বগুড়া শহর থেকে কিছুটা দূরেই বেড়ানোর এই জায়গা মা মনসার রোষানল একে একে
কেড়ে নিয়েছে চাঁদ সওদাগরের সবকটি সন্তান। বাকি কেবল লখিন্দর। কিন্তু তাঁকেও
কেড়ে নেওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন মনসা, ‘বাসররাতই হবে লখিন্দরের জীবনের শেষ
রাত।’ কী করবেন চাঁদ সওদাগর? অনেক ভেবে লোহা দিয়ে নির্মাণ করলেন লখিন্দরের
জন্য নিশ্ছিদ্র শয়নকক্ষ। কিন্তু তাতেও কি শেষ রক্ষা হলো? কোনো এক ফুটোপথে
ঠিকই ঢুকে পড়লেন সাপের দেবী। সুযোগ বুঝে লখিন্দরের পায়ে ছোবল… দিশেহারা
বেহুলা… মৃত স্বামীকে কলার ভেলায় তুলে তাঁর ইন্দ্রপুরীতে যাত্রা… নেচে গেয়ে
খুশি করতে হবে ইন্দ্রকে…। সেই লখিন্দরের ভিটে কিন্তু এখনো মাথা উঁচু করে
ঠায় দাঁড়িয়ে। অন্তত এলাকাবাসীর কাছে আজও তা বেহুলার বাসরঘর নামেই পরিচিত,
বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই যার অবস্থান।
এমন লৌকিক
কাহিনিসমৃদ্ধ স্থান পরিদর্শন করতে কার না মন টানে? আমরা বন্ধুরা তাই সদলবলে
তশরিফ রাখি বেহুলা-লখিন্দরের বাসরভিটায়। যখন পৌঁছাই, তখন দুপুর-বিকেলের
মাঝামাঝি। কিন্তু সূর্যের তেজ বলছে, খাড়া দুপুর। ভ্যাপসা গরম। তবু আমাদের
মতো আরও অনেক দর্শনার্থীই এসেছে। সবারই যেন এক মনোভাব—থোড়াই কেয়ার করি ওসব
তেজ আর গরমকে!
মূল স্থাপনাটি সমতল হতে বেশ উঁচু এবং বহু স্তরবিশিষ্ট
একটি দুর্গ। প্রত্যেক স্তরেই অসংখ্য কক্ষ। বন্ধুরা কৌতূহলী হয়ে গুনতে শুরু
করলাম। গণনা এসে থামল ১৭৮-এ! অর্থাৎ ১৭৮টি কক্ষ আছে এই দুর্গে। এতগুলোর
মধ্যে কোনটি তবে বেহুলার বাসরঘর? বোঝা মুশকিল; কারণ সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ
নেই। তা ছাড়া সব কটি কক্ষের আকৃতিগত কাঠামোও প্রায় একই রকম। অনেক তালাশ
করেও এখানে লৌহনির্মিত কোনো কক্ষ খুঁজে পাওয়া গেল না। বন্ধুরা খুবই হতাশ।
তবে দুর্গের একদম চূড়ায় ভিন্ন ধাঁচের একটি গোলাকৃতি কক্ষের দেখা মিলল। মনকে
সান্ত্বনা দিলাম, এটিই হয়তো বাসরঘর!
তবে বেশিক্ষণ চূড়ায় থাকা সম্ভব
হলো না। সূর্য তেজ ঢালছে তো ঢালছেই। আমরা দ্রুত নেমে আসি, আশ্রয় নিই গাছের
ছায়ায়। কৃপা প্রার্থনা করি প্রকৃতির কাছে। প্রকৃতি অবশ্য কার্পণ্য করে না।
পাশের ধানখেত ছুঁয়ে আসা বাতাস আর সবুজ গাছপালা মুহূর্তেই প্রাণ জুড়িয়ে দেয়
আমাদের। ভ্রাম্যমাণ শসা বিক্রেতার কাছ থেকে শসা কিনে গলা ভেজাই। দেখাদেখি
একজন চা-বিক্রেতা আমাদের চা সাধেন, এই গরমে চা খেতে মন চায় না। এরপর আসেন
বই বিক্রেতা।‘এই বইয়ে পাবেন বেহুলার বেবাক ইতিহাস, নেন স্যার একটা বই…।’
উঠে পড়ি, পুরো চত্বরে একবার চক্কর না দেওয়াটা বোকামি হবে। তা ছাড়া
চত্বরজুড়ে ফুলের গাছ প্রথম থেকেই যেন কাছে ডাকছিল আমাদের। হেঁটে হেঁটে
ফুলের সুবাস নিই, প্রজাপতির ওড়াউড়ি দেখি। জায়গায় জায়গায় রয়েছে বসার
ব্যবস্থা।
নিজ পথে ছুটতে ছুটতে কোন ফাঁকে ঠিকই সূর্যদেব গাইতে শুরু
করেছে বেলা শেষের গান। এর মাঝে হঠাৎ অনুভব করি, পেটের মধ্যে ছুঁচোর উৎপাত।
মনে পড়ে, সারা দিন খাওয়া হয়নি কিছুই। কিছু সময়ের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক মনকে
দূরে সরিয়ে রেখে নেমে পড়ি ভাতের হোটেলের অনুসন্ধানে।
যেভাবে যাবেন
বগুড়া শহর থেকে বাস অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে আপনাকে নামতে হবে গোকুল
বাজারে। তারপর সেখান থেকে ভ্যান অথবা রিকশায় অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারবেন
বেহুলার বাসরঘরে। রাতে থাকতে চাইলে ফিরে আসতে হবে বগুড়া শহরে। কেননা, এ
এলাকার আশপাশে কোনো হোটেল বা মোটেল নেই।
মারুফ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো
ফিচার বিজ্ঞাপন
মালয়শিয়া ভিসা প্রসেসিং (চাকুরীজীবী)
সাজেক ভ্রমণ ৩ রাত ২ দিন
বাংকক-ক্রাবি-সাফারি ওয়ার্ল্ড ৫দিন ৪ রাত
প্রাসঙ্গিক কথাঃ “ঢাকা বৃত্তান্ত”প্রচলিত অর্থে কোন সংবাদ মাধ্যম বা অনলাইন নিউজ সাইট নয়। এখানে প্রকাশিত কোন ফিচারের সাথে সংবাদ মাধ্যমের মিল খুঁজে পেলে সেটি শুধুই কাকতাল মাত্র। এখানে থাকা সকল তথ্য ফিচার কেন্দ্রীক ও ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত। “ঢাকায় থাকি”কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে এসব তথ্য একত্রিত করার ফলে তা ঢাকাবাসীকে সাহায্য করছে ও করবে। আসুন সবাই আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলি। আমরা সবাই সচেতন, দায়িত্বশীল ও সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।
কুইক সেল অফার
শক্তিশালী ইলেকট্রিক গ্রাইন্ডারের দাম জেনে নিন১,০৭১ বার পড়া হয়েছে




