সূর্যদেব তার আভায় আলোকিত করছেন ভুবন। চা-বাগানের ওপর দিয়ে, ছায়াবৃক্ষের ফাঁক দিয়ে সূর্যের গোলগাল লাল শরীর থালার মতো ভাসছে।আমাদের গাড়িও এগিয়ে চলছে চা বাগানের পথ ধরে। সহযাত্রী হিসেবে আছেন সহধর্মিণী সানন্দা গুপ্ত। আমরা চলছি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ পানে।
ঝিনাইদহে জন্ম নেয়া বীরসন্তান হামিদুর রহমান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাহসী সিপাহী ছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলাকায় যুদ্ধ করছিলেন। ২৮ অক্টোবর সকালে দলের অধিনায়কের নির্দেশে হামিদুর রহমান ধলই বিওপিতে পাকিস্তানিদের ঘাঁটি দখলের জন্য অগ্রসর হন। হালকা একটি মেশিনগান নিয়ে জীবনবাজি রেখে হামিদুর রহমান একাই দুইটি পাকিস্তানি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেন। এতে শত্রুঘাঁটির অধিনায়ক এবং বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হন।
এক সময় যুদ্ধরত অবস্থায় এই বীরসন্তান শত্রুদের পাল্টা আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার আত্মত্যাগের কয়েক দিনের মধ্যেই ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
সহযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের ওপারে নিয়ে ভারতের আমবাসা গ্রামের একটি মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়। এই মহান বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ধলই চা বাগানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।
আমরা যাচ্ছি সেই স্মৃতিসৌধ দেখতে। চলতি পথের প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের অভিভূত করছে। তবে মাঝে মধ্যে অমসৃণ রাস্তা আমাদের বিরক্তির কারণ হবার পরেও নতুন গন্তব্যে যাব বলে সব বিরক্তি দূরে ফেলে এগিয়ে চলছি। মেঘকন্যার আগমনে চা বাগান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
দূর মেঘালয় থেকে হিম বাতাস বয়ে নিয়ে আসে অতিথি মেঘ কন্যাকে। তারপর চা বাগানের আকাশ সাজে শুভ্র মেঘমালায়। এক সময় মেঘকন্যা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়েন কচি চা পাতার ওপর। বৃষ্টির পরশে চায়ের পা তার রং বদলায়।
চা বাগান মানেই দিগন্ত প্রসারী সবুজের মাঝে ছায়া বৃক্ষের মিলন মেলা।নির্ভীক যাত্রা পথিক, অপলক তাকিয়ে রইলাম চা বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ ছড়ার পানে। ছোট ছোট টিলায় ভুটান ফুলে হারিয়ে গেল আমাদের মন অনাবিল আনন্দে। হঠাৎ চমকে উঠলাম ছড়ার জলে কল কল ধ্বনি শুনে। গভীর অরণ্যে উপলব্ধি করলাম আলো ছায়ায় মায়াময় লুকোচুরি খেলা।
দেখতে দেখতে আমরা এসে পৌঁছলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। দুই পাশে চা-বাগান রেখে যে রাস্তাটি পাত্রখোলা চা-বাগান থেকে আঁকাবাঁকা হয়ে দক্ষিণে গেছে, তার শেষেই সীমান্তরেখা। কাঁটাতারে থমকে দাঁড়ানোর সংকেত। ওপারে ভারত। ত্রিপুরা রাজ্য।
যদিও সীমান্তের এপার-ওপারজুড়ে একই ভাষা। তবু দূরত্ব অপার। স্থাপত্যকলার নয়নশোভন উপস্থিতি। দেশমাতৃকার মুক্তির পথে জীবনদানের গল্প আঁকড়ে আছে একটি স্মৃতিসৌধ। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ নেই কোন কোলাহল। আমরা নগ্ন পায়ে এগিয়ে চললাম স্মৃতিসৌধ পানে। চা বাগানের পরম মমতায় আগলে রেখেছে স্মৃতিসৌধকে। আমরা কিছু সময় দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালাম।
ফিচার বিজ্ঞাপন
Sheraton Maldives Full Moon Resort 3D/2N
Dubai (City tour- Dhow Cruise- Desert safari- Abu Dhabi tour) 5D/4N
জাকার্তা ও বালি ৭দিন ৬ রাত
হামিদুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ প্রদান করা হয়।পাশেই আছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান” স্মৃতি আর্কাইভ; যা বাস্তবায়ন করেছে ৪৬ বিজিবি ও শ্রীমঙ্গল সেক্টর।
এখানে প্রদর্শিত হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ছোটবেলার ছবি, রয়েছে তার পারিবারিক ছবি। স্মৃতিসৌধের একদিকে বিজিবি ক্যাম্প, অন্যদিকে চা-বাগান। দক্ষিণে ভারত সীমান্ত। কত কাছে, তবু দূরের দেশ।
অনেকক্ষণ ধরে সেই স্মৃতিসৌধ, স্মৃতিসৌধের আশপাশ ঘুরে বেলা কাটল। সূর্যদেব তখন জানিয়ে দিলেন, বেলা বেশি নেই। আঁধার নামছে সীমান্তের গ্রামে, চা-বাগানে। এবার ফিরতে হবে।
কীভাবে যাবেন
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে যেতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি সড়ক ও রেলপথে শ্রীমঙ্গল আসা যায়। ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
ঢাকার ফকিরাপুর কিংবা সায়েদাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, এনা ও সিলেট পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাসে শ্রীমঙ্গল পৌঁছতে পারবেন। এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিলেটগামী জয়ন্তিকা, উপবন বা পারাবাত এক্সপ্রেস ট্রেনেও শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল শহর হতে স্থানীয় পরিবহনে (সিএনজি, বাস) চড়ে কমলগঞ্জ এসে রিকশা নিয়ে হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধে যেতে পারবেন। পরিবহনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন- গন্তব্য-০১৯২৯৪১৭৪৪১
লেখা ও ছবি: সুমন্ত গুপ্ত
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
Online Shopping BD (Facebook Live)২১৩ বার পড়া হয়েছে