রাঙামাটির উগলছড়ি। পানি ঘেরা এই গ্রামে শীতে বসে পরিযায়ী পাখির মেলা। পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আরেক জনপদ উগলছড়ি। দেশের সর্ববহৎ সীমান্তবর্তী উপজেলা বাঘাইছড়ির পাহাড় ও জলে ঘেরা উগলছড়ি গ্রাম এখন পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখরিত।
পানি কমে যাওয়ায় বিলের উঁচু জায়গা ভেসে উঠেছে। ভেসে ওঠা জমিতে চলছে ধানের আবাদ। বিলের জলের অংশে চলছে মাছ শিকার। ছোট বড় মাছ আছে এই বিলে। মাছ ধরায় ব্যস্ত স্থানীয়রা। ছোট মাছ, ঝিনুক ও শামুক খুঁজতে এখানে শীতে ভিড় করে নানান ধরনের পাখি। পাখি শিকার বন্ধ হওয়ায় এখানে দেখা মিলে পাখির ঝাঁক। উগলছড়ি এখন পাখির গ্রাম।
খাগড়াছড়ি থেকে উগলছড়ি যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা। পাখি দেখতেই এবারের যাত্রা। খাগড়াছড়ির তরুণ শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমার সঙ্গে রওনা হলাম উগলছড়ির পথে।
সকালের কুয়াশা মোড়ানা স্নিগ্ধতাকে সঙ্গী হল। বাঘাইছড়ির আঁকাবাঁকা পথ। দূর সীমানায় সবুজ পাহাড়। অবশ্যই পাহাড়ে এখন বিবর্ণতার ছাপ। তবে পথের ধারে রাবার বাগানের সব পাতা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। শীতে এখানকার এমনই রূপ।
পুরোটা সরু পথ। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে এক ঘণ্টায় পৌঁছে যাই বাঘাইছড়ি বাজারে। রাঙামাটির অন্যতম পুরানো জনপদ বাঘাইছড়ি। এখানকার বাসিন্দাদের জেলার সঙ্গে যাতায়াতের প্রধান উপায় দেশি বোট বা লঞ্চ। তবে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে দ্রুত গতির স্পিডবোট। প্রতি জনের ভাড়া গুনতে হয় প্রায় ৮শ টাকা। সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা।
বাঘাইছড়িতে ক্ষাণিক বিশ্রামের জন্য ‘জেলা পরিষদ রেস্ট হাউস’ বেশ ভালো। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে রওনা হলাম উগলছড়ির পথে। যাতায়াতের যান ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক। প্রায় ২০ মিনিট পর পৌঁছালাম উগলছড়ি বিলে। পথে পথে যেন অনিন্দ্য প্রকৃতিতে মোড়ানো একটি জনপথ। গ্রামের ভেতর পিচঢালা পথ। পাহাড়ের ছোট ছোট পাড়া ও গ্রামের অকৃত্রিম প্রকৃতির উপস্থিতি। চেনা অচেনা পাখির কলতান চারপাশে। মাঝে মাঝে নিরবতাজুড়ে আসে।
গ্রামের পথে পৌঁছে গেলাম উগলছড়ি বিলের এক প্রান্তে। নিউ ল্যাইল্যঘোনার এই গ্রামে রয়েছে একজন ওমর আলী। তিনি পাখির রক্ষক হিসেবেই পরিচিত। গ্রামের লোকজন জিজ্ঞেস করতেই তার বাড়ির পথ দেখিয়ে দেয়।
তার বাড়ির চারপাশে অসংখ্য বৃক্ষরাখি। এই দৃশ্য দেখেই বোঝা যায় এখানে পাখিরা কতটা নিরাপদ। প্রায় ২৭ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো পাখি আগলে রেখেছেন তিনি এবং তার পরিবার।
ওমর আলী বলেন, “পাখিরা এখানে দূর-দূরান্ত থেকে আসে। তারা আমার সন্তানের মতো। কোনো দিন কাউকে পাখি হত্যা করতে দিইনি। অনেক সময় পাখির-বাচ্চা বাসা থেকে নিচে পড়ে গেলে তাদের সেবা করে সুস্থ করে তুলি। এরকমভাবে অনেক পাখির জীবন বাঁচিয়েছি।” “পাখি যাতে নিচে পড়ে মারা না যায় সেজন্য অনেক নিচে জাল বসিয়ে রাখি।”
ফিচার বিজ্ঞাপন
Australia Visa for Lawyer
Thimpu-Paro-Dochala Pass-Punakha 6D/4N
Thimpu-Paro-Dochala Pass-Punakha 5D/4N
আরও বলেন, “শীতে পাখির আনাগোনা বেশি। এখানে বক, পানকৌড়ি, শামখোল, কাঠশালিক, শালিকসহ বিভিন্ন জাতের পাখি আশ্রয় নেয়। নিরাপদ বলেই প্রায় ২৭ বছর ধরে পাখিরা এখানে বসতি গড়ে তুলেছে।”
পাখির ছবি তুলতে যাওয়ার কথা শুনে নিজে নৌকা চালিয়ে আমাদের নিয়ে গেলেন ওমর আলী। ছোট ডিঙি নৌকায় দুই সহযাত্রীসহ দুই আলোকচিত্রী রওনা হলাম উগলছড়ি বিলের মাঝে। স্বচ্ছ নীলাভ জল। টলমল। জলের মাঝে দেশীয় জালের ফাঁদ। মাছ ধরছে জেলারা। আর বিলজুড়ে ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাং কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখি।
ছোট ছোট দ্বীপে জলের ধারে পানকৌড়ি আর শামখোলের ঝাঁক চোখে পড়ে। নীল আকাশে দলছুট চিলের উড়াল। মুগ্ধ করা চখাচখি মানিকজোড়ের মতো শীতল জলে চুপ করে বসে আছে।
বিলের অগভীর জল দিয়ে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছে রাখাল। প্রকৃতির এমন দৃশ্যপটে মুগ্ধ হবে যেকোন পথিক। বিলে প্রায় দেড় ঘণ্টা নৌকায় ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি তুললাম। পুরো বিলজুড়ে শামখোল, বড় বক আর পানকৌড়ির রাজত্ব। চারপাশে নীল জলরাশি জুড়ে শীতের মিষ্টি কুয়াশা।
দূরের পাহাড়গুলোকে নীল মেঘ অবারিত জলরাশিকে নিজের রংয়ে রাঙিয়ে দিয়ে ভেসে বেড়ায়। জলের বুকে মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। বিকেলে ফেরার পালা। ততক্ষণে সোনালি সূর্য সোনা রঙা আলোয় চরাচরকে মুড়িয়ে দিয়ে মুখ লুকিয়েছে পাহাড় ঘেঁষা লেকের জলে।
যেভাবে যাবেন: পাখি দেখতে যেতে পারেন উগলছড়ি। পাহাড়ে নৈসর্গিক গ্রামের দেখা পাবেন সেখানে। ঢাকা বা খাগড়াছড়ি থেকে সরাসরি বাঘাইছড়ি পৌঁছানো যায়। বাঘাইছড়ি থেকে ভাড়ায় চালিত মটরবাইকে পৌঁছানো যাবে উগলছড়ি। নৌকা নিয়ে ঘুরতে পারেন। ভ্রমণে যে কোন তথ্য ও সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৫৫৬৭১০০৪৩, ০১৮১৫৮৫৬৪৯৭ নম্বরে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
৩৫৩ বার পড়া হয়েছে




