এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে অনায়াসে বের হওয়া যাবে। আটকে থাকতে হবে না কোনো যানজটে। কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে গন্তব্যে। এতে সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি রক্ষা হবে পরিবেশের ভারসাম্য। এমন পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে তিনটি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে কাজ এগিয়েছে অনেক দূর। আর রাজধানীর যানজট কমাতে রিং রোড নির্মাণের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা হবে বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর একটি।

যেমন হবে বৃত্তাকার সড়ক

যানজট নিরসনে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে তিনটি রিং রোড বা বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো- আউটার রিং রোড, মিডেল রিং রোড এবং ইনার রিং রোড। ইতোমধ্যে আউটার ও ইনার রিং রোড নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আট থেকে দশ লেনবিশিষ্ট সড়কগুলো এমন হবে যে, ঢাকার ওপর দিয়ে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেতে গাড়িগুলোকে দীর্ঘ সময় জটে বসে থাকতে হবে না। ঢাকার চারপাশ ঘিরে আউটার ও ইনার রিং রোড মিলিয়ে মোট ২২০ কিলোমিটার সড়ক হবে। যানজট যাতে না হয় সেজন্য এসব সড়কে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, বাইপাসও নির্মাণ হচ্ছে। এছাড়া থাকবে নানামুখী সংযোগ সড়কও। এই সড়ক নির্মাণ হলে বহুমুখী যোগাযোগ সৃষ্টি হবে এবং শহরে গাড়ির চাপ কমবে।

ইনার রিং রোড

ঢাকার যানজট কমিয়ে গাড়ির চলাচলে গতি বাড়াবে ইনার রিং রোড। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই সড়কের র্দৈঘ্য হবে ৮৮ কিলোমিটার । এর মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার সড়ক আবদুল্লাহপুর থেকে গাবতলী, সোয়ারিঘাট হয়ে পোস্তগোলা, ডেমরা, নারায়গঞ্জ গিয়ে শেষ হবে। আর ডেমরা থেকে বালু নদের তীর ঘেঁষে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার হবে আরেকটা অংশ। এই অংশে সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড রুট নির্ধারণের কাজ করছে। সংস্থাটি এই সড়ক নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ, স্লুইজগেট ও বাঁধ নির্মাণ করে দেবে।

আর দশ লেন বিশিষ্ট সড়ক নির্মাণ করবে সওজ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে এর ৬৩ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। দুই ভাগে ভাগ করে ইনার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এখানে সড়কের পাশাপাশি অনেকগুলো ফ্লাইওভার, বাইপাস, আন্ডারপাস সার্ভিস লেন সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পুরো ৬৩ কিলোমিটার সড়কের মাঝে হবে ছয় লেন, আর দুই পাশে হবে আরও দুই দুই করে চার লেন। ইনার রিং রোড নির্মাণ হলে এক দিক থেকে ঢুকলে সেদিক থেকেই বেরিয়ে চলে আসা যাবে। রেডিয়াল কানেকশন পাওয়া যাবে অনেকগুলো। যেমন- গাবতলী থেকে আরিচার দিকে যাওয়া যাবে। এদিকে ভাঙা মাওয়া ফরিদপুর অনায়াসে যাওয়া যাবে। ঢাকা চট্টগ্রামে যেতে কানেকশন থাকবে সিঙ্গাইলে। আর আব্দুল্লাহপুরের সঙ্গে থাকবে গাজীপুরের কানেকশন। ধৌরে থাকবে নবীনগর, চন্দ্রার দিকে কানেকশন। একবার এই রিংরোডে উঠলে বিভিন্ন স্থানে অনায়াসে চলে যেতে পারবে গাড়িুগুলো। আবার ঢোকার ক্ষেত্রেও তাই।

আউটার রিং রোড

এটি হবে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে শুরু হয়ে কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, মদনপুর, ভুলতা হয়ে গাজীপুরের কড্ডা থেকে ঢাকা-ইপিজেড বাইপাইল দিয়ে হেমায়েতপুর পর্যন্ত। মোট ১৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা আউটার রিং রোডের ৪৮ কিলোমিটারই নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। বাকি ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ককে উপযোগী করে তুলতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পও দুই পর্বে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্বে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে কেরাণীগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত আট লেনের ৪৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বর্তমানে চার লেনের ১২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর সঙ্গে আরও চার লেন নির্মাণ করা হবে। বাকি ৩৬ কিলোমিটার অংশ জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। আট লেন বিশিষ্ট এই আউটার রিং রোডের প্রস্থ হবে ২৪০ থেকে ৩০০ ফুট। এ অংশে দুটি রেস্ট এরিয়া, পাঁচটি ইন্টারচেঞ্জ, ছয়টি সেতু, ২০টি ওভারপাস এবং আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Kathmandu-Pokhara 5D/4N

মূল্য: ১৪,৯০০ টাকা

Maldives (Centara Ras Fushi Resort & Spa) 3D/2N

মূল্য: ৫৯,৯০০ টাকা

৩৬ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণে ৩৮৪ হেক্টর জমির প্রয়োজন হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় পর্বে ৮৪ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ এবং উন্নয়নে ব্যয় হবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান সড়কের মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার দুই লেন এবং ৩৬ কিলোমিটার চার লেন করে রয়েছে। এই সড়কও আট লেনে উন্নীত করা হবে। এই সড়কে বর্তমানে থাকা ছোট ছোট সেতুগুলো ভেঙে আট লেন করে নির্মাণ করা হবে। আউটার রিং রোডের একটি সমীক্ষা শেষ করা হয়েছে। এখন সেটি অর্থদাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন কোম্পানি (জাইকা) পর্যালোচনা করে দেখবে।

কেন এই বৃত্তাকার সড়ক

রাজধানী ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এই ঘনবসতির ঢাকায় দিনকে দিন যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এক দিকে মানসম্মত গণপরিবহনের অপ্রতুলতা, অন্য দিকে গত কয়েক বছরে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধিতে যানজট চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। এছাড়া মরার উপরে খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প। অন্য দিকে পদ্মাসেতু চালু হতে বাকি মাত্র দেড় বছর। ঢাকাবাসীকে পদ্মাসেতুর কাঙ্ক্ষিত সুবিধা দিতে হলে আউটার রিং রোড বাস্তবায়ন জরুরি। সে কারণে জোরেশোরে বাস্তবায়নের তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নে মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) খসড়ায়ও আউটার রিং রোড বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মাসেতু চালু হলে রাজধানীতে যানবাহনের চাপ বাড়বে। দেশের দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যানবাহন চলাচল বাড়বে। যার একটি বড় অংশ হবে রাজধানীমুখী। এই চিন্তা থেকেই সরকার সংশোধিত কৌশলগত পরিকল্পনা এবং ড্যাপেও রাজধানী ঘিরে বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের বিশেষ প্রস্তাব রেখেছে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা একটি মেগা সিটি। এ সিটিতে রিং রোড না থাকা গ্রামাটিক্যাল মিসটেক। একটা শহর তৈরি হতে হলে সেখানে হাট-বাজার, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি থাকবে উন্নত সড়ক, গণপরিবহন। এখানে সড়ক ও পরিবহন কোনটিই মানসম্মত নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন যে, ময়মনসিংহ থেকে আসার পথে গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন হলে আর আসার উপায় নেই। কিন্তু রিং রোড থাকলে একটি দিয়ে ঢুকতে গিয়ে না পারলে অন্য পথ দিয়ে চলে যেতে পারবেন।’

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১৯৩ বার পড়া হয়েছে