বুড়িগঙ্গা নদীর অববাহিকা আর মধুপুর ট্র্যাকের লালচে উর্বর মাটি কৃষির পাশাপাশি শিল্প ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছিল ঢাকাকে। এরপর বৃটিশ ভারত, পাকিস্তান হয়ে বাংলাদেশের জন্মের পর ক্রমেই বেড়েছে শহর হিসাবে ঢাকার গুরুত্ব। এর সাথে সাথে আরো বেশি মানুষ এসেছে ঢাকায় বসবাস করতে।
“ঢাকা শহরে একটি বাড়ি”- এই স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার পার্থক্য বাড়তে বাড়তে মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। চারশরও বেশি বছরের পুরাতন রাজধানী এই নগরী সারা বাংলার মানুষের বসবাসের জন্য এর লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, এই অঞ্চলে সভ্যতা যতই এগিয়েছে। পুরাতন ঢাকায় মানুষের বসত শুরু হয়েছিল ঢাকা রাজধানী হবারও অনেক আগে।
ঢাকা শহরে আবাসন প্রথমদিকে পরিকল্পিত ছিল না একদমই। পুরাতন ঢাকায় সেই অপরিকল্পিত কিন্তু স্বতস্ফূর্ত আবাসন এখনো দেখা যায়। কিন্তু ঢাকায় যত মানুষ বাড়তে থাকল এবং বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের মতো সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকল, ততই পরিকল্পিত আবাসনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়।
এ লক্ষ্যেই ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকা হিসাবে প্রথমে ধানমণ্ডি গড়ে ওঠে। তবে মধ্যবিত্তের আবাসনের জন্য বড় আকারে পরিকল্পিত নগরের অংশ হয়ে ওঠে মোহাম্মদপুর। সেকেন্ড ক্যাপিটাল হিসাবে শেরেবাংলা নগরের গোড়াপত্তন এ অঞ্চলে মানুষের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। স্বাধীনতার পরবর্তী ৫০ বছরে ঢাকা শহর বড় হয়েছে অত্যন্ত দ্রুত। এই কারণে আবাসনের চাহিদা কয়েক বছরের মাথায় বেড়েছে প্রায় শত গুণ। এই মানুষগুলোকে আশ্রয় দিতেই নতুন অভিজাত অঞ্চল হিসাবে গড়ে উঠেছে বনানী, গুলশান ও বারিধারা। এর মধ্যে অ্যাপার্টমেন্ট ও রিয়েল এস্টেট বিপ্লবের জের ধরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে চলে আসে ধানমণ্ডি। একই সাথে গড়ে ওঠে উত্তরা এবং মিরপুরের পল্লবী। বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি।
এখন পূর্বাচল ও উত্তরার বিভিন্ন অংশ গড়ে উঠছে নতুন এলাকা হিসাবে। কিন্তু ঢাকার আশেপাশে থাকতে মানুষের গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার অঞ্চলের দিকে ঝুঁকে পড়া বা ঢাকার ক্রমেই খারাপ হতে থাকা নাগরিক অবস্থার কারণে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে- “ঢাকায় কি এখনো আবাসন সম্ভব?”
ঢাকার আবাসনের বর্তমান অবস্থা চিন্তা করলে একে খরচের হিসাবে তিনভাগে ভাগ করা যায়। সেই অঞ্চলগুলোতে দামের তারতম্য সুবিধা অসুবিধায় রয়েছে ভিন্নতা। সেগুলোই এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
বাজেট যখন সীমিত নয়
ঢাকায় আবাসনের জন্য মানুষ মূলত পছন্দ করে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন অঞ্চলগুলো। এইসব সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে উন্নত আঞ্চলিক যোগাযোগ, ভালো মার্কেট বা বড় সুপারস্টোরের সহজলভ্যতা, লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডগুলোর উপস্থিতি, ভালো স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাছাকাছি দুরত্ব। এসব সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করলে ঢাকায় এখনো গুলশান, বনানী, বারিধারা উঁচু বাজেটের মানুষজনের জন্য পছন্দের জায়গায় থাকবে উপরেই। এর সাথে রয়েছে ধানমণ্ডি।
এসব জায়গায় নতুন প্লটের পরিমাণ খুবই সীমিত। তবে রেনোভেশান ও ডেভেলপার দ্বারা পুরাতন বাড়ি অধিগ্রহণের কারণে এখনো উঠছে নতুন ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট বাসার আকার বড় চাইলে ও বাজেটগত সমস্যা না থাকলে এই অঞ্চলগুলো এখনো হতে পারে ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আবাসন অঞ্চল।
