সবাইকে শুভেচ্ছা। বেশ কিছুদিন ধরেই আমরা আমাদের ফ্যানপেজে বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি যা শুধু কয়েকজন নয়, বাংলাদেশের অনেক বাইকারেরই মনের প্রশ্ন। আপনাদের প্রশ্নটির বিস্তারিত জবাব দেয়ার জন্যই এই লেখা।
আমরা সকলেই বাইক ভালোবাসি। কিন্তু বাইকের চাইতেও অমূল্য হলো আমাদের জীবন। সাধারনত দেখা যায়, আমরা বাইক কেনার সময় কেবলমাত্র বাইক কিনেই খুশি হয়ে ঘরে ফিরি। কিন্তু আমরা বেমালুম ভুলে যাই, যে বাইকের সাথে আমাদের আরো বেশ কিছু জিনিসপত্র কেনা দরকার, যা আমাদের বাইক ও আমাদের জীবন উভয়কে অহেতুক ঝুঁকির হাত থেকে বাচাবে। এই আর্টিকেলে আমরা সাধারন কিছু এক্সেসরিজ বা সহায়ক ব্যবহার্যের কথা আলোচনা করব যা একজন বাইক চালকের থাকা আবশ্যক।
হেলমেট
বাইক কেনার সময় সর্বপ্রথম যা কিনতে হবে তা হলো হেলমেট। আপনি হয়তো রাস্তাঘাটে বহু লোককে দেখে থাকবেন যারা হেলমেট ছাড়াই বাইক চালায়। তা দেখে আপনার মনেও প্রশ্ন আসতে পারে যে আপনার কেনো হেলমেট কিনতে হবে?? এক্ষেত্রে আপনার জানা দরকার যারা হেলমেট পরে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পরিণতিও মোটেও সুখকর নয়। আমাদের দেশে বাইক এক্সিডেন্টে প্রতিবছর যে পরিমান লোকের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে ৬০% মৃত্যু প্রতিহত করা যায় কেবলমাত্র একটি ভালোমানের হেলমেট পরিধান করে। আপনাদের অনেকের মাথায় চিন্তা আসতে পারে যে হেলমেট কি করে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে?
ধরুন, আপনি রাস্তা দিয়ে ৬০-৭০ কিমি/ঘন্টা গতিবেগে যাচ্ছেন। হটাৎ পাশের রাস্তা থেকে অন্য গাড়ি বেড়িয়ে আসার সময় আপনাকে ধাক্কা দিলো, বা রাস্তায় কিছুতে আপনার চাকা পিছলে গেলো, বা যেকারনেই হোক আপনি ৬০ কিমি/ঘন্টা গতিবেগে রাস্তায় আছেড়ে পড়লেন। এখন আছড়ে পড়ার সময় যদি আপনার হাত/পা আগে পড়ে তাহলে অনেকখানি চামড়া ছিলে যাবে, বেশি হলে হাড় ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু আপনি বেচে যাবেন। কিন্তু যদি আপনার হেলমেটবিহীন মাথা আগে পড়ে??? ভাগ্য ভালো হলে মাথা ফেটে যাবে ও আপনি বেচে যাবেন। কিন্তু, বেশিরভাগেরই ভাগ্য খারাপ থাকে এবং তাদের মস্তিষ্কের অংশবিশেষ সারা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। তারা তাদের অমূল্য জীবনটা হারায় কেবলমাত্র একটি হেলমেটের জন্য। আর সেই মানুষটি যদি আপনি হন?!
যারা হেলমেট পড়েননা বা অভ্যস্ত নন তারা অনেকেই হেলমেটের আরেকটা গুনাগুন হয়তো জানেন না, সেটা হলো এটা আপনার চোখ-নাক-মুখ ও চুল কে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে ও বাতাসের প্রচুর চাপ থেকে মুখমন্ডলকে রক্ষা করে। ফলে আপনার চেহারায় দীর্ঘ রাইডিং এর অবসাদের কোন ছাপ পড়ে না।
তাই বাইক কেনার সময় আপনার সর্বপ্রথম কাজ হলো একটা ভালোমানের হেলমেট কেনা। বিভিন্ন দামের ও বিভিন্ন ধরনের হেলমেট পাওয়া যায় সারা দেশে। আপনি আজই আপনার জন্য উপযুক্ত ও ভালো মানের হেলমেট কিনে ফেলুন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
সিকিউরিটি সিস্টেম
আপনার বাইক নিঃসন্দেহে আপনার অন্যতম প্রিয় একটা বস্তু । শুধু প্রিয় নয়, এটা একটা দামী সম্পদও বটে। আর যেকোন দামী বস্তুর প্রতিই চোরেদের নজর থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশে বাইক চুরি খুবই বেড়ে গিয়েছে। আপনার প্রিয় বাইকটি যাতে অনায়াসে চোরের হাতে না চলে যায় সেজন্য আপনার অবশ্যই বাইকে সিকিউরিটি সিস্টেমের ব্যাবস্থা করতে হবে। সাধারনত সিকিউরিটি সিস্টেম লক, সুইচ, এলার্ম ইত্যাদী হয়ে থাকে।
