ফ্ল্যাট কেনার স্বপ্ন বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় ঢাকা শহরে। তারা দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নানাভাবে আপোষ করেই সঞ্চয় করেন ভবিষ্যতের বাড়ির জন্য। বিশেষ করে উন্নত আবাসিক এলাকায় নতুন অ্যাপার্টমেন্ট কেনা অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, এমনকি উচ্চ-মধ্যবিত্তদের জন্য নাগালের বাইরেই বলা যায়।
বাসা ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে সেখানে ঢাকায় বসবাস এক কঠিন বাস্তবতা। সম্প্রতি প্রকাশিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ২০২২-২০৩৫ এর মাস্টার প্ল্যান এর তথ্যতে, উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তের এলাকায় বাসা ভাড়ার বৈষম্য উঠে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, নিম্নবিত্ত বসবাসকারীদের এলাকায় ৮০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ২ হাজার ৯০০ টাকা, এবং ১০০ স্কয়ার ফিটের একটি রুমের ভাড়া ৩ হাজার ৬০০ টাকা।
অন্যদিকে, ধানমন্ডি, গুলশান ও বনানী এলাকার চিত্র বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এসব এলাকায় বাসার আয়তনের তুলনায় ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম। ২ হাজার ৫৫০ স্কয়ার ফিটের একটি বাসার ভাড়া ৬০ হাজার টাকা। হিসাব অনুযায়ী প্রতি স্কয়ার ফিটের ভাড়া হয় ২৩ টাকা ৫০ পয়সা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়ি ভাড়া বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ এর মতো। অর্থাৎ, নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ।
এক জরিপে দেখা গেছে, ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ শতাংশ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, এবং ১২ শতাংশ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়িভাড়া খাতে। এমতাবস্থায় কেউ চাইলেই ব্যাংক ঋণ এর সুবিধা নিয়ে বাড়ি ভাড়ার অংশটি দিয়ে তুলনামূলক কমদামে নিজস্ব অ্যাপার্টমেন্ট এর মালিক হতে পারেন।
সময় যত গড়াচ্ছে, ততোই যেন বাজেট আর ফ্ল্যাটের মূল্যের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। আর এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে আছে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২২ সালেই প্রতি টন রডের মূল্য প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯০ হাজার টাকা, আর সিমেন্ট প্রতি ব্যাগে বেড়েছে ২২ শতাংশ। কেননা, রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ এবং সিমেন্ট উৎপাদনের কাঁচামাল ক্লিংকারের পুরোটাই মূলত আমদানি নির্ভরশীল। তাছাড়া পাথর প্রতি ঘনফুটে ২৪ শতাংশ, ইট প্রতি হাজারে ২২ শতাংশ, মোটা বালু প্রতি ঘনফুটে ৫০ শতাংশ, ইলেক্ট্রিক ক্যাবলে (১.৫ বিওয়াইএ) দাম বেড়েছে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত।
তবে মূল্য বৃদ্ধির এ গতিকে আগামী দিনে বিশেষ পরিবর্তন করতে যাচ্ছে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপের অনুমোদন। এর ফলে আবাসনের সুবিধা সম্বলিত এলাকাগুলো যেমন- উত্তরা, রামপুরা, নিকেতন, মালিবাগ, কল্যাণপুর, মিরপুর-১১, জিগাতলা, শান্তিবাগ, শুক্রাবাদ, মধুবাগ, গোড়ান, পশ্চিম রাজাবাজার সহ আরও অনেকগুলো এলাকার নতুন নিয়ম মেনে ভবনের উচ্চতা কমে আসছে। যেখানে আগে ৭ তলা ভবন নির্মাণ করার অনুমতি ছিল, সেখানে ৬ তলার উপরে কোন আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে না। আবাসন খাতের জন্য আরও শঙ্কার খবর হচ্ছে, ২০২২ সালের শেষের চার মাসে আবাসন ব্যবসায়ীরা নতুন কোন প্রকল্প নিতে পারেনি ।
এর ফলে, নতুন নির্মিত অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে যোগ হচ্ছে খরচের বাড়তি অংক। ফলে লোকসানের ঘাটতি মেটাতে অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদেরও ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হচ্ছে নতুন অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য। এমতাবস্থায় নতুন অ্যাপার্টমেন্টের দাম বৃদ্ধির ফলে অসংখ্য ক্রেতারা বাজেটের মধ্যে বিকল্প উপায়ে বিনিয়োগের জন্য বেছে নিচ্ছেন ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্ট। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায়, অনেকেই ঝুঁকছেন রেডি ফ্ল্যাটের দিকে।
