মাথা গোঁজার ঠাঁই যেমনই হোক না কেন প্রতিটি পরিবারের চাহিদা হয় আলাদা আলাদা। এই চাহিদা মেটাতে স্থপতিরা সবকিছু মাথায় রেখে প্ল্যান লে-আউট তৈরি করেন ঠিকই, কিন্তু গণ-আবাসনের চাহিদার চাপে পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়গুলোতে বাড়ির মালিককে নিজের হাত দেবার দরকার হয়। এজন্য প্রায় প্রতিদিনই স্থপতির সাইট অফিসে দেখা মেলে লেআউটে পরিবর্তনের দাবি নিয়ে আসা বাড়ির নির্মাণকারী।
অনেক ক্ষেত্রেই নির্মাণকারীগণ তাদের খরচ করা অর্থের সর্বোচ্চ পরিমাণ জায়গা বা সুবিধা বের করে নিতেই পরিবর্তন বা উন্নয়নের প্রস্তাবনা নিয়ে আসেন। অবশ্যই পরিবর্তনের সুযোগ দিতে প্রতিটি নির্মাতারই উদারমনা এবং নির্মাণকারীবান্ধব হওয়া জরুরি। কিন্তু একইসাথে নির্মাণকারী হিসেবেও সম্ভব এবং অসম্ভবের খেরোখাতা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বাড়ির প্ল্যান (Plan) লেআউটে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কী কী বিষয় জানতে হবে।
কাঠামো অপরিবর্তনীয়
বাড়ির কাঠামো বলতে বুঝানো হয় ফাউন্ডেশন এবং সাধারণ নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কলাম ও বীমকে। একজন বাড়ির মালিক বা নির্মাণকারী ভেতরের পার্টিশন দেয়াল পরিবর্তনের স্বাধীনতা রাখলেও কলাম ও বীমের অবস্থান পরিবর্তন কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণ কাঠামোর অংশ হিসাবে শিয়ার ওয়াল (Shear wall) নির্মাণ করা হয়। এই দেয়ালগুলো কলামের মতোই ছাদের ভার বহন করে। তাই দেখতে দেয়ালের মতো হলেও এগুলোর অবস্থান পরিবর্তন, এগুলোতে জানালা স্থাপন এবং আকারে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হয় না। সাধারণত শিয়ার ওয়াল ৮-১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তবে কাঠামোর কারণে ক্ষেত্রবিশেষে আরও মোটাও হতে পারে।
পার্টিশন দেয়ালে পরিবর্তন
ঘরের পার্টিশন দেয়াল সাধারণত প্লাস্টারসহ ছয় ইঞ্চির মতো চওড়া হয়। প্লাস্টারের আবরণের আগে ৫ ইঞ্চির যে দেয়াল তোলা হয়, এর ভেতরে সাধারণত কোনো কাঠামোগত সমর্থন (Reinforcement) থাকে না। তাই এগুলো চাইলেই পরিবর্তন করা যায়। তবে এই পরিবর্তন করতে হবে দেয়ালগুলো তৈরি হবার আগেই। এই পরিবর্তনের জন্য আগে থেকে স্থপতি ও প্রকৌশলীকে জানাতে হয় এবং তাদের হাত দিয়ে সংশোধিত করতে হবে। জানানোর এবং সংশোধনের পর সংশোধিত ড্রয়িং সংগ্রহ করুন এবং নিশ্চিত হোন আপনার পরিবর্তিত ড্রয়িংই নির্মাণে অনুসরণ করা হচ্ছে। এই ধরনের পরিবর্তনে সাধারণত কোনো খরচ যোগ হয় না।
অত্যন্ত জরুরি বিবেচনায় বানানো দেয়াল ও পরিবর্তন করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্লাস্টার এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ নির্মাণের আগেই করতে হবে। এসকল ক্ষেত্রে আগের ইট ও মর্টার নষ্ট হয়। তাই খরচ বাড়তে পারে।
ভবনের বহিঃঅংশে পরিবর্তন
ভবনের যেসব নকশা নির্মাণের আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের মধ্যে থাকে তার মধ্যে ভবনের এলিভেশনও (Elevation) থাকে। এছাড়া বারান্দার পরিমাণ ও মাপও থাকে নির্দিষ্ট। তাই চাইলেই ভবনের বাইরের দেয়ালে কোনো পরিবর্তন করা যায় না। এসব স্থানে পরিবর্তনের ইচ্ছা থাকলে (যেমন- অতিরিক্ত বারান্দা বা জানালা স্থাপন) নকশা অনুমোদনের আগেই স্থপতির সাথে পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করুন ও আপনার ইচ্ছার কথা জানান।
নিয়মের মধ্যে থেকে করা সম্ভব হলে অনুমোদনের আগেই স্থপতি আপনার চাহিদা আমলে নেবেন এবং পরিবর্তন করে দেবেন। তবে ডেভেলপারের উপস্থিতির ক্ষেত্রে যেহেতু ক্রয় বা বুকিংয়ের আগেই অনুমোদন হয়ে যায় তাই এক্সটেরিয়রে কোনো পরিবর্তন অনুমোদন করা হয় না।
