উঠতে আম, বসতে আম। ঘুরতে আম, ফিরতে আম। হাটে আম, ঘাটে আম। মাইলের পর মাইল জুড়ে আমগাছে ঝুলছে থোকা থোকা সবুজ আম। এই অনুভব আর দৃশ্য দেশের মাত্র একটি জায়গাতেই আপনি পাবেন। জায়গাটার নাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে যেকোনো সময় গেলেই এমনটি দেখা যাবে না। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় তথা জুন-জুলাই মাসে সেখানে বেড়াতে গেলে আপনার সত্যি সত্যি মনে হবে, যেন এক আমের দেশে আপনি বেড়াতে এসেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের তখন অন্য রূপ। লোকে বলে, গরমের দিনে আবার বেড়ায় নাকি? কিন্তু চাঁপাইয়ে বেড়ানোর ওটাই আসল সময়। তাই দু-তিন দিনের পরিকল্পনা করে এবার বেরিয়ে পড়ুন আমের দেশ দেখতে।
আমরাজ্য
সারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ আম হয়, এর অর্ধেক হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। আর চাঁপাইয়ে যে আম হয় এর অর্ধেক হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। তাই আমের দেশ বলতে প্রকৃতপক্ষে শিবগঞ্জকেই বোঝায়। সেখানে আছে শত শত জাতের আম। চমৎকার নাম, বিচিত্র স্বাদের বাহারি সেসব আম। জুন থেকেই শুরু হয় আমের আসল মৌসুম। এ মাসে বেড়াতে গেলে সেখানে পাবেন শত জাতের আমের দেখা। সবচেয়ে আগে ওঠে গোপালভোগ। তারপর ওঠে হিমসাগর বা খিরসাপাত আম। এরপর ল্যাংড়া। গাছপাকা ল্যাংড়া আম, দুধ দিয়ে চটকে খেলে এর সুঘ্রাণ হাতের তালুতে লেগে থাকে সারা দিন। এভাবে একের পর এক উঠতে থাকে ক্ষীরভোগ, মোহনভোগ, রাজভোগ, রানিভোগ, রানিপছন্দ, সিন্দুরা, সুবর্ণরেখা, কুয়াপাহাড়ি, নাকফজলি, ফজলি, চিনি ফজলি, সুরমাই ফজলি, চিনি মিসরি, জগৎমোহিনী, রাখালভোগ, রাঙাগুড়ি, গোবিন্দভোগ, তোতাপুরী, মিশ্রিকান্ত, জালিবান্ধা, বোম্বাই, ভুতো বোম্বাই, পাহাড়িয়া, গোলাপখাস, কাকাতুয়া, দাদভোগ, চম্পা, সূর্যপুরী, কাঁচামিঠা, কলামোচা, শীতলপাটি, লক্ষ্মণভোগ, গোলাপবাস, কিষানভোগ· বান্দিগুড়ি, রাংগোয়াই, আশ্বিনা, ভাদুরিগুটি, বনখাসা, বউ ফুসলানি, ক্ষীরমণ, দুধসর, রঙভিলা, পারিজা, আনোয়ারা, দিলশাদ, আম্রপালি, মল্লিকা, বেগমবাহার, পূজারীভোগ, পলকপুরী, রাজলক্ষ্মী, দুধকুমারী ইত্যাদি। জুলাই মাসে গিয়ে দেখা মেলে দেশের সবচেয়ে বড় আম ফজলি আর আশ্বিনার। চাঁপাইয়ে যত জাতের আম জন্মায় এর অর্ধেকই হলো আশ্বিনা। তাই গরম পার করে টিপ টিপ বর্ষা মাথায় সফরে গেলেও আপনি বিমুখ হবেন না। আমের রাজ্যে আমের দেখা পাবেনই।
দর্শনীয় স্থান
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়াতে গেলে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে। সকালবেলা ঢাকা থেকে বাসে যাত্রা করলে সাত-আট ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন চাঁপাইয়ে। এরপর বিকেলটা কাটিয়ে দিতে পারেন শহর ঘুরে, নতুবা প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে এক মনোমুগ্ধকর বরেন্দ্রভূমি বাবু ডাইং ঘুরে আসতে পারেন। তাহলে সার্থক হবে আপনার বরেন্দ্রভূমিতে আসা। পুরাতন বাজারে ঘুরলে বাজারের অলিগলি দেখবেন ঝুড়িভর্তি আমে সয়লাব। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে যেন জমে উঠেছে আমের মেলা। হাঁটার পথটুকুও যেন খোলা নেই। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বিশাল মহানন্দা নদীর ঘাটে গিয়ে দেখবেন, সেখানে ছবি তোলার জন্য অনেক ফ্রেম অপেক্ষা করছে। ছইছাড়া নৌকাভর্তি আম আর আম। অনেক নৌকা ঘাটে বাঁধা। আম নামছে। আম আসছে নদীর বুকে নৌকা করে। সন্ধে হওয়ার একটু আগে চলে যেতে পারেন মহানন্দা সেতুর কাছে। সন্ধেটা বাদাম চিবুতে চিবুতে বা চটপটি চাটতে চাটতে ওখানে নদীর বুক থেকে উঠে আসা হাওয়ায় ফুরফুরে করে নিতে পারেন নিজেকে। এরপর যথারীতি হোটেলে ফিরে আসা ও পরদিন আম-সফরের দ্বিতীয় খণ্ডের প্রস্তুতি।
