প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো একটি মন্দির, যেখানে সাধুদের থাকার জন্য আছে শতাধিক কক্ষ আর শ্বেতপাথরের চৌকি। রয়েছে অনেক ইতিহাস। বলছি বিথঙ্গল আখড়ার কথা। প্রায়ই বিভিন্ন মিডিয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই আখড়াকে নিয়ে লেখা চোখে পড়ে। এ থেকেই আখড়াটি দেখতে ইচ্ছে জাগে মনে।

এরই মধ্যে গত বছর হবিগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরাম আয়োজন করলো নৌকা ভ্রমণের। গন্তব্য হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার শেষ সীমান্ত এলাকার ঐতিহ্যবাহী বিথঙ্গল আখড়া। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও হবিগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে হাওর পাড়ে বিথঙ্গল গ্রামে এ প্রাচীন আখড়াটির অবস্থান।

সাংবাদিক ফোরাম নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমিও অংশগ্রহণ করি আনন্দ ভ্রমণে। হবিগঞ্জ সদরের কালারডোবা থেকে যাত্রা করলাম নৌকা ভ্রমণের। ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে এগিয়ে চললো নৌকা। মাঝে মধ্যে দ্বীপের মতো গ্রাম, কোথাও একটা বাড়ি নিয়েই দ্বীপবাড়ি জেগে আছে হাওরসম ডুবো ক্ষেতের ওপর। ওই দ্বীপের মতো গ্রামের মানুষের চলাচলের ভরসা নৌকা।

আবার কোথাও কোথাও বুক পানিতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে হিজলগাছ। আমরা তা দেখেই যাচ্ছি। নৌকা ভ্রমণেজেলার প্রায় ৬০ জন সাংবাদিকসহ ৭০ জনের মতো লোক ছিলাম। এর মধ্যে ছিলেন কয়েকজন সংগীতশিল্পীও। সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে গান পরিবেশন করেন তারা। গানের তালে তালে হাওর এবং গ্রামের দৃশ্য দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেলাম বিথঙ্গল বাজারে।

নৌকা থেকে নেমে রওনা দিলাম মন্দিরে। বেশ জমজমাট বাজার, পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম মন্দিরের প্রবেশদ্বারে। প্রচন্ড রোদে খালি পায়ে সবাই প্রবেশ করলাম মন্দিরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক লোকজন এসেছেন আখড়াটি দেখতে। পরে এলাকার প্রবীণ অনেক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম এর ইতিহাস।

বিথঙ্গল আখড়া বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান। এ আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামী উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর শেষে ষোড়শ শতাব্দীতে আখড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। বিশাল এই আখড়ায় মোট কক্ষ আছে ১২০টির মতো।

লোকমুখে জানা যায়, কক্ষগুলোতে ১২০ জন বৈষ্ণব থাকতেন। তবে বর্তমানে বৈষ্ণব বসবাস করছেন মাত্র কয়েকজন। জানা গেছে, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিথঙ্গলে এসে এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন।

এতদঞ্চলের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র এ আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামী হবিগঞ্জের রিচি পরগনার অধিবাসী ছিলেন। বাংলা ১০৫৯ সনে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামীর দেহত্যাগ হয়। আখড়ায় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলের ওপর একটি সুদৃশ্য মঠ প্রতিষ্ঠিত হয়। মঠের সামনে একটি নাটমন্দির এবং পূর্বপাশে একটি ভান্ডার ঘর এবং দক্ষিণে একটি ভোগ মন্দির রয়েছে।

এছাড়া আরও কয়েকটি পুরনো ইমারত আছে। ৫০০ বছর আগে ত্রিপুরার রাজা উচ্চবানন্দ মাণিক্য বাহাদুর প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ দুটি ভবন নির্মাণ করে দেন এবং মাণিক্য বাহাদুর ও তার স্ত্রী ওই আখড়ায় বসে প্রায়ই ধর্মকর্ম করতেন।

ফিচার বিজ্ঞাপন

Australia Visa for Businessman

মূল্য: 20,000 Taka

এ ভবনগুলো সংরক্ষণের অভাবে এখন ধ্বংসের পথে। বর্তমানে আখড়াটির প্রতিষ্ঠাতা রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর একটি ভবন তৈরি করে দিয়েছেন জনৈক ব্যক্তি। এ আখড়াটি ঘিরে কার্তিক মাসের শেষ দিন ভোলাসংক্রান্তি উপলক্ষে কীর্তন হয়। ফাল্কুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলপূর্ণিমার পাঁচ দিন পর পঞ্চম দোল উৎসব উদযাপিত হয়।

চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ভেড়া মোহনা নদীর ঘাটে ভক্তরা পুণ্যস্নান করেন এবং লালনঘাটে বারুণী মেলা বসে। এছাড়া আষাঢ় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। ওই আখড়ায় দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে রয়েছে ২৫ মণ ওজনের শ্বেতপাথরের চৌকি (খাট), পিতলের তৈরি সিংহাসন, প্রাচীন কারুকার্যসমৃদ্ধ রথ এবং রুপা ও সোনার মুকুট।

আখড়ার বর্তমান মোহন্ত সুকুমার দাস জানান, আখড়ার নিজস্ব ৪০ একর জমির উৎপাদিত ফসল ও ভক্তদের দানে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ হয়। উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে বিথঙ্গলের উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী প্রাচীন এই আখড়া পরিদর্শন করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন।

আখড়ার মালিকানাধীন অনেক ভূ-সম্পত্তি ইতোমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। দেশের প্রাচীনতম এই ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

যেভাবে যাবেন

হবিগঞ্জ শহরে নেমে সেখান থেকে কালাডুবা ঘাট যাওয়ার জন্য টমটম বা রিকশায় উঠতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা। এই ঘাট থেকে বিথঙ্গল যাওয়ার নৌকা ভাড়া করতে হবে। বানিয়াচং উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার অতিক্রম করলেই এই বিথঙ্গল আখড়া। তবে হাওরে পানি শুকিয়ে গেলে যাওয়া একটু কঠিন হয়ে পড়ে, এ সময় যেতে হয় গাড়িতে ও হেঁটে।

Source: jagonews24

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

Online Shopping BD (Facebook Live)



২৬৪ বার পড়া হয়েছে