দিন শেষে মানুষ যেখানে ফেরে, তার নাম ঘর। এই উপমহাদেশের মানুষ বরাবরই রঙের প্রতি দুর্বল। রং দিয়ে ঘর রাঙাতে কে না পছন্দ করে! প্রায় বাড়িতেই সব ঘরে একই রকম রং দেখা যায়। আলাদা রং করা হলেও আমরা রঙের ক্ষেত্রে কেবল বিবেচনা করি দেখতে ভালো লাগছে কি না। কিন্তু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘরের রং কেবল চোখে সুন্দর লাগার জন্য নয়, এর বাইরেও আপনার মনকে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। শরীর ও মনকে স্বস্তিতে রাখতে ঘরের রঙের বড় ভূমিকা আছে। রং প্রভাব ফেলতে পারে মানসিকতায়, এমনকি শরীর–স্বাস্থ্যের ওপর। তাই সব দিক বিবেচনায় নিয়েই পছন্দ করে ফেলুন, কোন ঘরে কী রং হবে।

এ বিষয়ে স্টুডিও মরফোজেনেসিস লিমিটেডের পরিচালক স্থপতি সায়কা ইকবাল জানান, একটা বাড়ির ভেতর ব্যক্তিগত আর পাবলিক জায়গা থাকে। বসার ঘর (ড্রয়িংরুম) পাবলিক, খাবার ঘর সেমি পাবলিক, পড়ার ঘর সেমি পাবলিক। শোবার ঘরটা আবার ব্যক্তিগত। তো যে জায়গাটুকু পাবলিক, মানে অতিথিরা যেখানে আসতে পারেন, সেখানে ‘অ্যানার্জিটিক’ রংগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। একটু উজ্জ্বল, ঝলমলে। তবে বিষয়টা একেবারেই যাঁর বাসা, তাঁর রুচির ওপর নির্ভর করবে। তিনি কী ধরনের রঙে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চাইলে পুরো বাড়ির রং একটু হালকা ধাঁচের রাখতে পারেন।

ঘরের দেয়াল কেমন হবে, এখনকার ধারা কী—এ বিষয়ে সায়কা ইকবাল জানান, এখন অনেকে রঙের বদলে একটা সিমেন্টের আস্তর, লাল ইটের খোলা রূপ, প্যাস্টেল শেডের ওপর হাতের কাজ (হ্যান্ড ক্র্যাফট)—এগুলো ব্যবহার করছেন। অনেকে আবার ঘরের কোনো একটা কোণে নিজের ‘মুড চেঞ্জিং’, বর্ণিল আলপনা বা পেইন্টিং করেন। নিজের মনের মতো কিছুর প্রতিফলন রাখেন দেয়ালে।

অতিথিরা এসে বসেন ড্রয়িংরুমে। মার্কিন রং বিশেষজ্ঞরা রঙের সঙ্গে মুড বা ভাবের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করে জানান, বসার ঘরে অতিথিরা যদি কোনো হালকা রং দেখেন, সেটা তাঁদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনুপ্রেরণার ভাবটা দমে যেতে পারে। তাই সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ আলো ঢোকার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ঘরের রং উজ্জ্বল রাখাও প্রয়োজন।

গবেষণায় দেখা যায়, লাল, হলুদ, কমলার মতো রঙের একটু হালকা শেডের সঙ্গে বাদামি, ধূসর রঙের মিশেল মানুষকে বসে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বসার ঘরে নান্দনিকতার ছাপ আনতে হালকা গোলাপি, ফ্রেঞ্চ গ্রে (ধূসর), বেগুনি বা ক্রিম রংও ব্যবহার করতে পারেন। আবার দেয়ালে হালকা রং ব্যবহার করে এর ওপর গাঢ় রঙের পেইন্টিং রাখা বা আলপনাও আঁকা যেতে পারে। বসার ঘরের রং এমন হবে, যাতে রঙের মধ্যে একটা অভ্যর্থনার আমেজ ফুটে ওঠে।

দিনের ব্যস্ততা শেষে ক্লান্তি দূর করতে যে রুমে আমরা নিজেকে এলিয়ে দিই, সেটা আমাদের শোবার ঘর। এ ঘরের রং হওয়া উচিত হালকা, শান্ত, স্নিগ্ধ ও শীতল। যেন ঘরে ঢুকলেই মন–মেজাজ সতেজ হয়ে যায়। শোবার ঘরের রং রাখুন নীল, সবুজ বা ল্যাভেন্ডার। এ রংগুলো মনে প্রশান্তির প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়। এ ছাড়া সাদা, চাপা সাদা (অফ হোয়াইট), হালকা বেগুনি, সবুজ, লেবু–হলুদ, ফ্রেঞ্চ গ্রে, ক্রিমের মতো ‘শীতল রং’ দেওয়া যেতে পারে। তবে শোবার ঘরে লাল রং ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লাল রং রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন ইত্যাদি বাড়ায়। নীল রং কাজ করে বিপরীতভাবে, মনে আনে প্রশান্তি।