সকাল সকাল নাশতা করে এবার বেরিয়ে পড়ুন সোনামসজিদের উদ্দেশে। চাঁপাই থেকে ওটা ঘণ্টা খানেকের বা দেড় ঘণ্টার পথ। জায়গাটার নামই গৌড়ের ছোট সোনামসজিদের নামে হয়ে গেছে সোনামসজিদ। ২০ টাকার নোটে যে মসজিদের ছবি এত দিন দেখে এসেছেন, সেই ছোট সোনামসজিদটিরই ওখানে দেখা পাবেন। পঞ্চদশ শতকে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ নির্মিত পাথরের কারুকার্যখচিত মসজিদটি দেখে মুগ্ধ হবেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধিসৌধটি। সেটিও দেখতে পাবেন। সেখান থেকে বেরিয়ে যাবেন শাহ নিয়ামতউল্লাহ (রহ·)-এর মাজার ও মসজিদ দেখতে। অপূর্ব নকশা ও স্থাপত্যশৈলীর গেরুয়া রঙের মসজিদটি আপনাকে মুগ্ধ করবে। মসজিদের কাছে দিঘির পাড়ে প্রাচীন স্থাপত্য শাহ সুজার তোহাখানাও কম বি্নয়কর নয়। দেখতে যেতে পারেন ওখান থেকে সুপ্রাচীন দাড়াসবাড়ী মসজিদটিও। এসব ঘুরে আপনার শেষ গন্তব্য হতে পারে সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিদর্শন। ওপারে মালদহ জেলা। এপার-ওপার হচ্ছে নানা পণ্য আর মানুষ। নিজ দেশে দাঁড়িয়ে অন্য দেশের ছবি স্বচক্ষে দেখা নিশ্চয়ই এক মধুর ্নৃতি হতে পারে। সারা দিন ঘুরে এরপর চাঁপাইয়ে ফেরা। পরদিন ফেরার পালা।
তবে হ্যাঁ, সোনামসজিদ যাওয়া বা আসার পথে মহাসড়কের দুই পাশে দেখবেন মাইলের পর মাইল আমবাগান। বিশাল বিশাল আমগাছের ডালজুড়ে ঝুলছে আম আর আম। নিজের গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই, যেকোনো পয়েন্টে নেমে আমবাগান ঘুরে মজা করতে পারেন। প্রায় মাটি ছুঁয়ে ঝুলে থাকা আমগুলো দেখে হয়তো ছিঁড়তে বা ধরতে লোভ হতে পারে। কিন্তু কক্ষনো ভুলেও সে কাজটা করতে যাবেন না। ওখানকার আমচাষিদের এক অলিখিত আইনে আপনার শাস্তি হয়ে যেতে পারে। গাছ থেকে পড়ে যাওয়া আম যে-কেউ নিতে পারে। তবে গাছ থেকে আম ছিঁড়লে যদি ধরা পড়ে, তবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়। লাঞ্ছনা তো আছেই। প্রতিটি আমবাগানেই রয়েছে পাহারার ব্যবস্থা। তাই শখ করলেও সে অপরাধ করার সুযোগ নেই। তাই বলে আমের দেশে গিয়ে আম খাবেন না, তা তো হতে পারে না। এ জন্য বিকেলে এসে চলে যান বাজারে। টুকরি টুকরি আম কিনে নিয়ে আবার ফিরে আসুন ঢাকায় বা বাড়িতে। আত্মীয়দের দিলে তারাও বুঝবে যে আপনি এবার কোথায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তবে আমঝোলা গাছের কাছে বা বাগানে যত খুশি তত ছবি তুলতে পারেন। তাতে বাগানের লোকেজন বরং খুশিই হবে।
যাওয়া-আসা-থাকা
ঢাকা থেকে এনপি এলিগেন্স, হানিফ, মডার্ন ইত্যাদি পরিবহনের আরামদায়ক কোচগুলো প্রায় প্রতি আধঘণ্টা পর ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে। ভাড়া ৩২০ টাকা। চাঁপাইয়ে সবচেয়ে ভালো থাকার হোটেল হলো হোটেল নাহিদ-এসি ও নন-এসি কক্ষের ব্যবস্থা আছে। রাজশাহী পর্যন্ত বিমান বা ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে আলাদা গাড়ি বা বাসেও যেতে পারেন। আজকাল অনেক ট্যুর অপারেটরও আমের দেশে বেড়ানোর প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করছে। জনপ্রতি তিন-চার হাজার টাকায় সেসব ট্যুরে যেতে পারেন। অ্যালেগ্রো ট্যুরস এবার তাদের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে জনপ্রতি তিন হাজার টাকায়। এ মৌসুমে পত্রিকার পাতায় চোখ রাখলে নিশ্চয়ই অন্য ট্যুর অপারেটরদেরও তথ্য পেয়ে যাবেন।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Maldives (Paradise Island) 3D/2N
মায়ানমার ভিসা (ভিজিট ভিসা)
ভিয়েতনাম- ইন্দোনেশিয়া ৭দিন ৬ রাত
মৃত্যুঞ্জয় রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
পূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত আয়োজন এখানে অপেক্ষা করছেপূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত ...
১,০৬০ বার পড়া হয়েছে