তবে শুধুমাত্র নতুন অ্যাপার্টমেন্টের চড়া মূল্যই রেডি বা ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের চাহিদা বৃদ্ধির একমাত্র কারণ নয়, রেডি ফ্ল্যাট কেনার ফলে ক্রেতারা বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন বিধায় বর্তমানে প্রপার্টি ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে রেডি ফ্ল্যাট।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Maldives (Paradise Island-Water Vila & Hulhumale) 4D/3N
Day Long Package
Manila 5D/4N
সম্প্রতি বিপ্রপার্টির মাধ্যমে রেডি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন, এমন একজন গ্রাহক বলেন, ‘আমরা আসলে এমন একটি অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজছিলাম, যা কেনামাত্রই উঠে যাওয়া যাবে। বিপ্রপার্টির মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু অ্যাপার্টমেন্ট দেখি এবং বুঝতে পারি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজের বাসায় শিফট করার জন্য ব্যবহৃত ফ্ল্যাটই হবে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন। কেননা, এখানে বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয়ই আমি রেডি পাচ্ছি।’
সাধারণত নতুন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে, ফ্ল্যাট কেনা মাত্রই উঠে যাওয়ার সুযোগ কম থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ১ থেকে ২ বছর সময় লেগে যায় প্রপার্টি হ্যান্ডওভার হতে। এছাড়াও ফিটিংস বসানো, মেঝেতে টাইলস করা, রঙ করা এবং ইউটিলিটি সংযোগ নেয়া সহ বহুবিধ কাজ তো থাকেই। অনেক ক্রেতাই ফ্ল্যাট কেনার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ভাড়া বাসায় থাকতে চান না, তাই ঝামেলা এড়াতেই তারা ব্যবহৃত অ্যাপার্টমেন্টকেই অগ্রাধিকার দেন।
রিয়েল এস্টেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিপ্রপার্টির তথ্য মতে, দেশে ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে সেকেন্ডারি মার্কেট বা রেডি ফ্ল্যাট এর ক্ষেত্রে ১,২০০ থেকে ১,৫০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৭.২৩ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ১,০০০ থেকে ১,২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ২১.৫০ শতাংশ এবং ৮০০ থেকে ১,০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা ছিল ১৬.৭৯ শতাংশ। তবে অন্যদিকে ৮০০ বর্গফুট বা এরচেয়ে ছোট আয়তনের ফ্ল্যাটের চাহিদা বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০২১ সালে যেখানে এর চাহিদা ছিল ১৩.৮৪ শতাংশ, তা ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ১৪.৫৫ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটির ডাটাবেজে থাকা তথ্য মতে আরও অনুযায়ী, এলাকাভিত্তিকভাবে ফ্ল্যাট কেনার চাহিদা সবচেয়ে বেশি মিরপুরে ২৪ শতাংশ। এরপর রয়েছে উত্তরা ১৮ শতাংশ, ধানমন্ডি ১৭ শতাংশ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ১৪ শতাংশ, এবং মোহাম্মদপুর ১১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বিপ্রপার্টির মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার মাহ্জাবীন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে প্রপার্টিতে বিনিয়োগের জন্য গ্রাহকরা রেডি ফ্ল্যাট কেনার বিষয়েই বেশি আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, সাথে নির্মাণ কাঁচামালের অতিরিক্ত ব্যয়, ড্যাপের নিয়মে পরিবর্তন; আবাসন খাতের বাজারকে যখন অস্থিতিশীল করে তুলছে, তখন রেডি ফ্ল্যাটে বিনিয়োগই যেন গ্রাহকদের একমাত্র স্বস্থির জায়গা। তবে এখানে উল্লেখ করার মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভবন নির্মাণের জন্য গৃহ ঋণের আবেদন করা ও অবশেষে ঋণ পাওয়ার মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়ার আটকে না থেকে সহজ হোমলোন সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ক্রেতারা এখন খুব সহজেই রেডি ফ্ল্যাট কিনতে পারছেন।’
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)৮৫ বার পড়া হয়েছে