যান্ত্রিক জীবনের যন্ত্রণা ভুলে মন মাঝে মাঝে হয় বৈরাগী। ছুটে যেতে চায় অজানায়। শুধু একা। পরিচিত ভুবনের ব্যাপ্তি অতিক্রম করে অপরিচিত জগতের হাতছানিকেই বেশি প্রশান্তির মনে হয় তখন। নিজেকে নতুন করে পরখ করতে সাধ জাগে। একাকী প্রকৃতির কোলে সমর্পিত হয়ে নতুন অভিজ্ঞতায় সিক্ত হতে চান যারা তাদের জন্যই আমাদের এ আয়োজন। লিখেছেন সামিয়া আসাদী
মন যখন প্রজাপতি তখন তো পাখনা মেলবেই। এ প্রজাপতি মন যে বড্ড খেয়ালি। সে উড়ে বেড়াতে চায় দূর থেকে দূরান্তে। দল বেঁধে নয়, মাঝে-সাঝে ‘একলা চল রে’ নীতিতেই হারিয়ে যেতে চায় অজানায়। এমন প্রজাপতি মনকে কি বাঁধা যায় নিয়মের বেড়াজালে? সে সব বাধা-বিপত্তিকে থোড়াই কেয়ার করে ঠিকই পৌঁছে যাবে গন্তব্যে। কখনো গহীন সমুদ্রের সৌন্দর্য কিংবা অটল পাহাড় চূড়াকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখে সে। মাঝে মাঝে বরফের চাদরে ঢাকা এস্কিমোদের দেশেও ঢু মারতে ইচ্ছা করে। ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ইতিহাস কাছ থেকে দেখার লোভটাও সংবরণ করতে পারেনা। এতসব হাতছানি ঘরছাড়া করে প্রজাপতি মনকে, সুযোগ পেলেই সে রত্তনা হয় প্রকৃতির সৌন্দর্য সন্ধানে। এমন প্রজাপতি মনের অধিকারীদের ইচ্ছের ডানায় আরেকটু হাওয়া দিতেই আমাদের এ আয়োজন।
কী ভাবছেন? বেড়াতে যখন যাবই তখন দল বেঁধে নয় কেন? দল বেঁধে বেড়ানোর আনন্দে কম-বেশি সবাই অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে চাইলে একা হারিয়ে যাওয়ার বিকল্প কিছু নেই। যান্ত্রিক জীবনের মারপ্যাঁচে যখন হাবু-ডুবু খাচ্ছেন অবিরাম তখন হঠাৎ একটু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হলে দোষ কী বলুন। তাই বলে সদ্য টিনেজে পা দেয়া ছেলে বা মেয়েটিকে এ দুঃসাহস দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে না মোটেও। আপনি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে থাকেন, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো যথেষ্ট আস্থা থেকে থাকে এবং পকেট মোটামুটি ভারী হয়ে থাকে তবেই একলা চলরে এক্সপ্রেসে উঠে বসতে পারেন। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের অভিযান সফল করতে মনের জোর থাকা চাই শতভাগ। সেই সঙ্গে প্রয়োজন যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতি। বাংলায় একটি কথা আছে ‘ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না’। ভাবনার সুযোগ যেখানে অফুরন্ত সেখানে সুযোগের যথার্থ ব্যবহারই বুদ্ধিমানের পরিচয়। গতকাল মনস্থির করলেন আর আজই ভ্রমণে বের হয়ে গেলাম, বিষয়টি কিন্তু এত সহজ নয়। তাই ভ্রমণে রওনা দেয়ার পূর্বে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন।
প্রস্তুতিনামা-১
আগেই বলেছি, একা ভ্রমণের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে সাহস বা মানসিক জোর। এ মানসিক জোর যদি আপনার মধ্যে শতভাগ থাকে তাহলেই কেবল একা ভ্রমণের উৎসাহ আসবে ভিতর থেকে। তাই প্রথমেই সাহস সঞ্চয় করুন। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। একা প্রকৃতি জয় করতে যাচ্ছেন এমন একটি ভাব মনের ভিতর তৈরি করুন। প্রথম কিছুদিন এ ভ্রমণের নানা ইতিবাচক দিক নিয়ে চিন্তা করুন। এক্ষেত্রে, ভ্রমণ বিষয়ক বই মানসিক জোর এক ধাপ বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করতে পারে। সুযোগ পেলেই ভ্রমণ কাহিনী বিষয়ক বই ঘাটুন।
