ভোর হলো। তিরিশে মার্চ সেদিন। এটা দ্বীপ কিনা দিনের আলোয় ভালমত যাচাই করার জন্যে লাভার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল অভিযাত্রীরা। যদিও তারা জানে, ভুল হতে পারে না ক্যাপ্টেন সাইরাস হার্ডিং-এর। দিনের আলোয় পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে পঞ্চাশ মাইল পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা গেল। ওদিকের কোথাও মাটির চিহ্নমাত্র নেই। দিগন্তের যদ্দূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।…
রহস্যের দ্বীপ
১২. পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ক্যাপ্টেন বললেন, নতুন পথে চিমনিতে ফিরব আমরা। তাহলে আরও ভাল করে জানা যাবে দ্বীপটাকে। এই দ্বীপে প্রাকৃতিক সম্পদ কি আছে তাও খুঁজে দেখতে হবে। জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত যদি লিঙ্কন আইল্যান্ডেই থাকতে হয়, তাহলে সেভাবেই গুছিয়ে নিতে হবে জীবনটা। সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপরে, তখন ঘড়ির কাঁটা দুটো ঘুরিয়ে বারোটার…
১৩. পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর
পরদিন সকালে খাওয়া-দাওয়ার পর কাজের জন্যে তৈরি হলো সবাই। একেবারে গোঁড়া থেকে শুরু করতে হবে সবকিছু। ক্যাপ্টেন বললেন, কাঠ আর কয়লার অভাব নেই দ্বীপে! শুধু তন্দুরটা হলেই আগুনে পুড়িয়ে মাটির বাসন পেয়ালা তৈরি করে ফেলা যাবে। তন্দুর! অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করল পেনক্র্যাফট, তন্দুর পাব কোথায়? বানিয়ে নেব। ইট দিয়ে। ইট পাব কোথায়? কাদামাটি দিয়ে বানিয়ে…
১৪. মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন
মাপজোকের কাজ শুরু করলেন ক্যাপ্টেন। আগের রাতের অর্ধেক বের করে রাখা ল্যাটিচিউডের কাজ শেষ করতে হবে, তাই সাগরতীর থেকে বিশ ফুট আর পাহাড় থেকে পাঁচশো ফুট দূরে একটা বারো ফুট লম্বা লাঠি পুঁতলেন ক্যাপ্টেন। লাঠিটার দুফুট রইল মাটির তলায়, দশফুট ওপরে। তারপর পিছু হটতে লাগলেন ক্যাপ্টেন! মাঝে মাঝে মাটিতে শুয়ে পড়ে দেখলেন লাঠির মাথা পাহাড়ের…
১৫. গহ্বরের মুখ
চওড়ায় বিশ ফুট, কিন্তু উচ্চতায় মাত্র দুফুট গহ্বরের মুখটা! এত কম উচ্চতায় চলবে না। আপাতত নেব আর পেনক্র্যাফট গাঁইতি চালিয়ে খানিকটা বড়ো করে নিল সুড়ঙ্গ-মুখ। চকমকি আর ইস্পাত ঠুকে দুটো মশালে আগুন জ্বালানো হলো। যুগ যুগ ধরে প্রবল বেগে পানি বয়ে যাওয়া আশ্চর্য সুড়ঙ্গে একে একে প্রবেশ করল সবাই। পথ সাঘাতিক পিচ্ছিল। পা পিছলে পড়ে…
১৬. জুনের শুরুতেই শীত নামল
জুনের শুরুতেই শীত নামল। প্রথমেই মোমবাতির প্রয়োজন বোধ করল অভিযাত্রীরা। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে আবার গোটা ছয় সীল মেরে আনল পেনক্র্যাফট। প্রথমে চুন আর চর্বি দিয়ে তৈরি হলো সাবান। সালফিউরিক অ্যাসিডের সাহায্যে আলাদা করে ফেলা হলো ক্যালশিয়াম সালফেট। বাকি রইল তিনটে ফ্যাটি অ্যাসিড-লিক, মারগারকি আর স্টিয়ারিক। শেষ দুটোকে কাজে লাগিয়ে মোমবাতি বানিয়ে ফেললেন হার্ডিং, শাকসব্জির আগা পাকিয়ে…
২০. একটু দূরে জঙ্গলের ধারে
একটু দূরে জঙ্গলের ধারে ওরাং ওটাং এর লাশগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হলো! সহজেই পোষ মানিয়ে ফেলা গেল জাপকে। কখনও বেয়াড়াপনা করে না, যা শেখানো হয় চুপচাপ শিখে নেবার চেষ্টা করে। এবার কয়েকটা কঠিন কাজে হাত দিল অভিযাত্রীরা। একটা ব্রিজ তৈরি করে ফেলল মার্সি নদীর ওপর। ব্রিজের মাঝখানটা ইচ্ছে করলে খুলে রাখা যায়। এতে দ্বীপের দক্ষিণ…
১৭. যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে
যেন ভূত দেখছে এমন ভাবে গুলিটার দিকে চেয়ে রইল সবাই। পেকারির বাচ্চাটার বয়স কত ছিল, পেনক্র্যাফট? জিজ্ঞেস করলেন ক্যাপ্টেন। মাস তিনেক। ফাঁদে আটকেও মায়ের দুধ খাচ্ছিল। তিন মাসের মধ্যেই কেউ গুলিটা ছুঁড়েছে। যেই ছুঁড়ে থাকুক সে হয়ত এখনও এ দ্বীপেই আছে। কাজেই হুঁশিয়ার থাকতে হবে আমাদের। আচ্ছা, ক্যাপ্টেন, একটা ছোট্ট নৌকো বানিয়ে নিলে কেমন হয়?…
১৮. জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা
পরদিন ভোরে, জাহাজডুবি হয়ে সত্যিই কেউ দ্বীপে উঠেছে কিনা দেখার জন্যে নৌকোয় চেপে রওনা দিল অভিযাত্রীরা। জোয়ার এসেছে তখন মার্সি নদীতে। মাঝ নদীতে নৌকোটা নিয়ে গিয়ে হাল ধরে বসে রইল পেনক্র্যাফট। জোয়ারের টানে আপনি ভেসে চলল নৌকো। একজায়গায় তীরের খুব কাছাকাছি চলছিল নৌকো। ওই সময়েই রাই সরষের গাছ খুঁজে পেল হার্বার্ট। দেখে রেগে গেল পেনক্র্যাফট।…
১৯. দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো
পরদিন, পহেলা নভেম্বর সকাল থেকেই দ্বীপের দক্ষিণ তীর ঘেঁষে চলা শুরু হলো। ঠিক হলো, দক্ষিণ তীরে জাহাজডুবির চিহ্ন খুঁজে রাতের আগেই মার্সি নদী পেরিয়ে গ্রানাইট হাউসে পৌঁছতে হবে। নৌকোটা যেখানে আছে সেখানেই থাকুক দিন কয়েক। নৌকোটা নিরাপদেই থাকবে ওখানে, কি বলো? পেনক্র্যাফটকে উদ্দেশ করে বললেন স্পিলেট। কি করে বলি, বলল পেনক্র্যাফট, কচ্ছপের ঘটনাটা মনে নেই?…