মনে করুন, চারদিকে অতলান্ত সমুদ্র। তার মধ্যে নির্জন এক দ্বীপের প্রবাল আর পাথরে সেই সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ে সফেদ ফেনা তুলে গর্জে উঠছে সাপের মতো, আর সেই দ্বীপে কেয়া আর নিশিন্দার ঝোপ, বালুর মাঝখানে শ্যাওলা সবুজ এক ডোবা, ডোবার ধারে ঠেসমূলগুলো দাঁড়িয়ে আছে অনবদ্য ভাস্কর্যের মতো, বালুর ওপর ছোটাছুটি করছে লাল কাঁকড়া, গিরগিটি, পড়ে আছে রঙিন শামুক, মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে গাঙচিল আর সেই অপরূপ জনমানবহীন দ্বীপটিতে আপনি হেঁটে বেড়াচ্ছেন একা—রাজকুমারী মিরান্দার মতো ভাবতে কেমন লাগছে আপনার? মনে করুন—না, মনে করুন নয়, এর পুরোটাই বাস্তবও হতে পারে। খুব বেশি দূরে নয়, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার এই একটুখানি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের টেকনাফ উপজেলা থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরেই এই নিসর্গ। আসছে শীতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা আগেভাগেই সেরে ফেলতে চাইলে ছেঁড়াদিয়া বা ছেঁড়াদ্বীপের নামটা মাথায় রাখতে পারেন এবার।
ছেঁড়াদ্বীপ মানে হচ্ছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। আসলে নারিকেল জিনজিরা বা সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আশপাশে এ রকম ছেঁড়াদ্বীপের সংখ্যা একটি নয়, বরং বেশ কয়েকটি। যদিও পর্যটকদের কাছে মূলত নিকটতমটিই ছেঁড়াদ্বীপ নামে পরিচিত। আর স্থানীয় বাসিন্দারা যেহেতু দ্বীপকে দিয়া বলে ডাকে, তাই এর স্থানীয় নাম সিরাদিয়া বা ছেঁড়াদিয়া। সেন্ট মার্টিনের মতোই ছেঁড়াদ্বীপ চুনাপাথর, ঝিনুক, শামুকের খোলস সৃষ্ট কোকুইনা স্তর এবং প্রবালগুচ্ছ দিয়ে তৈরি। সমুদ্রপথে ছেঁড়াদ্বীপে যাওয়ার মোক্ষম সময় হচ্ছে ভাটার সময়। কেননা ভাটায় ছোট ছোট খাঁড়ি ও চারপাশের অগভীর সমুদ্রে ভেসে ওঠে জীবিত ছোট ছোট প্রবাল গোষ্ঠী, যা জোয়ারের সময় আবার পানিতে তলিয়ে যায়। এগুলোর কোনোটা ভাটার সময় পানি স্তরের চেয়ে প্রায় তিন-চার মিটার ওপরেও দেখা যায়। দ্বীপে প্রায় ২০০-র মতো প্রজাতির জীবের উপস্থিতি দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। নারিকেল জিনজিরায় পাঁচ শতাধিক মত্স্যজীবী পরিবারের বসবাস হলেও ছেঁড়াদিয়া পুরোপুরি জনবসতিহীন। কারণ, সুপেয় পানির অভাব।
যদিও সমুদ্র আমি পৃথিবীতে দেখে গেছি ঢের
সেন্ট মার্টিনের সমুদ্র কক্সবাজারের মতো শান্ত, বাধ্য আর একই ভঙ্গিতে বালুর ওপর বারবার ফিরে আসা জলরাশি নয়, এখানে সমুদ্র মুহূর্তে মুহূর্তে তার রূপ পাল্টায়। সকালে সেন্ট মার্টিনের অপরিসর পাথুরে সৈকতে পা ফেলে ফেলে হেঁটে আসা আর বুড়ো চাচার বাঁশের দোকানে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ডাবের পানি খাওয়ার স্মৃতি অবিশ্বাস্য মনে হবে রাতে, যদি অন্ধকার পথে টর্চ ফেলে ফেলে শোবার আগে আরেকবার সমুদ্র দর্শনের ইচ্ছে জাগে মনে। বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে দেখবেন, এই রাতে