উড়োজাহাজের চলার পথের সব তথ্য জমা থাকে ব্ল্যাক বক্সে। কারিগরি তথ্যসহ পাইলটের উড়োজাহাজ চালানোর খুঁটিনাটি তথ্যও নিয়মিত জমা হয় যন্ত্রটিতে। আর তাই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পরপরই কারণ জানতে সবাই হন্যে হয়ে খোঁজ করেন ব্ল্যাক বক্সের। কেমন হতো যদি গাড়িতেও এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের সুযোগ মিলত। ভালো হতো নিশ্চয়ই। কারণ, এর ফলে কম সময়ে দুর্ঘটনার কারণ জানার পাশাপাশি বিমা দাবিও করা যেত সহজে। এমনকি গাড়ি বা চালকের সমস্যা আগে থেকে শনাক্ত করে সতর্ক হওয়ারও সুযোগ মিলত।
অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে শিগগিরই। গাড়ির জন্য ‘লাইভ ব্ল্যাক বক্স’ তৈরি করেছে দেশের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাক্সিগন’। বিভিন্ন সেন্সরের সমন্বয়ে তৈরি ছোট আকারের যন্ত্রটির পুরো অংশই দেশে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি নিজেদের কার্যালয়ে থ্রিডি (ত্রিমাত্রিক) প্রিন্টার দিয়ে যন্ত্রটির বক্সও তৈরি করেছে তারা। এরই মধ্যে বেশ কিছু গাড়িতে যন্ত্রটি পরীক্ষা করা হয়েছে।
সুবিধা
- শখের দামি গাড়ি চালকের হাতে ছেড়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন অনেকে। ঠিকমতো গাড়ি চালাচ্ছে তো, তেলের ব্যবহার ঠিকমতো হচ্ছে কিনা কিংবা টাকার বিনিময়ে যাত্রী পরিবহন করছে কি না—এমন নানা চিন্তা এসে উঁকি মারে মনের কোণে। আপনার চিন্তার দিন শেষ হতে চলেছে। অনলাইনে গাড়ির অবস্থানের তথ্যের পাশাপাশি চালকের আচরণের তথ্যও জানান দিতে পারে লাইভ ব্ল্যাক বক্স। অর্থাৎ, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, কারণ ছাড়া লেন পরিবর্তন, অন্য যানবাহন বা পথচারীর খুব কাছ দিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা শনাক্ত করে গাড়ির মালিককে সতর্ক করতে পারে যন্ত্রটি। এমনকি চলার পথে চালক হঠাৎ ব্রেক করলে, স্পিডব্রেকারে জোরে উঠলে বা গাড়িতে বেশি ঝাঁকির তথ্যও জানাতে পারে।
- গাড়ি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে চলছে কি না, তা–ও শনাক্ত করতে পারে লাইভ ব্ল্যাক বক্সটি। এমনকি গাড়ি চালুর পর কত দূর চলেছে অর্থাৎ পথের দূরত্বের তথ্যও জানাতে পারে।
- দুর্ঘটনা ঘটার আগে এবং পরের ঘটনার ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে পারে লাইভ ব্ল্যাক বক্স। ফলে সহজেই দুর্ঘটনার কারণ জানার পাশাপাশি বিমাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া যায়। এর মাধ্যমে আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি দ্রুত বিমার অর্থও পাওয়া যাবে।
- গাড়ির অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি গাড়িতে থাকা তেলের পরিমাণও জানাতে পারে লাইভ ব্ল্যাক বক্স। ফলে চালক তেল চুরি করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে গেলে গাড়ির মালিককে সতর্কবার্তাও পাঠিয়ে থাকে যন্ত্রটি।
- গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের আগাম তথ্যও জানাতে পারে লাইভ ব্ল্যাক বক্স। অর্থাৎ, গাড়ির ব্রেক, বিভিন্ন ওয়্যারিং, ব্যাটারির কারিগরি ত্রুটি শুরুতেই শনাক্ত করে বার্তা পাঠায় যন্ত্রটি। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আগেই কারিগরি সমস্যার সমাধান করা যাবে।
- দুর্ঘটনার তথ্য জানানো: গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটলে পরিচিত মানুষদের খবর দেওয়া অনেক সময় আর হয়ে ওঠে না। কেউ আবার দুর্ঘটনার পর মুঠোফোন হারিয়ে যাওয়ার কারণে পরিচিতদের নম্বর খুঁজে পান না। সমস্যার সমাধান দেবে লাইভ ব্ল্যাক বক্স। দুর্ঘটনা সতর্কবার্তা জানানোর পাশাপাশি দুর্ঘটনার পর নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস বার্তা পাঠাতে পারে যন্ত্রটি।
- লাইভ ব্ল্যাক বক্সের সঙ্গে চাইলেই অতিরিক্ত ড্যাশ ক্যাম ব্যবহার করা যায়। ফলে গাড়ির সামনের ছবি দূর থেকেও দেখা যাবে। চাইলে আশপাশের কথোপকথন শোনাও যাবে। অন্য ড্যাশ ক্যাম থেকে এই ক্যামেরার পার্থক্য হচ্ছে, এটি দুর্ঘটনার সময়ের ছবি বা ভিডিও স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা করে সংরক্ষণ করতে পারে।
- যন্ত্রটিতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় ব্যবহারকারীরা চাইলে এটিকে গাড়ির ভেতরে ওয়াই–ফাই হটস্পট হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
- ট্রাক বা কার্গোর চালকের কেবিনের তথ্য ও ছবিও দেখা যাবে যন্ত্রটি দিয়ে।
- লাইভ ব্ল্যাক বক্স ব্যবহারের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির নিবন্ধনের তথ্য দিতে হয়। ফলে ট্রাফিক পুলিশ সহজেই কোনো গাড়ি বা চালকের সন্ধান পেতে পারে।
কাজ করে যেভাবে
ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) প্রযুক্তির লাইভ ব্ল্যাক বক্সটি মূলত গাড়ি, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে ব্যবহার করা যায়। ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে সংযোগের সুযোগ থাকায় সহজেই গাড়িতে যুক্ত করা সম্ভব। চাইলে গাড়ির ব্যাটারির সঙ্গেও সরাসরি সংযোগ দেওয়া যায়। যন্ত্রটির ধারণ করা ছবি, ভিডিও বা তথ্য সফটওয়্যার ও অ্যাপের সাহায্যে দূর থেকেই জানা যায়। চাইলে একসঙ্গে একাধিক গাড়ির গতিবিধি একই অ্যাপ দিয়ে একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
অ্যাডভান্সড ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স সার্ভিস (এডিএএস) প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রটি বিভিন্ন সেন্সরের সাহায্যে গাড়ির কারিগরি ত্রুটির পাশাপাশি চালকের গাড়ি চালানোর সমস্যাও শনাক্ত করতে পারে। অর্থাৎ, চালক কীভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্রেক করছে কি না, তা–ও জানা যাবে যন্ত্রটির মাধ্যমে। ধারণ করা তথ্য ও ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে গাড়ির মালিককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানাতে পারে লাইভ বক্স। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ধারণ করা সব তথ্য সরাসরি অনলাইনে দেখার সুযোগ দিয়ে থাকে লাইভ ব্ল্যাক বক্স। এ জন্য যন্ত্রটিতে বিল্টইন সিম যুক্ত করা থাকে। ফলে কেউ চাইলেও সিম পরিবর্তন করতে পারবেন না। কম গতির ইন্টারনেট কাজে লাগিয়ে তথ্য বিনিময় করতে পারায় শহরের পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচল করা গাড়ির তথ্যও জানাতে পারে যন্ত্রটি।
যেভাবে শুরু
সময়টা গত বছরের এপ্রিল মাস। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ৫ বছরে ৮০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্য নিয়ে অ্যাক্সিগন নামের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান চালু করেন মাশরুর হান্নান। চিন্তা করেন, এমন একটি যন্ত্র তৈরি করবেন, যা কাজে লাগিয়ে দুর্ঘটনার কারণ জানার পাশাপাশি অপরাধীও শনাক্ত করা যাবে। এই চিন্তা থেকেই গাড়ির জন্য ‘লাইভ ব্ল্যাক বক্স’ তৈরি করা শুরু করেন। বয়সে তরুণ একদল প্রযুক্তিপ্রেমীর সহায়তায় তৈরিও করেন যন্ত্রটি। বর্তমানে অ্যাক্সিগনের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির অন্য সদস্যরা হলেন মো. আসিফ আতিক (পরিচালক), ইবতেসাম দোহা (টেক কনসালট্যান্ট), আদিল হোসেন (সিটিও এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার), সাইফুল্লাহ চৌধুরী (সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার), পিয়াল হোসেন (এমবেডেড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার) এবং মো. নাজিবুল ইসলাম (অপারেশনস অ্যাসোসিয়েট)।
কীভাবে তৈরি হলো
‘আমরা নিজেরাই লাইভ ব্ল্যাক বক্সে পুরো নকশা করেছি। আমরা চাইলেই বিদেশ থেকে যন্ত্রটি নকশা অনুযায়ী তৈরি করে নিয়ে আসতে পারতাম। তবে আমরা সেটা না করে নিজেরাই থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্যে যন্ত্রটির বক্স তৈরি করেছি। ফলে আমাদের যন্ত্রের আকারও বেশ ছোট হয়েছে। বর্তমানে ১০টি গাড়িতে লাইভ ব্ল্যাক বক্সের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলাফলও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ড ভিসা (বিজনেসম্যান)
দুবাই ও তুরস্ক ৭দিন ৬ রাত
Maldives (Paradise Island) 3D/2N
শিগগিরই আমরা প্রায় ৫০০টি গাড়িতে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করব।’ বেশ গর্ব নিয়ে প্রথম আলোকে কথাগুলো বলছিলেন আদিল হোসেন। অ্যাক্সিগনে সিটিও এবং প্রজেক্ট লিড হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
আগামীর পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের গাড়িতে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হোক। লাইভ ব্ল্যাক বক্স যুক্ত থাকলে চালক ধরা পড়ার ভয়ে সাবধানে গাড়ি চালাবেন, ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে যাবে। এভাবে সব চালক যদি নিয়ম মেনে গাড়ি চালান তবে একসময় সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণই কমে যাবে। যন্ত্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে আসলে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। যন্ত্রটির দাম ও সেবা ব্যবহারের জন্য আনুমানিক ৫ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। তবে ড্যাশ ক্যামসহ বিভিন্ন সেবা পেতে গুনতে হবে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
liveblackbox.com ওয়েবসাইট থেকে যন্ত্রটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।’
-ইশতিয়াক মাহমুদ, প্রথম আলো।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
শক্তিশালী ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডারের দাম জেনে নিন২৭৪ বার পড়া হয়েছে