মানুষের শরীরের সংবেদনশীল অঙ্গগুলোর মধ্যে কান অন্যতম। অথচ কানের রোগ বিষয়ে আমরা খুব একটা সচেতন নই। সামান্য কারণেই কানে বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। অসাবধান হলে সেসব রোগ খুবই গুরুতর হয়ে দেখা দিতে পারে মানুষের জন্য। আবার একটুখানি সচেতন হলেই এড়ানো যায় কানের অনেক রোগ। সচেতনতা আসলে রোগ প্রতিরোধের প্রাথমিক পদক্ষেপ।

কানে ব্যথা: কানের ডাক্তারদের কাছে আসা রোগীদের একটা বিশাল অংশ আসেন কানে ব্যথার সমস্যার জন্য। কানের ব্যথা ব্যাপারটাকে যতটা সামান্য মনে হয়, বাস্তবে তা ততটা সামান্য নয়। অনেক সময় রোগী বা রোগীর স্বজনদের দেওয়া তথ্য অপূর্ণ হওয়ায় বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে চিকিৎসকের জন্য কানে ব্যথার আসল কারণ নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

কানে ব্যথা সাধারণত কানের সমস্যার কারণে হতে পারে বলে আমাদের মনে হলেও, বাস্তবে কান ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে কানে ব্যথা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কান পরীক্ষা করে দেখা যায় আক্রান্ত ব্যক্তির কান সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।

সাধারণত আচমকা কানে ব্যথা শুরু হয় কানের ভেতরকার রাস্তায়—যাকে এক্সটার্নাল অডিটরি ক্যানাল বলা হয়। সেখানে যদি ব্রণের মতো হয় (ফারাংকুলোসিস) তাহলে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বিশেষ করে খাবার চিবানো বা হাই তোলার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। তীব্র ব্যথা হওয়ার আরেকটি কারণ হলো মধ্যকর্ণের সংক্রমণ। অনেক সময় রোগী বলতে পারেন যে কানে প্রচণ্ড ব্যথা এবং ব্যথাটা দপ দপ করছে। খাবার বা পানি গেলার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে। এটা অনেক ক্ষেত্রে নিজ থেকে সেরে যায়। সে ক্ষেত্রে রোগী জানান যে তীব্র ব্যথা থাকার পর হঠাৎ ব্যথা কমেছে কিন্তু কান থেকে পানি পড়ছে। এ সমস্যায় ক্ষেত্র বিশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। মধ্য কর্ণের সংক্রমণের কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। এ ছাড়া কানে আঘাত, চড়, আচমকা পুকুরে ঝাঁপ, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ, যেমন—বাজি, পটকার আওয়াজ, গাড়ির হর্ন ইত্যাদির কারণেও কানে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।

দীর্ঘদিনের সংক্রমণ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তবে সেটার শুরু হয় ধীরে ধীরে। এ ব্যথা প্রচণ্ড হতে কিছুটা সময় নেয়। মধ্যকর্ণের ক্যানসারের ব্যথা শুরু হতেও সময় নেয়। মধ্যকর্ণের সংক্রমণের ব্যথা, কানের চামড়ার একজিমার সংক্রমণ, কানের জমে থাকা খৈল ইত্যাদির কারণে হওয়া ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না। তবে এগুলো থাকা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলে তারপর ব্যথার তীব্রতা বাড়ে।

এ ছাড়া দাঁতের বিভিন্ন সমস্যার কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। যেমন—দাঁতের ক্ষয় (ক্যারিস), মাড়ির দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা, দাঁত খাঁজে খাঁজে না বসা ইত্যাদি। মুখের ভেতরকার নানারকম ঘা, মাড়ির সমস্যা, জিহ্বার ক্যানসার, টনসিলের সমস্যার কারণেও কানে ব্যথা হতে পারে। সবকিছু আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক থাকার পরও দীর্ঘমেয়াদি কানের ব্যথার আরেকটি কারণ হলো চোয়ালের হাড়ের সংযোগস্থলের সমস্যা।

কানের ব্যথা সব সময় কান থেকেই হবে, এমন কথা নেই। কানের সবকিছু স্বাভাবিক থাকার পরও কান ব্যথা হতে পারে। কানে ব্যথা নিয়ে তাই প্রাথমিকভাবে একজন জেনারেল প্র্যাক্টিশনারের কাছে যাওয়া নিরাপদ। তিনি দেখে-শুনে-বুঝে চিকিৎসা দিতে পারেন। অথবা তিনি রোগীর অবস্থা বুঝে তাঁকে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, ডেন্টাল সার্জন অথবা ওরাল-ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এতে করে এদিক-ওদিক ঘুরে রোগীর অর্থ ও সময় নষ্ট কম হবে, সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে।

আচমকা কানের পর্দা ফেটে যাওয়া: শুধু জীবাণুদের দোষে নয়, অনেক সময় আমাদের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে আচমকা কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। যেমন:
১. আচমকা চড়, আঘাত
২. বাজি-পটকা বা বোমার শব্দ, ঢাক-ঢোল, বাদ্য-বাজনা
৩. হঠাৎ পানিতে ঝাঁপ দেওয়া
৪. অদক্ষ হাতে কান পরিষ্কার করা
৫. বহুতল ভবনে লিফটে আরোহণ
৬. উড়োজাহাজ উড্ডয়ন বা অবতরণের সময়
৭. জোরে নাক ঝাড়া বা হাঁচি দেওয়া
৮. দুর্ঘটনাবশত মাথায় আঘাত লাগা
৯. কটন বাড, মুরগির পালক, চাবি, কলমের ঢাকনা ইত্যাদি দিয়ে কান খোঁচানো।

সাধারণত একজন চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষা না করানো পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যায় না ওপরের কোনো কারণে কানের পর্দা আসলেই ফেটেছে কি না। তবে কানের পর্দা ফেটে থাকলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয়:

১. কানে তীব্র ব্যথা
২. কান থেকে পরিষ্কার বা রক্ত মিশ্রিত পানি বের হওয়া
৩. কানে কম শোনা
৪. কানে শো শো বা মেশিন চলার মতো শব্দ
৫. মাথা ঘোরানো

চিকিৎসার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আক্রান্ত কানে পানি ঢোকানো যাবে না। সম্ভব হলে ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে হবে। কান পরিষ্কার করার চেষ্টা না করা ভালো, কানে জমাট রক্ত থাকলে সেগুলোও নাড়াচাড়া না করা উচিত। প্রাথমিকভাবে কানে কোনো ধরনের ড্রপ দেওয়া যাবে না। কানের পর্দা ফাটার সঙ্গে সঙ্গে কোনো ড্রপ ব্যবহার করা হলে তা মধ্যকর্ণের ক্ষতি করে। তবে পর্দা ফাটার অনেক দিন পর চিকিৎসা করাতে এলে কানের ভেতর যদি সংক্রমণ পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক কানের ড্রপ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন। ফেটে যাওয়া পর্দা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায়। তবে কেবল চিকিৎসায় ঠিক না হলে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এ ধরনের সমস্যার জন্য জেনারেল ফিজিশিয়ানের কাছে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তার পরামর্শ অনুসারে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। নিজে থেকে কিছু করতে যাবেন না। তাতে আপনার নিজের ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে।
সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি-১৮), বিসিএস (স্বাস্থ্য), ডিএলও ট্রেইনি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনুন

অবিশ্বাস্য দামে ব্রান্ডের ঘড়ির কিনু...



৪৭৮ বার পড়া হয়েছে