মিনার রাতে বাসায় ফিরল বেশ অস্বস্তি নিয়ে। রাতের খাবারের পর থেকে পেটের মধ্যে কেমন করছে। মনে হচ্ছে, পেট ফুলে উঠছে। বাসায় ফিরে মাকে বলায় মা আদাকুচিতে সামান্য লবণ মাখিয়ে খেতে বললেন। মিনার ফ্রেশ হয়ে এসে বসল টিভিতে খবর দেখার জন্য। এর ফাঁকে একটু করে আদা চিবাতে লাগল। টিভি দেখা শেষে ঘুমাতে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করল, ওর পেটে আর কোনো সমস্যা নেই। আদা খেতে খেতে কোন সময় যেন ওর পেটের মধ্যে হওয়া সব অস্বস্তি দূর হয়ে গেছে। লেখাটা পড়ে অবাক লাগছে তাই না? আসলেই কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আদা খুবই উপকারী।

মূলত আমরা জানি, আদা রান্নার কাজে মসলা হিসেবে যুক্ত হয়ে খাবারকে সুস্বাদু করে। এই আদা প্রচুর পুষ্টিগুণসম্পন্ন।

প্রতি ১০০ গ্রাম আদায় আছে ৮০ ক্যালরি, স্নেহ পদার্থ ০.৮ গ্রাম, সম্পৃক্ত চর্বি ০.২ গ্রাম, পলি স্যাচুরেটেড চর্বি ০.২ গ্রাম, মনো আনস্যাচুরেটেড চর্বি ০.২ গ্রাম, সোডিয়াম ১৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪১৫ মিলিগ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৮ গ্রাম, আঁশ ২ গ্রাম, সুগার ১.৭ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ভিটামিন সি ৮%, ভিটামিন বি-৬ ১০%, ক্যালসিয়াম ১%, আয়রন ৩%, ম্যাগনেশিয়াম ১০%। আদায় কোনো কোলেস্টেরল নেই।

আদায় রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় ৪০০-এর বেশি। এর মধ্যে গবেষকেরা এর ‘জিনজেরল কম্পাউন্ড’-এর পুষ্টিগত ভূমিকাকে মুখ্য হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন। এই উপাদানটি আদার স্বাদ ও গন্ধের জন্য দায়ী। এই জিনজেরলে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ক্ষমতা, যা মানবদেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে। এবার দেখে নেওয়া যাক মানুষের শরীরের কোন কোন সমস্যাকে দূর করে আদা আমাদের সুস্থ রাখতে পারে।

১. পেটের খারাপ প্রশমিত করে
আদার কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে, যা পাকস্থলীর ব্যথা নিরসন করে ও খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভের শুরুর দিকে যে ‘মর্নিং সিকনেস’ হয়, সেটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাঁচা আদা মুখে রেখে অল্প অল্প করে চিবিয়ে খেতে বলা হয়। এতে বমি বমি ভাব দূর হয়।

অস্ত্রোপচারের পর ও ক্যানসারের রোগীদের কেমোথেরাপি দেওয়ার পর অনেকেরই বমির ভাব হয়। এই বমির ভাব দূর করতেও আদা খেতে বলা হয়।

আদা বদহজম দূর করে পাকস্থলীকে দ্রুত খালি করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার খাওয়ার কিছু আগে এক টুকরা আদা খেয়ে নিলে আর বদহজম হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এটা অনেকটা খাওয়ার ২০ মিনিট আগে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার মতো। আদা খেলেই যদি সেই উপকার পাওয়া যায়, তবে আর ওষুধ কেন? এতে তো কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই ওষুধের মতো।

২. প্রদাহ দূর করে
অস্থিসন্ধির সমস্যা বা যেকোনো জয়েন্ট ড্যামেজের কারণে যে চরম বেদনাদায়ক সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেগুলো হলো রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্টিও আর্থ্রাইটিস। এসব ব্যথা থেকে উপশম পাওয়ার জন্য সম্পূরক চিকিৎসা বা সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আদা ব্যবহার করা হয় এর প্রদাহরোধী গুণের কারণে।

৩. রক্তের শর্করা কমায়
খাদ্যে আদার উপস্থিতি বাড়ালে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমানো সম্ভব। এতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীকে যদি ১২ সপ্তাহ ধরে ১ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম আদা খাওয়ানো হয়, তাহলে তার ইনসুলিন সেনসিটিভ বাড়ে, রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে, সার্বিক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে আদা ওষুধ হিসেবে খেলে দেখা যায় অনেক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ফাস্টিংয়ে ব্লাড সুগার কমে আসে। এটা টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সুখবরই বটে।

৪. ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে আদা
উদ্ভিদের মূল বা কাণ্ড অনেক ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধক অস্ত্র হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। সে রকমই আদার মধ্যে থাকা জিনজেরল ক্যানসার সেলের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। আদা বিশেষ করে খাদ্যনালির ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকায় অনন্য। কারণ, এই জিনজেরল একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা পাকস্থলীতে সৃষ্টি হওয়া প্রাত্যহিক ক্ষতকে সারিয়ে দিয়ে ক্যানসার সেলের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেশনের ফলে মানবশরীরে বার্ধক্যের গতিও মন্থর হয়।

৫. মাসিকের ব্যথা কমায়
মাসিকের সময় অনেকের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এর জন্য অনেক সময় ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হয়। আদা খেলে মাসিকের কারণে হওয়া ব্যথা কমে। মাসিকের ব্যথার সঙ্গে পেটে গ্যাসের সমস্যাও হয়। আদা খেলে দুই সমস্যাই দূর হওয়া সম্ভব।

৬. সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা উপশম ও প্রতিরোধে আদা
ঠান্ডা লাগলে আমরা সাধারণত কমলা, লেবু ইত্যাদি ভিটামিন সি-জাতীয় ফল খেতে বলে থাকি। এ ক্ষেত্রে আদার রসও কম ভূমিকা রাখে না। উদ্ভিদের মূলের একটি গুণ হচ্ছে শরীর গরম করা। ঠান্ডা লাগায় আদা খেলে শরীর গরম হয়, শরীরে ঘামের সৃষ্টি হয়, এর ফলে শরীর থেকে ঠান্ডাজনিত সংক্রমণ দূর হয়। বিষয়টি ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার মতো। কাশি হলে সকালবেলা খালি পেটে এক টুকরা আদা, এক চামচ মধু ও চার-পাঁচটি তুলসীপাতা একসঙ্গে চিবিয়ে আস্তে আস্তে রসটা খেলে কিছুক্ষণ পর কফ উঠতে শুরু করে, তাতে আরাম বোধ হয়। এটি নিয়মিত কিছুদিন খেলে ঠান্ডাজনিত কাশি সেরে যাবে, এটি পরীক্ষিত।

৭. রোগ প্রতিরোধে আদা
আদার জিনজেরল দেহের যেকোনো ইনফেকশনকে প্রতিহত করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আদা রেসপিরেটরি সেংশাল ভাইরাস প্রতিহত করে ঠান্ডা লাগা থেকে সৃষ্ট শ্বাসনালির সংক্রমণ ও ঠান্ডাজনিত লক্ষণগুলোকে প্রতিরোধ করে। তাই দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন নিয়ম করে সামান্য আদা খেলে অনেক অসুস্থতাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



৬৯০ বার পড়া হয়েছে