ব্যাংকপাড়া হিসেবে খ্যাত ঢাকার মতিঝিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি দেশের বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় এখানেই অবস্থিত। সরকারি-বেসরকারি আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর, নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তারকা মানের হোটেল, স্পোর্টিং ক্লাবের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মতিঝিলকে পরিণত করেছে ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায়। শুধু ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবেই নয়, জমির দামেও মতিঝিল টেক্কা দিয়েছে ঢাকার অন্য এলাকাগুলোকে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ ঘোষিত রেট শিডিউলে সাধারণ জমির দাম এ এলাকাতেই ধরা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতি কাঠা জমির নিবন্ধন মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকাতেও জমির একই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাধারণ জমির দামে মতিঝিল এগিয়ে থাকলেও বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্লটের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে গুলশানে। এখানে প্রতি কাঠা বাণিজ্যিক প্লটের নিবন্ধন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আবাসিক প্লটের ক্ষেত্রে তা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, আবাসিক বা বাণিজ্যিকভাবে ভবন নির্মাণের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া জমিকে প্লট হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এ বিষয়ে ২০১০ সালের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনে বলা হয়েছে, প্লট হলো বাসযোগ্য একখণ্ড জমি, যার ওপর এক বা একাধিক আবাসিক বা প্রাতিষ্ঠানিক অথবা বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা যায়। সরকারিভাবে জমি এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লটের রেট শিডিউল (মূল্য তালিকা) হালনাগাদের কাজটি করে থাকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
ঢাকার জমি ও প্লটের রেট শিডিউল সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছিল ২০১১ সালে। এর এক দশক পর তা আবার হালনাগাদের উদ্যোগ নিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এজন্য এলাকাভেদে গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত জমির নতুন বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জমির পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আওতাধীন আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লটের দাম ঠিক করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার জমির বাজারমূল্যও পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ২০১১ সালের গেজেটে মতিঝিল ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার এক কাঠা জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ লাখ টাকা। অন্যদিকে সর্বশেষ ২০১৬ সালের সাবরেজিস্ট্রি অফিসের মৌজা রেট অনুযায়ী এ দুই এলাকার এক কাঠা জমির দাম ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার ৭৫৫ টাকা। আর মতিঝিলে বাণিজ্যিক প্লটের কাঠাপ্রতি বরাদ্দ বা হস্তান্তর মূল্য ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা ৬ কোটি টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সাধারণ জমির বাজারমূল্যে মতিঝিলের পর সবচেয়ে বেশি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কারওয়ান বাজার এলাকার জন্য। কারওয়ান বাজারের প্রতি কাঠা জমির বাজারমূল্য ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একইভাবে ধানমন্ডি, গ্রীন রোড (আবাসিক এলাকার ৩ নম্বর থেকে ৮ নম্বর রোড), মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি টাকা করে। কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, ইস্কাটন, গ্রীন রোড ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় মূল সড়কের ১০০ ফুটের মধ্যে অবস্থিত জমির ক্ষেত্রেও একই দরে কাঠাপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফকিরাপুল, আরামবাগ ও মগবাজার এলাকায় মূল সড়কের ১০০ ফুটের মধ্যে প্রতি কাঠা জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ লাখ টাকা করে। তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও আজিমপুর এলাকার জন্য কাঠাপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। কাঠাপ্রতি ৭০ লাখ টাকা বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকার জন্য। কাকরাইল, সেগুনবাগিচা, ইস্কাটন, গ্রীন রোড, এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় মূল সড়কের ১০০ ফুটের বাইরের জমির জন্যও একই দর।
অন্যদিকে রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকায় মূল সড়কের ১০০ ফুটের মধ্যে জমির কাঠাপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা করে। এ এলাকায় মূল সড়কের ১০০ ফুটের বাইরের জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কাঠা ৫০ লাখ টাকা করে। খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকায় মূল সড়কের ১০০ ফুটের মধ্যে ও হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার জন্য কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা করে জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকায় সড়কের ১০০ ফুটের বাইরে ৪০ লাখ ও গোড়ান এলাকায় ২৫ লাখ টাকা করে কাঠাপ্রতি জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নির্ধারিত বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে জমি কেনাবেচা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবাসন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও নিবন্ধন খরচ বেশি হওয়ার কারণে এসব এলাকায় এখন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দরে জমি কেনাবেচা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশে জমি নিবন্ধন খরচ ৮ শতাংশের ওপরে। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে এখানে নিবন্ধন খরচ অনেক বেশি। কেনার সময় জমি নিবন্ধন করতে গিয়েই বড় অংকের টাকা চলে যায়। এর বাইরে ঢাকার জমিস্বল্পতার কথা আমরা সবাই জানি। দামের ক্ষেত্রে চাহিদার বিপরীতে জোগানের তারতম্য অনেক বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
ইস্তানবুল, কাপাডোসিয়া ও আন্টালিয়া ৮দিন ৭রাত
পানাম সিটি প্রাইভেট ডে লং ট্যুর
বাংকক-ক্রাবি-সাফারি ওয়ার্ল্ড ৫দিন ৪ রাত
জমির রেট শিডিউল হালনাগাদের জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাব করেছিলাম জমি থেকে রাস্তার দূরত্বভেদে দাম নির্ধারণ করার। আশা করব, রেট শিডিউলটি চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
ঢাকার জমির পাশাপাশি রাজউকের আওতাধীন ঢাকার ১৪টি এলাকার আবাসিক প্লটের নতুন বাজারমূল্য নির্ধারণ করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গুলশান ও বারিধারা কে ব্লকের আবাসিক প্লটের প্রতি কাঠার জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে বনানীতে ৯৬ লাখ টাকা, বারিধারা জে ব্লকে ৭২ লাখ, উত্তরা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব, বাড্ডা, গেন্ডারিয়া, নিকুঞ্জে ২৪ লাখ, শ্যামপুর, জুরাইন, আইজি বাগানে প্রতি কাঠা জমির বাজারমূল্য ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।
একইভাবে বাণিজ্যিক প্লটের দাম সবচেয়ে বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে গুলশান ও বনানী এলাকার জন্য। বর্তমানে এ দুই এলাকায় প্রতি কাঠা বাণিজ্যিক প্লটের হস্তান্তর বা বরাদ্দ মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি বাড়িয়ে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। উত্তরা প্রথম পর্বে ৭ কোটি ২০ লাখ, মতিঝিল ও মহাখালীতে ৬ কোটি, নিকুঞ্জে ৬ কোটি ১২ লাখ, উত্তরা দ্বিতীয় পর্বে ৪ কোটি ৪২ লাখ, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, বাংলামোটর, পান্থপথ, কাকরাইলে ২ কোটি ৪০ লাখ, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা, গেন্ডারিয়া ও বাড্ডায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ও পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা করে।
এলাকাভেদে রাজউক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকার অন্যান্য এলাকা এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর ও সিলেট বিভাগ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এলাকায় জমি ও প্লটের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো এরই মধ্যে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর বোর্ড সভায় অনুমোদিত হওয়ার কথা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেট শিডিউল হালনাগাদ করে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করা হবে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...
৪৪১ বার পড়া হয়েছে