লকের মধ্যে আছে ডিস্ক লক, ডিস্ক অ্যালার্ম লক, সাসপেনশন লক, সাসপেনশন অ্যালার্ম লক, শিকল+তালা ইত্যাদী। এছাড়া ইঞ্জিনের গোপন অন/অফ সুইচ তৈরি করতে পারেন, যা অন করা ছাড়া ইঞ্জিন চালু হবে না। এগুলোতেও ভালোমন্দ রয়েছে, কাজেই যাচাই করে বুঝে ভালোমানের পন্য কিনুন। কেনার আগে পরিচিত বা অভিজ্ঞ রাইডারদের কাছ থেকে ধারনা নিতে পারেন।
গ্লাভস
আমাদের দেশে অনেকেই একে অপচয় মনে করেন। অনেকেই কেবল শীতকালে বাইক চালানোর সময় বাধ্য হয়ে সস্তা গ্লাভস কেনেন। কিন্তু একজন সত্যিকারের রাইডারের উচিত সকল ঋতুতেই গ্লাভস পরে বাইক চালানো। যখনই আপনি গ্লাভস পড়ে বাইক চালাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন আপনি যেকোন ঋতুতেই আরামদায়কভাবে ও কনফিডেন্টলী বাইক চালাতে পারবেন। তাই ভালোমানের একজোড়া গ্লাভস কিনতে মোটেও দ্বিধা করবেন না।
রেইন স্যুট
আমার মনে হয়না এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনাদেরকে নতুন করে কিছু বলতে হবে। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথেই সকলে রেইনস্যুট কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। যদি আপনি পরামর্শ চান, তবে আমরা আপনাকে উন্নতমানের রেইনস্যুট কেনার পরামর্শ দেবো যার প্রতিটি জয়েন্ট লীকপ্রুফ ও প্রতিটি সেলাই পানি রোধক টেপ দিয়ে সীল করা থাকবে। এছাড়াও ডাবল-সাইডেড রেইনস্যুট কেনা থেকে বিরত থাকুন। কারন এগুলোর সেলাই ও জয়েন্ট উন্নতমানের হয় না ফলে প্রয়োজনের মুহূর্তে এগুলো থেকে আশানুরূপ সার্ভিস পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
ক্লিনিং ও পলিশিং কিট
আমার ধারনা এই পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে একবারের জন্যও নিজের বাইকে লেগে থাকা ধুলোবালি নিজ হাতে পরিষ্কার করেনি। আপনি যদি নিজের বাইক নিজ হাতে পরিষ্কার করতে ও পলিশ করতে ভালোবাসেন, তবে আপনি বাইক বা গাড়ির এক্সেসরিজের দোকান থেকে একটি ভালোমানের ক্লিনিং ও পলিশিং কিট কিনতে পারেন। আপনার অনেক বেশিদামের পন্য কেনার প্রয়োজন নেই, তবে অত্যন্ত নিন্মমানের পন্য থেকে সাবধান থাকুন। এ সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত একটি আর্টিকেল রয়েছে, আপনি চাইলে সেটি পড়ে দেখতে পারেন।
ফিচার বিজ্ঞাপন
মায়ানমার ভিসা (ভিজিট ভিসা)
থাইল্যান্ড ভিসা (বিজনেসম্যান)
Australia Visa for Lawyer
টুলকিট সেট
এই পর্যায়ে অনেকেই হয়তো প্রতিবাদ করতে পারেন যে আপনি মেকানিক হতে চান না বা আপনার বাইকের সামান্যতম কাজও মেকানিক দিয়ে করানোর মতো যথেষ্ট টাকা আপনার আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আপনি যদি আসলেই আপনার বাইককে ভালোবাসেন এবং দীর্ঘসময় ধরে সেটার কাছ থেকে ঝামেলাহীন ভাবে সার্ভিস পেতে চান, তবে আপনার নিদেনপক্ষে একটি স্ক্রু-ড্রাইভার এর ব্যাবহার জানতে হবে। নতুবা ছোট্ট কোন সমস্যায়ও আপনাকে বাইক নিয়ে রাস্তায় হাটতে হবে মেকানিক খোজার জন্য, আর যদি কোন ছুটির দিনে মাঝ পথে সামান্য কারনে আটকে পড়েন তবে তো যন্ত্রনার ষোল-কলা পূর্ন হয়।
তাই আমি আপনাকে পরামর্শ দেবো বাইকের সাথে দেয়া টুলকিট ও সেগুলোর ব্যাবহার সম্পর্কে নুন্যতম হলেও জ্ঞান রাখতে। আমি নিশ্চিত যে ওই সামান্য জ্ঞানই আপনাকে রাস্তায় বিভিন্ন ছোটোখাটো সমস্যা থেকে রক্ষা করবে। এছাড়াও আমি আপনাকে যেকোন হার্ডওয়্যার এর দোকান থেকে সম্পূর্ণ টুলকিট সেট কিনতে উৎসাহিত করবো কারন, অনেক সময় বাইকের সাথে দেয়া টুলকিট সেটটি দিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয় না । আপনি চাইলে সকল সাইজের রেঞ্চ, স্ক্রুড্রাইভার, প্লায়ার্স ইত্যাদী কিনতে পারেন। এগুলো আপনার নিত্যদিনের ঘরোয়া কাজেও এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
