১৮৯৯ সালে ফার্দিন্যান্ড পোর্সে নামের একজন অটোমোবাইল প্রকৌশলী হাইব্রিড গাড়ি নির্মাণ করেন। উচ্চমূল্যের কারণে সে সময় গাড়িটি জনপ্রিয় হয়নি। মাত্র ৩০০টি গাড়ি তখন তৈরি করা হয়েছিল। ১৯০৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে এই প্রযুক্তির গাড়ি উৎপাদন করেন আরেক অটোমোবাইল প্রকৌশলী হেনরি ফোর্ড। মূলত তখন থেকেই হাইব্রিড গাড়ির যাত্রা শুরু। হাইব্রিড গাড়ির ধারণা বেশ পুরোনো হলেও আমাদের দেশে প্রায় নতুনই। ইদানীং দেশে হাইব্রিড গাড়ির সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
হাইব্রিড গাড়ি হলো বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি তেলের সমন্বয়ে চালিত যানবাহন। হাইব্রিড গাড়ি চলার জন্য প্রাথমিক শক্তি হিসেবে হাইব্রিড ব্যাটারি এবং দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। ব্যাটারির চার্জ যদি শেষ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন চালু হয়। ব্যাটারির শক্তি গাড়ির জন্য যথেষ্ট না হলে হাইব্রিড ব্যাটারি এবং ইঞ্জিন যৌথভাবে শক্তি উৎপাদন করে এবং গাড়ির চাকাকে গতিশীল রাখে। ব্যাটারি চাকার ঘূর্ণন গতি এবং ইঞ্জিনের পরিত্যক্ত কর্মশক্তি থেকে চার্জ সংগ্রহ করে। পাওয়ার কন্ট্রোল ইউনিট বা পিসিইউ নামের অত্যাধুনিক যন্ত্রটি এই পুরো কাজ করে থাকে। এ জন্য চালককে আলাদা কোনো সুইচ চাপতে হয় না।
ব্যাটারিতে চলা অবস্থায় গাড়িটির ইঞ্জিন যেহেতু বন্ধ থাকে, সেহেতু তখন পরিবেশদূষণের মাত্রাও কমে যায়। পরিবেশবান্ধব গাড়ি হিসেবে ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হাইব্রিড গাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা প্রিয়াস হাইব্রিড গাড়িটি নিয়ে আসে নাভানা লিমিটেড।
হাইব্রিড গাড়ির ওপর ২০১৭-১৮ সালে শুল্ক হার কমানোর পর রিকন্ডিশনন্ড গাড়ির বাজারেও আসতে থাকে হাইব্রিড গাড়ি। ২০১৭ সালের আগস্টে টয়োটা একুয়া এবং এক্সিও হাইব্রিড গাড়ি আমদানি করে মেভেন অটোস। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাড়ি ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করছে।
দেশেই পাওয়া যাচ্ছে হাইব্রিড গাড়ি টয়োটা অ্যাকুয়া, এক্সিও, প্রিয়াস, নোয়াহ, আলফার্ড, ভেলফায়ার, এসকোয়ার, কেমরি, সিএইচআর, হোন্ডা ভেজেল, গ্রেস, নিসান এক্সট্রেইলসহ বেশ কয়েকটি মডেলের হাইব্রিড গাড়ি দেশের বাজারে সচরাচর দেখা যায়। এ ছাড়া ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির মধ্যে বিএমডব্লিউ নিয়ে এসেছে হাইব্রিডের উন্নত সংস্করণ প্লাগ ইন হাইব্রিড ইন ভেহিকল (পেইভ)। হাইব্রিড এই গাড়িতে কোনো প্রকার জ্বালানি খরচ না করেও ২০-৩০ কিলোমিটার ব্যাটারিতে চলার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। হুন্দাই, অডি, মিতসুবিশির মতো জনপ্রিয় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশকেরাও দেশের বাজারে আগামী বছরের মধ্যে হাইব্রিড গাড়ি নিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।
প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সংস্করণের পর এখন চতুর্থ প্রজন্মের হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধবের পাশাপাশি জ্বালানি সাশ্রয়ীও বটে। জাপান, জার্মানি, কোরিয়া, চীনসহ উন্নত দেশগুলোর গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাসোলিন গাড়ির চেয়ে হাইব্রিড গাড়ির উৎপাদন বাড়িয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মে শুধু ব্যাটারিচালিত গাড়ি হিসেবে টেসলা এবং বিএমডব্লিউ রাজত্ব তৈরি করছে।
