দেশে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। কয়েকমাসের ব্যবধানে এক টন ভালো রডের দাম বেড়েছে অন্তত ১৮ হাজার টাকা, ব্যাগ প্রতি সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ফলে আবাসন খাতে ব্যয় বাড়ছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ঘর নির্মাণ করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ।
ইত্তেফাক অনলাইনের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টন প্রতি রডের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, এই দাম আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে প্রতি তিন হাজার ইটের দাম বেড়েছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কাঁচামাল সংকটই প্রধান অনুঘটক বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
তারা ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপ মেটাল বা মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম বিশ্ববাজারে এখন বেশি। গতবছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে এই মেটাল কিনতে হচ্ছে। দাম বেড়েছে ইটভাটায় কাঁচা ইট পোড়ানোর একমাত্র বৈধ জ্বালানি কয়লারও। ভাটা মালিকদের অভিযোগ- কয়লা বিক্রিতে সিন্ডিকেটের কারণে এই জ্বালানির দাম টন প্রতি দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে স্বভাবতই ইটের দামও চড়া।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, গত বছরের শেষ দিকে দেশের বাজারে ৬০ গ্রেড মানসম্পন্ন এক টন রড কিনতে লাগতো ৫৪ হাজার টাকা। এখন তা ৭২ হাজার টাকায়ও কিনতে হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত রডের কাঁচামাল মেল্টিং মেটালের অন্তত ৮৫ শতাংশ বাইরে থেকে আমদানি হয়। সাধারণত সাউথ আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডা থেকে আসে এসব। গাড়ি ফ্যাক্টরির বাই-প্রোডাক্টসহ আরও কিছু থেকে সংগৃহীত হয় মেল্টিং স্ক্র্যাপ। বিশ্বব্যাপী করোনার থাবার কারণে বাইরের দেশগুলোতে এগুলোর আমদানি কমে গেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত যোগান না থাকায় দাম বেড়েছে।
আমদানিকারকদের দাবি, স্ক্র্যাপ মেটাল রপ্তানিকারক দেশগুলোতে বেড়েছে নিজস্ব চাহিদা। এ কারণে কমেছে রপ্তানি। অন্যদিকে অতীতে চীন খুব কম মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানি করতো। তারা নিজস্ব খনিজ লোহা দিয়েই স্টিল উৎপাদনে ছিল। এখন বিভিন্ন কারণে চীন মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। বিশ্বব্যাপী স্ক্র্যাপ মেটালের একটা বড় অংশ এখন সেখানেই যাচ্ছে। আগে দেশের এক কনটেইনার মেল্টিং মেটাল আমদানির খরচ পড়তো ১০০০ থেকে ১২০০ ডলার। এখন একই পরিমাণ মেল্টিং মেটাল আমদানিতে খরচ পড়ে ২৮০০ ডলার পর্যন্ত। মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।
অন্যদিকে ইটভাটা মালিকরা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরের মাঝামাঝি ইটভাটার মৌসুমের শুরুতে প্রতি তিন হাজার ইট বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে সাড়ে ১৮ হাজারে। কিন্তু এরপর দাম বেড়ে তা ঠেকেছে সাড়ে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজারে। ক্ষেত্র বিশেষে ২৪ হাজারেও বিক্রি হচ্ছে। একই সময়ে ইট পোড়ানোর জ্বালানি কয়লার দাম প্রতি টন ৭ হাজার থেকে বেড়ে ১৪ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার আশেপাশের ভাটা মালিকরা এর কমে কয়লা কিনতে পারছেন না। ফলে দাম বেড়েছে ইটের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী মো. ইসমাইল জানান, কয়েক মাসের ব্যবধানে এক টন ভালো রডের দাম ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যাগ প্রতি সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এভাবে দাম বাড়তে থাকায় বিপাকে পড়ছেন বাড়ি তৈরি করতে যাওয়া ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএমএ) নির্বাহী পরিচালক শামসুল আলম ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, দেশে তৈরি হওয়া স্টিলের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সরকার কিনে নেয়। উন্নয়ন কাজে এসব লাগে। স্টিলের দাম বাড়ল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ব্যয় বেড়ে যায়। স্ক্র্যাপ আমদানি প্রতি টনে প্রায় চার শতাংশ অ্যাডভান্স ট্যাক্স নেয় সরকার। এটা পরে ফেরত দেওয়া হয়। তবে আগে নেওয়ার কারণে আমদানিকারকদের টাকাটা আটকে যায়। আবার স্টিল কারখানার জ্বালানির ওপর পাঁচ শতাংশ শুল্ক আছে। এসব যদি আসন্ন বাজেটে কমানো হয় তাহলে রডের দাম কমবে।
বিএসএমএ সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন, বিশ্ববাজারে মেল্টিং মেটালের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাবই পড়েছে বাংলাদেশে। নিকট ভবিষ্যতে রডের মূল্য কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেভাবে চলছে সেভাবেই চললে উল্টো বর্তমান দাম আরও কয়েক হাজার বাড়তে পারে। ২০২১ সাল পুরোটাই এমন অবস্থা চলতে পারে। তবে এ সমস্যা ভারতেও আছে। তবে তারা সমাধানের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে ভারতে মেল্টিং মেটাল আমদানির ওপর সব শুল্ক প্রত্যাহার করেছে।
ফিচার বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ড ভিসা (বিজনেসম্যান)
Australia Visa (for Govt Service Holder)
Dubai (City tour- Abu Dhabi tour) 4D/3N
এই সংকট থেকে উত্তরণে আপৎকালীন উপায় সম্পর্কে এই ব্যবসায়ী নেতা ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, ভারত মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানির ওপর থেকে সব শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। চীনে এটা আমদানির ওপর বিধিনিষেধ ছিল। তারা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পাশাপাশি শুল্কও কমিয়েছে। আমাদের দেশেও যদি শুল্ক কমানো হয় তাহলে ধীরে ধীরে রডের দাম কমতে পারে।
বিএসএমএর পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ইতিমধ্যেই মেল্টিং মেটালের আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে শহীদুল্লাহ বলেন, দুটি বৈঠকে আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে প্রস্তাব দিয়েছি। তারা এটা দেখবে বলে জানিয়েছে।
মেল্টিং মেটাল আমদানিতে বিএসএমএর রাজস্ব কমানোর প্রস্তাবনা নিয়ে কথা বলতে ইত্তেফাক অনলাইনের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইটের দাম বৃদ্ধি ব্যাপারে সাভারের ডিবিএস ব্রিকফিল্ডের ম্যানেজার মো. মোকলেসুর রহমান জানান, এক টন কয়লা ছিল সাত হাজার টাকা। তা বেড়ে এখন হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। কয়লা সিন্ডিকেটের কারণে এইটার দাম বেড়েছে। আমার তো কাঁচা ইট মজুদ আছে, যেভাবেই হোক সিজন শেষের আগে পোড়াতে হবে। তাই বেশি দামে কয়লা না কিনে উপায় নেই।
পাশের ফাহাদ ব্রিকসের হাজী জয়নাল আবেদীন ইত্তেফাক অনলাইনকে জানান, তিনি তিন হাজার ইট ২৩ হাজার করে বিক্রি করছেন। সিজনের শুরুতে দাম কম ছিল। পরে নানা কারণে তা বেড়েছে। এই সিজনে আর দাম কমবে না। আরেক ইট বিক্রেতা আবেদ আলী তিন হাজার ইট বিক্রি করছেন চব্বিশ হাজার টাকায়।
Source: Ittefaq
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)২২১ বার পড়া হয়েছে