সার্ভিস অংশের অবস্থান পরিবর্তন
মূলত টয়লেট, রান্নাঘর বা কিচেনেটের মতো জায়গাগুলোকে বলা হয় বাড়ির অভ্যন্তরীণ সার্ভিস অংশ। এর বাইরে সিঁড়ি এবং লিফটকে বলা হয় মূল সার্ভিস অংশ। সার্ভিস অংশগুলো লম্বালম্বিভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। সিঁড়ি বা লিফট যেখান দিয়ে উঠতে শুরু করে প্রত্যেক তলাতেই সিঁড়ি সাধারণত সেই বরাবরই উঠাতে হয়।
ফিচার বিজ্ঞাপন
কোরিয়া ভিসা প্রসেসিং (বিজনেসম্যান)
বাউন্ডারি ও রেজিষ্ট্রেশন করে নিজের প্লট বুঝে নিন
Maldives (Hulhumale & Fun Island) 3D/2N
কাঠামো, জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার, ভবনের চলাফেরার পদ্ধতি ইত্যাদি নানা দিক বিবেচনায় এগুলো অত্যাবশ্যকীয়। একইভাবে টয়লেট বা কিচেনের মতো কক্ষগুলোও প্রত্যেক তলায় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যেমন- ভবনে স্যানিটেশন ও পানির লাইন সাধারণত দুটি আলাদা দেয়াল দিয়ে সঞ্চালিত হয়। এগুলোতে ডাক্ট সংযুক্ত থাকে। তাই টয়লেট ও কিচেন সে দুটি দেয়ালের সন্নিকটে হতে হয়, যেন ডাক্টের সাথে সরাসরি এদের সংযোগ থাকে। একারণে ক্ষেত্রবিশেষে দিক (Orientation) পরিবর্তন সম্ভব হলেও, কিচেন বা টয়লেট সরিয়ে সাধারণত অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায় না। তাই কাঠামোর মতো এগুলোকেও মোটামুটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখেই পরিবর্তন করতে হবে।
সাধারণ কিছু ত্রুটি
অনেক ক্ষেত্রে শয়নকক্ষে অতিরিক্ত এক বা দেড় ফুট জায়গা বের করতে অনেকে বারান্দা অত্যধিক সরু করে ফেলেন। প্রশিক্ষিত স্থপতি নকশা করলে ফার্নিচারের স্বাভাবিক সকল মাপ বিবেচনা করেই সাধারণত নকশা করা হয়। শুধু জায়গা বাড়ানোর খাতিরে এরপরও বেডরুমে অতিরিক্ত এক ফুট জায়গা বের করার প্রবণতা অপ্রয়োজনীয়। এতে করে বারান্দা ছোট হয়ে গেলে ঘরের ভেন্টিলেশন যেমন বাধাগ্রস্থ হয়, তেমনি ভবনের ভেতর ও বাইরে সংযোগে সমস্যা তৈরি হওয়ায় বাসায় জীবনধারণের মানও কমে যায়।
এছাড়া স্থপতিরা ভবনের নকশা করার সময় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের সঞ্চালন মাথায় রেখেই ভবনের নকশা তৈরি করেন। অনেক সময় অতিরিক্ত পার্টিশন দেয়াল নিয়ে নাড়াচাড়ার কারণে বদ্ধ করিডোর তৈরি হয়, যে জায়গাগুলো আসলে কোন কাজে আসে না। তাই পরিবর্তনের আগে সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে স্থপতির মতামত না নিলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা হবার সম্ভাবনাই বেশি।
এছাড়া বীম লাইন থেকে পার্টিশন দেয়াল সরিয়ে ঘর অতিরিক্ত নাড়াচাড়ায় ঘরের মাঝ দিয়ে বীম চলে যাওয়াও খুব সাধারণ ঘটনা। এই পরিস্থিতি ফ্যানসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও কাঠামো উপকরণের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে। এটিও বাধ্য না হলে করা উচিৎ নয়।
সবশেষে, স্কয়ার ফিটের পাশাপাশি নকশার ব্যপারেও ফ্ল্যাট কেনার আগেই সচেতন হওয়াটা দরকারী। কেনার আগে অবশ্যই প্ল্যান দেখে নিন। যদি প্ল্যান আপনার পছন্দ না হয় এবং মনে হয় প্রচুর পরিবর্তন করতে হবে তাহলে শুধু স্কয়ার ফিট বা দাম বিবেচনায় সেই ফ্ল্যাট না কেনাই শ্রেয়। মনে রাখবেন আপনি আপনার কষ্টার্জিত যে অর্থ ব্যয় করছেন তাতে ইট-কাঠের সাথে নকশার মান এবং প্রযোজ্যতাও জরুরি। একজন সচেতন ক্রেতাই পারেন পরিবর্তনের ঝামেলা কমিয়ে অথবা স্মার্ট পরিবর্তনের মাধ্যমে ফ্ল্যাটকে নিজের বসবাস-উপযোগী করতে।
Courtesy: homebuildersclub
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
শক্তিশালী ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডারের দাম জেনে নিন২৪৮ বার পড়া হয়েছে