হাইব্রিড গাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়লেও এই গাড়ির যত্নাদি নিয়ে গ্রাহকদের মনে এখনো শঙ্কা কাটেনি। এই বিষয়ে ঢাকার মেভেন অটোসের স্বত্বাধিকারী মো. আশফাকুর রহমান বলেন, হাইব্রিড গাড়িতে অতিরিক্ত যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে ব্যাটারি ও পিসিইউ। এই গাড়িতে যে ব্যাটারিগুলো ব্যবহার করা হয়, তা খুব দ্রুত চার্জ হয় এবং চার্জ হয়ে গেলেই তা আবার ব্যবহার হয়ে যায়। বৈদ্যুতিক শক্তি বেশিক্ষণ পর্যন্ত সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে ব্যাটারিগুলো সহজে নষ্ট হয় না। হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারিতে অনেক সেল থাকে। কোনো সেল নষ্ট হলে তা সহজেই এবং সাশ্রয়ীমূল্যে পরিবর্তন করা যায়। এ ছাড়া হাইব্রিড গাড়ি সাধারণ গাড়ির মতোই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।
ফিচার বিজ্ঞাপন
মালয়শিয়া-সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড ৭দিন ৬ রাত
কানাডা ভিসা
Alexandria & Cairo 6D/5N
নিকেল মেটাল হাইব্রিড ব্যাটারি (এনআইএমএইচ) ব্যবহৃত হওয়ায় হাইব্রিড গাড়ির ওজন তেমন বাড়ে না। গাড়িতে জ্বালানি খরচ কমানোর জন্য আমাদের দেশে সিএনজি এবং এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার হয়। সিএনজি এবং এলপিজির জন্য গাড়িতে আলাদা সিলিন্ডার ও যন্ত্র বসানোর ফলে গাড়ির ওজন বেড়ে যায়। ফলে খরচ কমলেও গাড়ির ইঞ্জিন, চাকা, শক অ্যাবজরভারসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সে হিসেবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বানানো গাড়িটি সেভাবেই চালানো উত্তম।
সরকারিভাবেও হাইব্রিড গাড়ির কদর বেড়েছে। মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের জন্য কেনা হয়েছে বিলাসবহুল টয়োটা কেমরি হাইব্রিড গাড়ি। বেসরকারি কর্মকর্তাদের পছন্দের সারিতেও জায়গা করে নিয়েছে হাইব্রিড গাড়ি। এক বছর ধরে ব্যবহার করা টয়োটা এক্সিও হাইব্রিড ২০১৩ মডেলের গাড়িটি সম্পর্কে ইউনাইটেড ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেক্সটাইল করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোক্তার আলম বলেন, ‘আমার প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার চলাচল করতে হয়। ৪০০-৫০০ টাকার জ্বালানি খরচ করে আমি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করি। এখন পর্যন্ত গাড়িতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা পাইনি। গাড়ি কেনার সময় গাড়ির অকশন শিট, ব্যাটারির অবস্থা জেনে গাড়ি কিনলে একটি হাইব্রিড গাড়ি যাতায়াত খরচ বহুলাংশে কমিয়ে দিতে পারে। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঢাকাতে এখন অনেক হাইব্রিড স্পেশালিস্ট গ্যারেজ রয়েছে। যেকোনো সমস্যা তারা পুরোপুরি সমাধান করতে সক্ষম।
সেডান গাড়ির পাশাপাশি এসইউভি ঘরানার গাড়িতেও হাইব্রিড সমান জনপ্রিয়। টয়োটা সিএইচআর, হোন্ডা ভেজেল, নিশান এক্সট্রেইল জনপ্রিয় এই ৩টি মডেলসহ গাড়ির রিকন্ডিশন বাজারে মিতসুবিশি আউটল্যান্ডার প্লাগ–ইন মডেলও পাওয়া যাচ্ছে। ফুয়েল খরচ কমে যাওয়াতে অধিক সিসির গাড়ি কেনাতেও ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। গাড়ি আমদানিকারকেরাও গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে দেশে হাইব্রিড গাড়ি আসছেন।
পেট্রল ইঞ্জিনের চেয়ে ডিজেল ইঞ্জিন শক্তিশালী। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে ডিজেল ইঞ্জিনেও কীভাবে হাইব্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছে। হাইব্রিড গাড়িগুলো মডেল ভেদে ১৩ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...
৯২২ বার পড়া হয়েছে