১৮৬৫ সালের ২৪ মার্চ। প্রশান্ত মহাসাগরের এক নির্জন দ্বীপে বিধ্বস্ত হলো ঝড়ের কবলে পড়া এক আমেরিকান বেলুন। কেউ নেই দ্বীপে। শুধু পাঁচজন অভিযাত্রী, সাথে একটি কুকুর না আছে খাবার, অস্ত্র, না বাড়তি জামা-কাপড় কিচ্ছু না। শুরু হলো ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ওদের টিকে থাকার সংগ্রাম। অদ্ভুত সব অভিজ্ঞার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে ওদের জীবনযাত্রা সবাই…
রহস্যের দ্বীপ
০২. গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে
গৃহযুদ্ধের তান্ডবলীলা চলছে তখন সমস্ত আমেরিকা জুড়ে। রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার সংকল্প নিয়ে ১৮৬৫ সালের মার্চের মাঝামাঝি রিচমন্ড শহর অবরোধ করে বসলেন জেনারেল গ্র্যান্ট। জোর লড়াই করেও কিন্তু তিনি রিচমন্ড দখল করতে পারলেন না। শহরের মধ্যেই বন্দী হয়ে আছেন জেনারেলের কয়েকজন ঝানু অফিসার। ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং এদের অন্যতম। ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের এই ক্যাপ্টেনের বয়স পঁয়তাল্লিশ। পাথর…
০৩. কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন
কোথায় গেলেন ক্যাপ্টেন? নিবিড় অন্ধকারে গিডিয়ন স্পিলেটের উদ্বিগ্ন প্রশ্ন শোনা গেল। পানিতে পড়ে গেলেন কি তিনি? নাকি বেলুন থেকে নামারই সুযোগ পাননি? চারজন লোক নেমে পড়ায় হালকা হয়ে যাওয়া বেলুন হয়তো তাঁকে নিয়েই শূন্যে উধাও হয়ে গেছে। পানিতে পড়ে গিয়ে থাকলে উন্মত্ত ঢেউয়ের বুকে সাঁতার কেটে তীরে পৌঁছুনো অসম্ভব। তবুও-স্পিলেট বললেন, চলো, খোঁজ করে দেখি।…
০৪. বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে
বিকেল নাগাদ নদীর জল কমে গিয়ে হাঁটু পানিতে এসে ঠেকল। সকালের ভয়ঙ্কর খরস্রোতা নদীটাকে খালই বলা চলে এখন। হেঁটেই নদী পার হয়ে গেল অভিযাত্রীরা। ওপরে উঠেই নেব যেপথে গিয়েছিল সে পথে রওনা দিলেন স্পিলেট। যাবার আগে বলে গেলেন, নেবের খোঁজে যাচ্ছি আমি। খাবার, আর রাতে মাথা গোঁজার একটা জায়গা ঠিক করে রেখো। স্পিলেট চলে যেতেই…
০৫. চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট
ওদের দেখেই চেঁচিয়ে বললেন স্পিলেট, ক্যাপ্টেনকে পাওয়া গেল না। অনেক খুঁজলাম, কিন্তু ক্যাপ্টেনের পায়ের ছাপ পর্যন্ত চোখে পড়ল না। একটু থেমে আবার বললেন, খাবার-খাবারের জোগাড় করেছ? তা করেছি, জবাব দিল পেনক্র্যাফট, কিন্তু পানি? পানির কি হবে? তার জন্যে ভাবনা নেই। একটা মিষ্টি পানির হ্রদ পেয়ে গেছি আমরা, আমি আর নেব প্রাণ ভরে পানি খেয়ে এসেছি,…
০৬. বেলুন থেকে নামার পর
বেলুন থেকে নামার পর কি কি জিনিস আছে তার একটা হিসেব তৈরি করতে বসল সবাই মিলে। পরনের জামা-কাপড় ছাড়া বিশেষ কিছুই নেই কারও। গিডিয়ন স্পিলেটের নোট বই আর ঘড়িটা ছাড়া সব ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে বেলুন থেকে। এক কথায় ব্যবহার করার মত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিছুই নেই ওদের কাছে। থাকার জায়গা ঠিক হয়ে গেছে। আর আগুন…
০৭. সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে
সকাল থেকে কোথাও পাওয়া গেল না নেবকে। খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেল তাঁরা তিনজনে, কিন্তু কোন হদিস করতে পারল না। শেষ পর্যন্ত ভাবল ওরা কোথাও গেছে নেব, সময় হলেই ফিরবে। কিন্তু ফিরল না নেব সারাদিন অপেক্ষা করেও যখন নেবকে ফিরতে দেখল না ওরা, ধরেই নিল মনিবের খোঁজে গেছে নেব। ক্যাপ্টেনকে না পেলে আর ফিরবে কিনা…
০৮. ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব
ওরা ঢুকলেও ফিরে চাইল না নেব। যেন শুনতেই পায়নি। ক্যাপ্টেনের দেহে প্রাণ আছে কিনা জানতে চাইল পেনক্র্যাফট। কিন্তু উত্তর দিল না নেব। তবে কি সত্যিই মারা গেছেন ক্যাপ্টেন? অনুমানের ওপর কখনও ভরসা করেন না স্পিলেট। এগিয়ে গিয়ে উবু হয়ে বসলেন ক্যাপ্টেনের পাশে। নাড়ী দেখলেন, বুকে কান পেতে শুনলেন। তারপর আস্তে করে বললেন, বেঁচে আছেন। কিন্তু…
১০. ধোঁয়া, মানে আগুন
ধোঁয়া! মানে আগুন! চোখ কপালে তুলে বলল পেনক্র্যাফট, সেরেছে! যাদু জানেন নাকি ক্যাপ্টেন? যাদুকর? স্তম্ভিত হয়ে গেছে পেনক্র্যাফট। প্রশান্ত মহাসাগরের এই অজানা দ্বীপে, আগুন জ্বালাবার কোন ব্যবস্থাই যেখানে নেই, সেখানে আগুন জ্বালালেন ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং। লোকটা প্রেতসিদ্ধ নয়তো? ভাবতে ভাবতে পথ চলছে নাবিক পেনক্র্যাফট। গুহায় ঢুকে ওর সন্দেহের কথাটা ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেসই করে ফেলল পেনক্র্যাফট। কথা…
১১. ভোর হলো
ভোর হলো। তিরিশে মার্চ সেদিন। এটা দ্বীপ কিনা দিনের আলোয় ভালমত যাচাই করার জন্যে লাভার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল অভিযাত্রীরা। যদিও তারা জানে, ভুল হতে পারে না ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং-এর। দিনের আলোয় পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা গেল। ওদিকের কোথাও মাটির চিহ্নমাত্র নেই। দিগন্তের যদ্দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।…