খাবার ঘরের রং ভেবেচিন্তে ব্যবহার করুন। খাবার টেবিলে বসে যদি ঘরের রঙের প্রতি আকর্ষণের অভাব ঘটে, তবে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হতে পারে। খাবার ঘরের দেয়ালের রং মূলত নীল রাখুন। বেঞ্জামিন মুর পেইন্টসের রং ও ডিজাইনবিষয়ক পরিচালক লেসলি হ্যারিংটনের মতে, আপনার খাবার ঘরের রং যদি হয় লাল, মানুষ ভাববে আপনি ভালো রান্না করেন। বিষয়টা হাস্যকর মনে হলেও গবেষণা জানিয়েছে, কথা সত্যি। খাবারের ঘরে বড় জায়গা থাকলে দেয়ালে হালকা সবুজ রঙের প্রলেপ দিতে পারেন। অনেকে আবার বলেন হলুদ খাবার ঘরের জন্য উপযুক্ত রং, কেননা, হলুদ খিদে বাড়ায়। এ জন্যই বেশির ভাগ রেস্তোরাঁর দেয়ালে হলুদ বা নীল শেডের রং ব্যবহার করে। অন্যদিকে হলুদের বিপরীত নীল রং আবার ডায়েটে সাহায্য করবে। কম খেতে অনুপ্রাণিত করবে।

বাড়িতে অতিথিদের জন্য যে ঘর থাকবে, তা যেন আপনার রুচির পরিচয় দেয়। হালকা রং এ ঘরের জন্য আদর্শ। ক্যারামেল, কফি বা ক্রিম রং করতে পারেন এ ঘরে। তবে সায়কা ইকবাল যোগ করেন, রঙের সঙ্গে যেহেতু মুডের সম্পর্ক আছে, তাই রংটা এমন হতে হবে, যাতে সেটা মনের ওপর চাপ না ফেলে। অনেকের আবার কড়া হলুদে মাথা ধরে, মেজাজ বিগড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে হলুদের এমন শেড ব্যবহার করা যেতে পারে, যেটা শান্ত, কোমল, এককথায় অপ্রখর।

ফিচার বিজ্ঞাপন

মৈনট ঘাট প্রাইভেট ডে লং ট্যুর

মূল্য: ৯০০ টাকা জন প্রতি

কানাডা ভিসা

মূল্য: ৭,০০০ টাকা

স্নানঘরের রং কেমন হবে? সায়কা জানান, এটাও ব্যবহারকারীর রুচি আর ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে। হয়তো মা–বাবা এক রকম চাচ্ছেন, কিন্তু বাচ্চার আবার অন্য রকম কিছু পছন্দ। সে ক্ষেত্রে রংটা নিরপেক্ষ ধরনের রাখা ভালো। খুব ছোট ওয়াশরুমে গাঢ় রং ব্যবহার করলে জায়গাটা আরও ছোট মনে হতে পারে। তবে ইদানীং স্নানঘরের একটা বা দুটো দেয়ালে ‘চিলড কালার’ রাখতে পছন্দ করেন অনেকে। এক পাশ উজ্জ্বল হলো, আরেক পাশ একটু হালকা। এক পাশ আরেক পাশের পরিপূরক হবে।

রান্নাঘরে হালকা রং বেশি দিন টেকে না। গাঢ় রঙের রান্নাঘরে রান্না করতেও ভালো লাগে। আবার ময়লা জমলেও বিশেষ বোঝা যায় না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আবার রান্নার আসল রং বা মসলার রংগুলো ভালো বোঝা যায় না। আলোতে গাঢ় রঙের প্রতিফলন পড়ে। সেটায় খাবারের রঙের সূক্ষ্ম বিষয়টা হারিয়ে যেতে পারে, চোখে ধরা না–ও পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে হালকা বা নিরপেক্ষ (নিউট্রাল) কোনো রং ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুদের ঘরের রঙের ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রাধান্য দিন। শিশুর পছন্দের কোনো চরিত্র থাকলে সেটা আঁকিয়ে নিতে পারেন দেয়ালে। ঘর আকর্ষণীয় করতে দেয়ালের রঙের সঙ্গে কার্টুন, স্টিকার, মাছ, গাছ ও চাঁদ-তারা দিয়ে সাজান। শিশুদের স্নানঘরের জন্য হালকা রং ভালো, তাতে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন লাগে। তাই সাদা, ক্রিম, টারকুইশ নীলজাতীয় হালকা রং ব্যবহার করুন। তবে সেখানে টাইলস দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো যেতে পারে। পড়ার ঘরের রং গাঢ় হলে মনোযোগে অসুবিধা হয়। রং যত হালকা হবে, ততই একাগ্রতা বাড়বে। হালকা নীল, হালকা সবুজ, ক্রিম কালার এ ঘরের জন্য আদর্শ রং।

কিছু টিপস

* হালকা রঙে ঘর বড় দেখায়, গাঢ় রঙে ছোট দেখায়।
* কম আলোর ঘরে হালকা রং ব্যবহার করুন।
* ঘরের সিলিংয়ে সাদা বা দেয়ালের রং থেকে আরও হালকা রং ব্যবহার করলে ঘর উজ্জ্বল দেখায়।
* হালকা রঙের দেয়ালের এক পাশে ওয়ালপেপারও লাগানো যেতে পারে।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

Online Shopping BD (Facebook Live)



২১৩ বার পড়া হয়েছে