এবার ঠিক করুন কোথায় যেতে চাচ্ছেন? আপনি কোথায় যাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করেই কিন্তু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। দেশের ভিতর ঘুরতে চাইলে একরকম প্রস্তুতি আর দেশের বাইরে গেলে কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি যে জায়গাটিতেই যেতে চান না কেন সেই জায়গা সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা অর্জন করতে হবে। আপনার পরিচিত গণ্ডির মধ্যে যদি কেউ আগেই ঐ জায়গা ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে তার কাছ থেকে আদ্যপ্রান্ত জেনে নিন। দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানার পাশাপাশি এসব স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা কী, থাকার সু-ব্যবস্থা কেমন রয়েছে, কোথায় অবস্থান করলে ভালো হবে, আবহাওয়া কেমন, খাবার-দাবারের অবস্থা কী, শপিং কীভাবে করা যেতে পারে প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিন। পুরো ভ্রমণে খরচ কেমন হতে পারে তাও জেনে নেয়া যেতে পারে। এতে করে নিশ্চিন্তে ভ্রমণের আনন্দে মেতে উঠতে পারবেন।
ভ্রমণের স্থান নির্বাচনের পরের ধাপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ ধাপেই আপনি নিশ্চিত হয়ে যাবেন কবে, কখন, কোথায় হারিয়ে যাচ্ছেন। তবে কখন অর্থাৎ যে সময়টি একলা ভ্রমণের জন্য বেছে নিচ্ছেন তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। যেমন- দেশের মধ্যে বেড়াতে চাইলে সাধারণত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস আদর্শ। বছরের বাকি সময়টা ভ্রমণের জন্য অফসিজন হিসেবেই পরিচিত। তাই বলে অফসিজনে বেড়াতে মানা তা কিন্তু নয়। একা বেড়ানোর জন্য যে কোনো সময়ই হতে পারে যথার্থ। বরং অফসিজন বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে প্রকৃতিকে কাছ থেকে দেখার আনন্দই আলাদা। এছাড়া এসময় আগে থেকে হোটেল কিংবা যাওয়া-আসার টিকিট বুকিং দেয়ার ঝক্কি তেমন থাকে না। শীতের দিনগুলোতে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড়ে বেশি থাকায় অগ্রিম কিছু ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন হয়। আপনি যে তারিখে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তার কমপক্ষে এক বা দু’ সপ্তাহে আগে হোটেল বুকিং দিন। অধিকাংশ হোটেলেই ফোনের মাধ্যমে বুকিং দেয়া যায়। কোনো কোনো হোটেলে অগ্রিম পেমেন্টও করতে হতে পারে, স্থানীয় আত্মীয় বা পরিচিত কাউকে এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন। তা না হলে মানি অর্ডার করা যেতে পারে। ভ্রমণের যান অর্থাৎ বাস বা ট্রেনের টিকিটও আগে থেকেই কেটে রাখতে হবে। দেশের বাইরে যেতে চাইলে পাসপোর্ট, ভিসা, প্লেনের টিকিট এ তিন জিনিস অপরিহার্য। পাসপোর্ট হালনাগাদ করিয়েছেন কিনা, যে দেশে যেতে চাচ্ছেন সে দেশের ভিসা যথাসময়ে পাবেন কিনা এ দুটো বিষয় সবার আগে বিবেচনায় আনতে হবে। দেশের বাইরে যেখানে যাওয়ার পরিকল্পনাই থাকুক না কেন সে জায়গা সম্পর্কে খানিকটা পড়াশোনা করে নেয়া জরুরি। যে দেশের যে স্টেটে বেড়াতে চাইছেন সেখানকার ম্যাপটা সব সময়ই হাতে থাকা চাই। যে সমস্ত দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ করবেন ম্যাপের মধ্যে তা ভাল করে মার্ক করুন। ট্রাভেলার্স গাইড বুক এ বিষয়ে আপনাকে সহায়তা করতে পারে। ইন্টারনেট থেকেও সে দেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে পারেন। ট্রাভেল এজেন্টের সহায়তায় ভ্রমণ করতে চাইলেও নেটে যোগাযোগ করে নিতে পারেন। ভাষা জানা না থাকলে পরিভাষার একটি বই যোগাড় করা যেতে পারে।
প্রস্তুতিনামা-২