ফুটওয়্যার
এটা রাইডিংয়ের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাইক রাইডিংয়ের জন্য আপনার এমন ধরনের জুতো পড়া উচিত যাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এছাড়াও আপনাকে নিজের সামর্থ্য ও মৌসুমের কথা বিবেচনা করতে হবে। মাঝেমধ্যেই অনেককে দেখা যায় স্লিপার/স্পঞ্জের স্যান্ডাল পড়ে বাইক চালাতে। আপনি যদি একজন সত্যিকারের বাইকার হন তবে এসব পড়ে বাইক রাইড করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলোতে এক্সিডেন্টের ঝুঁকি বেশি থাকে।
গগলস
এটা রাইডিংয়ের জন্য অন্যতম আরেকটি উপাদান। এটি একটি সুরক্ষামূলক বস্তু। এটা আপনার চোখে সরাসরি সূর্যের আলো পড়তে বাধা দেবে । এছাড়াও এটা বাতাস, বালুকণা, মাটিকণা, ছোট পোকামাকড় ইত্যাদি থেকে আপনার চোখকে সুরক্ষা প্রদান করবে। মাইলের পর মাইল রাইড করার পরেও আপনার চেহারায় কোনরূপ ক্লান্তির ছাপ পড়বে না যদি আপনি একটি ভালোমানের গগলস ব্যাবহার করেন। তবে গগলস কেনার সময় দেখে-শুনে কিনুন। আপনার চোখকে বহুদিন সুরক্ষা দিতে চাইলে ভালোমানের গগলস কিনুন।
স্যাডল ব্যাগ
আপনি যদি আপনার বাইক নিয়ে দুরপাল্লার ভ্রমন করতে পছন্দ করেন বা আপনি যদি কোন ধরনের চাকুরীজীবি হন যার বাইক নিয়ে প্রচুর চলাফেরা করতে হয়, তবে এটা আপনার জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি পন্য। একটা স্যাডল ব্যাগ হতে পারে সাধারন যেকোন শক্ত বস্তুর তৈরি ব্যাগ বা বাক্স যা সহজেই সিটের ওপর বা পাশে শক্ত করে আটকে নেয়া যাবে। স্যাডল ব্যাগ শক্ত কাপড় জাতীয় উপাদানের তৈরী ব্যাগ অথবা শক্ত প্লাষ্টিক জাতীয় উপাদানের তৈরী বক্স আকারের হতে পারে। তাই আপনার প্রয়োজন এবং আপনার বাইকের ধরন অনুযায়ী একটি ভালোমানের স্যাডল ব্যাগ কিনলে আপনি দরকারি জিনিসপত্র সহজেই বহন করতে পারবেন। তবে ভুলেও হ্যান্ডেলের সাথে ঝুলিয়ে কোনকিছু বহন করবেন না। হ্যান্ডেলের সাথে কোন ব্যাগ/ বস্তু ঝুলিয়ে বাইক চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
অতিরিক্ত লাইট এবং সিগনালস
আপনি যদি প্রায়ই রাতে বাইক চালান, তবে হয়তো লক্ষ্য করবেন যে বাইকের হেডলাইটের আলো রাস্তায় সুষ্ঠুভাবে চলার জন্য অনেক সময় যথেষ্ট নয়। এর সাহায্যে অনেক সময়ই রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কার দেখা যায় না। এবং পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠে যখন বিপরীত দিক থেকে আসা বড় যানবাহন অত্যন্ত শক্তিশালী আলো জ্বেলে আসে। এ ধরনের অনিয়্ন্ত্রনীয় পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এবং রাতে হাইওয়েতে পরিষ্কারভাবে দেখার জন্য আপনি বাইকে অতিরিক্ত বাতি ব্যাবহার করতে পারেন। এর সাথে আপনি বাড়তি হর্ন বা সিগনাল লাইট ব্যাবহার করতে পারেন যা রাস্তায় বাড়তি সুরক্ষা প্রদান করবে।
বন্ধুরা এই ছিলো সেসকল সাধারন এক্সেসরিজ বা সহযোগী পন্য, যা আপনাকে বাইকিংয়ে সর্বদিক দিয়ে সুরক্ষা প্রদান করবে, যা আপনাকে অনাকাঙ্খিত সমস্যা থেকে উদ্ধার করবে ও যা আপনার জীবন বাচাবে। আপনার মনে যেকোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের জানান, আমরা আমাদের সাধ্যমত সর্বাত্মক চেষ্টা করবো আপনাকে পরামর্শ দিতে।
লিভ ফ্রি , রাইড সেফ।
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...
৮৩৬ বার পড়া হয়েছে