রুমা বাজারের সামনের ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তে ছাড়তেই বেজে গেল সোয়া তিনটে। গন্তব্য রিজুক জলপ্রপাত। এত দেরি করে কেন বের হলাম? প্রথম ফ্যাঁকড়া বাধল বান্দরবানের রুমা স্টেশনে, যখন অল্পের জন্য দিনের প্রথম চাঁদের গাড়ি ধরতে ব্যর্থ হলাম। তাই সোয়া দশটার দ্বিতীয় গাড়িটাতে চেপেই রওনা হলাম রুমার উদ্দেশে। সঙ্গী রিদওয়ান আক্রাম। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে চলার সময় ঝাঁকুনির চোটে শরীরের হাড়-মাংস এক হওয়ার জোগাড় হলেও দুই পাশের পাহাড়, প্যাঁচালো পাহাড়ি রাস্তায় রোমাঞ্চকর যাত্রা, নিচে সরু ফিতার মতো দেখা যাওয়া সাঙ্গু নদী, একটু পর পরই প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ছড়ার ওপরের সেতু অতিক্রম-এসব কারণে ভ্রমণটা শেষ পর্যন্ত খারাপ হয়েছে তা বলা যাবে না কোনোমতেই। কিন্তু রুমা এসে আরেক বিপত্তি। জানতে পারলাম নৌকায় করে সাঙ্গু নদী ধরে এক ঘণ্টার ভ্রমণ শেষে তবেই পৌঁছতে পারব রুমা বাজারে। এ সময়ই আমাদের সঙ্গে চাঁদের গাড়ি থেকে নামা এক যাত্রী জানালেন, নৌকায় না গিয়ে নদী-ডাঙা মিলিয়ে হেঁটে গেলে ২০-২৫ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যাবে রুমা বাজারে। তা-ই করলাম। শেষ পর্যন্ত রুমা বাজারে পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা দুইটা। ভাবলাম, আজ বোধ হয় আর কোনোভাবেই রিজুকের দিকে যাওয়া হচ্ছে না। কিন্তু এর পরই আগে থেকেই আমাদের অপেক্ষায় থাকা শৈহ্লাচিং মারমার ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া, আর সেই সূত্রে আমরা এখন রিজুকের পথে। নৌকাতে আমাদের সঙ্গে শৈহ্লাচিং মারমা ছাড়াও আছেন চাঁদের গাড়িতে পরিচয় হওয়া দুই যুবক মিজান ও নবিদুর। আর নৌকার দুই কিশোর মাঝি মিটন আর উজ্জ্বল তো আছেই।
দু-চারটা দরকারি তথ্য জেনে নেওয়া যাক। রিজুক দেখতে চাইলে বান্দরবান থেকে রুমায় আপনাকে আসতেই হবে। লোকবল বেশি থাকলে নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসাই সুবিধাজনক। আর রুমা থেকে রিজুক যেতে পারেন নৌকা ভাড়া করে কিংবা হেঁটে। রুমায় উঠতে পারেন হোটেল হিলটনে।
সাঙ্গুতে পানি একবারেই কম। নিচের বালি দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। কখন আবার বালির চড়ায় আটকে যায়-এ ভয়ে মাঝিদের নৌকা চালাতে হচ্ছে খুব সাবধানে। নদীতে হাঁটুজলে শামুক খুঁজছে মারমা কিশোরীরা। ডানে পাহাড়, বাঁয়ে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে ফসলের ক্ষেত। এখন খুব একটা দেখা না গেলেও রুমা বাজারের দিকে আসার সময় প্রচুর বাঁশের চালি (ভেলা) চোখে পড়ছে সাঙ্গুর বুকে। ভেলা বানিয়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দূর-দূরান্তে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশ। আমাদের সামনে দিয়েই নদী পার হয়ে গেল কয়েকজন আদিবাসি নারী। পিঠে ঝোলানো ঝুড়ি। দুই মাঝির একজন উজ্জ্বল বেশ চুপচাপ হলেও মিটনের মুখে যেন খই ফুটছে।
একসময় এমন একটা জায়গায় চলে এল নৌকা, যেখানে পানি খুব বেশি না হলেও খরস্রোতা। পরিষ্কার টলটলে পানির নিচে ছোট ছোট নুড়িপাথরের রাজত্ব। আরও কিছুটা এগোতেই কানে এল ঝিরঝির শব্দ, এর পরই দূরে দেখা দিল জলপ্রাপাতটা। এখান থেকে কেমন যেন নীলচে দেখাচ্ছে পানির ধারাটিকে। একসময় জলপ্রপাতের সামনে পৌঁছে গেলাম। আর কাছ থেকে দেখেই মজে গেলাম রিজুকের রূপে। পাহাড়ের আনুমানিক ২০০ থেকে ২৫০ ফুট ওপর থেকে নেমে আসছে পানির ধারা। এই শুকনো সময়ের বেশ ভালো পরিমাণেই পানি ঢেলে চলেছে সে। গতি, উদ্দমতা কোনো কিছুতেই কমতি নেই তার। জলপ্রপাতের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বর্ষার ফলার মতো শরীরে এসে বিঁধতে লাগল ঠান্ডা পানি। মিষ্টি একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল শরীরে। যেখান থেকে নামছে পানির ধারা, সেখানে পাহাড়ের গায়ে গভীর হয়ে জন্মেছে গাছপালা। শৈহ্লাচিং মারমা জানালেন, রিজুকের উল্টো পাশে নতুন রিজুকপাড়া নামে মারমাদের একটা পাড়া আছে। আর এ পাশে পাহাড়ের ওপর বমদের যে পাড়াটি এর নাম রিজুকপাড়া।
পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করলাম বমদের পাড়াটির দিকে। আদিবাসীদের গাছ কুঁদে তৈরি করা সিঁড়ি সহজ করে দিল কাজটা। একটু পরই পাহাড়ের মাঝখানে খোলামেলা একটা জায়গায় উঠে এলাম। এখান থেকে ক্রমেই ্লান হতে থাকা সূর্যের আলোয় চারপাশের পাহাড়, নিচের সাঙ্গু নদী-সবকিছু কেমন যেন রহস্যময় মনে হচ্ছে। ভেবেছিলাম, ওপরে বমদের পাড়ায় উঠব, পরিচিত হব তাদের সঙ্গে, কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় ধরতে হলো নিচের ঢালের পথ। নেমে আরও একবার মন ভরে রিজুককে, সাঙ্গুর বুকে এসে জমা হতে থাকা তার জলের ধারাকে দেখে নিয়ে উঠে বসলাম নৌকায়। মিটন জানাল, বর্ষার সময় রিজুক সাঙ্গুর বুকে এত বেশি পানি ঢালে যে প্রবল স্রোতের তোড়ে জলপ্রপাতের ধারে পৌঁছতে এমনকি বড় ইঞ্জিনের নৌকাগুলোরও বেগ পেতে হয়। তখন রিজুকের সৌন্দর্য একেবারেই অন্য রকম।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Moscow, Novosibirsk ,Irkutsk & St.Petersburg 9D/8N
কষ্টার্জিত অর্থে সেরা প্রজেক্টে নির্ভেজাল প্লট কিনুন ।
চায়না ভিসা (বিজনেসম্যান)
ইশতিয়াক হাসান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
পূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত আয়োজন এখানে অপেক্ষা করছেপূর্বাচল আমেরিকান সিটি | জীবনের সমস্ত ...
৮৮৩ বার পড়া হয়েছে