হস্তী নড়ান, হস্তী চড়ান, হস্তীর গলায় দড়ি… তোমরা গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে…
হাতি নামটা শুনলেই যেন এই গানের মতোই একটি দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখের সামনে। গলায় শিকল বা দড়ি, কখনো সখনো একটা ঘণ্টারও স্থান হয় সেখানে। পিঠে মাহুত বসিয়ে শহরতলি বা রাজপথে একেবারে ধীরেসুস্থে চলা, বনের পথ জন্মের মতো ভুলে যাওয়া হাতি। দুই অক্ষরের কি বিশাল প্রাণীটি যে এখনো টিকে আছে দুনিয়ার বুকে, তা যেন নেহাতই মানুষের দয়ায়। তবে এবার রাঙামাটি ভ্রমণে বিরল অভিজ্ঞতা ঝুলিতে পুরলাম বুনো হাতির দর্শনে। একেবারে শ্রাবণের বর্ষার মাঝেই সেনাবাহিনীতে থাকা বন্ধুর করা আয়োজনে হাজির হলাম কাপ্তাই লেকশোর রিসোর্টে। বেশ খাসা বন্দোবস্ত, লেকের মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগের। আসতে পথে প্রায় জায়গাতেই চোখ পড়ল হাতির ট্রেইল লেখা সাইনবোর্ডে। বন্ধু বিকাশ বলল, এসব জায়গায় হাতি চলাচলের সুবিধার দিকে খেয়াল রাখা হয়। তবে লোকচক্ষুর সামনে সহজে আসে না এরা। সাধারণত সন্ধ্যারাতেই তাদের কদাচিৎ বিচরণ করতে দেখে স্থানীয় লোকজন। এই অঞ্চলে বেশির ভাগ চাকমা সম্প্রদায়ের বসবাস।
সেনাবাহিনী আর নৌবাহিনীর সংরক্ষিত এলাকাতেই অবস্থিত শানদার লেকশোর রিসোর্ট। ঢাকাবাসী ইয়ার দোস্তরা রাস্তার ক্লান্তি রিসোর্টের দোরগোড়ায় রেখেই নেমে গেল লেকঘেঁষা সুইমিং পুলে। কতক্ষণ যে পানিতে ছিলাম, তার ইয়ত্তা নেই। খানাপিনা শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার আগমুহূর্তে বিরস মনে উঠল সবাই। এ যেন যমুনা আর আমরা সবাই বিরহী রাধা। নদীর কূলেই বান্ধা পড়েছে মন। কিন্তু খাবার চেখে দেখার সুযোগের আগেই বিকাশের অফিস মারফত খবর মিলল, হাতি নাকি দেখা গেছে কাছেই। হুড়মুড় করে সেদিক ছুটলাম সবাই। ভেতরে-ভেতরে তখন ভীষণ উত্তেজনা আর জল্পনা। মনে পড়ে গেল ৭-৮ বছর বয়স যখন, রাস্তায় হাতি দেখে আমাদের বাড়ির দেখভালকারী চান্দার মা সমেত রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে গিয়েছিলাম। দুজনেরই মরো মরো অবস্থা। সেদিনের পর থেকে অনেক দূরেও হাতি দেখলে সে পথ আর মাড়াতাম না। সে যা-ই হোক, অবশেষে এল সেই সময়। লেকঘেঁষা এক পুকুরের অপর পাড়ে ঝোপের আড়ালে দেখা পেলাম হাতি মহারাজের। একটি নয়, তিনটি। বাচ্চা সমেত। আমাদের সাড়াশব্দে আরও গভীর জঙ্গলে সেঁধিয়ে গেল তারা। ছবি তুলতে পারলাম না ঠিকমতো।
আশও মিটল না। শেষে নৌকা জোগাড় করা হলো। লেকে ভাসল তরি, তাতে আমরা সাতজন। এবার রোমাঞ্চকর দৃশ্য, লেকপাড়ে একেবারে বুনো হাতির একদম সামনে। মাঝারি উচ্চতার একটি রোগাশোকা হাতি শুঁড় তুলে আমাদের দিকে ফিরল। খানিক দূর এগিয়ে আরও একটিকে দেখলাম খাবার খোঁজ করছে জঙ্গলে। আহা, ঠিকমতো খেতে পায় না বোধ হয়। একটু শীর্ণকায় এরা। মন জানি কেমন করে দিল এই হাতিগুলো। প্রথমবারের মতো দেখলাম চিরচেনা সেই প্রবাদের সার্থকতাকে। বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। বনেই দেখলাম বন্য হাতি আর শিশু হাতি তার মায়ের সঙ্গে। চোখ জুড়াল, সার্থক হলো ভ্রমণ। এদিকে আবার দিনের আলো পড়ে আসছে। নৌকায় করেই ফিরে এলাম রিসোর্টের ঘাটে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
US Visa for Retired Person
Singapore Tour with Universal Studio 4D/3N
ইস্তানবুল, কাপাডোসিয়া ও কুসাডাসি ৭দিন ৬রাত
সে রাতে ছিল রক্তবর্ণ চাঁদের পূর্ণিমা। আমরা কাছের টিলার চূড়োতে থাকা হেলিপ্যাডে বসলাম। কয়েকজন অফিসার নিষেধ করলেন। কারণ রাতে ওখানেও হাতিসহ বন্য প্রাণী আসতে পারে। তবে তা ধোপে টিকল না। অদ্ভুত এক মায়াবী সন্ধ্যা দেখলাম সেখানে বসে। কীভাবে অন্ধকার গ্রাস করে চারদিক। শহরের মতো নয়। একদম অন্য রকম। একটু পরেই লেকের পানিতে ছায়া ফেলে উঠল রক্তিম চাদ। পূর্ণিমার আলো আর শ্রাবণ মেঘের রহস্যময় লুকোচুরি দেখতে দেখতে চারদিকে ভেসে এল নির্জনতার শব্দ। সঙ্গে শিয়ালসহ আর কিছু নাম না জানা প্রাণীর ডাক। ঠিক সেই সময় আমার মনে পড়ল হাতিদের কথা। না বন্য নয়, শহুরে হাতিদের কথা। আচ্ছা ওদেরও কি ইচ্ছে করে না এমন জোছনা আর বৃষ্টিতে মেখে জঙ্গলময় ছানাপোনা নিয়ে বসতি করতে? এ তো ছিল ওদের অধিকার। কেন তাহলে শহরের নিয়ন আলোতে গলায় বিপন্ন এক ঘণ্টা ঝুলিয়ে হাঁটবে ওরা ক্রীতদাসের মতো? কে বানাল ওদের ক্রীতদাস? ভাবতে ভাবতে মনে এল বিকেলেই কে যেন বলছিল, হাতি মাঝেমধ্যেই এসব লোকালয়ে চলে আসে খাবার খুঁজতে। আরও অদ্ভুত ব্যাপার তো। আমার মনে হলো, হাতি কি মানুষের বসতিতে আসে? নাকি আমরাই আসলে হাতিদের বসতি দখল করে গিলে ফেলছি। চলে যাচ্ছি ওদের বসতিতে। এসব ভাবনারা মাথায় ঘুরতে ঘুরতেই দেখলাম নিকষ কালো মেঘ আস্তে আস্তে ঢেকে ফেলছে রক্তলাল পূর্ণিমার চাঁদটাকে।
তায়রান রাজ্জাক
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
৯৭০ বার পড়া হয়েছে




