার্ট দেখছিল ক্যাপটেন আহাব। এমনই গভীর তার মানোযোগ, যেন শুনতেই পায়নি স্টুয়ার্ডের ডাক। কিন্তু না। ডেকে এসে ডিনার, মি. স্টারবাক বলেই আবার কেবিনে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। সুলতানের পদশব্দ মিলিয়ে যেতে উঠল প্রধান আসামী–স্টারবাক, বিনাকলে চোখ লাগিয়ে ডিনার, মি. স্টাব বলেই নামতে…
০৪১-৫০. ডেকের উল্টো পাশে
৪১. ডেকের উল্টো পাশে দাঁড়ানো ভৌতিক মূর্তিগুলো খুলতে লাগল ওখানে বাধা নৌকোটা। স্টারবোর্ড কোয়ার্টারে থাকে বলে এটাকে, ক্যাপটেনের নৌকো বলো। বের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তিটা কালো। লম্বা, সাদা একটা ঝকঝকে দাঁত বেরিয়ে আছে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে মাথায় একটা পাগতি। অন্য চারজন এতটা কালো নয়, চামড়ার রঙ অনেকটা বাঘের মত হলুদ ফিলিপাইনের আদিবাসীদের মধ্যে এই ধরনের…
০৫১-৬০. ক্রোজেটস থেকে উত্তর-পুবে যেতে
৫১. ক্রোজেটস থেকে উত্তর-পুবে যেতে যেতে আমরা এসে পড়লাম ব্রিটের বিস্তীর্ণ সব খেতে। হলুদ এই খুদে উদ্ভিদগুলো রাইট তিমির প্রধান খাদ্য। লীগের পর লীগ ব্রিট দেখে মনে হচ্ছে, পেকোড যেন ঢুকে পড়েছে পাকা সোনালি গমের খেতে। দ্বিতীয় দিন চোখে পড়ল অনেক রাইট তিমি, হাঁ করে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, যেন সকালবেলা ঘাস কাটতে বেরিয়েছে বাগানের মালী।…
০৬১-৭০. শেকল টেনে নাও
৬১. শেকল টেনে নাও! মড়াটা ভেসে চলে যাক! তিমি কাটার কাজ শেষ হয়ে গেছে। চামড়া ছাড়ানো মুণ্ডহীন তিমিটাকে এখন মনে হচ্ছে মার্বেল পাথরের সমাধি। ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে ক্রমেই দূরে সরে যেতে লাগল তিমিটা, ওটাকে ঘিরে তখনও হুল্লোড় করছে অতৃপ্ত হাঙরের পাল। নিশ্চল জাহাজ থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেখা গেল তিমিটাকে। নীল আকাশের নিচে, শান্ত সাগরে…
০৭১-৮০. পূর্বনির্ধারিত দিন এল
৭১. পূর্বনির্ধারিত দিন এল। যথাসময়ে জাফ্রাট জাহাজের সঙ্গে দেখা হলো আমাদের। একসময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত তিমি শিকারী জাতি ডাচ আর জার্মানরা এখন তিমি শিকার প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরে কালেভদ্রে এখন চোখে পড়ে তাদের জাহাজ। দেখা করার জন্যে খুব আগ্রহ প্রকাশ পেল জাংফ্রাউয়ের! অনেক আগেই নৌকো নামিয়ে দিল তারা, স্টার্নের পরিবর্তে ক্যাপটেন এসে দাঁড়াল বোতে। ওর…
০৮১-৯০. যে-তিমিটার জন্যে এত কাণ্ড
৮১. যে-তিমিটার জন্যে এত কাণ্ড, সেটা অবশ্য মারা পড়েছিল। যথাসময়ে সেটাকে ঝোলানো হয়েছিল পেকোডের পাশে এবং কাটাকাটিও করা হয়েছিল। তিমি মারার পর কত কাজ থাকে। অনেকে শুধু বালতি টানাটানি করে। এক বালতি পার্মাসেটিতে ভরে গেলে সেটা সরিয়ে রেখে আনতে হয় আরেকটা বালতি। পরে এই ভরা বালতিগুলো আবার ঠিক করতে হয় ট্রাই-ওয়র্কসে যাবার আগে। স্পার্মাসেটি কখনও…
০৯১-১০০. খোঁজ নিয়ে দেখা গেল
৯১. খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তেলের পিপেগুলো যেমন রাখা ছিল তেমনি আছে। তাহলে ফুটো হয়েছে নিশ্চয় আরও ভেতরে কোথাও। পানি, রুটি, গরুর মাংস, তক্তা, হুপ ওপরে তুলতে তুলতে খালি হয়ে গেল জাহাজের পেট। এই সময় দিন রাত কাজ করতে করতে জ্বরে পড়ল আমার পুরানো বন্ধু কুইকেগ। হ্যামকে শুইয়ে দেয়া হলো ওকে। যতই দিন গেল খারাপ…