বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ধীর গতিতে হলেও এই শিল্পের উন্নয়ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার কারণে পর্যটন শিল্পের এই অগ্রগতি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কমপেটেটিভনেস রিপোর্ট-এ বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম বলা হয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ ধাপ এগিয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ১২৫তম।
বাংলাদেশে পর্যটনের যাত্রা অনেক আগে শুরু হলেও নানা প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে আজকে আশার আলো ছড়াচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটনের সাথে যুক্ত সংস্থাসমূহের নৈমিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপার সম্ভবনাময় আমাদের এই বাংলাদেশ হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার একটি আদর্শ পর্যটন নগরী, যা শুধু অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করবে না। সেই সাথে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে ইতিবাচক ভাবমূর্তিতে তুলে ধরবে। বাংলাদেশ পর্যটন পুলিশের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ছোট-বড় প্রায় ৮শ’র বেশি পর্যটন স্থান রয়েছে। এসব স্থানকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যটনের সাথে যুক্ত করা গেলে তা এই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
মূলত নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বাসস্থান, বন্দর ও বিমান পরিবহন অবকাঠামো, আর্থিক মান ও স্থিতিশীল ভ্রমণের সুযোগসহ ৯০টি মানদণ্ড বিবেচনা করে ১৪০ দেশের র্যাংকিং করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১২০তম। পর্যটন খাতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কম থাকা সত্ত্বেও এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুবাদে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ফলে এই দেশের পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে নিরাপত্তা খাতে, যাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩ থেকে ১০৫ এ উন্নীত হয়েছে। অতীতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে পর্যটনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২ ধাপ উন্নতি হয়ে ১০৯ এ এসেছে বাংলাদেশের অবস্থান। পাশাপাশি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটনে ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ৯৭ থেকে ৭৭ এ এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) প্রস্তুতিতেও বাংলাদেশ ১১৬ থেকে এগিয়ে ১১১তম হয়েছে। বিপণন ও পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতায় ৮৯তম থেকে এগিয়ে ৮৫তম। ভূমি ও বন্দর অবকাঠামোতে ৭৪তম থেকে এগিয়ে ৬০তম এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ১১৬তম। বলা হয়, বাংলাদেশ ভ্রমণ ও পর্যটন সক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি করার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ততায় বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০৪তম থেকে ১১৪তম হয়েছে। এতে মূলত বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা জটিলতার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ভিসা ব্যবস্থা একটি জটিল প্রক্রিয়া। পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটক সেবা অবকাঠামোতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কমাতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে বিগত এক দশকের বিভিন্ন পরিকল্পনার ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ বড় ভূমিকা পালন করেছে। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তায় ভূমিকা পালন করছে। পযর্টকদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ- এ ভিশন নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ দেশের দশর্নীয় স্থান এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্থাপনার নিরাপত্তা বিধান; বিমানবন্দর, রেল স্টেশন, বাস-লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পর্যটকদের গমনাগমনের সময়ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করছে। পর্যটন শিল্পের ক্রমবিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে ফ্রন্ট ডেস্ক ও হেল্প ডেস্ক স্থাপন করার মাধ্যমে বিনোদনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে পুলিশের এ স্বতন্ত্র বিশেষায়িত ইউনিট নানামুখি তৎপরতা চালাচ্ছে।
পর্যটন এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধসমূহের প্রকৃতি, সংঘটনের পদ্ধতি বিশ্লেষণ, এই সংক্রান্ত অপরাধ চিত্র এবং অপরাধীদের তালিকা প্রস্তুত করছে। পর্যটন শিল্প এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে অপরাধ সংশ্লিষ্ট তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং পুলিশ বাহিনীর সংশ্লিষ্ট যেকোনো শাখা, বিভাগ, সংস্থা বা ইউনিটের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যাবলীর পারস্পরিক আদান-প্রদানেও তারা সাবর্ক্ষণিক তৎপর রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন দর্শনীয় পর্যটনস্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে পর্যটন শিল্প সম্পর্কে তৈরি হচ্ছে সম্যক ধারণা। ফলে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আস্থার জায়গা হিসাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
জাকার্তা ও বালি ৭দিন ৬ রাত
Moscow, Novosibirsk & Irkutsk 7D/6N
কুয়ালালামপুর-গেন্টিং ৩দিন ২ রাত
পক্ষান্তরে দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকার এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে পর্যটন শিল্পে নিরব বিপ্লব সংগঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার মাঝে সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় বেঁধে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ অন্যতম। ফলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটননগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার। প্রতিবছরে এতে বাড়তি ২শ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হলো- সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এসব স্থানে প্রায় ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ২০১৮ সালের ওআইসির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঢাকাকে ওআইসি পর্যটন শহর-২০১৯ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এতে মুসলিম দেশগুলোর অনেক পর্যটকের কাছে বাংলাদেশ নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করবে। এভাবে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের ইমেজ আরও বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের মূল উপাদান হতে পারে এই দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ। পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র, বনাঞ্চল, হাওরসহ বৈচিত্র্যের সম্ভার আমাদের এই দেশ। এই সম্পদগুলোকে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা গেলে এই দেশে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের বর্তমান ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজতর করতে হবে। আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরের কর্মকাণ্ডকে আরও পর্যটক বান্ধব করতে হবে। যেসব সূচকে আমাদের দেশ পিছিয়ে আছে, তাতে আরও মনোযোগ দিতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারবে এই শিল্পে।
যেকোনো ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের লক্ষ্যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ব্যবহার পারে টেকসই উন্নয়ন সম্ভাবনা নিশ্চিত করতে। তাই গবেষণাধর্মী কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযোগী তথ্যের উৎঘাটন ও সংরক্ষণপূর্বক তা নিঃসন্দেহে জনকল্যাণে সমৃদ্ধি আনায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। অপার সম্ভাবনাময় ও প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়া সত্ত্বেও মহান স্বাধীনতা অর্জনের ৪৭ বছরেও আমরা পুরোপুরি সক্ষম হইনি পর্যটনখাতকে ঢেলে সাজাতে। তবে বর্তমান বছরগুলোতে সরকারসহ বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যটনকে অর্থনৈতিক একটি কার্যকরী খাত হিসেবে রূপান্তরে সচেষ্ট হয়েছে। তাই পর্যটন শিল্পের বিকাশে গবেষণাধর্মী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যটনের উপর উচ্চ শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থাসহ বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পর্যটন শিল্পের সংযোজন শুধু আর্থিক সফলতা বয়ে আনবে না। সেই সাথে প্রান্তিক পর্যায়ে এর সুফল ছড়িয়ে দেবে স্থানীয়দের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠতে পারে অন্যতম হাতিয়ার হিসাবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের উন্নয়ন ভাবনায় পর্যটন শিল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
লেখক: চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Source: jagonews24
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...
২৮১ বার পড়া হয়েছে