অর্থের সর্বোচ্চ বিনিময়মূল্য
ঢাকায় বাসা তৈরি করা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ইস্যু। অনেকের কাছেই বাজেট তুলনামূলক বেশি থাকলেও পুরাতন একটি বাসার চেয়ে নতুন একটি অঞ্চলে গোছানো আবাসন ব্যবস্থার মধ্যে নিজের অর্থের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে চান। তাদের জন্য পূর্বাচল, উত্তরা নতুন প্রজেক্ট এবং বসুন্ধরা অঞ্চল হতে পারে আবাসনের জন্য খুবই ভবিষ্যতমুখী কিন্তু গোছানো পছন্দ।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Kathmandu-Pokhara 5D/4N
কোরিয়া ভিসা প্রসেসিং (চাকুরীজীবি)
Kathmandu-Pokhara-Nagarkot-Bhoktopur 5D/4N
এসব জায়গায় প্লট বরাদ্দ একবার শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু জায়গার বর্তমান মালিক থেকে জায়গা কেনা বা একদম ফ্রেশ জমিতে বাসা নির্মাণের সুযোগ এখনো বর্তমান। এছাড়া এসব অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ডেভেলপারের পরিকল্পিত আবাসন, যেগুলোতে দাম একটু বেশির দিকে হলেও আগামী ১০ বছরের মধ্যে পরিকল্পিত এবং দুর্দান্ত আবাসন গড়ে ওঠাটা শুধুই সময়ের ব্যাপার।
ঢাকার নতুন আসা মেট্রো রেল প্রজেক্ট ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মিরপুরের নতুন অঞ্চল, বেড়িবাঁধ ও ক্যান্টনমেন্ট-এর মাটিকাটা অঞ্চলেও জমির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগও হতে পারে বেশ স্মার্ট বিনিয়োগ। এসব অঞ্চলে এখনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কম হলেও পলিসিগত কারণে এখানে বসতি ঘন হতে অনেক সময় লাগবে এবং অনেকদিন এলাকা থাকবে খুবই পরিকল্পিত।
বাজেট আবাসনের ঢাকা
অল্প বাজেটে ঢাকায় ভালো বাসা করতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন বসিলাকে। আশেপাশে মোহাম্মাদপুর ও মিরপুরের অবস্থান হওয়ায় এখানে পলিসিগত বাধ্যবাধকতা একটু কম এবং অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চল তুলনামূলকভাবে ধরাছোঁয়ার মধ্যেই। এর বাইরে উত্তরায় রেল লাইনের অন্য পাশে উত্তর ও দক্ষিণখানে, এয়ারপোর্ট এর আশেপাশের অঞ্চলে অনেকদিন ধরেই বাজেট ভিত্তিক আবাসন খুবই জনপ্রিয়।
১,০০০ বর্গফুটের আশেপাশে আদাবর এবং শেখেরটেক অঞ্চলেও এখনো ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। একই অবস্থা রাজারবাগ ও ধানমণ্ডির পেছনে থাকা জিগাতলা এলাকারও। এসব অঞ্চল একটু ঘনবসতিপূর্ণ হলেও যারা ঢাকা শহরের জনসমাগমকে উপভোগ করেন তারা এসব জায়গায় থাকতে অপছন্দ করবেন না।
এর বাইরে টঙ্গীসহ চেরাগ আলী হয়ে প্রায় সমগ্র গাজীপুর শহরাঞ্চল, নারায়ণগঞ্জ, কেরাণিগঞ্জ এবং সাভার অঞ্চল বেশ জনপ্রিয়। কাজের প্রকৃতি অনুসারে অনেকে এসব জায়গা থেকেও যাওয়া আসা করে থাকেন প্রায় নিয়মিতই। সুযোগ বা যাতায়াতের সুবিধা থাকলে এ অঞ্চলগুলোও ঢাকার অনেক অঞ্চল থেকে ভালো বসবাসের সুবিধা নিয়ে হতে পারে আপনার চিন্তাভাবনার অংশ, কারণ সিটি কর্পোরেশনের বাইরে জমির দামে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়।
আবাসন সমস্যাকে ঠিকভাবে সমাধান করতে ঢাকাকে আমাদের বিকেন্দ্রিকরণ ও পরিকল্পিত আবাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা খুবই দরকারি। তাই জমি বা বাড়িতে বিনিয়োগ করতে হবে আমাদের বুঝে শুনে। বাজেটের সাথে বা জীবনের প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশেই মানুষের বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নিজের ও সামাজিক চাহিদার মধ্যে পর্যাপ্ত ভারসাম্যই পারে আপনার বাড়ির জন্য সবচেয়ে উপযোগী অঞ্চল সম্পর্কে আপনাকে নিশ্চিত করতে।
Courtesy: homebuildersclub
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
২৪৬ বার পড়া হয়েছে