প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাওয়ার আর মাত্র দিন কয়েক বাকি। এখন নিতে হবে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। প্রথমেই ব্যাগ গোছানোর প্রক্রিয়া। কয়দিনের জন্য ও কোথায় বেড়াতে যাচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে পোশাক নির্বাচন করতে হবে। শীতের দেশে বেড়াতে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরম পোশাক সংগ্রহে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাজার থেকে সুবিধা মতো শীতের পোশাক কেনা যেতে পারে। কাপড়ের ব্যাগ গোছান শেষ হলে গোছানো শুরু করুন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের ব্যাগ। প্লেন বা বাসের টিকিট, পাসপোর্টসহ অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো এমনভাবে রাখুন যাতে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় আবার সুরক্ষিতও থাকে। ক্রেডিট কার্ড, এটিএম কার্ড, চেকবই কিংবা টাকা রাখুন আলাদা একটি পার্সে।
প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স সাথে নিতে পারলে তো ভালোই। সম্ভব না হলে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিসেপটিক, ব্যথানাশক ঔষধ, স্যালাইন সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। যেহেতু একা যাচ্ছেন সেহেতু নিজের নাম ঠিকানা, ফোন নম্বর ভালো করে লিখে পার্শ্বে কিংবা ওয়ালেটে ঢুকিয়ে রাখুন। ভিজিটিং কার্ড বা বিজনেস কার্ড থাকলে এক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। মোবাইল ছাড়াও সম্ভব হলে ছোট টেলিফোন বুক নিলে ভালো হয়। টেলিফোন বুকে হোটেলের টেলিফোন নম্বর, ট্রাভেল এজেন্টের নম্বর, হেল্প লাইন প্রভৃতি টুকিয়ে রাখুন। দেশের বাইরে গেলে বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা ও ফোন নম্বর সঙ্গে রাখুন।
ফিচার বিজ্ঞাপন
মায়ানমার ভিসা (ভিজিট ভিসা)
Kandy- Nuwara Eliya- Galle & Colombo 6D/5N
চায়না ভিসা (চাকুরীজীবী)
আপদ থেকে দূরে
অচেনা জায়গায় বিপদ আপনার সঙ্গী হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। তাই অনাকাঙিক্ষত আপদ থেকে যতটা দূরে থাকা যায় সেই চেষ্টাই করা উচিত সর্বক্ষণ। হোটেল বাছাইয়ের পূর্বে আরামের পাশাপাশি নিরাপত্তার দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। হুট করে কোনো হোটেলে বুকিং না দিয়ে নাম ডাক আছে এমন হোটেলই বেছে নিন। আপনার রুমের দরজা, জানালা, ওয়াশরুম, বিছানাপত্র সব ঠিক আছে কিনা তা প্রথমেই লক্ষ্য করুন। কোনো প্রকার সমস্যা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে হোটেল ম্যানেজারকে জানান।
রুম থেকে বাইরে বের হবার সময় ভালো করে দরজা লক করুন। চাবি জমা দিন সঠিক জায়গায়। যেখানে বেড়াতে যাচ্ছেন সে জায়গা সম্পর্কে জেনে নিন হোটেলের কর্মচারীদের কাছ থেকে। অনেক সময় হোটেল থেকেও যানবাহন সরবরাহ করা হয় দর্শনীয় স্থানে বেড়ানোর জন্য। এরকম সুযোগ থাকলে তা কাজে লাগাতে পারেন। কোনো কারণে দিক ভ্রমণ হলে কিংবা রাস্তা হারিয়ে ফেললে কৌশলে কারো কাছ থেকে জেনে নিন আপনি কোথায় আছেন। যেহেতু একা বের হয়েছেন, সেহেতু নিজের সাজ-পোশাকের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিন। আপনার সাজ-সজ্জা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। তাই এমন কোনো পোশাক বা সজ্জায় নিজেকে সজ্জিত করবেন না যা দৃষ্টিকটু লাগে।
নতুন জায়গায় ভিন্ন খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতেই পারেন। তাই বলে খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট করা ঠিক হবে না। অচেনা জায়গায় বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বেশি উৎসাহী হয়ে অপরিচিত লোকের সঙ্গে মিশতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো পরিবার বা দম্পত্তির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারেন। এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ।
যথাযথ নিরাপত্তা না থাকলে রাতের বেলা না বের হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
খুব বেশি অ্যাডভেঞ্চার করতে যাবেন না। মনে রাখবেন আপনার দায়িত্ব এখানে এককভাবে শুধু আপনারই।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...
১,০১৩ বার পড়া হয়েছে