দলটিতে সদস্য চারজন। সন্ধ্যা তখন নেমেছে। শীতকালের সোমেশ্বরীতে যে সামান্য পরিমাণ জল আছে, ওটা খেয়ানৌকায় পার হয়ে দীর্ঘ বালু-হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতেই আহমেদ হাসান জুয়েল বলে উঠলেন, ‘বিরিশিরিতে মানুষ কেন বেড়াতে আসে?’ নেতিবাচক ইঙ্গিত। তাল দিলেন পিয়াস। বিশ্বজিৎ মুনশী যোগ করেন, চলেন, এ বিষয়ে দুর্গাপুর প্রেসক্লাবে একটা গোলটেবিল বৈঠক করি-‘বিরিশিরিতে পর্যটনঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা।’

এসব কথবার্তার কারণও আছে। ডিসেম্বরের কুয়াশাভরা দিন। ময়মনসিংহ থেকে বিরিশিরি পর্যন্ত রাস্তা মাত্র ৩৫-৩৬ কিলোমিটার। কিন্তু ভাঙা রাস্তা আর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর অসমাপ্ত একাধিক সেতুর কারণে এ রাস্তা পেরোতে গাড়িতেই লাগে তিন ঘণ্টা। যাদের নিজস্ব বাহন নেই তাদের ঢাকা থেকে বাসে ময়মনসিংহ, তারপর দুর্গাপুর যেতে হবে বাস বা ম্যাক্সিতে। জটিল এক যাত্রাপথ। দুর্গাপুরের হোটেল গুলশানে একটু সুস্থির হয়ে দুপুরের পর বের হওয়া। থাকার জন্য এ হোটেলের চেয়ে ঢের ভালো আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমি বা ওয়াইএমসিএর রেস্টহাউস। কিন্তু পর্যটন মৌসুম বলে সেসবে ঠাঁই মেলেনি।

সোমেশ্বরীর বুকজুড়ে বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা। চর পড়েছে, শুকনা মৌসুমে। এক পাশে সরু ফালির মতো বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতা নদীটি। খেয়ানৌকায় পার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। নেত্রকোনার দুর্গাপুরের এই জায়গাটা নতুন যে কারও কাছে অপূর্ব। নদী-চর-গ্রাম নিয়ে যারা ‘অভিজ্ঞ’, তাদেরও ভালো লাগছে সোনালি-লাল বালু, তবে আহ্লাদে আটখানা কেউ নন। নদী পেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বিজয়পুর সাদামাটির পাহাড়ে। বাহন তিন রকম-রিকশা, ভ্যান-রিকশা আর মোটরসাইকেল। যাত্রীবাহী মোটরসাইকেলের চল আছে এ অঞ্চলে। একজন চালক দুজন করে আরোহী নেন। এবড়োথেবড়ো রাস্তায় তাদের বাইক চালনা যেন চলচ্চিত্রের স্টান্ট!

চারজনের দলে দুজনের হাতে এসএলআর ক্যামেরা। ছবি তোলার ন্যূনতম সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চান না। নতুন হলে যা হয় আর কি! বাকি দুজনের একজনের হাতে ডিজিটাল, আরেকজনের মোবাইল ফোনের ক্যামেরা-ছবি তোলায় তাঁদের উৎসাহ আরও বেশি। তাই ঠিক হলো রিকশাই হবে বাহন। কিন্তু রিকশাচালকেরা কেন জানি কঠিন। ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা চান। তারপর ২৫০ টাকায় রাজি হন। বিজয়পুর যাওয়ার কথা থাকলেও মাঝপথে হঠাৎ বাঁক ঘুরে নিয়ে গেলেন রামকৃষ্ণ মিশনে। গেরুয়া রঙের চমৎকার এক কারুকাজ করা দালান। মন ভরে যায়। রিকশাচালক জানান, সামনেই খ্রিষ্টানদের মিশন। দিনের আলো তখন ফুরিয়ে আসছে। প্রকৃতি দেখেও মুগ্ধ হওয়া যাচ্ছে না। ইটের রাস্তায় তাই ফিরে আসা। এর পরই সেই প্রশ্ন, লোকে কেন বিরিশিরি আসে? তবে পুরো দল নেতিবাচক সিদ্ধান্তে তখনই যেতে চায় না, পরের দিনটা দেখে তবেই নাহয় সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে।

স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলামের পপি লাইব্রেরি খুঁজে বের করা হলো সন্ধ্যার পর। বই আর কম্পিউটারের দোকান। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই স্থানীয় এক লোক এলেন। হাতে এমপি-থ্রি প্লেয়ার। ‘বাই ৫০০ গান ভইরা দ্যান। কয় ট্যাকা নিবেন?’ ৫০ টাকায় ৫০০ গান! প্রযুক্তি যে এখন কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে!

