দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এ অবস্থায় রোগীদের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের শক্তিশালী একটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী সিরোটাইপ-৩ (ডেনভি-৩) নামের ভাইরাসটি আরও শক্তিশালী হয়ে চরিত্র পালটে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। এতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এসব তথ্য জানিয়েছে। গত রবিবার বেলা ১১টায় বিসিএসআইআরের আইএফআরডি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ডেঙ্গু ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে বলা হয়, পরিষদের গবেষণাগারে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা সবাই ডেঙ্গুর সিরোটাইপ-৩ ধরনে আক্রান্ত ছিলেন। দেশে এই ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালেও ডেঙ্গুর সিরোটাইপ-৩ ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশের এক লাখের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তবে আগের সিরোটাইপ-৩ এর চেয়ে এবারের সিরোটাইপ-৩ বেশি ভয়ঙ্কর।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, প্রতি বছর চিকিৎসা প্রটোকল আপডেট করা হয়। ডেঙ্গু ও করোনার চিকিত্সার প্রটোকল আপডেট করা হয়েছে। কিন্তু কেউ তা মানেন না। মনে রাখতে হবে, রোগ বিপদ নয়, চিকিৎসা আপডেট গাইডলাইন না মানলেই বিপদ। এতে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও কিংবা অঙ্গহানী ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
আগে ডেঙ্গু রাজধানীতেই বেশি ছড়াতো। অবশ্য এখনো রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে এবার ঢাকার বাইরের শহরের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গুর নতুন ভ্যারিয়েন্ট। ডেঙ্গুকে দৃশ্যমান শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা নিধন করতে হবে। মশার উত্পত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে সামনে মহাবিপদ দেখা দেবে।
আগস্টেই ৭ হাজার ১৯৯ জন আক্রান্ত, ৩০ মৃত্যু
বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনার চেয়ে ডেঙ্গুর মৃত্যু হার বেশি। চলতি বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে আগস্ট মাসে। আগস্টের ২৯ দিনে ৭ হাজার ১৯৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত এ বছরের সর্বোচ্চ শনাক্ত। এছাড়া এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪২ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরমধ্যে ৩০ জনই মারা গেছেন আগস্ট মাসে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ২৫২ জন। এরমধ্যে ২০২ জনই ঢাকার, আর ঢাকার বাইরের ৫০ জন। সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১ হাজার ১২৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে ঢাকার আছেন ৯৮০ জন, বাকি ১৪৩ জন ঢাকার বাইরে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৮৫৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়া পেয়েছেন ৮ হাজার ৬৯০ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কারণ নেই। আগে ডেঙ্গুর সিরোটাইপ-১ ও ২ ছিল। এখন সিরোটাইপ-৩ এসেছে। এ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। তবে কী কারণে ডেঙ্গু হয় সেটা আমাদের সবারই জানা আছে। ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যাতে এডিস মশার জন্ম না হয়। ঘরের বাইরের এডিস মশার উত্পত্তিস্থল ধ্বংস করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ যাদের ওপর আছে, তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, জ্বর হলে প্রথমেই করোনা ও ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে হবে। ডেঙ্গু হলে শুধুমাত্র প্যারাসিটাল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। শুরু থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে চলতে হবে। গুরুতর হওয়ার আগেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ফিচার বিজ্ঞাপন
জাকার্তা ও বালি ৭দিন ৬ রাত
Kathmandu-Pokhara-Nagarkot-Bhoktopur 5D/4N
ব্যাংকক-পাতাইয়া-কোরাল আইল্যান্ড-সাফারি ওয়ার্ল্ড ৫দিন ৪ রাত
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ডেঙ্গুর সিরোটাইপ-৩ ধরণ দেশে ২০১৯ সালেও শনাক্ত হয়েছিল। এ বছরও দুই মাস আগে এই ভ্যারিয়েন্ট আইইডিসিআরের ল্যাবে শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টটির নতুন চরিত্রের কারণে এবার শিশু-কিশোররা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, রোগ নিয়ে কোন বিপদ নেই। রোগের চিকিত্সার গাইডলাইন না মানাই বিপদ। পৃথিবী যতদিন থাকবে, ততোদিন প্রতি বছর রোগের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসবে। সেই অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিয়ে চিকিত্সা প্রটোকল আপডেট করে সোসাইটি অব মেডিসিন। কিন্তু চিকিৎসার আপডেট প্রটোকল ফলো করা হচ্ছে না। ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রতিরোধ ব্যবস্থা মানলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
এদিকে রবিবারের অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী বলেন, ‘ডেঙ্গুর মিউটেশন সংক্রান্ত তেমন গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশনে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও অধিক সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিসিএসআইআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. সেলিম খান। তিনি বলেন, আমরা ২০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করে দেখেছি, প্রতিটি সিরোটাইপ-৩। এর মাধ্যমে ঢাকার রোগীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তদের দ্রুত প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ ও রক্ত আদান-প্রদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তথ্য মিলেছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ‘দেশে গত দশ বছরে ডেনভি-১ ও ২ সেরোটাইপে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছে। এবার দেখা যাচ্ছে ডেনভি-৩ ধরনই বেশি।’
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)১৫৫ বার পড়া হয়েছে