কোথায় সেই পাথুরে সৈকত আর কোথায়ই বা বুড়ো চাচার দোকান? সব কিছু ভেঙেচুরে অসম্ভব রাগে গর্জে উঠতে উঠতে ততক্ষণে একেবারে হোটেলের পায়ের কাছে চলে এসেছে সমুদ্র, যেন এখনই গিলে খাবে গোটা জনবসতি, আর রাতের অন্ধকারে ঢেউয়ের মাথায় লাফিয়ে ওঠা সফেদ শুভ্র ফেনা ধুন্দুমারের মতো এগিয়ে আসতে আসতে এমনকি অনেক ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা আপনার পা দুটো ভিজিয়ে দেবে সরোষে। বঙ্গোপসাগরের এমন রূপ এর আগে কখনো দেখিনি। আর তার গর্জনও এমন শুনিনি আগে কখনো। আপনার উচিত হবে তখন টপ করে টর্চের আলো নিভিয়ে ফেলা। অমনি সমস্ত চরাচর আলোয় আলোকময় হয়ে উঠবে তারাগুলো। ভাগ্যিস হোটেলের ব্যবস্থাপনার লোকেরা সমুদ্রের ধার ঘেেঁষ খোলা আকাশের নিচে বসিয়ে রেখেছে কয়েকটি ডেকচেয়ার, তারই একটিতে বিশাল তারাভরা আকাশ মাথায় নিয়ে শুয়ে পড়বেন আপনি।
সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়
নারিকেল জিনজিরায় সমুদ্রের গান শুনতে শুনতে প্রশান্ত এক ঘুম ঘুমিয়ে নিয়ে সকালে উঠেই তৈরি হয়ে নিন। ঘাটটি খুব দূরে নয়, আর ঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য গদি-আটা ভ্যানগাড়িগুলো সব সময়ই তৈরি। ছেঁড়াদ্বীপে যেতে হবে স্পিডবোটে বা ট্রলারে। দুটোই সমান উত্তেজক। ভাটার সময়টা আগেভাগে জেনে নেবেন, কেননা ছেঁড়াদ্বীপে যেতে হবে ভাটার সময়ই, নইলে ভেসে ওঠা প্রবালগুলো দেখা যাবে না। দামদস্তুর করে নিয়ে স্পিডবোটে উঠবেন, সমুদ্রের বুকের ওপর দিয়ে ওটা ছুটিয়ে নেবে বেশিক্ষণ না, মাত্র ১০-১৫ মিনিট। স্পিডবোট বা ট্রলার যা-ই হোক না কেন, পাথুরে ছেঁড়াদ্বীপের একেবারে ধার পর্যন্ত যাবে না ওটা। পাথরে আঘাত লেগে ক্ষতি হতে পারে। তাই আপনাকে নেমে যেতে হবে খানিকটা দূরেই। ভাটা সম্পূর্ণ হলে বাকি পথটুকু হাঁটু অবধি ডুবিয়ে হেঁটেই চলে যেতে পারবেন, নইলে এবার স্পিডবোট থেকে লাফিয়ে ছোট নৌকায় উঠতে হবে। নৌকা নিয়ে যাবে দ্বীপ অবধি। সেটাই বেশি ভালো হবে, কারণ ডুবন্ত পাথর আর প্রবালে হাঁটা বেশ বিপজ্জনক, বারবার পা পিছলে যেতে চায়। ছেঁড়াদ্বীপে নেমেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হবে আপনার। নির্জনতা আর নৈঃশব্দে মাখামাখি এর অভাবনীয় সৌন্দর্য। সুপেয় পানির অভাব এখানে জনবসতি গড়ে উঠতে দেয়নি। কেয়া, নিশিন্দা, সাগরলতা, ছোট ছোট খাঁড়িতে আটকে পড়া রঙিন মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া আর জীবিত ও মৃত প্রবালই এই দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা। ওদের সঙ্গে মিশে যেতে চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন প্রকৃতির সন্তান হতে। পর্যটকের ভিড় না থাকলে আপনিই হয়তো এখন দ্বীপের একমাত্র মানবসন্তান। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিন, দুই হাত দুই দিকে বাড়িয়ে আকাশটাকে ধরুন। এই নির্জন প্রকৃতি সচরাচর মেলে না। গোটা দ্বীপ ঘুরে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসতে আধঘণ্টাও লাগবে না। সমুদ্রের কিনার ঘেঁষে ঘুরতে ঘুরতে দ্বীপের মধ্যবর্তী অংশে একবার ঢুঁ-মারতে ভুলবেন না যেন। এখানে কেয়াঝোপের আড়ালে রয়েছে শ্যাওলা সবুজ এক জলাশয়, লতাগুল্ম আর বুনোঝোপের মধ্যে যাকে বিদেশি ছবিতে দেখা কোনো গা ছমছম করা জংলা চোরাবালির মতো দেখতে। জোয়ার-ভাটার খেলায় আপনার চোখের সামনে ভেসে আর ডুবে যেতে দেখবেন প্রবাল আর পাথরগুলোকে। তবে পূর্ণ জোয়ার চলে আসার আগেই আপনার উচিত হবে আগের নিয়মে নৌকায় করে গিয়ে আবার স্পিডবোটে উঠে পড়া। কেননা উত্তাল সাগরে নৌকা বা স্পিডবোটে চড়ার অনভিজ্ঞতা আপনাকে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেবে, যখন বিশাল বিশাল ঢেউ ছুটে এসে গোটা স্পিডবোটকে গিলে ফেলতে চাইবে বা উথাল-পাতাল করে দেবে। যদিও নৌকার মাঝি হেসেই উড়িয়ে দেয় এই ভীতি আপনেদের শহরের রাস্তায় উঁচা-নিচা থাকে না? ধইরা নেন এইটাও তাই। আরে ঢেউ না থাকলে আবার সমুদ্র কিসের?
ফিচার বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ড ভিসা (বিজনেসম্যান)
মিশর ভিসা (চাকুরীজীবী)
Kathmandu-Nagarkot 4D/3N
তবু এই দ্বীপ, দেশ, ভয়, অভিসন্ধানের অন্ধকারে ঘুরে
সসাগরা পৃথিবীর আজ এই মরণের কালিমাকে ক্ষমা করা যাবে
সেন্ট মার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপে যাওয়ার মৌসুম হচ্ছে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি—এই চার মাস। ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ পর্যন্ত বাস সার্ভিস আছে। যাঁরা কক্সবাজারে থেমে যেতে চান, তাঁরা কক্সবাজার থেকেও বাসে বা রিজার্ভ মাইক্রোবাসে টেকনাফ যেতে পারেন। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদ আর কুতুবদিয়া প্রতিদিন ছাড়ে সকাল ১০টায়, আবার সেন্ট মার্টিন থেকে বিকেল চারটায় রওনা দিয়ে টেকনাফে ফিরে আসে। পর্যটক হিসেবে আপনার উচিত হবে সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন করা এবং পরদিন বিকেলের জাহাজে ফেরা। আর রাত্রিযাপন না করলেও সেন্ট মার্টিন থেকে ছেঁড়াদ্বীপ স্পিডবোটে বা ট্রলারে করে ঘুরে আসতে সর্বমোট দেড়-দুই ঘণ্টার বেশি ব্যয় হবে না। সেন্ট মার্টিন বা নারিকেল জিনজিরায় যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই যা সঙ্গে নিতে হবে তা হলো একটি টর্চ, মোমবাতি, মশার ওষুধ ও সমুদ্রস্নানের উপযোগী কাপড়চোপড়। আর ছেঁড়াদ্বীপে নেমে দোহাই লাগে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিনের প্যাকেট ও অন্যান্য জঞ্জাল ফেলে পরিবেশ নষ্ট করার পাপ করবেন না। এই দ্বীপের অভাবনীয় ও অকৃত্রিম সৌন্দর্য প্রাণভরে উপভোগ করুন, মুছে ফেলুন পেছনের সব ক্লেদ, কালিমা ও শহুরে বিরক্তি; আর তার জন্য পরিবেশ বাঁচানোর অঙ্গীকার করাটা আজ খুব জরুরি। কেননা এক এক করে আমরা তো হারিয়ে ফেলছি সবই, না হয় আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদগুলো আজ ধরে রাখি ভালোবেসে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
শক্তিশালী ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডারের দাম জেনে নিন১,০৭৭ বার পড়া হয়েছে