শীত এলেই ঢাকায় গ্যাস-সংকট বাড়ে। রান্না নিয়ে ভোগান্তি বাড়ে বাসাবাড়িতে। চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে সরবরাহ কম এবং পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়। সংকট কমাতে সরকার এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি শুরু করে দুই বছর আগে। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে পাইপলাইনে সরবরাহ করা এলএনজির দাম এমনিতেই অপেক্ষাকৃত বেশি। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে দাম আরো বেড়েছে। তাই আমদানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলা। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি বেড়ে গ্যাস-সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী সংস্থা তিতাস গ্যাস সূত্র জানায়, কোম্পানিটির অভিযোগকেন্দ্রে প্রতিদিন শতাধিক অভিযোগ জমা হচ্ছে এ নিয়ে। রাজধানীর কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত তিন সপ্তাহ ধরে তারা তীব্র গ্যাস-সংকটে ভুগছেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, মুগদা, মান্ডা, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মগবাজার, মালিবাগ, মধুবাগ, শাহজাদপুর, মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, আদাবর, মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাফরুল, পল্লবী, বংশাল, লালবাগ, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষ দিনের সিংহভাগ সময়ে গ্যাস পাচ্ছেন না। গ্যাস পেলেও তার সরবরাহ খুবই কম। ফলে চুলা জ্বলে টিমটিম করে। আবার অনেক এলাকায় সারাদিনেও গ্যাস থাকে না। রাত ১২টা-১টার দিকে গ্যাস আসে, ৫টা-৬টায় চলে যায়। রাত জেগে রান্নাবান্না ছাড়া বিকল্প নেই তাদের কাছে। সংকট সামলাতে সামর্থ্য অনুযায়ী কারো রান্না ঘরে জায়গা করে নিয়েছে কেরোসিনের চুলা কিংবা মাটির চুলা। কারো রান্নাঘরে ইলেকট্রিক চুলা। অনেকে বাড়িয়েছেন রাইস কুকার, কারি কুকার এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার। বেশ কিছু পরিবারের রান্নাঘরে নতুন করে যুক্ত হয়েছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। কিন্তু সব উপায়েই বেড়েছে খরচ। খাবার রান্নার অসুবিধা কিছুটা কমলেও ভোগান্তি বেড়েছে। গ্যাস-সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা নারায়ণগঞ্জ ও সাভারেও। সংযোগ নিয়ে এবং প্রতি মাসে তা বাবদ অর্থ খরচ করেও গ্যাস না পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কমায় সংকট দেখা দিয়েছে। পেট্রোবাংলাসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
দেশে এখন তিতাস গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা ২৮ লাখ ৬৬ হাজার। এর মধ্যে ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯ জন আবাসিক গ্রাহক। দেশে বর্তমানে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক উত্পাদিত গ্যাসের পরিমাণ ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। এছাড়া দৈনিক ৫৯০ মিলিয়ন ঘনফুট সমপরিমাণ এলএনজি মিশিয়ে দৈনিক ৩ হাজার ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এ হিসাবে দৈনিক ঘাটতি ৫৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সম্প্রতি এলএনজি আমদানি আগের চেয়ে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। শুধু তিতাস গ্যাসই দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে। তাই সংকট প্রকট হয়েছে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, সব সময়ই তাদের গ্যাসের সংকট রয়েছে। দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি প্রায় ৫৫ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে শীতে শিল্পে এবং বাসাবাড়িতে এই জ্বালানির চাহিদা প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু অতিরিক্ত গ্যাস উত্তোলন করে সরবরাহ করা হয় না। এলএনজি সরবরাহও বাড়ছে না। যার ফলে গ্যাসের এই তীব্র সংকট। এছাড়া শীতে পাইপে গ্যাস কিছুটা জমে যাওয়া সংকটের অন্যতম কারণ।
এদিকে তিতাস গ্যাস কোম্পানিরই কয়েক জন প্রকৌশলী গ্যাস সংকটের অন্য কারণগুলো ব্যাখ্যা করে জানান, শীতের সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার একটি বড় কারণ উত্তোলিত গ্যাসের মান ঠিক না থাকা। গ্যাসক্ষেত্র থেকে অনেক সময়ই পরিচ্ছন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। সেগুলোর সঙ্গে অনেকসময় ময়লা তথা উপজাত কনডেনসেট খুব বেশি থাকে। সেগুলো সরু বিতরণ পাইপলাইনগুলোকে আরো সরু করে ফেলে। তাই গ্রাহক পর্যায়ে সংকট বাড়ে। গ্যাসে সবচেয়ে বেশি থাকা উপাদান হলো মিথেন।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Dubai (City tour- Abu Dhabi- Burj Khalifa) 6D/5N
Thimpu-Paro-Dochala Pass-Punakha 6D/4N
Singapore Tour with Sentosa 4D/3N
এছাড়া ইথেন, প্রোপেন, নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন সালফাইড থাকে। এগুলো জমে যাওয়ার কথা নয়। অর্থাত্ পাইপলাইনে যদি গ্যাস জমে থাকার কথা বলা হয় তা মূলত গ্যাস নয়, এর উপজাত কনডেনসেট, যা গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণের আগেই সরিয়ে ফেলার কথা। এর জন্য দায়ী গ্যাস উত্তোলন ও সঞ্চালনের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিগুলো। এর বাইরে পুরোনো এবং ত্রুটিপূর্ণ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের কারণে গ্যাস প্রবাহে বাধা তৈরি হয় ও সংকট বাড়ে। বিভিন্ন শিল্প ও আবাসিক লাইনে প্রচুর অবৈধ সংযোগ রয়েছে। বৈধ সংযোগের গ্রাহকদের গ্যাসের অনেকটা এরা চুরি করে নিয়ে যায়। আবার কিছু এলাকায় আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে ঐ এলাকা বা পার্শ্ববর্তী এলাকার শিল্পগুলো তিতাসের কয়েক জন অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে অতিরিক্ত গ্যাস নিয়ে যায়।
Source: Ittefaq
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
৩৭০ বার পড়া হয়েছে




