প্রতিদিনের প্রয়োজন কিংবা খাবার টেবিলে আভিজাত্যের প্রকাশ, যা–ই বলি না কেন, তৈজসপত্রের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। আদিকাল থেকে আধুনিক জীবনধারায় এর উপস্থিতি বৈচিত্র্যময়। কিছু কিছু তৈজস তো মনে করিয়ে দেয় পুরোনো দিনের কথাও। কেননা, বাড়ির কাবার্ডে সবচেয়ে যত্নে তুলে রাখা তৈজসপত্রগুলো ব্যবহৃত হতো শুধু বিশেষ দিনগুলোতে। বছরের অন্য সময় চাইলেও এগুলো ব্যবহারের অনুমতি ছিল না। এগুলোর অধিকাংশই ছিল সিরামিকের, যা পরিচিত ছিল চিনামাটির বাসন হিসেবে।

এই সময়ে সিরামিকের তৈজসের জনপ্রিয়তা বিশ্বজুড়ে। নান্দনিক নকশাই এর মূল কারণ। সিরামিক ছাড়াও আরও কিছু কাঁচামালে তৈজসপত্র তৈরি হয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও কাঁচামালের সহজলভ্যতার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন অঞ্চলের তৈজসপত্র তৈরির উপাদান ভিন্ন হয়। যেমন ভৌগোলিক কারণে প্রাচীন সময় থেকে আমাদের এই অঞ্চলের তৈজসপত্রগুলো মূলত নানা ধরনের মাটি দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। নকশা, আঙ্গিক ও উপস্থাপনা নির্ভর করে উপকরণ এবং নির্মাণপদ্ধতির ওপর। এই মাধ্যম মৃৎশিল্প হিসেবে পরিচিত।

ঐতিহাসিকদের মতে, মানবসভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন শিল্পমাধ্যম হচ্ছে মৃৎশিল্প। একসময় শুধু হাতে তৈরি হলেও, এখন আধুনিক যন্ত্রে তৈরি হচ্ছে রঙিন কারুকার্যময় পণ্য। থালা, বাটি, মগ, গ্লাস, হাঁড়ি, পাতিল, কড়াই, কাপ-পিরিচ, জগ এবং অন্দরসজ্জার জিনিসপত্রের বাইরেও এটি বিস্তার লাভ করেছে, যা জীবনযাপনের ধরনে যোগ করেছে নান্দনিকতা ও আভিজাত্য। আধুনিক বাড়ি থেকে রেস্তোরাঁ— সব জায়গায় এর বাহারি উপস্থাপনা।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের তাগিদে মানুষ এখন ক্ষতিকারক রাসায়নিকমুক্ত পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। প্রতিদিনের খাবার যেমন হতে হবে সুষম, তেমনই খাবার পরিবেশনের তৈজসপত্রও হওয়া চাই প্রাকৃতিক। কেননা, তৈজসপত্রও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তৈজসপত্র নির্মাতা পল’স–এর স্বত্বাধিকারী সুমন পাল বলেন, বিশেষ ধরনের মাটি আগুনে পুড়িয়েই তৈরি হয় সিরামিক পণ্য। এগুলো রাঙাতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের রং। খুব সাধারণভাবে বললে, এই রঙের রয়েছে দুই ভাগ, অক্সাইড ও স্টেইন। হাতে তৈরি সিরামিক পণ্যে এই দুই ধরনের রঙের ব্যবহারই বেশি। এগুলো পরিবেশবান্ধবও বটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন রঙের আলাদা নকশা ফুটিয়ে তুলতে একটি পণ্য কয়েক ধাপে পোড়ানো হয়। সিরামিকের তৈজসপত্র তৈরির বেশ কয়েকটি পদ্ধতির একটি হচ্ছে স্টোনওয়্যার। বিশেষ করে সরাসরি খাবার পরিবেশন বা খাবার রাখার পাত্রগুলো এই পদ্ধতিতে তৈরি হয়। তবে ভালো মানের কাঁচামাল পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া কঠিন। যে কারণে অনেক উদ্যোক্তা চাইলেও অনেক সময় ভালো মানের সিরামিক পণ্য তৈরি করতে পারেন না।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Email Marketing

মূল্য: ১৫,০০০ টাকা

SIliguri – Gangtok – Lachung (Sikkim) 7D/6N

মূল্য: ২৭,৯০০ টাকা

সিরামিক পণ্যের বিশ্ববাজার এগিয়েছে কয়েক ধাপ। এক দশক ধরে প্রায় প্রতিবছরই এ ধরনের পণ্যের নকশা ও আকৃতিতে দেখা গিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধারা। বাসনকোসনের এই ধারা অনুযায়ী থালা-বাটি, গ্লাস বা কাপে দেখা গেছে বৈচিত্র্য। সেই চিরাচরিত গোলাকৃতির থালা এখন আর নেই বললেই চলে। চা-কফির কাপ বা মগেরও রূপ বদলেছে। স্যুপ থেকে শুরু করে দেশীয় ধারার ডালের বাটিরও আকার বদলেছে বেশ কয়েকবার। আবার গোলাকৃতির, কিন্তু ভেতরের দিকে গর্ত ভাতের বোলগুলো চিরায়ত ধারায় হাল সময়ে চলমান থাকলেও চ্যাপ্টা, ছড়ানো বা বাঁকানো, বোল অথবা ডিশের চাহিদাও বেশ।

এ বিষয়ে কথা হয় দ্য হোম ক্লাবের স্বত্বাধিকারী নাহিদ জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেহেতু বিদেশি বিভিন্ন অভিজাত ব্র্যান্ডের সিরামিক পণ্য দেশের বাজারে বিক্রি করি, তাই ট্রেন্ডের বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হয়। আর দেশের মানুষের রুচি ও চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে পণ্যের মজুত নিশ্চিত করতে হয়। এখন ভিন্টেজ বা চারমিং রঙের সঙ্গে সোনালি রঙের লাইন টানা তৈজসপত্রের চাহিদা বেশি। পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট, বিশেষ করে ফুলেল ছাপা। তবে একটু বড় আকারের ফুলের নকশা আঁকা পণ্যের চাহিদা বেশি। আর বাসনকোসনের আকৃতির কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, ট্রেন্ডে রয়েছে একটু বেশি ছড়ানো এবং চ্যাপ্টা আকৃতির পণ্যগুলো।’

একসময় শুধু আমদানিনির্ভর ছিল সিরামিকের তৈজস। কিন্তু চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে উৎপাদনের সক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে প্রচুর চাহিদা। মুন্নু, শাইনপুকুর, ফার, শেলটেক ইত্যাদি সিরামিকের তৈজস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরেও অনেক নাম এখন যুক্ত হয়েছে তালিকায়। এ তালিকা এখন শুধু বড়ই হবে। তবে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে সিরামিক পণ্য তৈরির পাশাপাশি স্বকীয় নকশার পণ্য তৈরিতেও মনোযোগী। এ তালিকায় রয়েছে আড়ং, ইশো, আরাজ সিরামিকস, বাসনওয়ালা, আইফেইরি, দ্য ক্লে স্টেশন, প্যারাগন ইত্যাদি নাম। দাম নির্ভর করে নকশা ও উপকরণের ওপর। এগুলোর চাহিদাও অনেক।

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।



১৭১ বার পড়া হয়েছে