রফিকুল ইসলাম দুর্গাপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিয়ে গেলেন প্রেসক্লাবে। ‘গোলটেবিল বৈঠক’ না হলেও স্থানীয় কজন সাংবাদিকের সঙ্গে জমে উঠল আড্ডা। লোকে যে বিরিশিরি বেড়াতে আসে তার কারণ বললেন তাঁরা। দুর্গাপুর টঙ্ক আন্দোলনের ্নৃতিবিজড়িত জায়গা। সোমেশ্বরী নদীর স্বচ্ছ পানি আর লাল বালু সবাইকে টানে। আছে ভারতের সীমান্তবর্তী বিজয়পুর ও আরও কিছু এলাকায় আছে সাদামাটির পাহাড়। এসবই দেখেন পর্যটকেরা। তবে রাস্তা আর যানবাহন যে পর্যটনবান্ধব নয়, সে ব্যাপারে তাঁরাও আমাদের সঙ্গে একমত।

ফিচার বিজ্ঞাপন

USA Visa (Lawyer)

মূল্য: 5,000 Taka

প্রেসক্লাব থেকে বেরিয়ে দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে যাওয়া হলো। এর এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে টঙ্ক আন্দোলনের ্নৃতিসৌধ। আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের নাম লেখা আছে ্নৃতির মিনারে। টঙ্ক আন্দোলনের নেতা কমরেড মণি সিংহের বাড়ি স্কুলটার পেছনেই। জানা গেল, তাঁর ছেলে ডা· দিবালোক সিংহ প্রতি বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে দুর্গাপুরে আসেন। বিনা মূল্যে চিকিৎসা করেন স্থানীয় ও আদিবাসীদের। দরকারে ওষুধটাও দিয়ে দেন। জরুরি অবস্থায় রোগীকে ঢাকায়ও নিয়ে যান। সবই করেন নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে। গ্রী্ন-বর্ষা-শীত কোনো সময়ই দিবালোকের বৃহস্পতিবার বাদ যায় না।তবে দিবালোক সিংহ যখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন ভোট পান মাত্র চার-পাঁচ হাজার। সাংবাদিকদের মতে, ‘শুধু তাঁর রোগীরাই যদি ভোট দেয়, তবে তাঁরই জেতার কথা।’ কিন্তু কী আর করা! নির্বাচনে মার্কা বড়, রোগের চিকিৎসা বড় কথা নয়!

পরের দিন ভোর ছয়টায়ই বের হওয়া। গন্তব্য বিজয়পুরের সাদামাটির (চিনামাটি নামে পরিচিত) পাহাড়। কুয়াশার ভোরের সোমেশ্বরীর বিস্তীর্ণ লালচে চর আর টলটলে পানি মুগ্ধ করে সবাইকে। অপার্থিব এক সৌন্দর্য। জানা গেল, এ বালু সিলেট স্যান্ডের চেয়েও কার্যকর দালানকোঠা নির্মাণে। এই শুষ্ক মৌসুমে নদীর বালুতে মিশে আছে কয়লা। সেই কয়লা তোলার কাজ শুরু হয় ভোর থেকেই। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-জওয়ান-নির্বিশেষে কয়লা তোলে আর তা কেজিপ্রতি মাত্র চার টাকায় বিক্রি হয়।

যানবাহন নিয়ে যাতে আগের দিনের মতো আমরা না ঠকি, তাই সোমেশ্বরীর ওপার পর্যন্ত এসেছেন সাংবাদিক তবারক হোসেন খোকন। দুটি রিকশায় যাত্রা বিজয়পুরের দিকে। যারা দরকষাকষিতে পাকা তারা রিকশা নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারে।তবে স্থানীয় কেউ থাকলেসুবিধা। সাদামাটির পাহাড়গুলো একটার পর একটা-অনেক। উঁচু, মাঝারি, ছোট-সবগুলোর মাটিই একেবারে মিহি দানার ট্যালকম পাউডারের মতো। এসব পাহাড় থেকে মাটি নিয়েই তো বাংলাদেশের সিরামিক কোম্পানিগুলো চলে। কোনো পাহাড়ের মাটি লাল, বেগুনি এমনকি গোলাপি। এসব দৃশ্য দেখে কিছু বলতে মন চায় না, শুধু ক্যামেরার শাটারে আঙ্গুল চলে যায়। পাহাড়ি রাস্তায় চোখে পড়ল আদিবাসীদের যাতায়াত। নারী আর শিশুই বেশি। পিঠে ঝুড়ি নিয়ে তারা যাচ্ছে সীমান্তের বাজারে। এক নারীর পিঠে গামছায় বাঁধা শিশুও দেখা গেল। হঠাৎ দেখা গেল তিন শিশু আমাদের দেখে হাসছে। ক্যামেরা তাক করতেই তারা দাঁত বের করে। ফোকলা দাঁতের সেই সরল নিষ্পাপ হাসিই তো বিরিশিরি যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর কি লাগে!

পল্লব মোহাইমেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী

প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

কুইক সেল অফার

১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মাত্র ৩৭ লক্ষ টাকায়!

১২৩০ বর্গফুটের দক্ষিণমুখি ফ্ল্যাট মা...



১,৮৭৩ বার পড়া হয়েছে